১১:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বছরের আলোচনা জাতির সময় নষ্ট ও প্রতারণা- মির্জা ফখরুল 

রাজনৈতিক সমঝোতার নামে একপাক্ষিকতা

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সুপারিশগুলো একপাক্ষিক এবং তা দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, কমিশনের এক বছরের আলোচনাগুলো ছিল “অর্থহীন ও সময়ের অপচয়”, যা শেষ পর্যন্ত জাতির সঙ্গে প্রতারণায় পরিণত হয়েছে।

একপাক্ষিক সুপারিশের অভিযোগ

ফখরুল বলেন, “কমিশন সরকারকে তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে যাতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি তৈরি হয়। কিন্তু আমরা অন্যান্য সুপারিশের সঙ্গে একমত নই, কারণ সেখানে যেসব বিষয়ে ভিন্নমত বা আপত্তি ছিল তা উপেক্ষা করা হয়েছে এবং অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা সভায় কখনও আলোচনা হয়নি।”

তিনি এসব কথা বলেন গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে, যেখানে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত তুলে ধরা হয়।

‘জাতির সঙ্গে প্রতারণা’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ, ভিন্নমত বা আপত্তির কোনো উল্লেখ করা হয়নি।

“এর অর্থ হলো কমিশনের প্রস্তাব ও সুপারিশ জাতির ওপর একতরফাভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন স্পষ্ট যে গত এক বছর ধরে রাজনৈতিক দল, সংস্কার কমিশন এবং ঐকমত্য কমিশনের মধ্যে আলোচনাগুলো অর্থহীন ছিল—এটি সময়ের অপচয়, প্রহসন ও জাতির সঙ্গে প্রতারণা।”

তিনি বলেন, এমন একতরফা প্রস্তাব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে বিভক্ত করবে এবং ইচ্ছামতো সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া জাতীয় স্বার্থের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশ জমা দিল ঐকমত্য কমিশন

প্রস্তাবের গোপন পরিবর্তন

মঙ্গলবার ঐকমত্য কমিশন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের হাতে তাদের সুপারিশ জমা দেয়। ফখরুল বলেন, কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার ও মতামতকে সম্মান দেখায়নি, বরং কিছু সমঝোতার বিষয় গোপনে পরিবর্তন করেছে।

তিনি অভিযোগ করেন, “১৭ অক্টোবর যখন সব দল সংস্কার বিষয়ে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছিল, তখন আমাদের সেই চূড়ান্ত কপি দেখানো হয়নি। পরে যখন মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়, তখন দেখা যায় অনেক বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে।”

তিনি উদাহরণ দেন, “সরকারি অফিসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি প্রদর্শনের বাধ্যবাধকতা বাতিল সংক্রান্ত ধারা ৪(ক) বাদ দেওয়া হয়েছে। আবার সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদে (পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল) বাতিল সংক্রান্ত অংশে যেভাবে ঐকমত্য হয়েছিল, তা চূড়ান্ত সনদে গোপনে পরিবর্তন করা হয়েছে।”

গণভোট প্রস্তাবকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা

ফখরুল বলেন, জুলাই সনদে গণভোটের প্রস্তাবটি অযৌক্তিক, কারণ প্রধান উপদেষ্টা ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন যে জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “এতো স্বল্প সময়ে আলাদা করে গণভোট আয়োজন অপ্রয়োজনীয়, ব্যয়সাপেক্ষ ও অযৌক্তিক। জাতীয় নির্বাচন আয়োজনেই বিপুল মানবসম্পদ ও খরচ লাগবে, তাই একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট একসাথে আয়োজন করাই যুক্তিযুক্ত।”

নির্বাচন কমিশনে যাবে বিএনপির প্রতিনিধি দল

বিএনপির দাবি: গণতন্ত্র ও নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি

ফখরুল বলেন, “আমরা আশা করি গত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলন ও ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনে জনগণের ত্যাগ-তিতিক্ষার যে ফল, তা জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার ও সংসদ গঠনের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত হবে।”

তিনি আরও বলেন, বিএনপির লক্ষ্য হলো সমতা, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করা, যা একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই সম্ভব।

বিএনপির সংস্কার ইতিহাস ও অবস্থান

ফখরুল মনে করিয়ে দেন, দলের সংস্কারধারার প্রমাণ রয়েছে জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচি, খালেদা জিয়ার ভিশন ২০৩০, এবং তারেক রহমানের ২৭ দফা প্রস্তাব—যা পরে জোটসঙ্গীদের সঙ্গে আলোচনার পর ৩১ দফায় উন্নীত করা হয়।

তিনি বলেন, “আমরা বিগত এক বছরে সংস্কার কমিশন ও ঐকমত্য কমিশনের সব আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি এবং জাতীয় স্বার্থে অনেক ছাড় দিয়েছি। আমরা এখনো সংস্কার প্রক্রিয়ার সাফল্য কামনা করি, তবে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশের প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করতে আমাদের অবস্থান জানানো জরুরি।”

‘অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো আইনি ক্ষমতা নেই’

ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের জুলাই সনদকে সংবিধানিক মর্যাদা দেওয়ার কোনো আইনি ক্ষমতা নেই।

তিনি জানান, ঐকমত্য কমিশন তাদের চিঠিতে বলেছে যে জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত সংবিধান সংশোধনী বাস্তবায়নের জন্য সরকার দুটি বিকল্প পদ্ধতি প্রস্তাব করেছে।

“প্রথম বিকল্পে বলা হয়েছে, সরকার ‘জুলাই সনদ সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ নামে একটি নির্দেশ জারি করবে। কিন্তু সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো নির্দেশই আইনের মর্যাদা পায় এবং তা জারি করার একমাত্র ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে—সরকারের নয়,” বলেন ফখরুল।

তিনি আরও জানান, দ্বিতীয় বিকল্পে বলা হয়েছে, একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া বিল গণভোটে উপস্থাপন করা হবে, যেখানে সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত ৪৮টি ধারা (তফসিল-১ অনুযায়ী) নিয়ে ভোট হবে।

বিএনপিকে নিয়ে মিথ্যাচার চলছে: মির্জা ফখরুল

‘গণতান্ত্রিক ভিন্নমত উপেক্ষা’

ফখরুল বলেন, “গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ স্বাভাবিক—এ কারণেই সংলাপের প্রয়োজন। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন এই গণতান্ত্রিক অধিকারকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছে।”

তিনি জানান, কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সংসদের পাশাপাশি একটি ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেখানে সংসদ সদস্যরা অতিরিক্ত শপথ নিয়ে সদস্য হবেন।

“এতে বোঝা যাচ্ছে নির্বাচিত জাতীয় সংসদকেই একসঙ্গে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ বলা হচ্ছে, যা সংবিধান ও নির্বাচনী কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক,” বলেন ফখরুল।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কেবল সংসদ ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পর্যন্ত সীমিত; এমন কোনো পরিষদ গঠনের ক্ষমতা তাদের নেই এবং বিষয়টি কমিশনের আলোচনাতেও কখনও ওঠেনি।

নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি

প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট—যারা হত্যা ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তারা, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে এবং বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা উচিত।

তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নির্বাচনের যে ঘোষণা দিয়েছেন তা বাস্তবায়িত হবে, এবং আমরা সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছি। নির্বাচনে বিঘ্ন ঘটার কোনো কারণ দেখি না, আমরা কাউকে অবিশ্বাস করছি না, শুধু চাই নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই হোক।”

স্থায়ী কমিটির উপস্থিতি

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান ও হাফিজউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

 

#বিএনপি #ফখরুলইসলামআলমগীর #জুলাইসনদ #জাতীয়ঐকমত্যকমিশন #বাংলাদেশরাজনীতি #গণতন্ত্র #নির্বাচন২০২৬

জনপ্রিয় সংবাদ

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫৭)

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বছরের আলোচনা জাতির সময় নষ্ট ও প্রতারণা- মির্জা ফখরুল 

০৭:৩৪:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

রাজনৈতিক সমঝোতার নামে একপাক্ষিকতা

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সুপারিশগুলো একপাক্ষিক এবং তা দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, কমিশনের এক বছরের আলোচনাগুলো ছিল “অর্থহীন ও সময়ের অপচয়”, যা শেষ পর্যন্ত জাতির সঙ্গে প্রতারণায় পরিণত হয়েছে।

একপাক্ষিক সুপারিশের অভিযোগ

ফখরুল বলেন, “কমিশন সরকারকে তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে যাতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি তৈরি হয়। কিন্তু আমরা অন্যান্য সুপারিশের সঙ্গে একমত নই, কারণ সেখানে যেসব বিষয়ে ভিন্নমত বা আপত্তি ছিল তা উপেক্ষা করা হয়েছে এবং অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা সভায় কখনও আলোচনা হয়নি।”

তিনি এসব কথা বলেন গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে, যেখানে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত তুলে ধরা হয়।

‘জাতির সঙ্গে প্রতারণা’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ, ভিন্নমত বা আপত্তির কোনো উল্লেখ করা হয়নি।

“এর অর্থ হলো কমিশনের প্রস্তাব ও সুপারিশ জাতির ওপর একতরফাভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন স্পষ্ট যে গত এক বছর ধরে রাজনৈতিক দল, সংস্কার কমিশন এবং ঐকমত্য কমিশনের মধ্যে আলোচনাগুলো অর্থহীন ছিল—এটি সময়ের অপচয়, প্রহসন ও জাতির সঙ্গে প্রতারণা।”

তিনি বলেন, এমন একতরফা প্রস্তাব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে বিভক্ত করবে এবং ইচ্ছামতো সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া জাতীয় স্বার্থের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশ জমা দিল ঐকমত্য কমিশন

প্রস্তাবের গোপন পরিবর্তন

মঙ্গলবার ঐকমত্য কমিশন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের হাতে তাদের সুপারিশ জমা দেয়। ফখরুল বলেন, কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার ও মতামতকে সম্মান দেখায়নি, বরং কিছু সমঝোতার বিষয় গোপনে পরিবর্তন করেছে।

তিনি অভিযোগ করেন, “১৭ অক্টোবর যখন সব দল সংস্কার বিষয়ে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছিল, তখন আমাদের সেই চূড়ান্ত কপি দেখানো হয়নি। পরে যখন মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়, তখন দেখা যায় অনেক বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে।”

তিনি উদাহরণ দেন, “সরকারি অফিসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি প্রদর্শনের বাধ্যবাধকতা বাতিল সংক্রান্ত ধারা ৪(ক) বাদ দেওয়া হয়েছে। আবার সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদে (পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল) বাতিল সংক্রান্ত অংশে যেভাবে ঐকমত্য হয়েছিল, তা চূড়ান্ত সনদে গোপনে পরিবর্তন করা হয়েছে।”

গণভোট প্রস্তাবকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা

ফখরুল বলেন, জুলাই সনদে গণভোটের প্রস্তাবটি অযৌক্তিক, কারণ প্রধান উপদেষ্টা ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন যে জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “এতো স্বল্প সময়ে আলাদা করে গণভোট আয়োজন অপ্রয়োজনীয়, ব্যয়সাপেক্ষ ও অযৌক্তিক। জাতীয় নির্বাচন আয়োজনেই বিপুল মানবসম্পদ ও খরচ লাগবে, তাই একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট একসাথে আয়োজন করাই যুক্তিযুক্ত।”

নির্বাচন কমিশনে যাবে বিএনপির প্রতিনিধি দল

বিএনপির দাবি: গণতন্ত্র ও নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি

ফখরুল বলেন, “আমরা আশা করি গত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলন ও ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনে জনগণের ত্যাগ-তিতিক্ষার যে ফল, তা জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার ও সংসদ গঠনের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত হবে।”

তিনি আরও বলেন, বিএনপির লক্ষ্য হলো সমতা, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করা, যা একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই সম্ভব।

বিএনপির সংস্কার ইতিহাস ও অবস্থান

ফখরুল মনে করিয়ে দেন, দলের সংস্কারধারার প্রমাণ রয়েছে জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচি, খালেদা জিয়ার ভিশন ২০৩০, এবং তারেক রহমানের ২৭ দফা প্রস্তাব—যা পরে জোটসঙ্গীদের সঙ্গে আলোচনার পর ৩১ দফায় উন্নীত করা হয়।

তিনি বলেন, “আমরা বিগত এক বছরে সংস্কার কমিশন ও ঐকমত্য কমিশনের সব আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি এবং জাতীয় স্বার্থে অনেক ছাড় দিয়েছি। আমরা এখনো সংস্কার প্রক্রিয়ার সাফল্য কামনা করি, তবে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশের প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করতে আমাদের অবস্থান জানানো জরুরি।”

‘অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো আইনি ক্ষমতা নেই’

ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের জুলাই সনদকে সংবিধানিক মর্যাদা দেওয়ার কোনো আইনি ক্ষমতা নেই।

তিনি জানান, ঐকমত্য কমিশন তাদের চিঠিতে বলেছে যে জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত সংবিধান সংশোধনী বাস্তবায়নের জন্য সরকার দুটি বিকল্প পদ্ধতি প্রস্তাব করেছে।

“প্রথম বিকল্পে বলা হয়েছে, সরকার ‘জুলাই সনদ সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ নামে একটি নির্দেশ জারি করবে। কিন্তু সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো নির্দেশই আইনের মর্যাদা পায় এবং তা জারি করার একমাত্র ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে—সরকারের নয়,” বলেন ফখরুল।

তিনি আরও জানান, দ্বিতীয় বিকল্পে বলা হয়েছে, একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া বিল গণভোটে উপস্থাপন করা হবে, যেখানে সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত ৪৮টি ধারা (তফসিল-১ অনুযায়ী) নিয়ে ভোট হবে।

বিএনপিকে নিয়ে মিথ্যাচার চলছে: মির্জা ফখরুল

‘গণতান্ত্রিক ভিন্নমত উপেক্ষা’

ফখরুল বলেন, “গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ স্বাভাবিক—এ কারণেই সংলাপের প্রয়োজন। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন এই গণতান্ত্রিক অধিকারকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছে।”

তিনি জানান, কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সংসদের পাশাপাশি একটি ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেখানে সংসদ সদস্যরা অতিরিক্ত শপথ নিয়ে সদস্য হবেন।

“এতে বোঝা যাচ্ছে নির্বাচিত জাতীয় সংসদকেই একসঙ্গে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ বলা হচ্ছে, যা সংবিধান ও নির্বাচনী কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক,” বলেন ফখরুল।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কেবল সংসদ ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পর্যন্ত সীমিত; এমন কোনো পরিষদ গঠনের ক্ষমতা তাদের নেই এবং বিষয়টি কমিশনের আলোচনাতেও কখনও ওঠেনি।

নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি

প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট—যারা হত্যা ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তারা, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে এবং বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা উচিত।

তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নির্বাচনের যে ঘোষণা দিয়েছেন তা বাস্তবায়িত হবে, এবং আমরা সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছি। নির্বাচনে বিঘ্ন ঘটার কোনো কারণ দেখি না, আমরা কাউকে অবিশ্বাস করছি না, শুধু চাই নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই হোক।”

স্থায়ী কমিটির উপস্থিতি

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান ও হাফিজউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

 

#বিএনপি #ফখরুলইসলামআলমগীর #জুলাইসনদ #জাতীয়ঐকমত্যকমিশন #বাংলাদেশরাজনীতি #গণতন্ত্র #নির্বাচন২০২৬