যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদারের প্রচেষ্টা ভারতের স্বার্থের বিপরীতে নয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে তিনি এ মন্তব্য করেন। রুবিওর বক্তব্যে ইঙ্গিত মিলেছে, ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন অংশীদারিত্বের পথে এগোলেও ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।
কূটনৈতিক ভারসাম্যের বার্তা
রুবিও বলেন, “এটি পরিপক্ব ও বাস্তববাদী পররাষ্ট্রনীতির অংশ। ভারত যেমন এমন কিছু দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে, যাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নেই — আমরাও একই নীতি অনুসরণ করছি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের পাকিস্তানের সঙ্গে যে উদ্যোগগুলো চলছে, তা ভারতের সঙ্গে গভীর, ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুত্বের ক্ষতি করছে না।”
![]()
ট্রাম্প প্রশাসনের পাকিস্তান ঘেঁষা নীতিতে ভারতের অস্বস্তি
ট্রাম্প প্রশাসনের পাকিস্তানমুখী নীতি ভারতের মধ্যে অস্বস্তির জন্ম দিয়েছে, বিশেষত যখন ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি সম্পর্ক শুল্কবৃদ্ধির কারণে টানাপোড়েনে রয়েছে।ট্রাম্প ভারতের রপ্তানির ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছেন, যা পাকিস্তানের ১৯ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি। এই শুল্কের অর্ধেকই ভারতের রাশিয়ার সঙ্গে তেল বাণিজ্যের জন্য “শাস্তিমূলক ব্যবস্থা” হিসেবে আরোপিত বলে জানা গেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি পাকিস্তানের সঙ্গে খনিজ সম্পদ ও তেল উত্তোলন বিষয়ে নতুন চুক্তি করেছে। ট্রাম্প পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে “দারুণ নেতা” বলে প্রশংসা করেছেন — যেভাবে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও সম্বোধন করেন।
যুদ্ধবিরতি ও নোবেল দাবি
রুবিও জানান, ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের পদক্ষেপ নেয় ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আগেই। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো সম্ভাব্য দেশগুলোর সঙ্গে নতুন অংশীদারিত্বের সুযোগ তৈরি করা। পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা রয়েছে; আমরা চাই তা আরও বিস্তৃত হোক।”
ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাতে মধ্যস্থতা করে যুদ্ধবিরতি “বাধ্য” করেছেন এবং এর মাধ্যমে শান্তি স্থাপন করেছেন — যা ভারত অস্বীকার করেছে।
পাকিস্তান অবশ্য ট্রাম্পের ভূমিকার প্রশংসা করেছে এবং তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে।

আসিয়ান সম্মেলন ও ভারতের অনুপস্থিতি
রবিবার ট্রাম্প ও রুবিও মালয়েশিয়ায় আসিয়ান সম্মেলনে অংশ নেন, যেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত ছিলেন না। ফলে ট্রাম্প-মোদি বৈঠকের সম্ভাবনাও বাতিল হয়।
ট্রাম্প সেই দিন থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি সাক্ষরের তত্ত্বাবধান করেন এবং আবারও শেহবাজ শরিফ ও আসিম মুনিরকে “দারুণ মানুষ” বলে অভিহিত করেন।
রুবিও সোমবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে, যেখানে বাণিজ্য আলোচনার অগ্রগতি ও রাশিয়ান তেল আমদানি বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

রাশিয়ান তেল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত মতবিরোধ
ভারত জানিয়েছে, তেল কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা তাদের রয়েছে। রুবিও বলেছেন, “দিল্লি আমাদের জানিয়েছে তারা তেলের উৎস বৈচিত্র্যময় করতে চায় এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও কিনবে। যত বেশি আমরা বিক্রি করব, তত কম তারা অন্য উৎস থেকে নেবে।”
ট্রাম্প অবশ্য দাবি করেছেন, মোদি তাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে — যা ভারত কূটনৈতিকভাবে অস্বীকার করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ভারতের রাশিয়ান তেল কেনা প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেন যুদ্ধকে অর্থায়ন করছে। বর্তমানে ভারতের মোট অপরিশোধিত তেল আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই আসে রাশিয়া থেকে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার দুই প্রধান তেল রপ্তানিকারক সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার ফলে ভারত বিকল্প তেল সরবরাহের সন্ধান শুরু করেছে।
মার্কো রুবিওর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে আগ্রহী হলেও তা ভারতের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের পরিপন্থী নয়।
তবে বাণিজ্য, তেল আমদানি ও ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যের প্রশ্নে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি সম্পর্ক এখনো সূক্ষ্ম এক কূটনৈতিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
#যুক্তরাষ্ট্র #পাকিস্তান #ভারত #মার্কো_রুবিও #ডোনাল্ড_ট্রাম্প #আসিয়ান #আন্তর্জাতিকসম্পর্ক #কূটনীতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















