১১:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
অ্যানেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ নেই প্রায় এক বছর, অস্ত্রোপচার বন্ধ—চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল কার্যত বিপর্যস্ত সংবাদমাধ্যমে যৌন হয়রানির অভিযোগ ও বিচারহীনতা চন্দ্রায় ওয়ালটনের সদরদপ্তরে এক মেগাওয়াট ক্ষমতার ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, ভবিষ্যতে তাদের বিচার করা হবে- অলি আহমেদ  জুলাই শহীদদের পরিবারগুলো নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত  করপোরেট পোশাক পরে অবৈধ প্রবেশের চেষ্টা—মালয়েশিয়া ফেরত পাঠাল ছয় বাংলাদেশিকে একটি স্বাধীন কবিতার জন্য আব্রাহাম লিংকন ও ফ্রেডেরিক ডগলাস ,দাসপ্রথা থেকে মানবমুক্তির যাত্রায় দুই নেতা —সময়ের সঙ্গী, ন্যায়ের সহযোগী পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১১৭) ট্রাম্পের রাশিয়ান তেল নিষেধাজ্ঞার ‘দাবা’—ব্যথা সহ্যক্ষমতার বড় পরীক্ষা

ট্রাম্পের রাশিয়ান তেল নিষেধাজ্ঞার ‘দাবা’—ব্যথা সহ্যক্ষমতার বড় পরীক্ষা

  • রন বুসো
  • ০৮:০০:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
  • 4

লন্ডন, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ — যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার দুই বৃহত্তম তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন—ইউক্রেনে যুদ্ধের খরচ চালাতে মস্কোর গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব প্রবাহ শুকিয়ে দিতে তাঁর প্রচেষ্টার এটিই বড় ধাপ।

এই পদক্ষেপের কার্যকারিতা—যা রাশিয়ার লুকয়েল ও রসনেফটকে নিশানায় এনেছে—শেষ পর্যন্ত নির্ভর করবে ট্রাম্প কতটা কঠোরভাবে সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করেন এবং সম্ভাব্য জ্বালানি দামের ধাক্কা মেনে নিতে তিনি কতটা প্রস্তুত তার ওপর।

নিষেধাজ্ঞার খবরের পর তেলের দাম ৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে; ব্যবসায়ীরা বৈশ্বিক সরবরাহ কমার আশঙ্কা করছেন। রসনেফট ও লুকয়েল মিলিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫ শতাংশ তেল (প্রায় ৫.৩ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতিদিন) উৎপাদন করে। অ্যানালিটিক্স প্রতিষ্ঠান কেপলারের হিসাবে, ২০২৫ জুড়ে তাদের যৌথ রপ্তানি মোট সমুদ্রপথে রপ্তানির ৪৭ শতাংশ (প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতিদিন) জুড়ে আছে।

ব্রিটেন এক সপ্তাহ আগে রসনেফট ও লুকয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের এই তালিকাভুক্তি তাদের ডলারভিত্তিক আর্থিক ব্যবস্থায় প্রবেশ বন্ধ করে দেয়।

প্রথম নজরে, নতুন মার্কিন পদক্ষেপ রুশ রপ্তানিতে বড় প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে হয়, কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রুশ জ্বালানি কোম্পানিগুলো পশ্চিমা আর্থিক ব্যবস্থা ও নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যাওয়ার কার্যকর পদ্ধতি গড়ে তুলেছে—এর মধ্যে রয়েছে তথাকথিত ‘শ্যাডো ফ্লিট’-এর ব্যবহার। ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে রুশ অপরিশোধিত ও পরিশোধিত তেল রপ্তানি সামান্যই কমেছে—২০২২ সালের ৮ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতিদিন থেকে ২০২৪ সালে ৭.৫ মিলিয়ন ব্যারেলে নেমেছে।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—এই নতুন নিষেধাজ্ঞা রসনেফট বা লুকয়েলের সঙ্গে ব্যবসা করলে যে কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠানকেই সম্ভাব্য মার্কিন সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকিতে ফেলছে।

এখন মূল প্রশ্ন দুটি—রুশ তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ভারত ও চীন কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, এবং তারা না মানলে ট্রাম্প তাদের ওপর চাপ বাড়াতে প্রস্তুত কি না।

ভারত: অংশগ্রহণের সম্ভাবনা বেশি
সম্প্রতি পর্যন্ত ভারত মস্কোর সঙ্গে জ্বালানি সম্পর্ক জোরদার করছিল। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার হিসাবে, ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে ভারত প্রতিদিন ১.৯ মিলিয়ন ব্যারেল রুশ তেল কিনেছে—এটি রাশিয়ার মোট রপ্তানির প্রায় ৪০ শতাংশ। আবার, ভারতে ৪ লাখ ব্যারেল প্রতিদিন প্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতা সম্পন্ন বাদিনার রিফাইনারিতে রসনেফটের ৪৯ শতাংশ অংশীদারি আছে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি শুল্ক কমানোর বিনিময়ে রুশ তেল কেনা কমাতে ট্রাম্পের চাপ এখন দিল্লির ওপর অনেক বেশি। ফলে দেশীয় রিফাইনিং শিল্পের জন্য কষ্টকর হলেও ভারত দ্রুত রুশ তেল আমদানি কমাতে পারে। তুরস্ক—রুশ তেলের তৃতীয় বৃহৎ ক্রেতা—কেনাকাটা বন্ধের দিকেই যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চীন: আসল পরীক্ষার মঞ্চ
সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হবে সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীনের প্রতিক্রিয়া। জানুয়ারি–সেপ্টেম্বরে চীন স্থল ও সমুদ্রপথে গড়ে প্রতিদিন ২.১ মিলিয়ন ব্যারেল রুশ তেল আমদানি করেছে—যা চীনের মোট অপরিশোধিত তেল আমদানির প্রায় ১৮ শতাংশ। রসনেফটের মালিকানাধীন ক্ষেত্রগুলো থেকে তেল আনে এমন ইএসপিও পাইপলাইনের মাধ্যমে আসা আমদানি এই মোটের প্রায় ৪০ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ দাম বাড়িয়ে দিলে সতর্কতার অংশ হিসেবে শুরুতে আমদানি কিছুটা কমাতে পারে চীন। তবে আগের নিষেধাজ্ঞাগুলো নিয়ে বেইজিং যে ধারাবাহিকভাবে আপত্তি জানিয়েছে, তা দেখলে এই নিষেধাজ্ঞা মানবে কি না তা অনিশ্চিত।

এখন পর্যন্ত রুশ তেল–গ্যাস কেনায় চীনের ওপর ট্রাম্প তেমন বড় চাপ দেননি। কিছু ছোট চীনা রিফাইনারির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সাইবেরিয়ার কঠোর নিষেধাজ্ঞায় থাকা আর্কটিক এলএনজি–২ প্রকল্প থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস নেওয়া চীনা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

কিন্তু যদি ট্রাম্প বড় চীনা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন, তা হলে বেইজিং পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে। এরই মধ্যে দুই পরাশক্তির মধ্যে বাণিজ্য আলোচনায় টানাপোড়েন চলছে।

সময়ের সুবিধা ট্রাম্পের পক্ষে
ট্রাম্প দীর্ঘস্থায়ী দামের উল্লম্ফন তৈরি করতে চান না—এটি মার্কিন ভোক্তাদের কাছে অত্যন্ত অজনপ্রিয় হবে। তবে সময় তাঁর পক্ষে যেতে পারে।

ধরা যাক, চীন ও ভারত রুশ তেল কেনা পুরোটা বা অংশত কমিয়ে দেয়—রাশিয়ার মোট অপরিশোধিত বিক্রির প্রায় ৭৫ শতাংশ এই দুই বাজারে যায়। সেক্ষেত্রে বাজারকে বিকল্প উৎস থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪ মিলিয়ন ব্যারেল পর্যন্ত তেল জোগাড় করতে হতে পারে।

কিন্তু বর্তমানে তেলবাজারে বড় মাত্রায় অতিরিক্ত সরবরাহ আছে বলে ধরা হচ্ছে। আইইএ অনুমান করছে, ২০২৫ সালে প্রতিদিন ২.৩৫ মিলিয়ন ব্যারেল এবং আগামী বছর ৪ মিলিয়ন ব্যারেল (বিশ্ব চাহিদার প্রায় ৪ শতাংশ) উদ্বৃত্ত থাকবে।

এই সম্ভাব্য উদ্বৃত্ত ট্রাম্পকে উল্লেখযোগ্য সুরক্ষা বলয় দিচ্ছে—তিনি চাইলে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল থেকে আয়ের ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ বসালে স্বল্পমেয়াদে তার অভিঘাত সামলানো সহজ হতে পারে।

তবু শেষ পর্যন্ত রাশিয়া বৈশ্বিক তেলবাজারের বড় একটি চাকা। মস্কোর রপ্তানি সীমিত করার মার্কিন ব্যবস্থা যদি টেকসই ও কার্যকর হয়, দামের ঊর্ধ্বগতি ও বাজার অস্থিরতা অনিবার্য—যা ট্রাম্প প্রায় নিশ্চিতভাবেই এড়াতে চাইবেন।

ট্রাম্প হয়তো বাজি ধরেছেন—আর্থিক কষ্টের ভয় দেখালে পুতিন দ্রুত আলোচনার টেবিলে আসবেন; তাতে দীর্ঘস্থায়ী দামের ধাক্কার ঝুঁকি কমবে এবং মার্কিন ভোক্তারা বাঁচবেন।

তিনি এই ঝুঁকি নেবেন কি না—এবং চীনকে রাগানোর সম্ভাবনাও মেনে নেবেন কি না—তা আগামী কয়েক সপ্তাহেই পরিষ্কার হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

অ্যানেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ নেই প্রায় এক বছর, অস্ত্রোপচার বন্ধ—চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল কার্যত বিপর্যস্ত

ট্রাম্পের রাশিয়ান তেল নিষেধাজ্ঞার ‘দাবা’—ব্যথা সহ্যক্ষমতার বড় পরীক্ষা

০৮:০০:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

লন্ডন, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ — যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার দুই বৃহত্তম তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন—ইউক্রেনে যুদ্ধের খরচ চালাতে মস্কোর গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব প্রবাহ শুকিয়ে দিতে তাঁর প্রচেষ্টার এটিই বড় ধাপ।

এই পদক্ষেপের কার্যকারিতা—যা রাশিয়ার লুকয়েল ও রসনেফটকে নিশানায় এনেছে—শেষ পর্যন্ত নির্ভর করবে ট্রাম্প কতটা কঠোরভাবে সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করেন এবং সম্ভাব্য জ্বালানি দামের ধাক্কা মেনে নিতে তিনি কতটা প্রস্তুত তার ওপর।

নিষেধাজ্ঞার খবরের পর তেলের দাম ৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে; ব্যবসায়ীরা বৈশ্বিক সরবরাহ কমার আশঙ্কা করছেন। রসনেফট ও লুকয়েল মিলিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫ শতাংশ তেল (প্রায় ৫.৩ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতিদিন) উৎপাদন করে। অ্যানালিটিক্স প্রতিষ্ঠান কেপলারের হিসাবে, ২০২৫ জুড়ে তাদের যৌথ রপ্তানি মোট সমুদ্রপথে রপ্তানির ৪৭ শতাংশ (প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতিদিন) জুড়ে আছে।

ব্রিটেন এক সপ্তাহ আগে রসনেফট ও লুকয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের এই তালিকাভুক্তি তাদের ডলারভিত্তিক আর্থিক ব্যবস্থায় প্রবেশ বন্ধ করে দেয়।

প্রথম নজরে, নতুন মার্কিন পদক্ষেপ রুশ রপ্তানিতে বড় প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে হয়, কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রুশ জ্বালানি কোম্পানিগুলো পশ্চিমা আর্থিক ব্যবস্থা ও নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যাওয়ার কার্যকর পদ্ধতি গড়ে তুলেছে—এর মধ্যে রয়েছে তথাকথিত ‘শ্যাডো ফ্লিট’-এর ব্যবহার। ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে রুশ অপরিশোধিত ও পরিশোধিত তেল রপ্তানি সামান্যই কমেছে—২০২২ সালের ৮ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতিদিন থেকে ২০২৪ সালে ৭.৫ মিলিয়ন ব্যারেলে নেমেছে।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—এই নতুন নিষেধাজ্ঞা রসনেফট বা লুকয়েলের সঙ্গে ব্যবসা করলে যে কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠানকেই সম্ভাব্য মার্কিন সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকিতে ফেলছে।

এখন মূল প্রশ্ন দুটি—রুশ তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ভারত ও চীন কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, এবং তারা না মানলে ট্রাম্প তাদের ওপর চাপ বাড়াতে প্রস্তুত কি না।

ভারত: অংশগ্রহণের সম্ভাবনা বেশি
সম্প্রতি পর্যন্ত ভারত মস্কোর সঙ্গে জ্বালানি সম্পর্ক জোরদার করছিল। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার হিসাবে, ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে ভারত প্রতিদিন ১.৯ মিলিয়ন ব্যারেল রুশ তেল কিনেছে—এটি রাশিয়ার মোট রপ্তানির প্রায় ৪০ শতাংশ। আবার, ভারতে ৪ লাখ ব্যারেল প্রতিদিন প্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতা সম্পন্ন বাদিনার রিফাইনারিতে রসনেফটের ৪৯ শতাংশ অংশীদারি আছে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি শুল্ক কমানোর বিনিময়ে রুশ তেল কেনা কমাতে ট্রাম্পের চাপ এখন দিল্লির ওপর অনেক বেশি। ফলে দেশীয় রিফাইনিং শিল্পের জন্য কষ্টকর হলেও ভারত দ্রুত রুশ তেল আমদানি কমাতে পারে। তুরস্ক—রুশ তেলের তৃতীয় বৃহৎ ক্রেতা—কেনাকাটা বন্ধের দিকেই যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চীন: আসল পরীক্ষার মঞ্চ
সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হবে সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীনের প্রতিক্রিয়া। জানুয়ারি–সেপ্টেম্বরে চীন স্থল ও সমুদ্রপথে গড়ে প্রতিদিন ২.১ মিলিয়ন ব্যারেল রুশ তেল আমদানি করেছে—যা চীনের মোট অপরিশোধিত তেল আমদানির প্রায় ১৮ শতাংশ। রসনেফটের মালিকানাধীন ক্ষেত্রগুলো থেকে তেল আনে এমন ইএসপিও পাইপলাইনের মাধ্যমে আসা আমদানি এই মোটের প্রায় ৪০ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ দাম বাড়িয়ে দিলে সতর্কতার অংশ হিসেবে শুরুতে আমদানি কিছুটা কমাতে পারে চীন। তবে আগের নিষেধাজ্ঞাগুলো নিয়ে বেইজিং যে ধারাবাহিকভাবে আপত্তি জানিয়েছে, তা দেখলে এই নিষেধাজ্ঞা মানবে কি না তা অনিশ্চিত।

এখন পর্যন্ত রুশ তেল–গ্যাস কেনায় চীনের ওপর ট্রাম্প তেমন বড় চাপ দেননি। কিছু ছোট চীনা রিফাইনারির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সাইবেরিয়ার কঠোর নিষেধাজ্ঞায় থাকা আর্কটিক এলএনজি–২ প্রকল্প থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস নেওয়া চীনা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

কিন্তু যদি ট্রাম্প বড় চীনা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন, তা হলে বেইজিং পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে। এরই মধ্যে দুই পরাশক্তির মধ্যে বাণিজ্য আলোচনায় টানাপোড়েন চলছে।

সময়ের সুবিধা ট্রাম্পের পক্ষে
ট্রাম্প দীর্ঘস্থায়ী দামের উল্লম্ফন তৈরি করতে চান না—এটি মার্কিন ভোক্তাদের কাছে অত্যন্ত অজনপ্রিয় হবে। তবে সময় তাঁর পক্ষে যেতে পারে।

ধরা যাক, চীন ও ভারত রুশ তেল কেনা পুরোটা বা অংশত কমিয়ে দেয়—রাশিয়ার মোট অপরিশোধিত বিক্রির প্রায় ৭৫ শতাংশ এই দুই বাজারে যায়। সেক্ষেত্রে বাজারকে বিকল্প উৎস থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪ মিলিয়ন ব্যারেল পর্যন্ত তেল জোগাড় করতে হতে পারে।

কিন্তু বর্তমানে তেলবাজারে বড় মাত্রায় অতিরিক্ত সরবরাহ আছে বলে ধরা হচ্ছে। আইইএ অনুমান করছে, ২০২৫ সালে প্রতিদিন ২.৩৫ মিলিয়ন ব্যারেল এবং আগামী বছর ৪ মিলিয়ন ব্যারেল (বিশ্ব চাহিদার প্রায় ৪ শতাংশ) উদ্বৃত্ত থাকবে।

এই সম্ভাব্য উদ্বৃত্ত ট্রাম্পকে উল্লেখযোগ্য সুরক্ষা বলয় দিচ্ছে—তিনি চাইলে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল থেকে আয়ের ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ বসালে স্বল্পমেয়াদে তার অভিঘাত সামলানো সহজ হতে পারে।

তবু শেষ পর্যন্ত রাশিয়া বৈশ্বিক তেলবাজারের বড় একটি চাকা। মস্কোর রপ্তানি সীমিত করার মার্কিন ব্যবস্থা যদি টেকসই ও কার্যকর হয়, দামের ঊর্ধ্বগতি ও বাজার অস্থিরতা অনিবার্য—যা ট্রাম্প প্রায় নিশ্চিতভাবেই এড়াতে চাইবেন।

ট্রাম্প হয়তো বাজি ধরেছেন—আর্থিক কষ্টের ভয় দেখালে পুতিন দ্রুত আলোচনার টেবিলে আসবেন; তাতে দীর্ঘস্থায়ী দামের ধাক্কার ঝুঁকি কমবে এবং মার্কিন ভোক্তারা বাঁচবেন।

তিনি এই ঝুঁকি নেবেন কি না—এবং চীনকে রাগানোর সম্ভাবনাও মেনে নেবেন কি না—তা আগামী কয়েক সপ্তাহেই পরিষ্কার হবে।