দেশে কীটনাশক উৎপাদন শিল্পকে শক্তিশালী ও আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরকার কীটনাশক উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে স্থানীয় উৎপাদকরা খুচরা দামে অন্তত ৩০ শতাংশ পর্যন্ত পণ্য সস্তায় বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছে শিল্পখাত, যা কৃষকদের জন্য বড় স্বস্তি বয়ে আনবে।
কৃষি খাতে স্বনির্ভরতা বাড়াতে সরকারের উদ্যোগ
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বামা) এই নীতিগত পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের মতে, উচ্চ শুল্কের কারণে দেশীয় উৎপাদকরা বিদেশি প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছিল।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বামাকে জানানো হয়েছে যে, কাঁচামাল আমদানি সহজ করতে এবং স্থানীয় উৎপাদন উৎসাহিত করতে শুল্ক ছাড়ের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
‘দেশীয় কীটনাশক উৎপাদন ও রপ্তানির দ্বার উন্মোচন’ শীর্ষক এক সভায় ২৯ সেপ্টেম্বর এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় ১১টি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন এবং বাণিজ্য সচিব সভাপতিত্ব করেন।
দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
সভায় দুটি মূল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়:
১. ওষুধ শিল্পের মতো একটি কাঠামো গঠন করা হবে, যা কাঁচামাল আমদানির অনুমোদন, দাম নির্ধারণ ও উৎপাদন তদারকি করবে।
২. যেসব কাঁচামাল শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় আসবে, সেই তালিকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। পরে তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠিয়ে শুল্ক ছাড় কার্যকর করা হবে।
শুল্কের বৈষম্য ও উৎপাদন ব্যয়ের প্রভাব
বর্তমানে প্রস্তুত কীটনাশক আমদানিতে ৫ শতাংশ কাস্টমস শুল্ক আরোপ করা হয়। কিন্তু স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের জন্য যে কাঁচামাল আমদানি করতে হয়, তার ওপর ৩০ থেকে ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হয়।
এই বৈষম্যের কারণে দেশীয় উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, ফলে অধিকাংশ কীটনাশক বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। শিল্পখাতের নেতাদের মতে, শুল্ক ছাড় কার্যকর হলে দেশীয় উৎপাদন বেড়ে যাবে, কৃষকরা সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পাবেন এবং কৃষি খাত ধীরে ধীরে স্বনির্ভর হবে।
দেশীয় উৎপাদকদের বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে দেশে প্রায় ২০টি প্রতিষ্ঠান কীটনাশক উৎপাদন করছে, যার মধ্যে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার (এনএসি), অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি (এসিআই) ও স্কয়ার গ্রুপ অন্যতম।
দেশীয় বাজারের আকার প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা, যার ৫৫ শতাংশ দখলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর। স্থানীয় আমদানিকারকদের অংশ ৪১ শতাংশ এবং দেশীয় উৎপাদকদের শেয়ার মাত্র ৪ শতাংশ।
বামা সভাপতির মন্তব্য
বামা সভাপতি কে এস এম মোস্তফিজুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন,
“আমরা বহুদিন ধরে এই নীতিগত পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কাঁচামালে উচ্চ শুল্কের কারণে দেশীয় উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। যদি এনবিআর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সঠিকভাবে এটি বাস্তবায়ন করে, তাহলে আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যেই বাংলাদেশকে আর কীটনাশক আমদানি করতে হবে না। বরং ওষুধ শিল্পের মতো আমরাও রপ্তানি শুরু করতে পারব।”
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও শিল্পখাতের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, সরকারের এই উদ্যোগের ফলে দেশ একটি প্রতিযোগিতামূলক ও রপ্তানিমুখী কীটনাশক শিল্প গড়ে তুলতে পারবে। স্থানীয় উৎপাদকদের দক্ষতা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে কৃষি খাতেও টেকসই উন্নয়ন ঘটবে।
#কৃষি #শিল্পনীতি #কীটনাশক #বাংলাদেশ #শুল্কছাড় #বাণিজ্য_মন্ত্রণালয় #বামা #কৃষকস্বার্থ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















