যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বেরিং প্রণালীর বরাবর একটি রেল ও কার্গো টানেল নির্মাণের প্রস্তাবটি ঘিরে নতুন এক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিনিয়োগ দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ এই ‘পুতিন–ট্রাম্প টানেল’ ধারণা প্রকাশের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তা ‘আগ্রহজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই ধারণায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
টানেল প্রস্তাবের ধারণা ও লক্ষ্য
রাশিয়ার সার্বভৌম বিনিয়োগ তহবিল (RDIF)-এর প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভ গত বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই বিশাল প্রকল্পের ধারণা প্রকাশ করেন। প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রায় ১১২ কিলোমিটার-দীর্ঘ এই টানেলটি রাশিয়ার চুকোতকা অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা পর্যন্ত রেল ও পণ্য পরিবহনের একটি নতুন রুট তৈরি করবে।
দিমিত্রিয়েভের ভাষায়, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যিক যোগাযোগে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন আসবে। এর ফলে পণ্য পরিবহন সময় ও খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে, যা দুই দেশের পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিনিয়োগ ও সময়কাল
দিমিত্রিয়েভের দাবি, প্রকল্পটির আনুমানিক ব্যয় প্রায় ৮০০ কোটি ডলার, যার অর্থায়নে রাশিয়া ও আন্তর্জাতিক অংশীদাররা অংশ নেবে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হতে প্রায় আট বছর সময় লাগবে বলে তিনি জানিয়েছেন। এটি বাস্তবায়িত হলে, রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি যেমন উপকৃত হবে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঞ্চলেও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
ট্রাম্প ও জেলেনস্কির প্রতিক্রিয়া
শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা ট্রাম্পকে এই টানেল প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন করেন। উত্তরে ট্রাম্প সংক্ষেপে বলেন, ‘আগ্রহজনক।’ এরপর তিনি জেলেনস্কিকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনার কী মতামত?’

জেলেনস্কি হেসে বলেন, ‘আমি এই ধারণায় খুশি নই।’ তাঁর মন্তব্যে মার্কিন প্রতিনিধি দল হাসিতে ফেটে পড়ে। যদিও ট্রাম্প মন্তব্যটি কূটনৈতিকভাবে এড়িয়ে যান, কিন্তু তাঁর স্বল্প প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায়, যে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক যোগাযোগের নতুন পথ খুঁজতে আগ্রহী।
পুরনো প্রস্তাবের পুনর্জাগরণ
দিমিত্রিয়েভ তাঁর পোস্টে ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের কথা স্মরণ করেন—জন এফ. কেনেডি ও নিকিতা ক্রুশ্চেভের সময়কার, ‘ওয়ার্ল্ড পিস ব্রিজ’ ধারণা। তখন আলাস্কা ও রাশিয়ার মধ্যে একটি স্থলসেতু নির্মাণের প্রস্তাব উঠেছিল, যা দুই পরাশক্তির মধ্যে সহযোগিতার প্রতীক হতে পারত।
বর্তমান প্রযুক্তির অগ্রগতিকে সামনে রেখে দিমিত্রিয়েভ বলেন, ইলন মাস্কের বোরিং কোম্পানির সহযোগিতায় সেই পুরনো স্বপ্নকে এখন টানেল আকারে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তাঁর মতে, এ ধরনের উদ্যোগ বিশ্ব রাজনীতিতে ‘সহযোগিতার নতুন অধ্যায়’ সূচনা করতে পারে।
রাশিয়ার অর্থনৈতিক ও কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি
রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (RDIF) জানায়, তারা গত ছয় মাস ধরে রাশিয়া–আলাস্কা টানেল প্রকল্পের বাস্তবসম্ভাব্যতা যাচাই করছে। সংস্থাটি পূর্বে রাশিয়া–চীন রেল সেতু নির্মাণে অর্থায়ন করেছিল, যা দুই দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহন দূরত্ব ৭০০ কিলোমিটার পর্যন্ত কমিয়ে আনে।
দিমিত্রিয়েভ বলেন, ‘এই টানেল প্রকল্পটি কেবল অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘রাশিয়া যদি উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি স্থায়ী বাণিজ্যিক করিডোর তৈরি করতে পারে, তবে এটি এশিয়া–ইউরোপ বাণিজ্য ব্যবস্থায় এক নতুন ধারা সূচনা করবে।’
তিনি ইলন মাস্ককে উদ্দেশ করে বলেন, ‘এই টানেল প্রকল্পটি বোরিং কোম্পানির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে।’ তবে এখনো মাস্ক এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
‘পুতিন–ট্রাম্প টানেল’ ধারণাটি এখনো কেবল প্রস্তাব পর্যায়ে থাকলেও, এর ভূরাজনৈতিক তাৎপর্য অস্বীকার করা যায় না। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের শীতল সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এমন একটি যৌথ উদ্যোগ নতুন কূটনৈতিক সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। তবে বাস্তবে এটি বাস্তবায়িত হবে কি না, তা নির্ভর করবে দুই দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার ওপর।
যুক্তরাষ্ট্র–#রাশিয়া_সম্পর্ক,# ট্রাম্প, #পুতিন,# জেলেনস্কি,# আলাস্কা_#রেল_টানেল, RDIF, #বোরিং_কোম্পানি,# ভূরাজনীতি, #আন্তর্জাতিক_#বিনিয়োগ, #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















