১০:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৭) প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৪) পাঁচ হাজার ডলারের পথে সোনা, ২০২৬ সালেও ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকার আভাস জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমছে, ছয় মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফা কাটছাঁট স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, আউন্সপ্রতি ছাড়াল ৪৪০০ ডলার এনসিপি নেতাকে গুলি: নারী সঙ্গী পলাতক, ফ্ল্যাট থেকে মাদকসংশ্লিষ্ট আলামত উদ্ধার তারেক রহমানের দেশে ফেরা সামনে রেখে শঙ্কার কথা জানালেন মির্জা আব্বাস গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোটের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ওসমান হাদির বোন পাচ্ছেন অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান তিন যুগ, তিন ফাইনাল, একই বাধা ভারত—সারফরাজের নামেই আবার পাকিস্তানের জয়গাথা

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লির আহ্বান: উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় মধ্যস্থতায় এগিয়ে আসুক চীন

জিওনজুতে রাষ্ট্রীয় বৈঠক: ১১ বছর পর দক্ষিণ কোরিয়া সফরে শি জিনপিং

১১ বছর পর প্রথমবারের মতো দক্ষিণ কোরিয়া সফরে এসেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। শনিবার জিওনজু শহরে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় সম্মেলনে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং তাঁর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও নৈশভোজে বসেন। এ বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে অচল হয়ে যাওয়া সংলাপ পুনরায় শুরু করার সম্ভাবনা খোঁজা।

লি প্রেসিডেন্ট শির সহযোগিতা কামনা করেন যেন উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি ঠেকাতে নতুনভাবে আলোচনার দ্বার খোলা যায়। অপরদিকে শি জিনপিং জানান, চীন দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা আরও গভীর করতে আগ্রহী এবং দুই দেশ মিলেই বর্তমান আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে।


লি–শি বৈঠকের মূল বার্তা

বৈঠকের আগে লির কার্যালয় জানায়, শি জিনপিং দক্ষিণ কোরিয়াকে চীনের ‘অবিচ্ছেদ্য সহযোগী অংশীদার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। লি জে মিয়ং, যিনি জুন মাসে হঠাৎ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, আগেই ঘোষণা করেছিলেন — তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোট সম্পর্ক জোরদার করবেন, তবে চীনের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়াবেন না এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কূটনৈতিক পথ বেছে নেবেন।

লি বলেন, “উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে — এটি অত্যন্ত ইতিবাচক। আমি চাই, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন একসঙ্গে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কৌশলগত যোগাযোগ জোরদার করুক।”

তিনি আরও প্রস্তাব দেন, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি ধাপে ধাপে নিরস্ত্রীকরণের প্রক্রিয়ায় যেতে হবে — প্রথমে সংলাপ ও অস্ত্র উন্নয়ন স্থগিতের মাধ্যমে।


উত্তর কোরিয়ার প্রতিক্রিয়া: ‘স্বপ্নের মতো অবাস্তব’

লির বক্তব্যের পরই শনিবার পিয়ংইয়ং থেকে এক বিবৃতি আসে। সেখানে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রস্তাবকে “অবাস্তব স্বপ্ন” বলে আখ্যা দেওয়া হয়। উত্তর কোরিয়া স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে — তারা দক্ষিণের সঙ্গে কোনো আলোচনা করবে না।

গত কয়েক বছরে উত্তর কোরিয়া তাদের দীর্ঘদিনের ‘একীকরণ নীতি’ পরিত্যাগ করেছে এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘প্রধান শত্রু’ ঘোষণা করেছে। দেশটির নেতা কিম জং উন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি নিরস্ত্রীকরণের শর্ত তুলে নেয়, তবে তিনি আলোচনায় রাজি হতে পারেন। তবে দক্ষিণ কোরিয়া সফরকালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আলোচনার প্রস্তাবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি।


যুক্তরাষ্ট্র–দক্ষিণ কোরিয়া চুক্তি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি

লি ও ট্রাম্প এক যৌথ ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাসের বিনিময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বহুবিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের চুক্তি করেন। এরপর ট্রাম্প মূল এপেক সম্মেলনের আগে দেশ ছাড়েন।

দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা উই সিউংলাক জানান, চীন কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সহযোগিতা করতে আগ্রহী — তবে চীন ঠিক কী ভূমিকা নেবে, তা স্পষ্ট করা হয়নি। উভয় পক্ষই স্বীকার করেছে, যুক্তরাষ্ট্র–উত্তর কোরিয়া সংলাপই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যমে এই বৈঠকের সংবাদ প্রকাশ হলেও উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।


নতুন সম্পর্কের রূপরেখা ও সাতটি চুক্তি

চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, শি জিনপিং দুই দেশের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় গড়তে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রতিটি দেশকে পরস্পরের সামাজিক ব্যবস্থা, উন্নয়নের পথ ও মৌলিক স্বার্থকে সম্মান জানাতে হবে এবং পার্থক্যগুলো বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।

তিনি বহুপাক্ষিক সহযোগিতাকে গুরুত্ব দিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বায়োফার্মাসিউটিক্যাল, সবুজ শিল্প ও প্রবীণ জনগোষ্ঠীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যৌথ উদ্যোগের আহ্বান জানান।

বৈঠকে দুই দেশ সাতটি চুক্তি স্বাক্ষর করে — এর মধ্যে ছিল দক্ষিণ কোরিয়ান ওন ও চীনা ইউয়ানের মুদ্রা-বিনিময় চুক্তি, অনলাইন অপরাধ দমন, বয়স্ক জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যবসায়িক উদ্যোগ ও উদ্ভাবনী সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক।


রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট

দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মিত্র এবং প্রধান বাণিজ্য অংশীদার, তবে দেশটি চীনের সঙ্গে বাণিজ্য নির্ভরতার কারণেও দ্বিধায় রয়েছে।

বৈঠকের সময় সিউলে শতাধিক মানুষ চীনবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়। ‘চীন আউট’ ও ‘দক্ষিণ কোরিয়া কোরিয়ানদের জন্য’ — এমন স্লোগানসহ প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভকারীরা হংদে এলাকার রাস্তায় মিছিল করে।

৬৪ বছর বয়সী রক্ষণশীল কর্মী কিম হাই কিয়ং বলেন, “আমি আমার দেশের উদার গণতন্ত্র রক্ষার জন্যই এই প্রতিবাদে এসেছি।”

অক্টোবর মাসে প্রেসিডেন্ট লি এমন বিক্ষোভ দমনের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, এ ধরনের আন্দোলন দেশের ভাবমূর্তি ও অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।


কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইস্যুতে আলোচনা

লি ও শির বৈঠকে দক্ষিণ কোরিয়ার জাহাজ নির্মাতা কোম্পানি হানওয়া ওশানের পাঁচটি ইউনিটের ওপর চীনের নিষেধাজ্ঞা নিয়েও কথা হয়। চীন দাবি করে, এসব কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা তদন্তে সহযোগিতার কারণে ঝুঁকির উৎসে পরিণত হয়েছে।

এছাড়া ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন থাড ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপনের পর চীন যে দক্ষিণ কোরিয়ান বিনোদন সামগ্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, তাও আলোচনায় উঠে আসে। দুই পক্ষ সম্মত হয় যে, সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে এবং এ বিষয়ে কাজের পর্যায়ে আলোচনা চলবে।

লি আরও উল্লেখ করেন, চীন-দক্ষিণ কোরিয়ার বিতর্কিত সমুদ্রসীমায় চীনা কাঠামো স্থাপনের বিষয়টি। অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত আসিয়ান প্রতিরক্ষা সম্মেলনের ফাঁকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী তাঁর চীনা সমকক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং কোরিয়ান আকাশসীমায় চীনের সামরিক কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ জানান।

লি জে মিয়ং-এর কূটনৈতিক কৌশল এখন ভারসাম্যের পরীক্ষা — যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রতা বজায় রেখে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে নতুন সংলাপের পথ তৈরি। অন্যদিকে শি জিনপিংও দেখাতে চাইছেন যে, পূর্ব এশিয়ার কূটনৈতিক অঙ্গনে চীন এখনও কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছে।

দুই দেশের এই বৈঠক তাই শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নয়, বরং সমগ্র উত্তর-পূর্ব এশিয়ার স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যৎ ভূ-রাজনীতির দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।


#চীন #দক্ষিণ_কোরিয়া #উত্তর_কোরিয়া #শি_জিনপিং #লি_জে_মিয়ং #এপেক #কূটনীতি #এশিয়া_রাজনীতি

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৭)

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লির আহ্বান: উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় মধ্যস্থতায় এগিয়ে আসুক চীন

০৪:৩৩:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫

জিওনজুতে রাষ্ট্রীয় বৈঠক: ১১ বছর পর দক্ষিণ কোরিয়া সফরে শি জিনপিং

১১ বছর পর প্রথমবারের মতো দক্ষিণ কোরিয়া সফরে এসেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। শনিবার জিওনজু শহরে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় সম্মেলনে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং তাঁর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও নৈশভোজে বসেন। এ বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে অচল হয়ে যাওয়া সংলাপ পুনরায় শুরু করার সম্ভাবনা খোঁজা।

লি প্রেসিডেন্ট শির সহযোগিতা কামনা করেন যেন উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি ঠেকাতে নতুনভাবে আলোচনার দ্বার খোলা যায়। অপরদিকে শি জিনপিং জানান, চীন দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা আরও গভীর করতে আগ্রহী এবং দুই দেশ মিলেই বর্তমান আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে।


লি–শি বৈঠকের মূল বার্তা

বৈঠকের আগে লির কার্যালয় জানায়, শি জিনপিং দক্ষিণ কোরিয়াকে চীনের ‘অবিচ্ছেদ্য সহযোগী অংশীদার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। লি জে মিয়ং, যিনি জুন মাসে হঠাৎ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, আগেই ঘোষণা করেছিলেন — তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোট সম্পর্ক জোরদার করবেন, তবে চীনের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়াবেন না এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কূটনৈতিক পথ বেছে নেবেন।

লি বলেন, “উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে — এটি অত্যন্ত ইতিবাচক। আমি চাই, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন একসঙ্গে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কৌশলগত যোগাযোগ জোরদার করুক।”

তিনি আরও প্রস্তাব দেন, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি ধাপে ধাপে নিরস্ত্রীকরণের প্রক্রিয়ায় যেতে হবে — প্রথমে সংলাপ ও অস্ত্র উন্নয়ন স্থগিতের মাধ্যমে।


উত্তর কোরিয়ার প্রতিক্রিয়া: ‘স্বপ্নের মতো অবাস্তব’

লির বক্তব্যের পরই শনিবার পিয়ংইয়ং থেকে এক বিবৃতি আসে। সেখানে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রস্তাবকে “অবাস্তব স্বপ্ন” বলে আখ্যা দেওয়া হয়। উত্তর কোরিয়া স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে — তারা দক্ষিণের সঙ্গে কোনো আলোচনা করবে না।

গত কয়েক বছরে উত্তর কোরিয়া তাদের দীর্ঘদিনের ‘একীকরণ নীতি’ পরিত্যাগ করেছে এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘প্রধান শত্রু’ ঘোষণা করেছে। দেশটির নেতা কিম জং উন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি নিরস্ত্রীকরণের শর্ত তুলে নেয়, তবে তিনি আলোচনায় রাজি হতে পারেন। তবে দক্ষিণ কোরিয়া সফরকালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আলোচনার প্রস্তাবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি।


যুক্তরাষ্ট্র–দক্ষিণ কোরিয়া চুক্তি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি

লি ও ট্রাম্প এক যৌথ ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাসের বিনিময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বহুবিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের চুক্তি করেন। এরপর ট্রাম্প মূল এপেক সম্মেলনের আগে দেশ ছাড়েন।

দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা উই সিউংলাক জানান, চীন কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সহযোগিতা করতে আগ্রহী — তবে চীন ঠিক কী ভূমিকা নেবে, তা স্পষ্ট করা হয়নি। উভয় পক্ষই স্বীকার করেছে, যুক্তরাষ্ট্র–উত্তর কোরিয়া সংলাপই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যমে এই বৈঠকের সংবাদ প্রকাশ হলেও উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।


নতুন সম্পর্কের রূপরেখা ও সাতটি চুক্তি

চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, শি জিনপিং দুই দেশের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় গড়তে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রতিটি দেশকে পরস্পরের সামাজিক ব্যবস্থা, উন্নয়নের পথ ও মৌলিক স্বার্থকে সম্মান জানাতে হবে এবং পার্থক্যগুলো বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।

তিনি বহুপাক্ষিক সহযোগিতাকে গুরুত্ব দিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বায়োফার্মাসিউটিক্যাল, সবুজ শিল্প ও প্রবীণ জনগোষ্ঠীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যৌথ উদ্যোগের আহ্বান জানান।

বৈঠকে দুই দেশ সাতটি চুক্তি স্বাক্ষর করে — এর মধ্যে ছিল দক্ষিণ কোরিয়ান ওন ও চীনা ইউয়ানের মুদ্রা-বিনিময় চুক্তি, অনলাইন অপরাধ দমন, বয়স্ক জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যবসায়িক উদ্যোগ ও উদ্ভাবনী সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক।


রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট

দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মিত্র এবং প্রধান বাণিজ্য অংশীদার, তবে দেশটি চীনের সঙ্গে বাণিজ্য নির্ভরতার কারণেও দ্বিধায় রয়েছে।

বৈঠকের সময় সিউলে শতাধিক মানুষ চীনবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়। ‘চীন আউট’ ও ‘দক্ষিণ কোরিয়া কোরিয়ানদের জন্য’ — এমন স্লোগানসহ প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভকারীরা হংদে এলাকার রাস্তায় মিছিল করে।

৬৪ বছর বয়সী রক্ষণশীল কর্মী কিম হাই কিয়ং বলেন, “আমি আমার দেশের উদার গণতন্ত্র রক্ষার জন্যই এই প্রতিবাদে এসেছি।”

অক্টোবর মাসে প্রেসিডেন্ট লি এমন বিক্ষোভ দমনের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, এ ধরনের আন্দোলন দেশের ভাবমূর্তি ও অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।


কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইস্যুতে আলোচনা

লি ও শির বৈঠকে দক্ষিণ কোরিয়ার জাহাজ নির্মাতা কোম্পানি হানওয়া ওশানের পাঁচটি ইউনিটের ওপর চীনের নিষেধাজ্ঞা নিয়েও কথা হয়। চীন দাবি করে, এসব কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা তদন্তে সহযোগিতার কারণে ঝুঁকির উৎসে পরিণত হয়েছে।

এছাড়া ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন থাড ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপনের পর চীন যে দক্ষিণ কোরিয়ান বিনোদন সামগ্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, তাও আলোচনায় উঠে আসে। দুই পক্ষ সম্মত হয় যে, সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে এবং এ বিষয়ে কাজের পর্যায়ে আলোচনা চলবে।

লি আরও উল্লেখ করেন, চীন-দক্ষিণ কোরিয়ার বিতর্কিত সমুদ্রসীমায় চীনা কাঠামো স্থাপনের বিষয়টি। অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত আসিয়ান প্রতিরক্ষা সম্মেলনের ফাঁকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী তাঁর চীনা সমকক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং কোরিয়ান আকাশসীমায় চীনের সামরিক কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ জানান।

লি জে মিয়ং-এর কূটনৈতিক কৌশল এখন ভারসাম্যের পরীক্ষা — যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রতা বজায় রেখে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে নতুন সংলাপের পথ তৈরি। অন্যদিকে শি জিনপিংও দেখাতে চাইছেন যে, পূর্ব এশিয়ার কূটনৈতিক অঙ্গনে চীন এখনও কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছে।

দুই দেশের এই বৈঠক তাই শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নয়, বরং সমগ্র উত্তর-পূর্ব এশিয়ার স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যৎ ভূ-রাজনীতির দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।


#চীন #দক্ষিণ_কোরিয়া #উত্তর_কোরিয়া #শি_জিনপিং #লি_জে_মিয়ং #এপেক #কূটনীতি #এশিয়া_রাজনীতি