০২:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫
দিল্লিতে তিন বছরে সবচেয়ে শীতল ও বৃষ্টিপূর্ণ অক্টোবর, দূষণের ঘন কুয়াশায় শীতের শুরুতেই চিন্তা অন্ধকার থেকে আলোয়: স্যার অ্যান্থনি হপকিন্সের আত্মজয়ের গল্প ইনসাইড আউট ২’: ইতিহাসের শীর্ষে পিক্সার, ফিরে পেল আস্থা ‘দ্য লাইন অব বিউটি’–তে আশির দশকের রাজনীতি, সমকামী সংস্কৃতি ও শ্রেণি-অহমিকার মুখোমুখি লন্ডন মঞ্চ মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬১) সাঙ্গু নদী: পাহাড়ের কোলে জন্ম, জীবনের ধারায় প্রবাহ রণক্ষেত্রে (পর্ব-১১৬) পাকিস্তানে প্রথম চীনা নির্মিত সাবমেরিন- ২০২৬ সালে উদ্বোধন সরকার বলছে, নেত্র নিউজের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিবেদন বিভ্রান্তিকর প্রার্থী বাছাইয়ে নারীদের প্রতি অবহেলা: বিএনপির রাজনীতিতে অদৃশ্য অর্ধেক

ট্রাম্পের পারমাণবিক পরীক্ষা নিয়ে বক্তব্য বিপজ্জনক

মানব ও পরিবেশগত ঝুঁকি

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে, গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিভ্রান্তিকর ঘোষণা দেন: তিনি চান পেন্টাগন যেন “রাশিয়া ও চীনের সমানভাবে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা শুরু করে।”

এই বক্তব্য এত রহস্যময় কেন? প্রথমত, প্রতিরক্ষা বিভাগ (ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট) পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করে না—এটি করে শক্তি বিভাগ (এনার্জি ডিপার্টমেন্ট)। দ্বিতীয়ত, রাশিয়া ও চীন বর্তমানে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালায় না। বিশ্বের নয়টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে একমাত্র উত্তর কোরিয়াই কয়েক দশক ধরে ভূগর্ভস্থ বিস্ফোরণ চালিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং, ট্রাম্প কোন “সমতা” প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন, তা স্পষ্ট নয়।

অবশ্য ট্রাম্প নিজেই এই বিভ্রান্তি দূর করতে পারতেন—যদি তিনি ব্যাখ্যা করতেন, তার সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে কী বোঝাতে চেয়েছেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং সাংবাদিকদের বলেছেন, তার সিদ্ধান্তের সঙ্গে চীনের কোনো সম্পর্ক নেই। “এটি অন্যদের নিয়ে” তিনি বলেন, যদিও কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি। “মনে হচ্ছে সবাই পারমাণবিক পরীক্ষা চালাচ্ছে।”

প্রেসিডেন্টের এই অস্পষ্টতা উদ্বেগজনক শুধু এজন্য নয় যে, আমেরিকান জনগণ জানে না তিনি কী বোঝাতে চান—বরং প্রতিদ্বন্দ্বীরাও জানে না। এমন অস্পষ্ট বক্তব্য বেইজিং ও মস্কোতে সরাসরি হুমকি হিসেবে ব্যাখ্যা করা হতে পারে, এমনকি তা যদি উদ্দেশ্যমূলক না-ও হয়। ফলে বিশ্ব এমন এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে পারে, যেখানে পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করা একটি “উন্মুক্ত প্রশ্ন” হয়ে দাঁড়াবে—যা বহু আগেই বন্ধ বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল।


“পারমাণবিক প্রান্তে” ফেরার আশঙ্কা

আমি ও আমার সহকর্মীরা ‘অ্যাট দ্য ব্রিঙ্ক’ সিরিজে লিখেছি, বিশ্বশক্তিগুলো আবার পারমাণবিক পরীক্ষা শুরু করতে পারে—এই আশঙ্কা ঠান্ডা যুদ্ধ-পরবর্তী সময় থেকে বিরাজ করছে। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি ও নতুন প্রজন্মের পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়ন সেই আশঙ্কাকে বাস্তবতার কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।

অতীতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া ঘোষণা করেছে যে তারা পরীক্ষার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করতে চায় না। তবুও বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, তিন দেশই তাদের নিজ নিজ পরীক্ষাস্থলে নির্মাণকাজ চালাচ্ছে। মস্কো ও বেইজিং এ বিষয়ে মুখ বন্ধ রেখেছে, কিন্তু ওয়াশিংটন বলেছে, তারা “সাবক্রিটিক্যাল টেস্ট” পরিচালনার জন্য অবকাঠামো তৈরি করছে—অর্থাৎ এমন পরীক্ষা যা ভূগর্ভস্থ হয়, তবে সম্পূর্ণ পারমাণবিক চেইন বিক্রিয়া সৃষ্টি করে না।

নেভাদা পরীক্ষাকেন্দ্রে আমার অভিজ্ঞতা

গত শীতে আমি নিজেই নেভাদার পরীক্ষাকেন্দ্র ঘুরে দেখেছি, যা লাস ভেগাস থেকে প্রায় এক ঘণ্টার দূরত্বে। ঠান্ডা যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সেখানে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্ফোরণ চালাতো। এখনো সূর্যদগ্ধ সেই সমভূমিতে বিস্ফোরণের বিশাল গর্তের দাগ স্পষ্ট। ১৯৬২ সালে প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য উদ্বেগের কারণে পারমাণবিক পরীক্ষা ভূগর্ভে স্থানান্তর করেন। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র টানেল ও শ্যাফটের জটিল ভূগর্ভস্থ ব্যবস্থা গড়ে তোলে, যা ১৯৯২ সাল পর্যন্ত চালু ছিল।

এই টানেলগুলোর একটিতে এখন চলছে “পালস”—পূর্ণরূপে “প্রিন্সিপাল আন্ডারগ্রাউন্ড ল্যাবরেটরি ফর সাবক্রিটিক্যাল এক্সপেরিমেন্টেশন।” এখানে বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা অস্ত্রমানের প্লুটোনিয়াম ও বিস্ফোরক ব্যবহার করে নতুন তথ্য আহরণ করছেন—যা পূর্ববর্তী পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষাগুলো থেকে জানা যায়নি।

আমি যখন প্রায় ১,০০০ ফুট গভীরে হেলমেট, বুট ও সুরক্ষা-চশমা পরে হাঁটছিলাম, তখন বুঝলাম কেন সরকার আমাকে সেখানে নিয়ে এসেছে—দেখানোর জন্য যে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার করদাতার অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপনে, যা সাবক্রিটিক্যাল পরীক্ষার জন্য, শহর ধ্বংসকারী ওয়ারহেডের জন্য নয়।


প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা

ভূগর্ভস্থ এই ল্যাবে শ্রমিকরা নতুন যন্ত্রপাতি বসাচ্ছিলেন, যা ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো পারমাণবিক অস্ত্রগুলোর কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। বর্তমান মজুদের প্রাচীনতম প্লুটোনিয়াম প্রায় ৮০ বছরের পুরোনো। এসব পরীক্ষা প্লুটোনিয়ামের বার্ধক্যজনিত পরিবর্তন সম্পর্কে কিছু ধারণা দিতে পারে, কিন্তু সব নয়। কিছু মার্কিন বিজ্ঞানীর মতে, সম্পূর্ণভাবে তা বোঝার একমাত্র উপায় হলো পূর্ণাঙ্গ পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করা।

তবে তা দ্রুত বা সহজে করা সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯২ সালের পর কোনো পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি। এখন আবার চালাতে হলে এক বছরেরও বেশি সময় লাগবে—পরীক্ষার যন্ত্রপাতি, নিদানমূলক সরঞ্জাম, এবং ৫,০০০ ফুট গভীর ভূগর্ভস্থ অবকাঠামো প্রস্তুত করতে।


রাজনৈতিক বনাম বৈজ্ঞানিক যুক্তি

পূর্ববর্তী মার্কিন প্রশাসনগুলো পরীক্ষায় ফেরার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে সরল ব্যয়-সুবিধা বিশ্লেষণের কারণে। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ১,০০০টির বেশি পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে; রাশিয়া চালিয়েছে ৭১৫টি, আর চীন ৪৫টি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রসংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় অনেক বেশি। এখন যদি যুক্তরাষ্ট্র নেভাদা বা অন্য কোথাও পরীক্ষা শুরু করে, তা রাশিয়া ও চীনের জন্য প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে, এবং তারা দ্রুত নিজেদের ঘাটতি পূরণে উদ্যোগী হতে পারে।

বৈজ্ঞানিক ও ভূরাজনৈতিক ঝুঁকির পাশাপাশি মানবিক বিপদও রয়েছে। যেখানে পারমাণবিক পরীক্ষা হয়েছে, সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা ও ক্যানসারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। পরিবেশের ক্ষতিও দীর্ঘমেয়াদি।

Opinion: Why Trump's talk about nuclear testing is dangerous

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির অবস্থা

যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া ১৯৯৬ সালের “কমপ্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট ব্যান ট্রিটি” স্বাক্ষর করার পর থেকে কোনো ভূগর্ভস্থ পরীক্ষা চালায়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন চুক্তিটি অনুমোদন করেনি, আর রাশিয়া ২০২৩ সালের নভেম্বরে অনুমোদন প্রত্যাহার করেছে—যা আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য বড় এক পশ্চাদপদ। তবুও, উত্তর কোরিয়া ছাড়া অন্য সব দেশ এই নিষেধাজ্ঞা এখনো মানছে।


“পারমাণবিক ঈর্ষা” ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য

তাহলে ট্রাম্প এমন কথা বললেন কেন? সম্ভবত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নতুন পারমাণবিকচালিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও পানির নিচে চালিত ড্রোনের পরীক্ষা ঘোষণা করার পর একধরনের “পারমাণবিক ঈর্ষা” তাকে প্রভাবিত করেছে। যদিও এসব অস্ত্র এখনো উন্নয়নের পর্যায়ে, ট্রাম্প হয়তো চান যুক্তরাষ্ট্রও অনুরূপ প্রযুক্তি বিকাশ করুক, অথবা বিদ্যমান ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমাগুলোর পরীক্ষা দ্রুত করুক।

প্রতিরক্ষা বিভাগ এসব সরবরাহ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং প্রেসিডেন্টের নির্দেশে কাজ করতে বাধ্য। ট্রাম্প প্রায়ই বলেছেন, তিনি বিশ্বে কম পারমাণবিক অস্ত্র চান, বেশি নয়। কিন্তু তার বক্তব্য ও পদক্ষেপ প্রায়ই সেই দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ট্রাম্প শক্তি বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ছয় মাসের মধ্যে “সহজ পরীক্ষা, সীমিত প্রক্রিয়ায়” প্রস্তুত রাখার জন্য—যা পূর্ববর্তী প্রশাসনের দুই থেকে তিন বছরের সময়সীমার তুলনায় অনেক কম। যদিও তা বাস্তবায়িত হয়নি, হোয়াইট হাউসে ২০২০ সালে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা তখন বলেন, এমন পরীক্ষা বৈজ্ঞানিক কারণে নয়, বরং রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে হতো—প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি শক্তি প্রদর্শনের জন্য।


উপসংহার: অতীতের ভুল পুনরাবৃত্তি নয়

আমরা সৌভাগ্যবান যে এমন এক যুগে বাস করছি, যখন বিশ্বের সবচেয়ে বিধ্বংসী অস্ত্র নেতাদের প্রদর্শনের হাতিয়ার নয়। আমাদের উচিত এই স্থিতাবস্থা অক্ষুণ্ণ রাখা, যাতে আবার এক অনিশ্চিত, বিপজ্জনক যুগে ফিরে না যাই—যেখানে পারমাণবিক পরীক্ষা স্বাভাবিক বাস্তবতায় পরিণত হবে। অতীতের ভুলগুলো শুধুমাত্র ভুলে যাওয়া হয়েছে বলে আবার করা উচিত নয়।

দিল্লিতে তিন বছরে সবচেয়ে শীতল ও বৃষ্টিপূর্ণ অক্টোবর, দূষণের ঘন কুয়াশায় শীতের শুরুতেই চিন্তা

ট্রাম্পের পারমাণবিক পরীক্ষা নিয়ে বক্তব্য বিপজ্জনক

০৬:৪২:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫

মানব ও পরিবেশগত ঝুঁকি

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে, গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিভ্রান্তিকর ঘোষণা দেন: তিনি চান পেন্টাগন যেন “রাশিয়া ও চীনের সমানভাবে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা শুরু করে।”

এই বক্তব্য এত রহস্যময় কেন? প্রথমত, প্রতিরক্ষা বিভাগ (ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট) পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করে না—এটি করে শক্তি বিভাগ (এনার্জি ডিপার্টমেন্ট)। দ্বিতীয়ত, রাশিয়া ও চীন বর্তমানে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালায় না। বিশ্বের নয়টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে একমাত্র উত্তর কোরিয়াই কয়েক দশক ধরে ভূগর্ভস্থ বিস্ফোরণ চালিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং, ট্রাম্প কোন “সমতা” প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন, তা স্পষ্ট নয়।

অবশ্য ট্রাম্প নিজেই এই বিভ্রান্তি দূর করতে পারতেন—যদি তিনি ব্যাখ্যা করতেন, তার সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে কী বোঝাতে চেয়েছেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং সাংবাদিকদের বলেছেন, তার সিদ্ধান্তের সঙ্গে চীনের কোনো সম্পর্ক নেই। “এটি অন্যদের নিয়ে” তিনি বলেন, যদিও কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি। “মনে হচ্ছে সবাই পারমাণবিক পরীক্ষা চালাচ্ছে।”

প্রেসিডেন্টের এই অস্পষ্টতা উদ্বেগজনক শুধু এজন্য নয় যে, আমেরিকান জনগণ জানে না তিনি কী বোঝাতে চান—বরং প্রতিদ্বন্দ্বীরাও জানে না। এমন অস্পষ্ট বক্তব্য বেইজিং ও মস্কোতে সরাসরি হুমকি হিসেবে ব্যাখ্যা করা হতে পারে, এমনকি তা যদি উদ্দেশ্যমূলক না-ও হয়। ফলে বিশ্ব এমন এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে পারে, যেখানে পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করা একটি “উন্মুক্ত প্রশ্ন” হয়ে দাঁড়াবে—যা বহু আগেই বন্ধ বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল।


“পারমাণবিক প্রান্তে” ফেরার আশঙ্কা

আমি ও আমার সহকর্মীরা ‘অ্যাট দ্য ব্রিঙ্ক’ সিরিজে লিখেছি, বিশ্বশক্তিগুলো আবার পারমাণবিক পরীক্ষা শুরু করতে পারে—এই আশঙ্কা ঠান্ডা যুদ্ধ-পরবর্তী সময় থেকে বিরাজ করছে। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি ও নতুন প্রজন্মের পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়ন সেই আশঙ্কাকে বাস্তবতার কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।

অতীতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া ঘোষণা করেছে যে তারা পরীক্ষার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করতে চায় না। তবুও বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, তিন দেশই তাদের নিজ নিজ পরীক্ষাস্থলে নির্মাণকাজ চালাচ্ছে। মস্কো ও বেইজিং এ বিষয়ে মুখ বন্ধ রেখেছে, কিন্তু ওয়াশিংটন বলেছে, তারা “সাবক্রিটিক্যাল টেস্ট” পরিচালনার জন্য অবকাঠামো তৈরি করছে—অর্থাৎ এমন পরীক্ষা যা ভূগর্ভস্থ হয়, তবে সম্পূর্ণ পারমাণবিক চেইন বিক্রিয়া সৃষ্টি করে না।

নেভাদা পরীক্ষাকেন্দ্রে আমার অভিজ্ঞতা

গত শীতে আমি নিজেই নেভাদার পরীক্ষাকেন্দ্র ঘুরে দেখেছি, যা লাস ভেগাস থেকে প্রায় এক ঘণ্টার দূরত্বে। ঠান্ডা যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সেখানে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্ফোরণ চালাতো। এখনো সূর্যদগ্ধ সেই সমভূমিতে বিস্ফোরণের বিশাল গর্তের দাগ স্পষ্ট। ১৯৬২ সালে প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য উদ্বেগের কারণে পারমাণবিক পরীক্ষা ভূগর্ভে স্থানান্তর করেন। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র টানেল ও শ্যাফটের জটিল ভূগর্ভস্থ ব্যবস্থা গড়ে তোলে, যা ১৯৯২ সাল পর্যন্ত চালু ছিল।

এই টানেলগুলোর একটিতে এখন চলছে “পালস”—পূর্ণরূপে “প্রিন্সিপাল আন্ডারগ্রাউন্ড ল্যাবরেটরি ফর সাবক্রিটিক্যাল এক্সপেরিমেন্টেশন।” এখানে বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা অস্ত্রমানের প্লুটোনিয়াম ও বিস্ফোরক ব্যবহার করে নতুন তথ্য আহরণ করছেন—যা পূর্ববর্তী পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষাগুলো থেকে জানা যায়নি।

আমি যখন প্রায় ১,০০০ ফুট গভীরে হেলমেট, বুট ও সুরক্ষা-চশমা পরে হাঁটছিলাম, তখন বুঝলাম কেন সরকার আমাকে সেখানে নিয়ে এসেছে—দেখানোর জন্য যে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার করদাতার অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপনে, যা সাবক্রিটিক্যাল পরীক্ষার জন্য, শহর ধ্বংসকারী ওয়ারহেডের জন্য নয়।


প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা

ভূগর্ভস্থ এই ল্যাবে শ্রমিকরা নতুন যন্ত্রপাতি বসাচ্ছিলেন, যা ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো পারমাণবিক অস্ত্রগুলোর কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। বর্তমান মজুদের প্রাচীনতম প্লুটোনিয়াম প্রায় ৮০ বছরের পুরোনো। এসব পরীক্ষা প্লুটোনিয়ামের বার্ধক্যজনিত পরিবর্তন সম্পর্কে কিছু ধারণা দিতে পারে, কিন্তু সব নয়। কিছু মার্কিন বিজ্ঞানীর মতে, সম্পূর্ণভাবে তা বোঝার একমাত্র উপায় হলো পূর্ণাঙ্গ পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করা।

তবে তা দ্রুত বা সহজে করা সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯২ সালের পর কোনো পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি। এখন আবার চালাতে হলে এক বছরেরও বেশি সময় লাগবে—পরীক্ষার যন্ত্রপাতি, নিদানমূলক সরঞ্জাম, এবং ৫,০০০ ফুট গভীর ভূগর্ভস্থ অবকাঠামো প্রস্তুত করতে।


রাজনৈতিক বনাম বৈজ্ঞানিক যুক্তি

পূর্ববর্তী মার্কিন প্রশাসনগুলো পরীক্ষায় ফেরার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে সরল ব্যয়-সুবিধা বিশ্লেষণের কারণে। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ১,০০০টির বেশি পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে; রাশিয়া চালিয়েছে ৭১৫টি, আর চীন ৪৫টি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রসংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় অনেক বেশি। এখন যদি যুক্তরাষ্ট্র নেভাদা বা অন্য কোথাও পরীক্ষা শুরু করে, তা রাশিয়া ও চীনের জন্য প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে, এবং তারা দ্রুত নিজেদের ঘাটতি পূরণে উদ্যোগী হতে পারে।

বৈজ্ঞানিক ও ভূরাজনৈতিক ঝুঁকির পাশাপাশি মানবিক বিপদও রয়েছে। যেখানে পারমাণবিক পরীক্ষা হয়েছে, সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা ও ক্যানসারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। পরিবেশের ক্ষতিও দীর্ঘমেয়াদি।

Opinion: Why Trump's talk about nuclear testing is dangerous

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির অবস্থা

যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া ১৯৯৬ সালের “কমপ্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট ব্যান ট্রিটি” স্বাক্ষর করার পর থেকে কোনো ভূগর্ভস্থ পরীক্ষা চালায়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন চুক্তিটি অনুমোদন করেনি, আর রাশিয়া ২০২৩ সালের নভেম্বরে অনুমোদন প্রত্যাহার করেছে—যা আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য বড় এক পশ্চাদপদ। তবুও, উত্তর কোরিয়া ছাড়া অন্য সব দেশ এই নিষেধাজ্ঞা এখনো মানছে।


“পারমাণবিক ঈর্ষা” ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য

তাহলে ট্রাম্প এমন কথা বললেন কেন? সম্ভবত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নতুন পারমাণবিকচালিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও পানির নিচে চালিত ড্রোনের পরীক্ষা ঘোষণা করার পর একধরনের “পারমাণবিক ঈর্ষা” তাকে প্রভাবিত করেছে। যদিও এসব অস্ত্র এখনো উন্নয়নের পর্যায়ে, ট্রাম্প হয়তো চান যুক্তরাষ্ট্রও অনুরূপ প্রযুক্তি বিকাশ করুক, অথবা বিদ্যমান ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমাগুলোর পরীক্ষা দ্রুত করুক।

প্রতিরক্ষা বিভাগ এসব সরবরাহ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং প্রেসিডেন্টের নির্দেশে কাজ করতে বাধ্য। ট্রাম্প প্রায়ই বলেছেন, তিনি বিশ্বে কম পারমাণবিক অস্ত্র চান, বেশি নয়। কিন্তু তার বক্তব্য ও পদক্ষেপ প্রায়ই সেই দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ট্রাম্প শক্তি বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ছয় মাসের মধ্যে “সহজ পরীক্ষা, সীমিত প্রক্রিয়ায়” প্রস্তুত রাখার জন্য—যা পূর্ববর্তী প্রশাসনের দুই থেকে তিন বছরের সময়সীমার তুলনায় অনেক কম। যদিও তা বাস্তবায়িত হয়নি, হোয়াইট হাউসে ২০২০ সালে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা তখন বলেন, এমন পরীক্ষা বৈজ্ঞানিক কারণে নয়, বরং রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে হতো—প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি শক্তি প্রদর্শনের জন্য।


উপসংহার: অতীতের ভুল পুনরাবৃত্তি নয়

আমরা সৌভাগ্যবান যে এমন এক যুগে বাস করছি, যখন বিশ্বের সবচেয়ে বিধ্বংসী অস্ত্র নেতাদের প্রদর্শনের হাতিয়ার নয়। আমাদের উচিত এই স্থিতাবস্থা অক্ষুণ্ণ রাখা, যাতে আবার এক অনিশ্চিত, বিপজ্জনক যুগে ফিরে না যাই—যেখানে পারমাণবিক পরীক্ষা স্বাভাবিক বাস্তবতায় পরিণত হবে। অতীতের ভুলগুলো শুধুমাত্র ভুলে যাওয়া হয়েছে বলে আবার করা উচিত নয়।