ভূমির সঠিক ব্যবহারই টেকসই পৃথিবীর নিশ্চয়তা
ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, ভূমিসেবা নিশ্চিতের মূলভিত্তি হলো সঠিক সার্ভে ও সেটেলমেন্ট। পৃথিবীর প্রতিটি জীব কোনো না কোনোভাবে ভূমির সঙ্গে সম্পর্কিত—গৃহপালিত প্রাণী মাঠে চরে, বন্য প্রাণী জঙ্গলে থাকে, পাখিরা বনাঞ্চলে আশ্রয় নেয়। তাই ভূমি কেবল মানুষের সম্পত্তি নয়; এটি পৃথিবীর সমস্ত জীবের যৌথ সম্পদ।
তিনি বলেন, “মানুষকে দায়িত্বশীলভাবে ভূমি ব্যবহার করতে হবে, পশু-পাখির আবাসস্থল সংরক্ষণ করতে হবে এবং প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তাহলেই পৃথিবী টিকে থাকবে সুন্দর, ভারসাম্যপূর্ণ ও প্রাণবন্ত আবাসভূমি হিসেবে।”
সঠিক সার্ভে ও সেটেলমেন্টের গুরুত্ব
রাজধানীর ডেমরায় করিম জুট মিলস লিমিটেডের সভাকক্ষে আয়োজিত ১৪১তম ‘সার্ভে ও সেটেলমেন্ট প্রশিক্ষণ কোর্স’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এই প্রশিক্ষণ আয়োজন করেছে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর। ৫২ দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণে ৬০ জন কর্মকর্তা অংশ নিচ্ছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন প্রশাসন, পুলিশ, বন, রেলওয়ে এবং বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা।
ভূমি উপদেষ্টা বলেন, “সার্ভে ও সেটেলমেন্টের কাজ যথাযথভাবে সম্পাদনের জন্য কর্মকর্তাদের পেশাগত দক্ষতা, কারিগরি জ্ঞান ও বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। এই প্রশিক্ষণই ভূমি প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে সেই দক্ষতা গড়ে তোলে।”
প্রশিক্ষণের তাৎপর্য ও বাস্তব প্রয়োগ
তিনি বলেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মকর্তারা আধুনিক জরিপ প্রযুক্তি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন, যা ভূমি জরিপকে করে দ্রুত, নির্ভুল ও স্বচ্ছ। সেটেলমেন্ট অংশে ভূমি রেকর্ড প্রস্তুত, হালনাগাদ ও সংরক্ষণের পদ্ধতি শেখানো হয়, যা নাগরিকদের সঠিক মালিকানা নিশ্চিত করে এবং ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ ও মামলা-মোকদ্দমা হ্রাসে ভূমিকা রাখে।
ভূমি উপদেষ্টা আরও জানান, “এই প্রশিক্ষণ কর্মকর্তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ, সততা ও জনসেবার মানসিকতা বাড়ায়। মাঠ পর্যায়ে বাস্তব অনুশীলনের মাধ্যমে ভূমি পরিমাপ, মানচিত্র অঙ্কন, রেকর্ড সংশোধনের দক্ষতা তৈরি হয়।”
দক্ষ ও জনগণবান্ধব ভূমি প্রশাসনের পথে
তিনি বলেন, “সার্ভে অ্যান্ড সেটেলমেন্ট ট্রেনিং শুধু একটি প্রশিক্ষণ নয়, এটি ভূমি প্রশাসনের উন্নয়ন ও জনসেবার গুণগত মান বৃদ্ধির চালিকা শক্তি। দক্ষ, স্বচ্ছ ও জনগণবান্ধব ভূমি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে এই প্রশিক্ষণ অপরিহার্য।”
ভূমির ওপর মানুষের একচ্ছত্র অধিকার নয়, বরং পশু-পাখি, গাছপালা, জীবজন্তু—সবাই এই ভূমির ওপর নির্ভরশীল বলে উল্লেখ করেন তিনি। এবারের প্রশিক্ষণে আইনকানুনের পাশাপাশি হাতে-কলমে অটোমেশনের বিষয়ও শেখানো হবে, যা ভূমি ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াবে।
শৃঙ্খলা ও সততার ওপর জোর
প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, “শৃঙ্খলা হলো প্রশিক্ষণের প্রধান স্তম্ভ। সততা, মনোযোগ, নিষ্ঠা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে রাষ্ট্রের কল্যাণে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগাতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক ও সহযোগিতার মনোভাব ভবিষ্যতে রাষ্ট্রযন্ত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসেই উন্নয়ন
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, “আমরা সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী—আমাদের প্রধান দায়িত্ব রাষ্ট্রের জন্য কাজ করা। রাষ্ট্রের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আগামীর নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের দায়িত্ব আপনাদের হাতেই।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) ও কোর্স পরিচালক মো. মোমিনুর রশীদ। সভাপতিত্ব করেন মহাপরিচালক (গ্রেড-১) মো. সাইদুর রহমান। এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. শাহাদাত হোসেন।
#ভূমি_উপদেষ্টা #সার্ভে_ও_সেটেলমেন্ট #ভূমি_ব্যবস্থাপনা #ভূমি_রেকর্ড #প্রশিক্ষণ #জনসেবা #বাংলাদেশ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 




















