১২:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রে কর্পোরেট ছাঁটাইয়ের ঢেউ—অফিসকর্মীদের জন্য সংকুচিত চাকরির বাজার সাবেক জাপানি প্রধানমন্ত্রীর হত্যার তিন বছর পর শুরু বহুল আলোচিত বিচার—‘আমি করেছি’, আদালতে স্বীকারোক্তি চীনা খনির বিষাক্ত বর্জ্যে বিপর্যস্ত জাম্বিয়া নিয়া দা কস্তার ১৯৫০-এর প্রেক্ষাপটে নির্মিত আধুনিক ‘হেডা’—টেসা থম্পসনের অভিনয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে মানুষও এখন এআই ব্যবহার করে রান্না, ভ্রমণ ও স্বাস্থ্যপরামর্শে দক্ষতা অর্জন করছে মার্কিন কংগ্রেসম্যান চার্লস ডিগস—অসাধারণ রাজনৈতিক জীবনের শেষ পরিণতি কেলেঙ্কারিতে নকিয়ার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে এনভিডিয়া পরিবর্তনের পথে কেএফসি—হারানো বাজার ফিরে পেতে নতুন রেসিপির সন্ধান যুক্তরাষ্ট্র–চীন সম্পর্কের নতুন অধ্যায়, লি জে মিয়ংয়ের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ—জাপানের তাকাইচির অংশগ্রহণে আঞ্চলিক শক্তির নতুন সমীকরণ নেদারল্যান্ডস–চীন বিরোধের প্রভাব গাড়ি শিল্পে—যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিমুখী কেন্দ্র সেলায়া কারখানায় কার্যক্রম স্থগিত

মানসিক স্বাস্থ্যের নির্মম বাস্তবতা

মানবিক সীমারেখা ভেঙে ফেলা এক বাস্তবতা

মানসিক স্বাস্থ্য কোনো পরিবার, সম্পদ বা পরিচয়ের সীমা মানে না। এটি এমন এক সমানাধিকারী শক্তি, যা সমাজের প্রতিটি স্তরকে ছুঁয়ে যায়—কোনো নাম, খ্যাতি বা প্রভাব এর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। মাত্র ১৯ বছর বয়সী এম্যানুয়েল “এম্যান” আতিয়েঞ্জার মৃত্যু আজ কেবল ব্যক্তিগত শোক নয়, বরং একটি জাতীয় সতর্কবার্তা।

সচেতনতা মানেই নিরাপত্তা নয়

এম্যান ছিলেন প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান, সেরা শিক্ষায় শিক্ষিত, থেরাপি ও সহায়তার পরিবেশে বেড়ে ওঠা এক তরুণী। তিনি মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে আওয়াজ তুলেছিলেন, প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘মেন্টালিটি ম্যানিলা’ নামের এক যুব আন্দোলন। লস অ্যাঞ্জেলেসে শিল্প ও ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন।

তবু তিনি আত্মহত্যা করলেন। এটি দেখায়, সচেতনতা মানেই প্রতিরোধ নয়, আর সুযোগ মানেই চিকিৎসা নয়। মানসিক অসুস্থতা শ্রেণি, খ্যাতি বা পারিবারিক প্রভাব—কোনো কিছুর সঙ্গেই আপস করে না।

Emman Atienza

সমাজের চাপ ও মানসিক ক্লান্তি

এম্যানের মতো তরুণেরা যখন নিজেকে সচেতনতার দূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন, তখন তারা নিজেদেরও বিশাল মানসিক চাপের মুখে ফেলেন। প্রত্যেকটি পোস্ট হয়ে ওঠে অন্য কারও জীবনের আশ্রয়বিন্দু। কিন্তু এই আশ্রয়ও একসময় ভেঙে পড়ে।

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা আর তা টিকে থাকা—এ দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন লড়াই। জনসমক্ষে নিজের ভেতরের অন্ধকারের কথা বলা একদিকে সাহসিকতা, অন্যদিকে ক্লান্তিকর দায়ও বটে।

সাংবাদিকতার আয়নায় এক নির্মম প্রতিচ্ছবি

এই বিষয়গুলো নিয়ে যারা লিখি, তারাও অনেক সময় মানবিক সংযোগ হারিয়ে ফেলি। খবর প্রকাশের তাড়ায় আমরা ভুলে যাই যে, প্রতিটি সংবাদ একেকটি ভাঙা মানুষের গল্প। পপ তারকা জেসন ডেরুলোর মেরুদণ্ডের আঘাত তাকে হতাশায় ফেলেছিল, আর দীপিকা পাড়ুকোন খোলামেলাভাবে বলেছিলেন, কেমন লাগে যখন সকালে উঠতেও ইচ্ছে হয় না।

এঁদের মতো এম্যানও ছিলেন সেই ভঙ্গুর বাস্তবতার অংশ—চকচকে বাহ্যিকতার আড়ালে এক গভীর নিঃসঙ্গতা।

Emman Atienza

এক মায়ের উপলব্ধি

এম্যানের মৃত্যুর সংবাদ কাভার করার পর লেখিকা বাড়ি ফিরে দেখলেন তার ১৪ বছরের মেয়ে—সংবেদনশীল, বুদ্ধিমান, কিন্তু ক্রমাগত ফোনে নিমগ্ন। সেই মুহূর্তে তিনি বুঝলেন, এখনই সময় কথা বলার। তিনি বললেন, ‘নিজের মূল্য কখনোই ইন্টারনেটের অপরিচিত মানুষের হাতে দিও না। নিজের অস্তিত্বকে “লাইক” বা মন্তব্যের ওপর নির্ভর করো না।’

এই প্রজন্মের জন্য ইন্টারনেট এখন কেবল প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি এক আয়না—যেখানে তারা নিজেদের নয়, বরং অন্যদের চোখে নিজেদের প্রতিচ্ছবি দেখে।

নিখুঁত জীবনের ভ্রান্ত ধারণা

সবকিছু স্বাভাবিক দেখালেও ভেতরে গভীর ক্ষয় চলতে পারে। সামাজিক স্বীকৃতি আর আত্মপরিচয়ের মধ্যে পার্থক্য না বোঝার ফলেই অনেক তরুণ ভেঙে পড়ছে। এম্যানও একসময় সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন—একটি ভাইরাল ভিডিওর কারণে। বাহ্যিকভাবে এটি ছিল সামান্য বিতর্ক, কিন্তু মানসিকভাবে তা ছিল গভীর আঘাত।

Emman Atienza's death reveals harsh truths: Mental health is that one battle  which defeats fame, wealth or success

প্রয়োজন বাস্তব পদক্ষেপের

এম্যানের মৃত্যুকে আলাদা ঘটনা হিসেবে দেখা যাবে না। এটি এমন এক সংকেত যা সমাজ বহুদিন ধরে উপেক্ষা করছে। আজ প্রয়োজন—

১. মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবার অংশ হিসেবে বিবেচনা করা।

২. অভিভাবকদের শুধু নজরদারি নয়, সন্তানদের পাশে থেকে আবেগীয় আশ্রয় দেওয়া।

৩. সমাজের উপলব্ধি করা যে, প্রভাব বা সম্পদ কখনোই কষ্টের বিরুদ্ধে ঢাল নয়।

মানসিক স্বাস্থ্য এক মহাসাম্যবাদী সত্য—এটি ধ্বংস করে দেয় সেই মিথ যে, সাফল্য, খ্যাতি বা আর্থিক স্থিতি মানুষকে নিরাপদ রাখে। এম্যান আতিয়েঞ্জার মৃত্যু হৃদয়বিদারক, কিন্তু এটি আমাদের জন্য শিক্ষণীয়ও বটে।

এখন প্রশ্ন একটাই—এমন মৃত্যু আবার ঘটার আগে, আমরা কি সত্যিই কিছু করব?

জনপ্রিয় সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রে কর্পোরেট ছাঁটাইয়ের ঢেউ—অফিসকর্মীদের জন্য সংকুচিত চাকরির বাজার

মানসিক স্বাস্থ্যের নির্মম বাস্তবতা

০৯:০০:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

মানবিক সীমারেখা ভেঙে ফেলা এক বাস্তবতা

মানসিক স্বাস্থ্য কোনো পরিবার, সম্পদ বা পরিচয়ের সীমা মানে না। এটি এমন এক সমানাধিকারী শক্তি, যা সমাজের প্রতিটি স্তরকে ছুঁয়ে যায়—কোনো নাম, খ্যাতি বা প্রভাব এর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। মাত্র ১৯ বছর বয়সী এম্যানুয়েল “এম্যান” আতিয়েঞ্জার মৃত্যু আজ কেবল ব্যক্তিগত শোক নয়, বরং একটি জাতীয় সতর্কবার্তা।

সচেতনতা মানেই নিরাপত্তা নয়

এম্যান ছিলেন প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান, সেরা শিক্ষায় শিক্ষিত, থেরাপি ও সহায়তার পরিবেশে বেড়ে ওঠা এক তরুণী। তিনি মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে আওয়াজ তুলেছিলেন, প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘মেন্টালিটি ম্যানিলা’ নামের এক যুব আন্দোলন। লস অ্যাঞ্জেলেসে শিল্প ও ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন।

তবু তিনি আত্মহত্যা করলেন। এটি দেখায়, সচেতনতা মানেই প্রতিরোধ নয়, আর সুযোগ মানেই চিকিৎসা নয়। মানসিক অসুস্থতা শ্রেণি, খ্যাতি বা পারিবারিক প্রভাব—কোনো কিছুর সঙ্গেই আপস করে না।

Emman Atienza

সমাজের চাপ ও মানসিক ক্লান্তি

এম্যানের মতো তরুণেরা যখন নিজেকে সচেতনতার দূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন, তখন তারা নিজেদেরও বিশাল মানসিক চাপের মুখে ফেলেন। প্রত্যেকটি পোস্ট হয়ে ওঠে অন্য কারও জীবনের আশ্রয়বিন্দু। কিন্তু এই আশ্রয়ও একসময় ভেঙে পড়ে।

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা আর তা টিকে থাকা—এ দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন লড়াই। জনসমক্ষে নিজের ভেতরের অন্ধকারের কথা বলা একদিকে সাহসিকতা, অন্যদিকে ক্লান্তিকর দায়ও বটে।

সাংবাদিকতার আয়নায় এক নির্মম প্রতিচ্ছবি

এই বিষয়গুলো নিয়ে যারা লিখি, তারাও অনেক সময় মানবিক সংযোগ হারিয়ে ফেলি। খবর প্রকাশের তাড়ায় আমরা ভুলে যাই যে, প্রতিটি সংবাদ একেকটি ভাঙা মানুষের গল্প। পপ তারকা জেসন ডেরুলোর মেরুদণ্ডের আঘাত তাকে হতাশায় ফেলেছিল, আর দীপিকা পাড়ুকোন খোলামেলাভাবে বলেছিলেন, কেমন লাগে যখন সকালে উঠতেও ইচ্ছে হয় না।

এঁদের মতো এম্যানও ছিলেন সেই ভঙ্গুর বাস্তবতার অংশ—চকচকে বাহ্যিকতার আড়ালে এক গভীর নিঃসঙ্গতা।

Emman Atienza

এক মায়ের উপলব্ধি

এম্যানের মৃত্যুর সংবাদ কাভার করার পর লেখিকা বাড়ি ফিরে দেখলেন তার ১৪ বছরের মেয়ে—সংবেদনশীল, বুদ্ধিমান, কিন্তু ক্রমাগত ফোনে নিমগ্ন। সেই মুহূর্তে তিনি বুঝলেন, এখনই সময় কথা বলার। তিনি বললেন, ‘নিজের মূল্য কখনোই ইন্টারনেটের অপরিচিত মানুষের হাতে দিও না। নিজের অস্তিত্বকে “লাইক” বা মন্তব্যের ওপর নির্ভর করো না।’

এই প্রজন্মের জন্য ইন্টারনেট এখন কেবল প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি এক আয়না—যেখানে তারা নিজেদের নয়, বরং অন্যদের চোখে নিজেদের প্রতিচ্ছবি দেখে।

নিখুঁত জীবনের ভ্রান্ত ধারণা

সবকিছু স্বাভাবিক দেখালেও ভেতরে গভীর ক্ষয় চলতে পারে। সামাজিক স্বীকৃতি আর আত্মপরিচয়ের মধ্যে পার্থক্য না বোঝার ফলেই অনেক তরুণ ভেঙে পড়ছে। এম্যানও একসময় সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন—একটি ভাইরাল ভিডিওর কারণে। বাহ্যিকভাবে এটি ছিল সামান্য বিতর্ক, কিন্তু মানসিকভাবে তা ছিল গভীর আঘাত।

Emman Atienza's death reveals harsh truths: Mental health is that one battle  which defeats fame, wealth or success

প্রয়োজন বাস্তব পদক্ষেপের

এম্যানের মৃত্যুকে আলাদা ঘটনা হিসেবে দেখা যাবে না। এটি এমন এক সংকেত যা সমাজ বহুদিন ধরে উপেক্ষা করছে। আজ প্রয়োজন—

১. মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবার অংশ হিসেবে বিবেচনা করা।

২. অভিভাবকদের শুধু নজরদারি নয়, সন্তানদের পাশে থেকে আবেগীয় আশ্রয় দেওয়া।

৩. সমাজের উপলব্ধি করা যে, প্রভাব বা সম্পদ কখনোই কষ্টের বিরুদ্ধে ঢাল নয়।

মানসিক স্বাস্থ্য এক মহাসাম্যবাদী সত্য—এটি ধ্বংস করে দেয় সেই মিথ যে, সাফল্য, খ্যাতি বা আর্থিক স্থিতি মানুষকে নিরাপদ রাখে। এম্যান আতিয়েঞ্জার মৃত্যু হৃদয়বিদারক, কিন্তু এটি আমাদের জন্য শিক্ষণীয়ও বটে।

এখন প্রশ্ন একটাই—এমন মৃত্যু আবার ঘটার আগে, আমরা কি সত্যিই কিছু করব?