চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বাংলাদেশের শিল্প ও সেবা খাতকে দ্রুত পরিবর্তনের পথে নিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে স্মার্ট ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর সভাপতি তাসকিন আহমেদ।
শিল্প ও সেবা খাতে এআইয়ের প্রভাব
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বাংলাদেশের শিল্প ও সেবা খাতকে আমূল পরিবর্তন করে দিচ্ছে। ফলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের (ফোরআইআর) যুগে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে স্মার্ট ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।
সোমবার ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন। আলোচনার বিষয় ছিল—‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে স্মার্ট মানবসম্পদ উন্নয়ন’।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব: প্রযুক্তি নয়, একটি মৌলিক পরিবর্তন
তাসকিন আহমেদ বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কেবল একটি প্রযুক্তিগত পরিবর্তন নয়; বরং এটি উৎপাদন ব্যবস্থা, ব্যবসায়িক কাঠামো ও শ্রমবাজারের এক মৌলিক রূপান্তর।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) এক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই বিদ্যমান চাকরির এক-চতুর্থাংশ বদলে যাবে।
তিনি আরও বলেন, উন্নয়নশীল দেশ থেকে উত্তরণের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা ধরে রাখতে স্মার্ট মানবসম্পদই হবে মূল চালিকা শক্তি। এজন্য শিক্ষাব্যবস্থায় মৌলিক সংস্কার, কারিগরি শিক্ষায় জোর এবং শিল্প-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় প্রয়োজন।
দক্ষতা উন্নয়নে সমন্বয়ের অভাব ও চ্যালেঞ্জ
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজনীন কাওসার চৌধুরী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বলেন, দক্ষতা উন্নয়নে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং সচেতনতার ঘাটতি অন্যতম বড় সমস্যা।
তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটি কাঠামোগত ভিত্তি তৈরি শেষে এখন মানবসম্পদ প্রশিক্ষণে গুরুত্ব দিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে জাপানে ১ লাখ দক্ষ কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যে ভাষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে।
ড. নাজনীন বলেন, দক্ষতা উন্নয়নকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চাহিদার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব জোরদার ও নারী শ্রমিকদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ সুযোগ তৈরি করাও জরুরি।
প্রযুক্তিগত পরিবর্তনে ঝুঁকিতে কর্মসংস্থান
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব রিডিং-এর ভিজিটিং অধ্যাপক ড. এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ। তিনি ২০১৯ সালের একটি a2i-ইউএনডিপি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক, খাদ্য, কৃষি, আসবাব, পর্যটন ও হোটেল খাতে প্রায় ৫৩ লাখ ৮০ হাজার কর্মসংস্থান হারানোর ঝুঁকি রয়েছে।
তিনি বলেন, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মানবসম্পদ প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ অপরিহার্য।
শিক্ষায় বাস্তব দক্ষতার ঘাটতি
ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি)-এর সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের মাত্র ২০ শতাংশ স্নাতক তাদের যোগ্যতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ চাকরি পান।
তিনি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার এবং দক্ষতাভিত্তিক পেশার প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আহ্বান জানান।
নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতি
অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই সিনিয়র সহসভাপতি রাজীব এইচ চৌধুরী, সহসভাপতি মো. সালেম সুলায়মানসহ পরিচালনা পর্ষদ সদস্য ও বিভিন্ন খাতের অংশীজন উপস্থিত ছিলেন।
#এআই, মানবসম্পদ, ডিসিসিআই, শিল্পবিপ্লব, দক্ষতা_উন্নয়ন, প্রযুক্তি, বাংলাদেশ_অর্থনীতি, সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 

















