০৮:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
তারেক রহমানের দেশে ফেরা সামনে রেখে শঙ্কার কথা জানালেন মির্জা আব্বাস গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোটের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ওসমান হাদির বোন পাচ্ছেন অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান তিন যুগ, তিন ফাইনাল, একই বাধা ভারত—সারফরাজের নামেই আবার পাকিস্তানের জয়গাথা সোশ্যাল মিডিয়া যাচাইয়ে জট, দেশে ফেরা থামাচ্ছেন ভারতীয় কর্মীরা অ্যাশেজ ধরে রাখলো অস্ট্রেলিয়া মাত্র এগারো দিনে, কথিত দুর্বল দলেই ইংল্যান্ডকে ধস গোপালগঞ্জে শেখ হাসিনার আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী এবার বিএনপি-জামায়াত!  হত্যার ঝুঁকিতে পঞ্চাশজন, গানম্যান পেয়েছেন বিশজন ২০২৫ সালের তারকা: সিনেমার ভবিষ্যৎ আর নতুন তারকাখ্যাতির অর্থ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ২ জানুয়ারির নির্দেশিকা প্রকাশ

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫৪)

কদলীবৃক্ষ সকল জলে ভাসাইয়া, তদুপরি বংশের দ্বারা নানাবিধ গৃহ, দ্বিতল, ত্রিতল অট্টালিকা, রণতরী প্রভৃতি নির্মিত এবং নানাবর্ণের কাগজদ্বারা মণ্ডিত করিয়া, অগণ্য আলোক প্রজ্বলিত করা হয়। মুর্শিদা-বাদের উত্তরাংশে জাফরাগঞ্জে উক্ত আলোকযান নিৰ্ম্মিত হইয়া থাকে। রাত্রি হইলে, মতিমহালদেউড়ী হইতে এক বৃহৎ জৌলুষ জাফরাগঞ্জাভি-মুখে অগ্রসর হয়। সুসজ্জিত হস্তী, অশ্ব, উষ্ট্র, অশ্বারোহী ও পদাতিকগণ সেই জৌলুষের সহিত গমন করে।

স্বর্ণরৌপ্যমণ্ডিত নানাবিধ যান ধীরে ধীরে চলিতে থাকে; নিজামতের সুমধুর ব্যান্ড গুরুগম্ভীর রবে বাচ্চ করিতে করিতে জৌলুষকে গাম্ভীর্য্যময় করিয়া তুলে, নবাববংশীয়-গণ বহুমূল্য পরিচ্ছদে ও মণিমাণিক্যখচিত অলঙ্কারে বিভূষিত হইয়া, তাহার শোভা বর্দ্ধন করিতে থাকেন। মুর্শিদাবাদের ন্যায় এমন সমা-রোহপূর্ণ জৌলুষ বাঙ্গলার কুত্রাপি দৃষ্ট হয় না। মুর্শিদাবাদের জৌলুষ এখনও ইহাকে বাঙ্গলা বিহার উড়িষ্যার রাজধানী বলিয়া স্মরণ করাইয়া দেয়। কিন্তু ক্রমে সমস্তই মন্দীভূত হইতেছে।

জৌলুষ ক্রমে ক্রমে আলোকযানের নিকটস্থ হইলে, ব্যাণ্ড ও কতিপয় সুসজ্জিত সিপাহী আলোকযানে আরোহণ করে। খিজিরের উদ্দেশে ত্রুটি, ক্ষীর, পান ইত্যাদি ও একটি প্রদীপ যানের মধ্যস্থলে স্থাপিত করা হয়। পূর্ব্বে সোনার প্রদীপ দেওয়া হইত। পরে সেই অগণ্য আলোকপূর্ণ যান ধীরে ধীরে ভাসিতে আরম্ভ করে। যানের অগ্র পশ্চাৎ অসংখ্য কপূরপূর্ণ মৃৎপাত্রে প্রজ্বলিত করিয়া, ভাসাইয়া দেয়। এই সময়ে অন্যান্য লোকেও অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আলোকযান ভাসমান করে। চারিদিকে আলোক-পারিষদ লইয়া সেই সুবৃহৎ আলোকযান নিজামত ব্যাণ্ডের সুমধুর বাদ্যের সহিত অগ্রসর হইতে থাকে।

কিয়দ্দুর গমন করিলে, তাঁর হইতে আতাসবাজী আরম্ভ হয়। পূর্ব্বে আতসবাজীর অত্যন্ত ধূম ছিল। মুর্শিদাবাদের পশ্চিমতীরে রৌশনীবাগ নামক স্থানে সুবৃহৎ আলোকগৃহ নিৰ্ম্মিত হইত। বংশনিৰ্ম্মিত ত্রিতল গৃহ নানাবিধ কাগজে মণ্ডিত হইয়া, শত শত প্রজ্বলিত দীপ ধারণ করিয়া, পরপারস্থ সহস্রদ্বার ভবনকে উপহাস করিয়া উঠিত। তাহার প্রতিবিম্ব ভাগীরথীবক্ষে পতিত হইলে বোধ হইত, যেন তাঁহার গর্ভহইতে একটি উজ্জল আলোকগৃহ ভাসিয়া উঠিতেছে।

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

তারেক রহমানের দেশে ফেরা সামনে রেখে শঙ্কার কথা জানালেন মির্জা আব্বাস

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫৪)

১১:০০:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

কদলীবৃক্ষ সকল জলে ভাসাইয়া, তদুপরি বংশের দ্বারা নানাবিধ গৃহ, দ্বিতল, ত্রিতল অট্টালিকা, রণতরী প্রভৃতি নির্মিত এবং নানাবর্ণের কাগজদ্বারা মণ্ডিত করিয়া, অগণ্য আলোক প্রজ্বলিত করা হয়। মুর্শিদা-বাদের উত্তরাংশে জাফরাগঞ্জে উক্ত আলোকযান নিৰ্ম্মিত হইয়া থাকে। রাত্রি হইলে, মতিমহালদেউড়ী হইতে এক বৃহৎ জৌলুষ জাফরাগঞ্জাভি-মুখে অগ্রসর হয়। সুসজ্জিত হস্তী, অশ্ব, উষ্ট্র, অশ্বারোহী ও পদাতিকগণ সেই জৌলুষের সহিত গমন করে।

স্বর্ণরৌপ্যমণ্ডিত নানাবিধ যান ধীরে ধীরে চলিতে থাকে; নিজামতের সুমধুর ব্যান্ড গুরুগম্ভীর রবে বাচ্চ করিতে করিতে জৌলুষকে গাম্ভীর্য্যময় করিয়া তুলে, নবাববংশীয়-গণ বহুমূল্য পরিচ্ছদে ও মণিমাণিক্যখচিত অলঙ্কারে বিভূষিত হইয়া, তাহার শোভা বর্দ্ধন করিতে থাকেন। মুর্শিদাবাদের ন্যায় এমন সমা-রোহপূর্ণ জৌলুষ বাঙ্গলার কুত্রাপি দৃষ্ট হয় না। মুর্শিদাবাদের জৌলুষ এখনও ইহাকে বাঙ্গলা বিহার উড়িষ্যার রাজধানী বলিয়া স্মরণ করাইয়া দেয়। কিন্তু ক্রমে সমস্তই মন্দীভূত হইতেছে।

জৌলুষ ক্রমে ক্রমে আলোকযানের নিকটস্থ হইলে, ব্যাণ্ড ও কতিপয় সুসজ্জিত সিপাহী আলোকযানে আরোহণ করে। খিজিরের উদ্দেশে ত্রুটি, ক্ষীর, পান ইত্যাদি ও একটি প্রদীপ যানের মধ্যস্থলে স্থাপিত করা হয়। পূর্ব্বে সোনার প্রদীপ দেওয়া হইত। পরে সেই অগণ্য আলোকপূর্ণ যান ধীরে ধীরে ভাসিতে আরম্ভ করে। যানের অগ্র পশ্চাৎ অসংখ্য কপূরপূর্ণ মৃৎপাত্রে প্রজ্বলিত করিয়া, ভাসাইয়া দেয়। এই সময়ে অন্যান্য লোকেও অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আলোকযান ভাসমান করে। চারিদিকে আলোক-পারিষদ লইয়া সেই সুবৃহৎ আলোকযান নিজামত ব্যাণ্ডের সুমধুর বাদ্যের সহিত অগ্রসর হইতে থাকে।

কিয়দ্দুর গমন করিলে, তাঁর হইতে আতাসবাজী আরম্ভ হয়। পূর্ব্বে আতসবাজীর অত্যন্ত ধূম ছিল। মুর্শিদাবাদের পশ্চিমতীরে রৌশনীবাগ নামক স্থানে সুবৃহৎ আলোকগৃহ নিৰ্ম্মিত হইত। বংশনিৰ্ম্মিত ত্রিতল গৃহ নানাবিধ কাগজে মণ্ডিত হইয়া, শত শত প্রজ্বলিত দীপ ধারণ করিয়া, পরপারস্থ সহস্রদ্বার ভবনকে উপহাস করিয়া উঠিত। তাহার প্রতিবিম্ব ভাগীরথীবক্ষে পতিত হইলে বোধ হইত, যেন তাঁহার গর্ভহইতে একটি উজ্জল আলোকগৃহ ভাসিয়া উঠিতেছে।