০৪:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
ঋণ কমাতে কেরিং-এর বড় পদক্ষেপ ড্রোন প্রতিরোধে বৈশ্বিক দৌড় পিয়ানোর অলিম্পিকের চূড়ান্ত পর্বে সুরের লড়াই , কানাডার কেভিন চেন ফাইনালে জেমস ফক্সের ‘ক্রাফ্টল্যান্ড’—ব্রিটেনের হারিয়ে যাওয়া হস্তশিল্পের জীবন্ত ইতিহাস বিলুপ্তির তালিকায় নতুন নাম—একটি পাখি, একটি শুঁয়োপোকা ও একটি শ্রু প্রজাতি হারিয়ে গেল পৃথিবী থেকে মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫৬) কানাডায় অনিরাপদ বোধ করছেন ভারতীয়রা, উদ্বেগ জানালেন নয়াদিল্লির হাইকমিশনার নির্বাচন বানচালে হঠাৎ আক্রমণও হতে পারে জেএমবির তৎপরতার সময় বোয়ালমারীতে নির্মম হত্যাকাণ্ড—পলাতক চার আসামির অনুপস্থিতিতে আদালতের দণ্ডাদেশ সিলেটে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকদের ১১ দফা দাবি—ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়ক অবরোধ

বিলুপ্তির তালিকায় নতুন নাম—একটি পাখি, একটি শুঁয়োপোকা ও একটি শ্রু প্রজাতি হারিয়ে গেল পৃথিবী থেকে

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) সম্প্রতি প্রকাশিত ২০২৫ সালের রেড লিস্টে নতুন করে ঘোষণা করেছে বেশ কয়েকটি প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতির বিলুপ্তি। এর মধ্যে রয়েছে একটি পরিযায়ী পাখি—‘স্লেন্ডার-বিল্ড কার্লিউ’, একটি শ্রু এবং একটি শামুক প্রজাতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তালিকা জীববৈচিত্র্যের ভয়াবহ সংকটের দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।


বিলুপ্ত প্রাণীর তালিকা

আইইউসিএনের সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ছয়টি প্রজাতি আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • স্লেন্ডার-বিল্ড কার্লিউ (Numenius tenuirostris) — সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৯৫ সালে মরক্কোতে।
  • ক্রিসমাস আইল্যান্ড শ্রু (Crocidura trichura) — ১৯৮০-এর দশক থেকেই হারিয়ে গেছে।
  • কোন শামুক (Conus lugubris) — প্রায় একই সময়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
  • Diospyros angulata — এবনি গাছের ঘনিষ্ঠ প্রজাতি, সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি।
  • তিনটি অস্ট্রেলীয় স্তন্যপায়ী প্রাণী—মার্ল (Perameles myosuros), সাউথ-ইস্টার্ন ব্যান্ডিকুট (Perameles notina) এবং নালারবর ব্যান্ডিকুট (Perameles papillon)।
  • Delissea sinuata, হাওয়াই দ্বীপের একটি বিরল উদ্ভিদ প্রজাতি, প্রথমবারের মতো ‘বিলুপ্ত’ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে।

The slender-billed curlew is declared extinct | Natural History Museum

পাখির বিলুপ্তি: এক সতর্ক সংকেত

আইইউসিএনের মতে, ‘স্লেন্ডার-বিল্ড কার্লিউ’-এর বিলুপ্তির প্রধান কারণ ছিল আবাসস্থল ধ্বংস ও শিকার। পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণ চুক্তির নির্বাহী সচিব অ্যামি ফ্র্যাঙ্কেল বলেন, “এই প্রজাতির বিলুপ্তি পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণের ইতিহাসে এক শোকাবহ অধ্যায়। আশা করি, এই ঘটনা অন্য বিপন্ন প্রজাতি রক্ষায় আন্তর্জাতিক পদক্ষেপকে ত্বরান্বিত করবে।”

বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনালের সমন্বয়ক ইয়ান বারফিল্ড বলেন, “বিশ্বের ৬১ শতাংশ পাখি প্রজাতির সংখ্যা ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে—যা জীববৈচিত্র্যের গভীর সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।”


আর্কটিক অঞ্চলের সীলদের বিপদ

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আর্কটিক অঞ্চলের সীল প্রজাতিগুলো ক্রমে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। আইইউসিএনের তথ্যানুযায়ী:

  • হুডেড সীল (Cystophora cristata) — ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ থেকে এখন ‘বিপন্ন’ পর্যায়ে নেমে এসেছে।
  • বিয়ার্ডেড সীল (Erignathus barbatus) ও হার্প সীল (Pagophilus groenlandicus) — ‘কম ঝুঁকিপূর্ণ’ থেকে ‘প্রায় বিপন্ন’ শ্রেণিতে স্থানান্তরিত হয়েছে।

মূল হুমকি হলো আর্কটিক অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়া, যা তাদের প্রজনন, বিশ্রাম ও খাদ্য অনুসন্ধানের স্থান ধ্বংস করছে। বরফ কমে যাওয়ায় মানুষও এখন সহজে এই এলাকাগুলোতে প্রবেশ করতে পারছে, ফলে প্রজাতিগুলোর ঝুঁকি আরও বেড়েছে।

New publication indicates devastating extinction of the Slender-Billed  Curlew - BirdLife International

বৈশ্বিক পাখির সংকট

বিশ্বজুড়ে পাখির সংখ্যা দ্রুত কমছে — ২০১৬ সালে এই হার ছিল ৪৪ শতাংশ, যা এখন বেড়ে ৬১ শতাংশে পৌঁছেছে। কৃষি সম্প্রসারণ, বননিধন, জলবায়ু পরিবর্তন, অনুপ্রবেশকারী প্রজাতি এবং অবৈধ শিকার—সব মিলিয়ে পাখিদের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পাখিরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে—পরাগায়ন, বীজ ছড়ানো, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ ও মৃত প্রাণীর দেহাবশেষ পরিষ্কার রাখার মাধ্যমে তারা প্রকৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।


আশার আলো: সবুজ সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রত্যাবর্তন

সব কিছুর মধ্যেও কিছু ভালো খবর আছে। আইইউসিএন জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী সবুজ সামুদ্রিক কচ্ছপের (গ্রিন সি টার্টল) সংখ্যা বেড়েছে, যা সফল সংরক্ষণের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। আইইউসিএনের মহাপরিচালক গ্রেথেল আগুইলার বলেন, “আর্কটিক সীল ও বহু পাখির মতো প্রজাতি যেখানে ক্রমে ঝুঁকিতে পড়ছে, সেখানে সবুজ কচ্ছপের পুনরুদ্ধার প্রমাণ করে যে, দৃঢ় ইচ্ছা ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিলে সংরক্ষণ কার্যকর হয়।”

আইইউসিএনের ২০২৫ সালের রেড লিস্ট আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে—মানবসৃষ্ট পরিবর্তন প্রকৃতির অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করছে। কয়েকটি প্রজাতির হারিয়ে যাওয়া শুধু একটি জীবের বিলুপ্তি নয়, বরং পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য ও ভারসাম্যের এক অপূরণীয় ক্ষতি।

— জীববৈচিত্র্য, বিলুপ্ত প্রজাতি, আইইউসিএন, পাখি সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, আর্কটিক সীল, পরিবেশ সংকট, সবুজ কচ্ছপ, সারাক্ষণ রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

ঋণ কমাতে কেরিং-এর বড় পদক্ষেপ

বিলুপ্তির তালিকায় নতুন নাম—একটি পাখি, একটি শুঁয়োপোকা ও একটি শ্রু প্রজাতি হারিয়ে গেল পৃথিবী থেকে

১২:০১:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) সম্প্রতি প্রকাশিত ২০২৫ সালের রেড লিস্টে নতুন করে ঘোষণা করেছে বেশ কয়েকটি প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতির বিলুপ্তি। এর মধ্যে রয়েছে একটি পরিযায়ী পাখি—‘স্লেন্ডার-বিল্ড কার্লিউ’, একটি শ্রু এবং একটি শামুক প্রজাতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তালিকা জীববৈচিত্র্যের ভয়াবহ সংকটের দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।


বিলুপ্ত প্রাণীর তালিকা

আইইউসিএনের সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ছয়টি প্রজাতি আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • স্লেন্ডার-বিল্ড কার্লিউ (Numenius tenuirostris) — সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৯৫ সালে মরক্কোতে।
  • ক্রিসমাস আইল্যান্ড শ্রু (Crocidura trichura) — ১৯৮০-এর দশক থেকেই হারিয়ে গেছে।
  • কোন শামুক (Conus lugubris) — প্রায় একই সময়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
  • Diospyros angulata — এবনি গাছের ঘনিষ্ঠ প্রজাতি, সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি।
  • তিনটি অস্ট্রেলীয় স্তন্যপায়ী প্রাণী—মার্ল (Perameles myosuros), সাউথ-ইস্টার্ন ব্যান্ডিকুট (Perameles notina) এবং নালারবর ব্যান্ডিকুট (Perameles papillon)।
  • Delissea sinuata, হাওয়াই দ্বীপের একটি বিরল উদ্ভিদ প্রজাতি, প্রথমবারের মতো ‘বিলুপ্ত’ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে।

The slender-billed curlew is declared extinct | Natural History Museum

পাখির বিলুপ্তি: এক সতর্ক সংকেত

আইইউসিএনের মতে, ‘স্লেন্ডার-বিল্ড কার্লিউ’-এর বিলুপ্তির প্রধান কারণ ছিল আবাসস্থল ধ্বংস ও শিকার। পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণ চুক্তির নির্বাহী সচিব অ্যামি ফ্র্যাঙ্কেল বলেন, “এই প্রজাতির বিলুপ্তি পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণের ইতিহাসে এক শোকাবহ অধ্যায়। আশা করি, এই ঘটনা অন্য বিপন্ন প্রজাতি রক্ষায় আন্তর্জাতিক পদক্ষেপকে ত্বরান্বিত করবে।”

বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনালের সমন্বয়ক ইয়ান বারফিল্ড বলেন, “বিশ্বের ৬১ শতাংশ পাখি প্রজাতির সংখ্যা ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে—যা জীববৈচিত্র্যের গভীর সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।”


আর্কটিক অঞ্চলের সীলদের বিপদ

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আর্কটিক অঞ্চলের সীল প্রজাতিগুলো ক্রমে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। আইইউসিএনের তথ্যানুযায়ী:

  • হুডেড সীল (Cystophora cristata) — ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ থেকে এখন ‘বিপন্ন’ পর্যায়ে নেমে এসেছে।
  • বিয়ার্ডেড সীল (Erignathus barbatus) ও হার্প সীল (Pagophilus groenlandicus) — ‘কম ঝুঁকিপূর্ণ’ থেকে ‘প্রায় বিপন্ন’ শ্রেণিতে স্থানান্তরিত হয়েছে।

মূল হুমকি হলো আর্কটিক অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়া, যা তাদের প্রজনন, বিশ্রাম ও খাদ্য অনুসন্ধানের স্থান ধ্বংস করছে। বরফ কমে যাওয়ায় মানুষও এখন সহজে এই এলাকাগুলোতে প্রবেশ করতে পারছে, ফলে প্রজাতিগুলোর ঝুঁকি আরও বেড়েছে।

New publication indicates devastating extinction of the Slender-Billed  Curlew - BirdLife International

বৈশ্বিক পাখির সংকট

বিশ্বজুড়ে পাখির সংখ্যা দ্রুত কমছে — ২০১৬ সালে এই হার ছিল ৪৪ শতাংশ, যা এখন বেড়ে ৬১ শতাংশে পৌঁছেছে। কৃষি সম্প্রসারণ, বননিধন, জলবায়ু পরিবর্তন, অনুপ্রবেশকারী প্রজাতি এবং অবৈধ শিকার—সব মিলিয়ে পাখিদের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পাখিরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে—পরাগায়ন, বীজ ছড়ানো, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ ও মৃত প্রাণীর দেহাবশেষ পরিষ্কার রাখার মাধ্যমে তারা প্রকৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।


আশার আলো: সবুজ সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রত্যাবর্তন

সব কিছুর মধ্যেও কিছু ভালো খবর আছে। আইইউসিএন জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী সবুজ সামুদ্রিক কচ্ছপের (গ্রিন সি টার্টল) সংখ্যা বেড়েছে, যা সফল সংরক্ষণের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। আইইউসিএনের মহাপরিচালক গ্রেথেল আগুইলার বলেন, “আর্কটিক সীল ও বহু পাখির মতো প্রজাতি যেখানে ক্রমে ঝুঁকিতে পড়ছে, সেখানে সবুজ কচ্ছপের পুনরুদ্ধার প্রমাণ করে যে, দৃঢ় ইচ্ছা ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিলে সংরক্ষণ কার্যকর হয়।”

আইইউসিএনের ২০২৫ সালের রেড লিস্ট আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে—মানবসৃষ্ট পরিবর্তন প্রকৃতির অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করছে। কয়েকটি প্রজাতির হারিয়ে যাওয়া শুধু একটি জীবের বিলুপ্তি নয়, বরং পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য ও ভারসাম্যের এক অপূরণীয় ক্ষতি।

— জীববৈচিত্র্য, বিলুপ্ত প্রজাতি, আইইউসিএন, পাখি সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, আর্কটিক সীল, পরিবেশ সংকট, সবুজ কচ্ছপ, সারাক্ষণ রিপোর্ট