০৫:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আপিল শুনানি অব্যাহত — নেপালের প্রধান বিচারপতির উপস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ দিন

আপিল বিভাগে ষষ্ঠ দিনের শুনানি

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বহুল আলোচিত আপিলের শুনানি অব্যাহত রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। রবিবার দুপুর ১২টায় প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ষষ্ঠ দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

এদিন শুনানিটি পর্যবেক্ষণ করেন বাংলাদেশ সফররত নেপালের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ মান সিং রাউত। বিচারপতি রাউতের উপস্থিতিতে আদালত প্রাঙ্গণে এক অনন্য পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

সৌহার্দ্য ও বিচারিক সহযোগিতার প্রতীকী মুহূর্ত

শুনানি শুরুর আগে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ নেপালের প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে দুই দেশের বিচার বিভাগের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরেন। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন।

এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন নেপালের উচ্চ আদালতের বিচারপতি, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা, নেপালের রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীসহ আপিল বিভাগের বহু সদস্য।

পক্ষভিত্তিক যুক্তি উপস্থাপন

রবিবারের শুনানিতে বিএনপির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। এর আগে জামায়াতে ইসলামী’র পক্ষে বক্তব্য দেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, এবং পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে যুক্তি দেন সিনিয়র আইনজীবী শরীফ ভূইয়া।

আদালত শুনানির পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছে আগামী মঙ্গলবার।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইতিহাস ও বিতর্ক

১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। তবে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।

দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১১ সালের ১০ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করে বাতিল করেন। এর ফলে একই বছরের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী, যা আনুষ্ঠানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলোপ ঘটায়।

পুনর্বিবেচনার আবেদন ও বর্তমান প্রেক্ষাপট

তবে সেই রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক ও এক ব্যক্তি আবেদন করেন। আপিল বিভাগের অনুমতি (লিভ) মঞ্জুর হওয়ার পর গত ২১ অক্টোবর থেকে শুরু হয় এই বহুল আলোচিত শুনানি।

এর আগে ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ২০ ও ২১ ধারা অসাংবিধানিক ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন তাৎপর্য

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে এই শুনানি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৯৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত এই ব্যবস্থার অধীনে তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে এর বিলোপের পর থেকেই বিরোধী দলগুলো নিয়মিতভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে আসছে।

বর্তমান শুনানির ফলাফল তাই শুধু আইনি নয়, রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

জনপ্রিয় সংবাদ

অনিয়ন্ত্রিত পোল্ট্রি ফার্মে ফেনীতে বাড়ছে পরিবেশ সংকট

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আপিল শুনানি অব্যাহত — নেপালের প্রধান বিচারপতির উপস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ দিন

০৯:২৪:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫

আপিল বিভাগে ষষ্ঠ দিনের শুনানি

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বহুল আলোচিত আপিলের শুনানি অব্যাহত রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। রবিবার দুপুর ১২টায় প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ষষ্ঠ দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

এদিন শুনানিটি পর্যবেক্ষণ করেন বাংলাদেশ সফররত নেপালের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ মান সিং রাউত। বিচারপতি রাউতের উপস্থিতিতে আদালত প্রাঙ্গণে এক অনন্য পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

সৌহার্দ্য ও বিচারিক সহযোগিতার প্রতীকী মুহূর্ত

শুনানি শুরুর আগে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ নেপালের প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে দুই দেশের বিচার বিভাগের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরেন। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন।

এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন নেপালের উচ্চ আদালতের বিচারপতি, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা, নেপালের রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীসহ আপিল বিভাগের বহু সদস্য।

পক্ষভিত্তিক যুক্তি উপস্থাপন

রবিবারের শুনানিতে বিএনপির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। এর আগে জামায়াতে ইসলামী’র পক্ষে বক্তব্য দেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, এবং পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে যুক্তি দেন সিনিয়র আইনজীবী শরীফ ভূইয়া।

আদালত শুনানির পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছে আগামী মঙ্গলবার।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইতিহাস ও বিতর্ক

১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। তবে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।

দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১১ সালের ১০ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করে বাতিল করেন। এর ফলে একই বছরের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী, যা আনুষ্ঠানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলোপ ঘটায়।

পুনর্বিবেচনার আবেদন ও বর্তমান প্রেক্ষাপট

তবে সেই রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক ও এক ব্যক্তি আবেদন করেন। আপিল বিভাগের অনুমতি (লিভ) মঞ্জুর হওয়ার পর গত ২১ অক্টোবর থেকে শুরু হয় এই বহুল আলোচিত শুনানি।

এর আগে ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ২০ ও ২১ ধারা অসাংবিধানিক ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন তাৎপর্য

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে এই শুনানি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৯৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত এই ব্যবস্থার অধীনে তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে এর বিলোপের পর থেকেই বিরোধী দলগুলো নিয়মিতভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে আসছে।

বর্তমান শুনানির ফলাফল তাই শুধু আইনি নয়, রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।