আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে মাজার-ই-শরিফের কাছে ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে এবং এতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। মাজার-ই-শরিফ দেশটির সবচেয়ে বড় শহরগুলোর একটি।
যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রাত একটায় সেখানে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয় এবং এর গভীরতা ছিলো ২৮ কিলোমিটার।
সংস্থাটি ভূমিকম্পের ঘটনায় সেখানে ‘উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি’ এবং ‘সম্ভাব্য ব্যাপক বিপর্যয়ের’ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে।
বালখ প্রদেশের তালিবান মুখপাত্র হাজি জাইদ সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ চার জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে এবং শোলগারা জেলায় ‘বহু মানুষ আহত’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
এই প্রদেশেরই রাজধানী হলো মাজার-ই-শরিফ।
নিকটবর্তী পর্বতময় প্রদেশ সামানগানের একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, সেখানে অন্তত সাত জন মারা গেছে এবং দেড়শ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে।
তবে বিবিসি এই তথ্যের সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
এর আগে এক পোস্টে হাজি জাইদ লিখেছিলেন যে, তারা সামান্য আহত হবার এবং প্রদেশের সব জেলার ক্ষয়ক্ষতির খবর পাচ্ছেন।

“বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লম্বা ভবন থেকে পড়ে লোকজন আহত হয়েছে,” তিনি লিখেছিলেন।
মাজার-ই-শরিফে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ বাস করে। ভূমিকম্প অনুভূত হবার সাথে সাথে বহু মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। কারণ তারা তাদের ভবনগুলো ধ্বংসের আশংকা করছিলেন বলে বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে।
বালখের তালিবান মুখপাত্র যে ভিডিও পোস্ট করেছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, মাজার-ই-শরিফের ঐতিহাসিক ব্লু মসজিদ প্রাঙ্গণে ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
এই ধর্মীয় কমপ্লেক্সে প্রথম শিয়া ইমামের সমাধি আছে বলে বিশ্বাস করা হয়। ইমাম হলো ঐশ্বরিক ধর্মীয় জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ।
এখন তার অনুসারীরা সেখানে সমবেত হয় এবং প্রার্থনা করে। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানও সেখানে উদযাপিত হয়।
কাবুল পুলিশের তালিবান মুখপাত্র খালিদ জাদরান সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ জানিয়েছেন, তারা পরিস্থিতির ওপর ঘনিষ্ঠ নজর রাখছেন।

মাজার-ই-শরিফের কাছে ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে
এর আগে গত অগাস্টে আফগানিস্তানের পর্বতময় পূর্বাঞ্চলে ছয় মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিলো। তখন ১ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলো।
মাটি ও কাঠ ব্যবহার করে ঘরবাড়ি বানানোর কারণে ওই অঞ্চলের গ্রামীণ এলাকায় ভূমিকম্প খুব প্রাণঘাতী হয়ে থাকে। ভূমিকম্পের সময় অনেকেই ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়ে।
আফগানিস্তান খুবই ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকা, কারণ দেশটি কয়েকটি ভূতাত্ত্বিক ফল্ট লাইন বা ফাটল রেখার ওপর অবস্থিত, যেখানে ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল রয়েছে।
জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কিত সমন্বয় অফিসের রিপোর্ট অনুযায়ী, আফগানিস্তানে গত এক দশকে সাত হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে ভূমিকম্প-জনিত কারণে।
সাম্প্রতিক সময়ে, জানুয়ারিতে পরপর দুটি ভূমিকম্প আঘাত হানে সেখানে। এছাড়া হিন্দু কুশ পর্বতে ২০০২ সালের মার্চে পরপর দুটি ভূমিকম্প হলে প্রায় এগারশো মানুষ প্রাণ হারায়।
এছাড়া ১৯৯৮ সালের মে মাসে, তাখান বাদাখাশান প্রদেশে ভূমিকম্পে চার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তখন প্রায় একশ গ্রামে ১৬ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো।
একই অঞ্চলে ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতেও প্রায় চার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিলো।
বিবিসি নিউজ বাংলা
Sarakhon Report 



















