০৫:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫
নরসিংদীতে র‌্যাবের অভিযানে অস্ত্রসহ আটজন গ্রেপ্তার কম্বোডিয়ায় সিঙ্গাপুরীয়দের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা প্রতারণা চক্র ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে সিরিজে সবচেয়ে বেশি রান করলেও তানজিদ তামিমকে নিয়ে ‘আক্ষেপ’ কোথায়? বাংলাদেশ হঠাৎ জুডো কারাতে, অস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন, ঝুঁকি কোথায়? বাংলাদেশে ভূমি অধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারে নতুন সহযোগিতা উদ্যোগ বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের সম্ভাবনা,রংপুর, রাজশাহী, ঢাকায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা গাইবান্ধায় গণপিটুনিতে নিহত এক ব্যক্তি সিলেটে বাস–প্রাইভেটকার সংঘর্ষে বাবা–মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু ট্রাম্পের পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরুর নির্দেশে বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ‘কৌশলগত বিরতি’র ইঙ্গিত মিলেছে

ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্পের আকাশছোঁয়া উত্থান—এবার কঠিন পরীক্ষার মুখে

ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অনিশ্চয়তা এবং ন্যাটোর নতুন ব্যয়ের লক্ষ্য ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্পকে দ্রুত বড় করেছে। বাজারমূল্য, অর্ডার ও উৎপাদন বাড়লেও সামনে রয়েছে খণ্ডিত শিল্পকাঠামো, ধীর ক্রয়প্রক্রিয়া, দুর্বল গবেষণা–উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনী কোম্পানির স্বল্পতা—যা লক্ষ্য অর্জনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

উঠে দাঁড়ানো: ‘পুনরায় সশস্ত্র হওয়ার যুগ’
জার্মানির রাইনমেটাল–এর প্রধান আরমিন পাপার্গার বছরের শুরুতে ঘোষণা দেন—ইউরোপে ‘পুনরায় সশস্ত্র হওয়ার যুগ’ শুরু হয়েছে। বাজারও তা প্রতিফলিত করেছে: রাইনমেটালের বাজারমূল্য কয়েক মাসে ২৭ বিলিয়ন ইউরো থেকে ৮০ বিলিয়ন ইউরোতে উঠেছে—বার্ষিক নিট লাভের প্রায় ৯০ গুণ—এবং আমেরিকার জায়ান্ট লকহিড মার্টিনের কাছাকাছি পৌঁছেছে। ব্রিটেনের বিএই সিস্টেমস, ফ্রান্সের থ্যালেস ও ইতালির লিওনার্দোর শেয়ারের মূল্যও দ্রুত বেড়েছে।

ব্যয় বিস্তার: ন্যাটোর নতুন লক্ষ্য
যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে ইউরোপ প্রতিরক্ষা ব্যয় জোরালোভাবে বাড়াচ্ছে। এ বছর সামরিক সরঞ্জামে ইউরোপের ব্যয় প্রায় ১৮০ বিলিয়ন ডলার—২০২১ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি এবং কিছু ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয়কেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। জুনে ন্যাটো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এক দশকের মধ্যে সদস্যদেশগুলো প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ২% থেকে ৩.৫%-এ তুলবে; পাশাপাশি অবকাঠামোসহ সংশ্লিষ্ট খাতে অতিরিক্ত ১.৫% ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

আমেরিকা–নির্ভরতার ঝুঁকি
দীর্ঘদিনের কম বিনিয়োগ ইউরোপকে আমেরিকান অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল করে তুলেছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইউরোপের অস্ত্র ক্রয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ ছিল প্রায় এক–তৃতীয়াংশ। কিন্তু একই সময়ে ইউরোপকে যদি নিজস্ব মজুত বাড়াতে হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ চীন সাগরের মতো অন্য সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, তবে আমেরিকার কারখানাগুলো নিজেদের মজুতকেই অগ্রাধিকার দেবে—ইউরোপ তখন সংকটে পড়তে পারে।

ব্রাসেলসের রোডম্যাপ: দ্রুত উৎপাদনের ডাক
ইউরোপীয় কমিশনের মার্চের শ্বেতপত্র ‘রেডিনেস ২০৩০’ বলছে—সদস্যরাষ্ট্রগুলোর চাহিদা মেটাতে দ্রুত ও ব্যাপক পরিমাণে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে ইউরোপীয় শিল্প এখনো সক্ষম নয়; তাই ‘বৃহৎ আকারে উৎপাদন বৃদ্ধির’ আহ্বান জানানো হয়েছে। ১৬ অক্টোবর প্রকাশিত ‘প্রিজার্ভিং পিস’ নথিতে পরবর্তী পাঁচ বছরের অগ্রাধিকারও নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে লক্ষ্য পূরণে বড় বাধা রয়ে গেছে—খণ্ডিত শিল্পকাঠামো, শ্লথ ক্রয়প্রক্রিয়া এবং উদ্ভাবনী নতুন কোম্পানির স্বল্পতা।

খণ্ডিত কাঠামো: স্কেলের অভাবে পিছিয়ে
দেশভিত্তিক ‘নিজস্ব’ কোম্পানিকে প্রাধান্য দেওয়ায় ইউরোপে প্রয়োজনীয় স্কেল গড়ে ওঠেনি। রাইনমেটালের গত বছরের আয় ছিল প্রায় ১০ বিলিয়ন ইউরো—লকহিড মার্টিনের প্রায় এক–ষষ্ঠাংশ।
গবেষণা–উন্নয়নেও পিছিয়ে ইউরোপ: ২০২৪ সালে সামরিক আর-অ্যান্ড-ডি ছিল মাত্র ১৩ বিলিয়ন ইউরো; যুক্তরাষ্ট্রে তা ১৪৮ বিলিয়ন ডলার। আর্টিলারি শেল, হাউইটজার, ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানে স্থানীয় সরবরাহকারীরা চাহিদা মেটাতে পারছে; কিন্তু রকেট আর্টিলারি, দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও আকাশ–প্রতিরক্ষায় উন্নত সক্ষমতা—অনেক ক্ষেত্রেই সীমিত বা অনুপস্থিত।

একীভূতকরণ ও যৌথ কর্মসূচি: অগ্রগতি ও অচলাবস্থা
কনসোলিডেশনের উদ্যোগ চলছে—সেপ্টেম্বরে রাইনমেটাল নৌযান নির্মাতা ন্যাভাল ভেসেলস ল্যুরসেন অধিগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ইউরোপে প্রতিরক্ষা খাতে একীভূতকরণ চুক্তির মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২.৩ বিলিয়ন ডলার—পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় এক–তৃতীয়াংশেরও বেশি। তারপরও জাতীয় নিরাপত্তা–সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে সরকারগুলো অনিচ্ছুক; ফলে সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে ‘মেগা মার্জার’–এর সম্ভাবনা কম।
যৌথ উন্নয়নেও মিশ্র ফল: ব্রিটেন–জার্মানি–ইতালি–স্পেনের ইউরোফাইটার টাইফুন সফল হলেও নতুন প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ও ড্রোন–ঝাঁকসহ ‘ফিউচার কমব্যাট এয়ার সিস্টেম’ প্রকল্প ফ্রান্স–জার্মানির দ্বন্দ্বে জটিল হয়ে আছে।

ধীর ক্রয়প্রক্রিয়া: ‘প্রতিশ্রুতিতে কারখানা বাড়ে না’
আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দীর্ঘ টেন্ডার–চক্রের কারণে কোম্পানাগুলো ভবিষ্যৎ ব্যয়ের ‘আনুমানিক’ প্রতিশ্রুতির ওপর বড় বিনিয়োগে যেতে সাহস পায় না। বড় ও নিশ্চিত অর্ডার না থাকলে সরবরাহ–শৃঙ্খলেও ক্ষমতা বাড়ানো কঠিন। বিশেষ করে উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্রে দীর্ঘ উন্নয়ন–চক্রের ফলে বহু বছর আমেরিকান সরঞ্জাম তুলনামূলক সস্তা ও দ্রুত–সরবরাহযোগ্যই থাকতে পারে।

প্রযুক্তির নতুন ময়দান: ড্রোন ও স্যাটেলাইট
ইউক্রেন যুদ্ধ দেখিয়েছে—আকাশে ড্রোন ও মহাকাশে স্যাটেলাইট–নেটওয়ার্ক আধুনিক যুদ্ধে নির্ণায়ক। বাইরের ওপর নির্ভরতা কমাতে ইউরোপকে নিজস্বভাবে এসব সিস্টেম বড় স্কেলে উৎপাদন করতে হবে। এর জন্য দরকার যুক্তরাষ্ট্রের আন্দুরিল বা স্পেসএক্স–ধাঁচের ‘আপস্টার্ট’ প্রতিরক্ষা কোম্পানি। কিন্তু ইউরোপের পুঁজিবাজার যুক্তরাষ্ট্রের মতো গভীর নয়—নতুন কোম্পানির পক্ষে বড় অর্থায়ন, দ্রুত উদ্ভাবন ও প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখা কঠিন।

উদীয়মান আশার আলো: ইউনিকর্ন আছে, স্কেল–আপে ঘাটতি
তবু সম্ভাবনা উদ্ভাসিত: ইউরোপে তিনটি প্রতিরক্ষা ইউনিকর্ন তৈরি হয়েছে—জার্মানির হেলসিং ও কোয়ান্টাম সিস্টেমস, পর্তুগালের টেকেভার—তিনটিই ড্রোন–কেন্দ্রিক। প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থ জুটলেও স্কেল–আপের জন্য বড় টিকিট অর্থায়ন এখনো বিরল। ইতিবাচক দিক হলো—এ খাতকে ‘বিতর্কিত’ মনে করা ব্যাংক–বিনিয়োগকারীরাও এখন আগ্রহ দেখাচ্ছে। নর্ডিক এয়ার ডিফেন্সের মতো স্টার্টআপগুলো সরকার টেন্ডারের জন্য অপেক্ষা না করে ভবিষ্যৎ চাহিদা অনুমান করে আগে থেকেই পণ্য বানিয়ে রাখার কৌশল নিচ্ছে—পরে অর্ডার পাওয়ার আশায়।

আত্মনির্ভরতার পথে উদ্যোক্তা–ঝুঁকি অপরিহার্য
আমেরিকান অস্ত্রনির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব নিরাপত্তা জোরদার করতে ইউরোপকে শুধু বাজেট বাড়ালেই চলবে না—খণ্ডিত কাঠামো গুটিয়ে স্কেল তৈরি, দ্রুত ক্রয়প্রক্রিয়া নিশ্চিত এবং উদ্ভাবনী স্টার্টআপ–বান্ধব পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে হবে। সবচেয়ে জরুরি হলো—বড় ঝুঁকি নিতে রাজি এমন আরও উদ্যোক্তা তৈরি করা। নইলে ক্রমেই বৈরী হয়ে ওঠা বিশ্বে ইউরোপের আত্মরক্ষা কঠিনই থেকে যাবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নরসিংদীতে র‌্যাবের অভিযানে অস্ত্রসহ আটজন গ্রেপ্তার

ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্পের আকাশছোঁয়া উত্থান—এবার কঠিন পরীক্ষার মুখে

০১:৫৩:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫

ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অনিশ্চয়তা এবং ন্যাটোর নতুন ব্যয়ের লক্ষ্য ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্পকে দ্রুত বড় করেছে। বাজারমূল্য, অর্ডার ও উৎপাদন বাড়লেও সামনে রয়েছে খণ্ডিত শিল্পকাঠামো, ধীর ক্রয়প্রক্রিয়া, দুর্বল গবেষণা–উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনী কোম্পানির স্বল্পতা—যা লক্ষ্য অর্জনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

উঠে দাঁড়ানো: ‘পুনরায় সশস্ত্র হওয়ার যুগ’
জার্মানির রাইনমেটাল–এর প্রধান আরমিন পাপার্গার বছরের শুরুতে ঘোষণা দেন—ইউরোপে ‘পুনরায় সশস্ত্র হওয়ার যুগ’ শুরু হয়েছে। বাজারও তা প্রতিফলিত করেছে: রাইনমেটালের বাজারমূল্য কয়েক মাসে ২৭ বিলিয়ন ইউরো থেকে ৮০ বিলিয়ন ইউরোতে উঠেছে—বার্ষিক নিট লাভের প্রায় ৯০ গুণ—এবং আমেরিকার জায়ান্ট লকহিড মার্টিনের কাছাকাছি পৌঁছেছে। ব্রিটেনের বিএই সিস্টেমস, ফ্রান্সের থ্যালেস ও ইতালির লিওনার্দোর শেয়ারের মূল্যও দ্রুত বেড়েছে।

ব্যয় বিস্তার: ন্যাটোর নতুন লক্ষ্য
যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে ইউরোপ প্রতিরক্ষা ব্যয় জোরালোভাবে বাড়াচ্ছে। এ বছর সামরিক সরঞ্জামে ইউরোপের ব্যয় প্রায় ১৮০ বিলিয়ন ডলার—২০২১ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি এবং কিছু ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয়কেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। জুনে ন্যাটো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এক দশকের মধ্যে সদস্যদেশগুলো প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ২% থেকে ৩.৫%-এ তুলবে; পাশাপাশি অবকাঠামোসহ সংশ্লিষ্ট খাতে অতিরিক্ত ১.৫% ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

আমেরিকা–নির্ভরতার ঝুঁকি
দীর্ঘদিনের কম বিনিয়োগ ইউরোপকে আমেরিকান অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল করে তুলেছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইউরোপের অস্ত্র ক্রয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ ছিল প্রায় এক–তৃতীয়াংশ। কিন্তু একই সময়ে ইউরোপকে যদি নিজস্ব মজুত বাড়াতে হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ চীন সাগরের মতো অন্য সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, তবে আমেরিকার কারখানাগুলো নিজেদের মজুতকেই অগ্রাধিকার দেবে—ইউরোপ তখন সংকটে পড়তে পারে।

ব্রাসেলসের রোডম্যাপ: দ্রুত উৎপাদনের ডাক
ইউরোপীয় কমিশনের মার্চের শ্বেতপত্র ‘রেডিনেস ২০৩০’ বলছে—সদস্যরাষ্ট্রগুলোর চাহিদা মেটাতে দ্রুত ও ব্যাপক পরিমাণে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে ইউরোপীয় শিল্প এখনো সক্ষম নয়; তাই ‘বৃহৎ আকারে উৎপাদন বৃদ্ধির’ আহ্বান জানানো হয়েছে। ১৬ অক্টোবর প্রকাশিত ‘প্রিজার্ভিং পিস’ নথিতে পরবর্তী পাঁচ বছরের অগ্রাধিকারও নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে লক্ষ্য পূরণে বড় বাধা রয়ে গেছে—খণ্ডিত শিল্পকাঠামো, শ্লথ ক্রয়প্রক্রিয়া এবং উদ্ভাবনী নতুন কোম্পানির স্বল্পতা।

খণ্ডিত কাঠামো: স্কেলের অভাবে পিছিয়ে
দেশভিত্তিক ‘নিজস্ব’ কোম্পানিকে প্রাধান্য দেওয়ায় ইউরোপে প্রয়োজনীয় স্কেল গড়ে ওঠেনি। রাইনমেটালের গত বছরের আয় ছিল প্রায় ১০ বিলিয়ন ইউরো—লকহিড মার্টিনের প্রায় এক–ষষ্ঠাংশ।
গবেষণা–উন্নয়নেও পিছিয়ে ইউরোপ: ২০২৪ সালে সামরিক আর-অ্যান্ড-ডি ছিল মাত্র ১৩ বিলিয়ন ইউরো; যুক্তরাষ্ট্রে তা ১৪৮ বিলিয়ন ডলার। আর্টিলারি শেল, হাউইটজার, ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানে স্থানীয় সরবরাহকারীরা চাহিদা মেটাতে পারছে; কিন্তু রকেট আর্টিলারি, দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও আকাশ–প্রতিরক্ষায় উন্নত সক্ষমতা—অনেক ক্ষেত্রেই সীমিত বা অনুপস্থিত।

একীভূতকরণ ও যৌথ কর্মসূচি: অগ্রগতি ও অচলাবস্থা
কনসোলিডেশনের উদ্যোগ চলছে—সেপ্টেম্বরে রাইনমেটাল নৌযান নির্মাতা ন্যাভাল ভেসেলস ল্যুরসেন অধিগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ইউরোপে প্রতিরক্ষা খাতে একীভূতকরণ চুক্তির মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২.৩ বিলিয়ন ডলার—পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় এক–তৃতীয়াংশেরও বেশি। তারপরও জাতীয় নিরাপত্তা–সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে সরকারগুলো অনিচ্ছুক; ফলে সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে ‘মেগা মার্জার’–এর সম্ভাবনা কম।
যৌথ উন্নয়নেও মিশ্র ফল: ব্রিটেন–জার্মানি–ইতালি–স্পেনের ইউরোফাইটার টাইফুন সফল হলেও নতুন প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ও ড্রোন–ঝাঁকসহ ‘ফিউচার কমব্যাট এয়ার সিস্টেম’ প্রকল্প ফ্রান্স–জার্মানির দ্বন্দ্বে জটিল হয়ে আছে।

ধীর ক্রয়প্রক্রিয়া: ‘প্রতিশ্রুতিতে কারখানা বাড়ে না’
আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দীর্ঘ টেন্ডার–চক্রের কারণে কোম্পানাগুলো ভবিষ্যৎ ব্যয়ের ‘আনুমানিক’ প্রতিশ্রুতির ওপর বড় বিনিয়োগে যেতে সাহস পায় না। বড় ও নিশ্চিত অর্ডার না থাকলে সরবরাহ–শৃঙ্খলেও ক্ষমতা বাড়ানো কঠিন। বিশেষ করে উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্রে দীর্ঘ উন্নয়ন–চক্রের ফলে বহু বছর আমেরিকান সরঞ্জাম তুলনামূলক সস্তা ও দ্রুত–সরবরাহযোগ্যই থাকতে পারে।

প্রযুক্তির নতুন ময়দান: ড্রোন ও স্যাটেলাইট
ইউক্রেন যুদ্ধ দেখিয়েছে—আকাশে ড্রোন ও মহাকাশে স্যাটেলাইট–নেটওয়ার্ক আধুনিক যুদ্ধে নির্ণায়ক। বাইরের ওপর নির্ভরতা কমাতে ইউরোপকে নিজস্বভাবে এসব সিস্টেম বড় স্কেলে উৎপাদন করতে হবে। এর জন্য দরকার যুক্তরাষ্ট্রের আন্দুরিল বা স্পেসএক্স–ধাঁচের ‘আপস্টার্ট’ প্রতিরক্ষা কোম্পানি। কিন্তু ইউরোপের পুঁজিবাজার যুক্তরাষ্ট্রের মতো গভীর নয়—নতুন কোম্পানির পক্ষে বড় অর্থায়ন, দ্রুত উদ্ভাবন ও প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখা কঠিন।

উদীয়মান আশার আলো: ইউনিকর্ন আছে, স্কেল–আপে ঘাটতি
তবু সম্ভাবনা উদ্ভাসিত: ইউরোপে তিনটি প্রতিরক্ষা ইউনিকর্ন তৈরি হয়েছে—জার্মানির হেলসিং ও কোয়ান্টাম সিস্টেমস, পর্তুগালের টেকেভার—তিনটিই ড্রোন–কেন্দ্রিক। প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থ জুটলেও স্কেল–আপের জন্য বড় টিকিট অর্থায়ন এখনো বিরল। ইতিবাচক দিক হলো—এ খাতকে ‘বিতর্কিত’ মনে করা ব্যাংক–বিনিয়োগকারীরাও এখন আগ্রহ দেখাচ্ছে। নর্ডিক এয়ার ডিফেন্সের মতো স্টার্টআপগুলো সরকার টেন্ডারের জন্য অপেক্ষা না করে ভবিষ্যৎ চাহিদা অনুমান করে আগে থেকেই পণ্য বানিয়ে রাখার কৌশল নিচ্ছে—পরে অর্ডার পাওয়ার আশায়।

আত্মনির্ভরতার পথে উদ্যোক্তা–ঝুঁকি অপরিহার্য
আমেরিকান অস্ত্রনির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব নিরাপত্তা জোরদার করতে ইউরোপকে শুধু বাজেট বাড়ালেই চলবে না—খণ্ডিত কাঠামো গুটিয়ে স্কেল তৈরি, দ্রুত ক্রয়প্রক্রিয়া নিশ্চিত এবং উদ্ভাবনী স্টার্টআপ–বান্ধব পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে হবে। সবচেয়ে জরুরি হলো—বড় ঝুঁকি নিতে রাজি এমন আরও উদ্যোক্তা তৈরি করা। নইলে ক্রমেই বৈরী হয়ে ওঠা বিশ্বে ইউরোপের আত্মরক্ষা কঠিনই থেকে যাবে।