মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়া পৌঁছানোর ঠিক আগেই ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। পিয়ংইয়ং নিশ্চিত করেছে যে তারা ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে।
এর কিছুক্ষণ পরই উত্তর কোরিয়ায় পৌঁছান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।
বিবিসির সউল সংবাদদাতা জেক কওন মনে করছেন, এই পরীক্ষাটি সম্ভবত উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারকে বৈধতা দেওয়ার একটি ছোট পদক্ষেপ মাত্র।
উত্তর কোরিয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সরাসরি উপরের দিকে উৎক্ষেপণ করা হয়, যা প্রায় সাত হাজার ৮০০ সেকেন্ড আকাশে উড়েছিল।
আজ বুধবারই দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছানোর পর দেশটির প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং এর সঙ্গে বৈঠক করবেন ট্রাম্প।
এবারের এশিয়া সফরে চীনের প্রেসিডেন্টের সাথে ট্রাম্পের বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত হলেও উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং আনের সাথে বৈঠকের ইঙ্গিত পাওয়া যায় নি।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুইটি অর্থনৈতিক শক্তির দেশ। মার্কিন শুল্ক ইস্যুতে গত কয়েক মাস ধরে শক্তিধর দেশ দুইটির মধ্যে টানাপোড়েন চলছে।
এমন অবস্থার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার মাটিতে হলেও বৃহত্তর শক্তিধর দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক এশিয়া অঞ্চলে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আশা করছেন চীনের নেতা শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠকে অনেক সমস্যার সমাধান হবে, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছেছেন ট্রাম্প
পাঁচ দিনের এশিয়া সফরের প্রথম দিন রোববার মালয়েশিয়ায় যান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।
এশিয়া সফরের চতুর্থ দিনে বুধবার স্থানীয় সময় পৌনে বারোটার দিকে ট্রাম্প পৌঁছান দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সউলে।
গিয়ংজু শহরে আজ ট্রাম্পের সফর। এই সফর ঘিরে ওই শহরসহ দেশটিতে ব্যাপক নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
ট্রাম্প ও শি উভয়েই তাদের সফরকালে শহরটিতে অবস্থান করবেন — ট্রাম্প হিলটন হোটেলে এবং শি কলন হোটেলে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, তাদের আগমনের আগে হোটেলগুলো তাদের এক্সিকিউটিভ স্যুইটগুলোতে বুলেটপ্রুফ কাচ বসিয়েছে এবং নজরদারি ব্যবস্থা আরও বাড়ানো হয়েছে।
এর আগে মালয়েশিয়ায় ট্রাম্পের সফরের প্রধান আকর্ষণ ছিল থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে একটি ‘শান্তি চুক্তি’ করা।
দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ গত জুলাইয়ে আরো প্রকাশ্যে আসে। এক পর্যায়ে সেটি সংঘাতেও রূপ নিয়েছিল। এবারের এশিয়া সফরে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সংঘাত এড়িয়ে শান্তি চুক্তিতে সই করে দুই দেশই।
এরপর ট্রাম্প যান জাপানে। গতকাল মঙ্গলবার জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে বৈঠক করেন। ট্রাম্প সেখানে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে জাপানের সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র বলে উল্লেখ করেন।
জাপান থেকে পরদিনই তিনি পৌঁছান দক্ষিণ কোরিয়ায়। ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক আরোপের কারণে বেশ চাপের মুখে পড়ে দক্ষিণ কোরিয়া।
শুল্ক হার ২৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে নামাতে গত জুলাইয়ে দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে রাজি হয়েছিল।
তবে ট্রাম্পের সাথে বৈঠকের পর দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কতটা কমবে সেটি এখনো নিশ্চিত করা যায় নি।

কিমের সাথে বৈঠক হবে?
বিশ্ব রাজনীতিতে দুই আলোচিত চরিত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং আন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং আনের সম্পর্ক অনেকটা রোলার কোস্টারের মতো – কখনো উপরের দিকে উঠছে তো আবার হঠাৎই নামতে শুরু করে দেয়। এশিয়া সফর ঘিরে নতুন করে আবার আলোচনায় এই দুই প্রেসিডেন্টের শত্রুতা বা বন্ধুত্ব।
এবারের এশিয়া সফরে এই অঞ্চলের নেতাদের সাথে বৈঠক করলেও উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং আনের সাথে সাক্ষাতের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত না।
তবে সফরে এসে ট্রাম্প গত সোমবারই বলেছেন, তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতার সাথে সাক্ষাৎ করতে চান। মালয়েশিয়া থেকে জাপান যাওয়ার সময় সোমবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প এ কথা বলেন।
যদিও ট্রাম্পের এই আহ্বানে সাড়া দেন নি প্রেসিডেন্ট কিম। একদিকে সাড়া না দেওয়া, আবার, ট্রাম্প পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগেই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কী বার্তা দিচ্ছে সেটি নিয়েও নানা আলোচনা হচ্ছে।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানাচ্ছে- তাদের দেশ সমুদ্র থেকে স্থলে নিক্ষেপযোগ্য ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। এই পরীক্ষা উত্তর কোরিয়ার “শত্রুদের” তাদের দেশের পারমাণবিক শক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।
ট্রাম্পের এই সফর ঘিরে অনেক দিন ধরেই আলোচনা চলছে, ট্রাম্প হয়তো দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানকালে সীমান্তে গিয়ে উত্তর কোরিয়ার নেতার সঙ্গে একটি ফটোসেশনে অংশ নিতে পারেন।
জাপান যাওয়ার আগে ট্রাম্প ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন কিমের সাথে বৈঠকের। তবে এরপরই বল এখন কিমের কোর্টে। তিনি হয়তো ভাবছেন, হারানোর কিছু নেই। বরং পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের নেতা হিসেবে বৈশ্বিক মঞ্চে নিজেকে আরেকটু বৈধতা দিতে পারবেন।
তবে এই সপ্তাহেই কিম তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বহু অভিজ্ঞ কূটনীতিককে মস্কো পাঠিয়েছেন, সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্রও নিক্ষেপ করেছেন।
স্বাভাবিকভাবেই এসব তথ্য ধারণা দিচ্ছে যে বাড়ির কাছে এলেও হয়তো সাক্ষাৎ নাও হতে পারে ট্রাম্প ও কিমের।
BBC News বাংলা
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















