১২:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫
ম্যাগা যুগের ভাবনার উৎস খোঁজে—‘ফিউরিয়াস মাইন্ডস’-এর গভীর বিশ্লেষণ মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬২) ৩০০ ডলারের ‘স্মার্ট’ পানির বোতল বলছে, সুস্থতা এখন বিলাসের অংশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫১) মৃতদের আহ্বান: মেক্সিকোর মৃত্যু সংস্কৃতির পুনর্মূল্যায়ন সীতাকুণ্ডে প্রার্থী ঘোষণাকে ঘিরে সহিংসতার অভিযোগে বিএনপির চার নেতাকে বহিষ্কার ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের প্রশাসনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে শেয়ারবাজারে টানা পতন: ডিএসই ও সিএসই-তে লেনদেন কমেছে অনলাইন জুয়া লেনদেন বন্ধে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসকে কঠোর নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশের বিমান খাতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হবে এয়ারবাস: ফরাসি দূত

মৃতদের আহ্বান: মেক্সিকোর মৃত্যু সংস্কৃতির পুনর্মূল্যায়ন

মৃত্যুর প্রতি মেক্সিকোর ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন

আনন্দময়। বিদ্রূপাত্মক। আত্মিক। ঘনিষ্ঠ।
দশক ধরে এই শব্দগুলোই মৃত্যুর প্রতি মেক্সিকোর মনোভাবকে প্রকাশ করেছে—দেশের ভেতরে এবং বিশ্বের চোখে। ‘দিয়া দে লস মুয়ের্তোস’ বা ‘মৃতদের দিন’ হলো এমন এক মেক্সিকান ঐতিহ্য যেখানে মানুষ তাদের প্রয়াত প্রিয়জনদের স্মরণ করে, শোক প্রকাশ করে, আবার আনন্দও উদ্‌যাপন করে। এটি রঙ, উৎসব, ও জীবনপ্রেমে ভরপুর এক আচার, যা ইউনেস্কো মানবজাতির অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দিয়েছে। এটি এক গভীর গর্বের বিষয় যে, মেক্সিকোতে মৃত্যুকে অন্য কোথাও দেখা গম্ভীর শোকের চেয়ে ভিন্নভাবে দেখা হয়।

সকল বই দেখতে ক্লিক করুন:

https://l.facebook.com/l.php?

তবে আজকের মেক্সিকোতে সেই আনন্দ বা বিদ্রূপের জায়গা ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। দেশের সর্বত্র হত্যাকাণ্ড, নিখোঁজ হওয়া মানুষ, আর চাঁদাবাজির দাপটে মৃত্যুর মধ্যে কোনো রঙ বা হাস্যরস খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। উৎসবের বাণিজ্যিকীকরণ ও সহিংস বাস্তবতা ‘দিয়া দে লস মুয়ের্তোস’-এর মূল আত্মাকে দুর্বল করে তুলেছে। এখন সময় এসেছে উৎসবটিকে তার প্রকৃত অর্থে পুনরুদ্ধার করার।

মৃত্যুর উৎসবের ধর্মীয় উৎস ও সামাজিক রূপ

ইতিহাস জুড়ে ‘দিয়া দে লস মুয়ের্তোস’ ছিল জীবিত ও মৃতদের পারস্পরিক যোগাযোগের এক অন্তরঙ্গ ক্ষেত্র। ঘরে ঘরে ও কবরস্থানে পরিবারগুলো মৃত প্রিয়জনদের জন্য খাবার ও পানীয় নিবেদন করে, গাঁদা ফুল ও চিনি দিয়ে তৈরি খুলি দিয়ে বেদি সাজায়, আর একসাথে কবর পরিষ্কার করে, সাজায় ও প্রার্থনা করে।

এই উৎসবের উৎপত্তি ১১শ শতকের ফ্রান্সে ক্যাথলিক ঐতিহ্য থেকে। ১ নভেম্বর উদ্‌যাপিত ‘অল সেইন্টস ডে’-তে পবিত্র আত্মাদের স্মরণ করা হয়, আর ২ নভেম্বরের ‘অল সোলস ডে’-তে স্মরণ করা হয় প্রিয় কিন্তু অপূর্ণ আত্মাদের। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেক্সিকোতে ধর্মীয় প্রভাব কমেছে—বিশেষ করে ১৯শ শতকের মধ্যভাগের ধর্মনিরপেক্ষ বিপ্লবের পর—তবু এর মূল ধারণা এখনো গভীর তাৎপর্যপূর্ণ।

‘অল সেইন্টস ডে’ হলো স্বর্গের নিখুঁত আত্মাদের স্মরণের দিন, আর ‘অল সোলস ডে’ হলো পাপ-পুণ্য মিশ্রিত প্রিয়জনদের স্মরণের দিন। এই উপলক্ষে ঘরে সাজানো বেদিতে তাদের প্রিয় খাবার রাখা হয়—চকোলেটযুক্ত মোল, সিগারেট, আখের মদ—যাতে জীবনের সব দুর্বলতাসহ তাদের স্মরণ করা যায়। এভাবেই মেক্সিকানরা মৃত্যুকে ভালোবাসে, কারণ এর মধ্য দিয়েই জীবনের সৌন্দর্যকে তারা উদ্‌যাপন করে।

বিপ্লব-পরবর্তী সময়ের শিল্প ও মৃত্যুর প্রতীক

১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে, মেক্সিকোর বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে, বহু শিল্পী ও চিন্তাবিদ মৃত্যুর প্রতি এই সহজ, রসাত্মক দৃষ্টিভঙ্গিকে জাতীয় পরিচয়ের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেন। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী দিয়েগো রিভেরা ও খোদাইশিল্পী হোসে গুয়াদালুপে পোসাদার কাজ মৃত্যুকে জীবনের অবিচ্ছেদ্য ও ব্যঙ্গাত্মক বাস্তবতা হিসেবে উপস্থাপন করে। তাদের শিল্পে ফুটে ওঠে এক মিশ্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য—আদিবাসী ও ইউরোপীয় প্রভাবের সমন্বয়, জীবনের ভণ্ডামি উন্মোচনের হাস্যরস, এবং সেই রক্তাক্ত সংগ্রামের ইতিহাস যা মেক্সিকোকে স্বৈরতন্ত্র থেকে মুক্ত করেছিল।

তাদের জন্য, মৃত্যু ছিল এক গণতান্ত্রিক সমতা—যা সকলের জন্যই নিশ্চিত।

বর্তমান মেক্সিকো: সহিংসতাবাণিজ্য ও বিভ্রান্তি

কিন্তু শত বছর পর, ‘দিয়া দে লস মুয়ের্তোস’-এর সেই ঐতিহ্য এখন বিপর্যস্ত। গত কয়েক দশকে এই উৎসব বাণিজ্যিকভাবে নিঃশেষিত হয়েছে, পরিণত হয়েছে এক অগভীর জাতীয়তাবাদী প্রদর্শনীতে। রাজধানী মেক্সিকো সিটির বিখ্যাত প্যারেড, যেখানে হাজারো মানুষ কঙ্কালের পোশাকে মেতে ওঠে, আসলে এক জেমস বন্ড সিনেমার দৃশ্য থেকে অনুপ্রাণিত।

তবে বাণিজ্যিকীকরণই একমাত্র সংকট নয়। আসল সমস্যা হলো মেক্সিকোতে মৃত্যুর ভয়াবহ বাস্তবতা।

আজ অনেকেই মনে করেন, খুন বা নিখোঁজ হওয়া মানুষরা হয়তো অপরাধ জগতের অংশ ছিল বা অসাবধানতার কারণে মারা গেছে। কিন্তু বাস্তবতা অনেক জটিল। মেক্সিকোর অনানুষ্ঠানিক ও অবৈধ অর্থনীতি, এমনকি সরকারি পর্যায়েও, চাঁদাবাজি, ঘুষ, কর ফাঁকি, পাচার, অবৈধ উত্তোলন ও সহিংসতার ওপর নির্ভরশীল।

গত দুই দশকে লক্ষাধিক মানুষ নিহত হয়েছে, প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার নিখোঁজ। এই মৃতরা আর প্রিয়জন নয়, তারা পরিণত হয়েছে সংখ্যায়। জীবিতদের কাছে মৃত্যুর মানে এখন কেবল টিকে থাকা।

শোকের অধিকার হারানো মানুষ

কার্টেল যুদ্ধ, হত্যা, নিখোঁজ ঘটনা ও প্রকাশ্য সহিংসতা ‘দিয়া দে লস মুয়ের্তোস’-এর মূল অর্থকে বিপর্যস্ত করেছে। অনেক পরিবারই আজ তাদের মৃত প্রিয়জনের কবরেও যেতে পারে না। যারা নিখোঁজ প্রিয়জনদের অপেক্ষায়, তাদের শোক এখন এক নিষ্ঠুর আশায় পরিণত।

আজকের মেক্সিকোতে মৃত্যু আর সবার জন্য সমান নয়; এটি শ্রেণি, অঞ্চল ও অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। ফলে মৃত্যু আর এক অভিন্ন মানবিক অভিজ্ঞতা নয়, বরং বিভাজনের প্রতীক।

নতুন অর্থে পুনর্জন্মের আহ্বান

তবুও, এই ঐতিহ্য এখনো বিলুপ্ত হয়নি। জীবিত ও মৃতদের সংলাপ এখনো সম্ভব—যদি সমাজ তার নিজস্ব ক্ষতের মুখোমুখি হতে চায়।

ইতিহাসে দেখা গেছে, মেক্সিকানরা মৃত্যুর দিনকে ব্যবহার করেছে সম্মিলিত শোক ও প্রতিবাদের জন্য। ১৯৮৫ সালের ভূমিকম্পের পর জনগণ বড় বড় জনসমাবেশে মৃতদের স্মরণ করেছে। পরবর্তীতে নারীনিধন, সীমান্তে অভিবাসীদের মৃত্যু, কিংবা ২০১৪ সালের আয়োৎসিনাপার ৪৩ শিক্ষার্থীর নিখোঁজ হওয়ার প্রতিবাদেও এই উৎসব রাজনৈতিক শক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে।

তবু, সরকারের ব্যর্থতা এখনো দেশকে শান্তি এনে দিতে পারেনি। সমাজকে এখন মনোযোগ দিতে হবে সেই সহিংস অর্থনীতির দিকে, যা এই ট্র্যাজেডির মূল চালিকা শক্তি।

মৃতদের নতুন ভূমিকা

এখন মৃতদের কাজ হলো জীবিতদের বাধ্য করা—তারা যেন এই সহিংস ব্যবস্থার মুখোমুখি হয় এবং এর কারণগুলো চিনতে শেখে। লক্ষ লক্ষ নিহত ও নিখোঁজ মানুষকে কেবল পরিসংখ্যান হিসেবে নয়, বরং এক গভীর জাতীয় ক্ষত হিসেবে দেখতে হবে।

যদি জীবিতরা তাদের মৃতদের স্মরণ করে সমাজকে পুনর্গঠনের আহ্বান জানায়, তবে ‘দিয়া দে লস মুয়ের্তোস’ আবারও এক ঐক্যের উৎসব হয়ে উঠতে পারে—নস্টালজিক ব্যঙ্গ নয়, বরং এক গভীর, প্রয়োজনীয় সম্মিলিত আত্মসমালোচনার মাধ্যমে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ম্যাগা যুগের ভাবনার উৎস খোঁজে—‘ফিউরিয়াস মাইন্ডস’-এর গভীর বিশ্লেষণ

মৃতদের আহ্বান: মেক্সিকোর মৃত্যু সংস্কৃতির পুনর্মূল্যায়ন

০৭:৩৪:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫

মৃত্যুর প্রতি মেক্সিকোর ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন

আনন্দময়। বিদ্রূপাত্মক। আত্মিক। ঘনিষ্ঠ।
দশক ধরে এই শব্দগুলোই মৃত্যুর প্রতি মেক্সিকোর মনোভাবকে প্রকাশ করেছে—দেশের ভেতরে এবং বিশ্বের চোখে। ‘দিয়া দে লস মুয়ের্তোস’ বা ‘মৃতদের দিন’ হলো এমন এক মেক্সিকান ঐতিহ্য যেখানে মানুষ তাদের প্রয়াত প্রিয়জনদের স্মরণ করে, শোক প্রকাশ করে, আবার আনন্দও উদ্‌যাপন করে। এটি রঙ, উৎসব, ও জীবনপ্রেমে ভরপুর এক আচার, যা ইউনেস্কো মানবজাতির অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দিয়েছে। এটি এক গভীর গর্বের বিষয় যে, মেক্সিকোতে মৃত্যুকে অন্য কোথাও দেখা গম্ভীর শোকের চেয়ে ভিন্নভাবে দেখা হয়।

সকল বই দেখতে ক্লিক করুন:

https://l.facebook.com/l.php?

তবে আজকের মেক্সিকোতে সেই আনন্দ বা বিদ্রূপের জায়গা ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। দেশের সর্বত্র হত্যাকাণ্ড, নিখোঁজ হওয়া মানুষ, আর চাঁদাবাজির দাপটে মৃত্যুর মধ্যে কোনো রঙ বা হাস্যরস খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। উৎসবের বাণিজ্যিকীকরণ ও সহিংস বাস্তবতা ‘দিয়া দে লস মুয়ের্তোস’-এর মূল আত্মাকে দুর্বল করে তুলেছে। এখন সময় এসেছে উৎসবটিকে তার প্রকৃত অর্থে পুনরুদ্ধার করার।

মৃত্যুর উৎসবের ধর্মীয় উৎস ও সামাজিক রূপ

ইতিহাস জুড়ে ‘দিয়া দে লস মুয়ের্তোস’ ছিল জীবিত ও মৃতদের পারস্পরিক যোগাযোগের এক অন্তরঙ্গ ক্ষেত্র। ঘরে ঘরে ও কবরস্থানে পরিবারগুলো মৃত প্রিয়জনদের জন্য খাবার ও পানীয় নিবেদন করে, গাঁদা ফুল ও চিনি দিয়ে তৈরি খুলি দিয়ে বেদি সাজায়, আর একসাথে কবর পরিষ্কার করে, সাজায় ও প্রার্থনা করে।

এই উৎসবের উৎপত্তি ১১শ শতকের ফ্রান্সে ক্যাথলিক ঐতিহ্য থেকে। ১ নভেম্বর উদ্‌যাপিত ‘অল সেইন্টস ডে’-তে পবিত্র আত্মাদের স্মরণ করা হয়, আর ২ নভেম্বরের ‘অল সোলস ডে’-তে স্মরণ করা হয় প্রিয় কিন্তু অপূর্ণ আত্মাদের। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেক্সিকোতে ধর্মীয় প্রভাব কমেছে—বিশেষ করে ১৯শ শতকের মধ্যভাগের ধর্মনিরপেক্ষ বিপ্লবের পর—তবু এর মূল ধারণা এখনো গভীর তাৎপর্যপূর্ণ।

‘অল সেইন্টস ডে’ হলো স্বর্গের নিখুঁত আত্মাদের স্মরণের দিন, আর ‘অল সোলস ডে’ হলো পাপ-পুণ্য মিশ্রিত প্রিয়জনদের স্মরণের দিন। এই উপলক্ষে ঘরে সাজানো বেদিতে তাদের প্রিয় খাবার রাখা হয়—চকোলেটযুক্ত মোল, সিগারেট, আখের মদ—যাতে জীবনের সব দুর্বলতাসহ তাদের স্মরণ করা যায়। এভাবেই মেক্সিকানরা মৃত্যুকে ভালোবাসে, কারণ এর মধ্য দিয়েই জীবনের সৌন্দর্যকে তারা উদ্‌যাপন করে।

বিপ্লব-পরবর্তী সময়ের শিল্প ও মৃত্যুর প্রতীক

১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে, মেক্সিকোর বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে, বহু শিল্পী ও চিন্তাবিদ মৃত্যুর প্রতি এই সহজ, রসাত্মক দৃষ্টিভঙ্গিকে জাতীয় পরিচয়ের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেন। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী দিয়েগো রিভেরা ও খোদাইশিল্পী হোসে গুয়াদালুপে পোসাদার কাজ মৃত্যুকে জীবনের অবিচ্ছেদ্য ও ব্যঙ্গাত্মক বাস্তবতা হিসেবে উপস্থাপন করে। তাদের শিল্পে ফুটে ওঠে এক মিশ্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য—আদিবাসী ও ইউরোপীয় প্রভাবের সমন্বয়, জীবনের ভণ্ডামি উন্মোচনের হাস্যরস, এবং সেই রক্তাক্ত সংগ্রামের ইতিহাস যা মেক্সিকোকে স্বৈরতন্ত্র থেকে মুক্ত করেছিল।

তাদের জন্য, মৃত্যু ছিল এক গণতান্ত্রিক সমতা—যা সকলের জন্যই নিশ্চিত।

বর্তমান মেক্সিকো: সহিংসতাবাণিজ্য ও বিভ্রান্তি

কিন্তু শত বছর পর, ‘দিয়া দে লস মুয়ের্তোস’-এর সেই ঐতিহ্য এখন বিপর্যস্ত। গত কয়েক দশকে এই উৎসব বাণিজ্যিকভাবে নিঃশেষিত হয়েছে, পরিণত হয়েছে এক অগভীর জাতীয়তাবাদী প্রদর্শনীতে। রাজধানী মেক্সিকো সিটির বিখ্যাত প্যারেড, যেখানে হাজারো মানুষ কঙ্কালের পোশাকে মেতে ওঠে, আসলে এক জেমস বন্ড সিনেমার দৃশ্য থেকে অনুপ্রাণিত।

তবে বাণিজ্যিকীকরণই একমাত্র সংকট নয়। আসল সমস্যা হলো মেক্সিকোতে মৃত্যুর ভয়াবহ বাস্তবতা।

আজ অনেকেই মনে করেন, খুন বা নিখোঁজ হওয়া মানুষরা হয়তো অপরাধ জগতের অংশ ছিল বা অসাবধানতার কারণে মারা গেছে। কিন্তু বাস্তবতা অনেক জটিল। মেক্সিকোর অনানুষ্ঠানিক ও অবৈধ অর্থনীতি, এমনকি সরকারি পর্যায়েও, চাঁদাবাজি, ঘুষ, কর ফাঁকি, পাচার, অবৈধ উত্তোলন ও সহিংসতার ওপর নির্ভরশীল।

গত দুই দশকে লক্ষাধিক মানুষ নিহত হয়েছে, প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার নিখোঁজ। এই মৃতরা আর প্রিয়জন নয়, তারা পরিণত হয়েছে সংখ্যায়। জীবিতদের কাছে মৃত্যুর মানে এখন কেবল টিকে থাকা।

শোকের অধিকার হারানো মানুষ

কার্টেল যুদ্ধ, হত্যা, নিখোঁজ ঘটনা ও প্রকাশ্য সহিংসতা ‘দিয়া দে লস মুয়ের্তোস’-এর মূল অর্থকে বিপর্যস্ত করেছে। অনেক পরিবারই আজ তাদের মৃত প্রিয়জনের কবরেও যেতে পারে না। যারা নিখোঁজ প্রিয়জনদের অপেক্ষায়, তাদের শোক এখন এক নিষ্ঠুর আশায় পরিণত।

আজকের মেক্সিকোতে মৃত্যু আর সবার জন্য সমান নয়; এটি শ্রেণি, অঞ্চল ও অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। ফলে মৃত্যু আর এক অভিন্ন মানবিক অভিজ্ঞতা নয়, বরং বিভাজনের প্রতীক।

নতুন অর্থে পুনর্জন্মের আহ্বান

তবুও, এই ঐতিহ্য এখনো বিলুপ্ত হয়নি। জীবিত ও মৃতদের সংলাপ এখনো সম্ভব—যদি সমাজ তার নিজস্ব ক্ষতের মুখোমুখি হতে চায়।

ইতিহাসে দেখা গেছে, মেক্সিকানরা মৃত্যুর দিনকে ব্যবহার করেছে সম্মিলিত শোক ও প্রতিবাদের জন্য। ১৯৮৫ সালের ভূমিকম্পের পর জনগণ বড় বড় জনসমাবেশে মৃতদের স্মরণ করেছে। পরবর্তীতে নারীনিধন, সীমান্তে অভিবাসীদের মৃত্যু, কিংবা ২০১৪ সালের আয়োৎসিনাপার ৪৩ শিক্ষার্থীর নিখোঁজ হওয়ার প্রতিবাদেও এই উৎসব রাজনৈতিক শক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে।

তবু, সরকারের ব্যর্থতা এখনো দেশকে শান্তি এনে দিতে পারেনি। সমাজকে এখন মনোযোগ দিতে হবে সেই সহিংস অর্থনীতির দিকে, যা এই ট্র্যাজেডির মূল চালিকা শক্তি।

মৃতদের নতুন ভূমিকা

এখন মৃতদের কাজ হলো জীবিতদের বাধ্য করা—তারা যেন এই সহিংস ব্যবস্থার মুখোমুখি হয় এবং এর কারণগুলো চিনতে শেখে। লক্ষ লক্ষ নিহত ও নিখোঁজ মানুষকে কেবল পরিসংখ্যান হিসেবে নয়, বরং এক গভীর জাতীয় ক্ষত হিসেবে দেখতে হবে।

যদি জীবিতরা তাদের মৃতদের স্মরণ করে সমাজকে পুনর্গঠনের আহ্বান জানায়, তবে ‘দিয়া দে লস মুয়ের্তোস’ আবারও এক ঐক্যের উৎসব হয়ে উঠতে পারে—নস্টালজিক ব্যঙ্গ নয়, বরং এক গভীর, প্রয়োজনীয় সম্মিলিত আত্মসমালোচনার মাধ্যমে।