০৬:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫
ওশেনিয়ায় নতুন রেকর্ড: টোয়াইসের ট্যুরে কেপপের ছাদ আরও উঁচু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫০) মিষ্টি না অতিমিষ্টি? মার্কিন শরতের এই জনপ্রিয় পানীয় ইউরোপে বিভাজন সৃষ্টি করেছে প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩১৯) দিল্লিতে তিন বছরে সবচেয়ে শীতল ও বৃষ্টিপূর্ণ অক্টোবর, দূষণের ঘন কুয়াশায় শীতের শুরুতেই চিন্তা অন্ধকার থেকে আলোয়: স্যার অ্যান্থনি হপকিন্সের আত্মজয়ের গল্প ইনসাইড আউট ২’: ইতিহাসের শীর্ষে পিক্সার, ফিরে পেল আস্থা ‘দ্য লাইন অব বিউটি’–তে আশির দশকের রাজনীতি, সমকামী সংস্কৃতি ও শ্রেণি-অহমিকার মুখোমুখি লন্ডন মঞ্চ মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬১) সাঙ্গু নদী: পাহাড়ের কোলে জন্ম, জীবনের ধারায় প্রবাহ

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬১)

নবাববংশীয়েরা তথায় বাস করিতে পান মাত্র। তাই বলি, তাহা ইংরেজরাজত্বের গৌরবের পরিচায়কস্বরূপ। উৎসবময় মুর্শিদাবাদের চিত্র দেখিয়া, একবার ভাগীরথীর পর পারে দৃষ্টিনিক্ষেপ করি-লাম। নিকটে, দূরে, বহুদূরে সকল দিকেই চাহিলাম, দেখিলাম ঘন বৃক্ষরাজি তট আবৃত করিয়া রহিয়াছে। পশ্চিম তীরে আঁধার ভিন্ন কিছুই দেখিলাম না। নিবিড় বৃক্ষরাজির ভিতর দিয়া জ্যোৎস্নালোক প্রবেশ করিতে পারিতেছে না। সে স্থানের ভাগীরথীও আঁধারে চলিয়াছেন।

গাছের ছায়া বুকে করিয়া যেন কিছু অলক্ষিত ভাবে গমন করিতেছেন। পূর্ব্ব পারের সহিত তুলনায় পশ্চিম তীর ভিন্নরূপ। এপার যেরূপ কোলাহলময়, ওপার সেইরূপই নীরব। এপার যেরূপ আলোক-মালায় সুসজ্জিত, ওপার সেইরূপ আঁধারে বিজড়িত। এপারে যেরূপ বহুসংখ্যক গৃহ দীপালোকে বিভূষিত, ওপারে সেইরূপ নিবিড় বৃক্ষরাজি দণ্ডায়মান হইয়া চন্দ্রালোকের গতি রোধ করিতেছে।

যেন তাহারা আলোক ভাল বাসে না, আঁধারেই থাকিতে ইচ্ছা করিয়াছে। ফলতঃ পূর্ব্ব পারের তুলনায় পশ্চিম পার আঁধারময়। কিছু দূরে দেখিলাম, একস্থানে কতিপয় বৃক্ষ কাছাকাছি দাঁড়াইয়া আঁধারের ঘটা কিছু বৃদ্ধি করিয়াছে। তখন সেই স্থানের কথা মনে হইল; মনে হইল, সেখানে যাহা আছে, তাহাকে আঁধারে রাখিতে বৃক্ষ-দিগের ইচ্ছা হওয়া সম্ভব বটে। সেই বীরশ্রেষ্ঠ আলিবর্দী ও হতভাগ্য সিরাজের সমাধি আঁধারে ঢাকাই উচিত।

বিস্মৃতিগর্ভে সমাহিত সুখ-স্বপ্নের ন্যায় তাঁহাদের সমাধি ঘনান্ধকারে লুকাইবে না ত কিসে ঢাকিবে? ঐতিহাসিকগণের কৃষ্ণচিত্রে সিরাজ যেরূপ চিত্রিত হইয়াছে, তাহার সমাধিও বৃক্ষান্ধকারে ঢাকিবে বৈ কি, নহিলে সামঞ্জস্য হইবে কেন? যে আলিবর্দীর বিশ্বত্রাস প্রতাপে দুর্দান্ত মহারাষ্ট্রীয়গণ বারংবার বঙ্গভূমি হইতে বিতাড়িত হইয়াছিল; বাঙ্গলার প্রজাগণ অত্যাচারের হস্ত হইতে নিষ্কৃতি লাভ করিয়া যাঁহাকে লক্ষ লক্ষ আশীর্ব্বাদ করিয়াছিল; যাঁহার ন্যায়ানুমোদিত শাসনে বাঙ্গলার ইতিহাস অলঙ্কৃত হইয়া রহিয়াছে; তিনিও আজ আঁধারে খোশবাগের বৃক্ষচ্ছায়ায় চিরনিদ্রিত।

 

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

ওশেনিয়ায় নতুন রেকর্ড: টোয়াইসের ট্যুরে কেপপের ছাদ আরও উঁচু

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬১)

১১:০০:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫

নবাববংশীয়েরা তথায় বাস করিতে পান মাত্র। তাই বলি, তাহা ইংরেজরাজত্বের গৌরবের পরিচায়কস্বরূপ। উৎসবময় মুর্শিদাবাদের চিত্র দেখিয়া, একবার ভাগীরথীর পর পারে দৃষ্টিনিক্ষেপ করি-লাম। নিকটে, দূরে, বহুদূরে সকল দিকেই চাহিলাম, দেখিলাম ঘন বৃক্ষরাজি তট আবৃত করিয়া রহিয়াছে। পশ্চিম তীরে আঁধার ভিন্ন কিছুই দেখিলাম না। নিবিড় বৃক্ষরাজির ভিতর দিয়া জ্যোৎস্নালোক প্রবেশ করিতে পারিতেছে না। সে স্থানের ভাগীরথীও আঁধারে চলিয়াছেন।

গাছের ছায়া বুকে করিয়া যেন কিছু অলক্ষিত ভাবে গমন করিতেছেন। পূর্ব্ব পারের সহিত তুলনায় পশ্চিম তীর ভিন্নরূপ। এপার যেরূপ কোলাহলময়, ওপার সেইরূপই নীরব। এপার যেরূপ আলোক-মালায় সুসজ্জিত, ওপার সেইরূপ আঁধারে বিজড়িত। এপারে যেরূপ বহুসংখ্যক গৃহ দীপালোকে বিভূষিত, ওপারে সেইরূপ নিবিড় বৃক্ষরাজি দণ্ডায়মান হইয়া চন্দ্রালোকের গতি রোধ করিতেছে।

যেন তাহারা আলোক ভাল বাসে না, আঁধারেই থাকিতে ইচ্ছা করিয়াছে। ফলতঃ পূর্ব্ব পারের তুলনায় পশ্চিম পার আঁধারময়। কিছু দূরে দেখিলাম, একস্থানে কতিপয় বৃক্ষ কাছাকাছি দাঁড়াইয়া আঁধারের ঘটা কিছু বৃদ্ধি করিয়াছে। তখন সেই স্থানের কথা মনে হইল; মনে হইল, সেখানে যাহা আছে, তাহাকে আঁধারে রাখিতে বৃক্ষ-দিগের ইচ্ছা হওয়া সম্ভব বটে। সেই বীরশ্রেষ্ঠ আলিবর্দী ও হতভাগ্য সিরাজের সমাধি আঁধারে ঢাকাই উচিত।

বিস্মৃতিগর্ভে সমাহিত সুখ-স্বপ্নের ন্যায় তাঁহাদের সমাধি ঘনান্ধকারে লুকাইবে না ত কিসে ঢাকিবে? ঐতিহাসিকগণের কৃষ্ণচিত্রে সিরাজ যেরূপ চিত্রিত হইয়াছে, তাহার সমাধিও বৃক্ষান্ধকারে ঢাকিবে বৈ কি, নহিলে সামঞ্জস্য হইবে কেন? যে আলিবর্দীর বিশ্বত্রাস প্রতাপে দুর্দান্ত মহারাষ্ট্রীয়গণ বারংবার বঙ্গভূমি হইতে বিতাড়িত হইয়াছিল; বাঙ্গলার প্রজাগণ অত্যাচারের হস্ত হইতে নিষ্কৃতি লাভ করিয়া যাঁহাকে লক্ষ লক্ষ আশীর্ব্বাদ করিয়াছিল; যাঁহার ন্যায়ানুমোদিত শাসনে বাঙ্গলার ইতিহাস অলঙ্কৃত হইয়া রহিয়াছে; তিনিও আজ আঁধারে খোশবাগের বৃক্ষচ্ছায়ায় চিরনিদ্রিত।