০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫
নরওয়ের নির্জন পথে হাঁটাঃ ধ্বংসপ্রায় পাহাড়, বন্য জঙ্গল এবং ভেজা পায়ের স্মৃতি সুগন্ধি ও মোহনীয়তার সোনালী অধ্যায়: শালিমারের ১০০ বছর প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩২০) ব্যাকস্টেজে নিরাপত্তাকর্মীকে হামলার অভিযোগে অফসেটের বিরুদ্ধে মামলা মাস্টারের কন্যার অজানা গল্প: জন চিভারের পরিবার ও সাহিত্যিক জীবনের অন্তর্দৃষ্টি ম্যাগা যুগের ভাবনার উৎস খোঁজে—‘ফিউরিয়াস মাইন্ডস’-এর গভীর বিশ্লেষণ মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬২) ৩০০ ডলারের ‘স্মার্ট’ পানির বোতল বলছে, সুস্থতা এখন বিলাসের অংশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫১) মৃতদের আহ্বান: মেক্সিকোর মৃত্যু সংস্কৃতির পুনর্মূল্যায়ন

নভেম্বরে টানা বৃষ্টি: ধান থেকে সবজি পর্যন্ত—কৃষিঅর্থনীতিতে বাড়ছে বিপদের ছায়া

নভেম্বরের শুরুতেই টানা বৃষ্টি বাংলাদেশজুড়ে কৃষিক্ষেত্রে বড় ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে। মাঠে কাটা ধান ভিজে পচে যাচ্ছে, অনেক জায়গায় জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। সবজি ক্ষেতে পানি জমে নষ্ট হচ্ছে উৎপাদন, আর তার প্রভাব পড়ছে সরাসরি বাজারে—মূল্য বাড়ছে, ভোক্তার কষ্টও বাড়ছে।

বৃষ্টি বাড়ছেউদ্বেগও বাড়ছে

শনিবার বিকেল থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘন মেঘ আর অবিরাম বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ৪ থেকে ৫ দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি চলবে, কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণ হতে পারে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ধীরে ধীরে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গজুড়ে স্থায়ী মেঘমালা তৈরি করছে। এতে বৃষ্টির প্রবণতা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে।

ফসলি জমি ডুবেধান ও সবজির ক্ষতি

এই সময় সাধারণত আমন ধান কাটার মৌসুম এবং শীতকালীন সবজির চাষ শুরু হয়। কিন্তু এবারের আকস্মিক বৃষ্টিতে পরিস্থিতি ভিন্ন।
অনেক কৃষকের জমিতে ধান এখনও কাটা হয়নি, আবার যাদের কাটা হয়েছে, তারা মাঠে শুকানোর জন্য রেখেছিলেন। হঠাৎ বৃষ্টিতে সেই ধান ভিজে পচে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।


কৃষিবিদদের মতে, “হালকা বৃষ্টি ফসলের জন্য ভালো হলেও টানা ভারি বৃষ্টি জমি ও ফসল উভয়ের জন্য ক্ষতিকর।” এতে শুধু ধান নয়, মূল জমির গুণগত মানও নষ্ট হতে পারে।
একই সঙ্গে গ্রামের ফসলি জমি ও শহরের জলাবদ্ধতা মিলিয়ে দুই দিকেই বাড়ছে বিপর্যয়।

কতটা ক্ষতি হতে পারে

যদিও এখনও নির্দিষ্ট সংখ্যায় ক্ষতির পরিমাণ (হেক্টর বা টাকায়) জানা যায়নি, তবে পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা বলছে—ক্ষতি বড় হবে।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘ সময় বৃষ্টি চললে উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দেবে। ধান ও সবজির সরবরাহ কমে গেলে বাজারে চাপ বাড়বে, যা সরাসরি প্রভাব ফেলবে খাদ্য নিরাপত্তা ও ভোক্তা পর্যায়ে।
বর্তমানে কৃষি খাত বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (GDP) প্রায় ১১ শতাংশ অবদান রাখে, এবং প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ এই খাতের ওপর নির্ভরশীল। ফলে ক্ষতি মানে অর্থনীতির ভিত্তিতে সরাসরি আঘাত।

সবজির বাজারে প্রভাব

বৃষ্টির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মৌসুমি সবজি। মাঠে পানি জমে টমেটো, শিম, বাঁধাকপি, ধনেপাতা ও অন্যান্য শাকসবজি নষ্ট হচ্ছে।
ফলে বাজারে সরবরাহ কমে দাম বাড়তে শুরু করেছে। ক্রেতারা ইতিমধ্যেই প্রতিকেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দিচ্ছেন।
অন্যদিকে, পরিবহন বিঘ্নিত হওয়ায় পণ্য আনতে বিলম্ব হচ্ছে—এর ফলে শহরের বাজারে আরও ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
যদি আবহাওয়া দ্রুত স্বাভাবিক না হয়, তাহলে শীতের শুরুতেই সবজির দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।

কৃষকদের কষ্ট ও করণীয় পদক্ষেপ

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা জমি শুকানো ও ফসল রক্ষা করা। যেসব এলাকায় পানি জমেছে, সেখানে দ্রুত পানি নিষ্কাশন অত্যন্ত জরুরি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে জেলাভিত্তিক ক্ষয়ক্ষতির তথ্য দ্রুত সংগ্রহ করে পুনর্বাসন পরিকল্পনা নিতে হবে।
একই সঙ্গে বাজারে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনকে সক্রিয় হতে হবে, যাতে ভোক্তার ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
অন্যদিকে, কৃষকদের জন্য স্বল্পমেয়াদি সহায়তা কর্মসূচি ও ঋণসুবিধা জরুরি, যাতে তারা পরবর্তী মৌসুমে নতুন করে চাষ শুরু করতে পারেন।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও আশঙ্কা

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। এর পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি উন্নতির সম্ভাবনা আছে।
তবে বৃষ্টি আরও কয়েক দিন স্থায়ী হলে ক্ষতির পরিধি অনেক বাড়বে। সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে ধান ও শীতকালীন সবজির উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে।

নভেম্বর মাসে এমন টানা বৃষ্টি সাধারণত দেখা যায় না। তাই এবারের বৃষ্টিপাত কৃষি ও অর্থনীতি—দুই দিকেই ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
ধানক্ষেতে পানি, মাঠে পচা ধান, সবজি ক্ষেতে নষ্ট ফসল, আর বাজারে মূল্যবৃদ্ধি—সব মিলিয়ে এক বহুমাত্রিক সংকটের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ।
এখন সবচেয়ে প্রয়োজন দ্রুত ব্যবস্থা, সঠিক তথ্য ও কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো। সময়মতো কাজ না করলে এই বৃষ্টির প্রভাব শুধু কৃষিতেই নয়, পুরো অর্থনীতিতেই দীর্ঘস্থায়ী দাগ ফেলবে।

#বাংলাদেশ_কৃষি #বৃষ্টি #ধান_ক্ষতি #সবজি_বাজার #অর্থনীতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

নরওয়ের নির্জন পথে হাঁটাঃ ধ্বংসপ্রায় পাহাড়, বন্য জঙ্গল এবং ভেজা পায়ের স্মৃতি

নভেম্বরে টানা বৃষ্টি: ধান থেকে সবজি পর্যন্ত—কৃষিঅর্থনীতিতে বাড়ছে বিপদের ছায়া

১১:৪১:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫

নভেম্বরের শুরুতেই টানা বৃষ্টি বাংলাদেশজুড়ে কৃষিক্ষেত্রে বড় ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে। মাঠে কাটা ধান ভিজে পচে যাচ্ছে, অনেক জায়গায় জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। সবজি ক্ষেতে পানি জমে নষ্ট হচ্ছে উৎপাদন, আর তার প্রভাব পড়ছে সরাসরি বাজারে—মূল্য বাড়ছে, ভোক্তার কষ্টও বাড়ছে।

বৃষ্টি বাড়ছেউদ্বেগও বাড়ছে

শনিবার বিকেল থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘন মেঘ আর অবিরাম বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ৪ থেকে ৫ দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি চলবে, কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণ হতে পারে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ধীরে ধীরে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গজুড়ে স্থায়ী মেঘমালা তৈরি করছে। এতে বৃষ্টির প্রবণতা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে।

ফসলি জমি ডুবেধান ও সবজির ক্ষতি

এই সময় সাধারণত আমন ধান কাটার মৌসুম এবং শীতকালীন সবজির চাষ শুরু হয়। কিন্তু এবারের আকস্মিক বৃষ্টিতে পরিস্থিতি ভিন্ন।
অনেক কৃষকের জমিতে ধান এখনও কাটা হয়নি, আবার যাদের কাটা হয়েছে, তারা মাঠে শুকানোর জন্য রেখেছিলেন। হঠাৎ বৃষ্টিতে সেই ধান ভিজে পচে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।


কৃষিবিদদের মতে, “হালকা বৃষ্টি ফসলের জন্য ভালো হলেও টানা ভারি বৃষ্টি জমি ও ফসল উভয়ের জন্য ক্ষতিকর।” এতে শুধু ধান নয়, মূল জমির গুণগত মানও নষ্ট হতে পারে।
একই সঙ্গে গ্রামের ফসলি জমি ও শহরের জলাবদ্ধতা মিলিয়ে দুই দিকেই বাড়ছে বিপর্যয়।

কতটা ক্ষতি হতে পারে

যদিও এখনও নির্দিষ্ট সংখ্যায় ক্ষতির পরিমাণ (হেক্টর বা টাকায়) জানা যায়নি, তবে পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা বলছে—ক্ষতি বড় হবে।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘ সময় বৃষ্টি চললে উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দেবে। ধান ও সবজির সরবরাহ কমে গেলে বাজারে চাপ বাড়বে, যা সরাসরি প্রভাব ফেলবে খাদ্য নিরাপত্তা ও ভোক্তা পর্যায়ে।
বর্তমানে কৃষি খাত বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (GDP) প্রায় ১১ শতাংশ অবদান রাখে, এবং প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ এই খাতের ওপর নির্ভরশীল। ফলে ক্ষতি মানে অর্থনীতির ভিত্তিতে সরাসরি আঘাত।

সবজির বাজারে প্রভাব

বৃষ্টির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মৌসুমি সবজি। মাঠে পানি জমে টমেটো, শিম, বাঁধাকপি, ধনেপাতা ও অন্যান্য শাকসবজি নষ্ট হচ্ছে।
ফলে বাজারে সরবরাহ কমে দাম বাড়তে শুরু করেছে। ক্রেতারা ইতিমধ্যেই প্রতিকেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দিচ্ছেন।
অন্যদিকে, পরিবহন বিঘ্নিত হওয়ায় পণ্য আনতে বিলম্ব হচ্ছে—এর ফলে শহরের বাজারে আরও ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
যদি আবহাওয়া দ্রুত স্বাভাবিক না হয়, তাহলে শীতের শুরুতেই সবজির দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।

কৃষকদের কষ্ট ও করণীয় পদক্ষেপ

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা জমি শুকানো ও ফসল রক্ষা করা। যেসব এলাকায় পানি জমেছে, সেখানে দ্রুত পানি নিষ্কাশন অত্যন্ত জরুরি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে জেলাভিত্তিক ক্ষয়ক্ষতির তথ্য দ্রুত সংগ্রহ করে পুনর্বাসন পরিকল্পনা নিতে হবে।
একই সঙ্গে বাজারে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনকে সক্রিয় হতে হবে, যাতে ভোক্তার ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
অন্যদিকে, কৃষকদের জন্য স্বল্পমেয়াদি সহায়তা কর্মসূচি ও ঋণসুবিধা জরুরি, যাতে তারা পরবর্তী মৌসুমে নতুন করে চাষ শুরু করতে পারেন।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও আশঙ্কা

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। এর পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি উন্নতির সম্ভাবনা আছে।
তবে বৃষ্টি আরও কয়েক দিন স্থায়ী হলে ক্ষতির পরিধি অনেক বাড়বে। সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে ধান ও শীতকালীন সবজির উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে।

নভেম্বর মাসে এমন টানা বৃষ্টি সাধারণত দেখা যায় না। তাই এবারের বৃষ্টিপাত কৃষি ও অর্থনীতি—দুই দিকেই ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
ধানক্ষেতে পানি, মাঠে পচা ধান, সবজি ক্ষেতে নষ্ট ফসল, আর বাজারে মূল্যবৃদ্ধি—সব মিলিয়ে এক বহুমাত্রিক সংকটের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ।
এখন সবচেয়ে প্রয়োজন দ্রুত ব্যবস্থা, সঠিক তথ্য ও কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো। সময়মতো কাজ না করলে এই বৃষ্টির প্রভাব শুধু কৃষিতেই নয়, পুরো অর্থনীতিতেই দীর্ঘস্থায়ী দাগ ফেলবে।

#বাংলাদেশ_কৃষি #বৃষ্টি #ধান_ক্ষতি #সবজি_বাজার #অর্থনীতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট