ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানে দুই সন্দেহভাজন মাদক পাচারকারী বেঁচে যাওয়ার পর, ট্রাম্প প্রশাসনকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয় — তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে, নাকি দীর্ঘমেয়াদি আটক রাখা হবে। শেষ পর্যন্ত প্রশাসন বন্দিত্বের ঝুঁকি না নিয়ে তাদের নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়।
ক্যারিবীয় অভিযানে নতুন বিতর্ক
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে মাদকবিরোধী সামরিক অভিযান শুরু করে, যেটিকে ট্রাম্প প্রশাসন “অ-আন্তর্জাতিক সশস্ত্র সংঘাত” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তবে আইনি বিশেষজ্ঞরা শুরু থেকেই সতর্ক ছিলেন — এই অভিযান আন্তর্জাতিক আইন ও মার্কিন অভ্যন্তরীণ আইনের সীমা অতিক্রম করছে।
গত বৃহস্পতিবারের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী একটি আধা-ডুবে থাকা জাহাজে আঘাত হানে। এমন জাহাজ সাধারণত মাদক পাচারে ব্যবহৃত হয়, কারণ এগুলো পানির নিচে চলায় সহজে চিহ্নিত করা কঠিন। হামলায় দুজন নিহত হয়, তবে দুজন জীবিত উদ্ধার হয়ে মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজে তোলা হয়।
“যুদ্ধবন্দি” নয়, ফেরত পাঠানোই ছিল সহজ সমাধান
হামলার পর অনেকেই ধারণা করেছিলেন — বেঁচে থাকা দুই সন্দেহভাজনকে যুদ্ধবন্দি ঘোষণা করা হতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা তা করেননি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে, তারা নিজ দেশে ফেরত গেছেন।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রশাসন এই পদক্ষেপ নিয়েছে “সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ বিকল্প” হিসেবে। আন্তর্জাতিক সংকট গোষ্ঠীর সিনিয়র উপদেষ্টা ব্রায়ান ফিনুকেন বলেন, “এটি ছিল এক বিব্রতকর ঘটনা থেকে বেরিয়ে আসার সবচেয়ে সহজ উপায়।”
সামরিক আটক নিয়ে আইনগত সীমাবদ্ধতা
সাবেক মার্কিন বিমানবাহিনীর আইন কর্মকর্তা ও বর্তমানে সাউথওয়েস্টার্ন আইন স্কুলের অধ্যাপক র্যাচেল ভ্যানল্যান্ডিংহাম বলেন, “যেহেতু কোনো প্রকৃত সশস্ত্র সংঘাত নেই, তাই আন্তর্জাতিক যুদ্ধ আইনের আওতায় তাদের বন্দি রাখার বৈধতা নেই — যে নামই দেওয়া হোক না কেন।”
একজন বর্তমান সামরিক আইন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, দীর্ঘমেয়াদি বন্দিত্ব আদালতে টিকবে না। প্রশাসন কংগ্রেসে “অ-আন্তর্জাতিক সংঘাত” হিসেবে ব্যাখ্যা দিলেও, তা আন্তর্জাতিক আইনে টেকসই নয়।
বিকল্প পথ ও আইনি জটিলতা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশাসনের হাতে আরও কিছু বিকল্প ছিল — যেমন তাদের গুয়ানতানামো বে-তে আটক রাখা বা যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বিচার করা। কিন্তু তাতে আইনি ও রাজনৈতিক জটিলতা বেড়ে যেত।
বন্দিরা হেবিয়াস করপাসের (বন্দিত্ব চ্যালেঞ্জ করার সাংবিধানিক অধিকার) মাধ্যমে আদালতে মামলা করতে পারত। এতে সরকারের ওপর প্রমাণ হাজির করার চাপ তৈরি হতো, যা প্রশাসনের বর্ণনাকে দুর্বল করতে পারত।
ফিনুকেন বলেন, “আদালতে গেলে প্রশাসনকে এমন প্রমাণ দেখাতে হতো যা তার নিজস্ব বিবরণকেই খণ্ডন করত।”
কংগ্রেসে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেসম্যান জিম হাইমস বলেন, “এই হামলাগুলো ছিল অবৈধ। যদি জীবিতরা আদালত বা সামরিক ট্রাইব্যুনালে হাজির হতো, তা সঙ্গে সঙ্গেই প্রমাণিত হয়ে যেত।”
এ পর্যন্ত ক্যারিবীয় অভিযানে অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছে, তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর এখনো জানায়নি এই জাহাজগুলোতে কত মাদক ছিল বা কারা মারা গেছে। শুক্রবারের সর্বশেষ হামলায় আরও তিনজন নিহত হয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো অভিযোগ করেছেন, সেপ্টেম্বরের এক হামলায় যুক্তরাষ্ট্র একটি মৎস্যজীবীর নৌকায় আঘাত হেনেছে। এ নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে তার তীব্র বাকযুদ্ধ শুরু হয়।
আইন বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন, কেন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী — যাদের দায়িত্ব মূলত সামরিক প্রতিরক্ষা — এই ধরনের মাদকবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ডই হচ্ছে প্রধান আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
মাদকবিরোধী যুদ্ধে সামরিক অভিযানের বৈধতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিতর্ক নতুন নয়। তবে এবার ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত — বন্দিদের ফেরত পাঠানো — দেখাচ্ছে, সামরিক পদক্ষেপের চেয়ে আইনি দায় এড়ানোই প্রশাসনের কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















