আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে ‘আগে গণভোট’ ধারণা
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের ধারণা সম্পূর্ণভাবে আইনের পরিপন্থী।
সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন,
“আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী, কোনো প্রস্তাব বা সংবিধান সংশোধনী প্রথমে সংসদে পাস হয়, এরপর সেটি গণভোটে জনগণের কাছে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু আগে গণভোট, পরে সংসদ নির্বাচন—এটি প্রচলিত আইনি নিয়মের পরিপন্থী।”
সংসদের আগেই গণভোট—‘অবাস্তব চিন্তা’
ড. মালিক বলেন, “সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনের চিন্তা বাস্তবসম্মত নয়। সাধারণত সংসদ কোনো আইন বা সংবিধান সংশোধনী পাস করার পর জনগণ পরবর্তী ধাপে সেটি গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদন দেয়।
কিন্তু যদি আগে গণভোট আয়োজন করা হয়, সেটি আইনি কাঠামোর বাইরে পড়ে।”
বিএনপির অভিযোগ ‘গুরুতর’
বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিএনপি আলোচনায় অংশ নিয়েছিল, কিন্তু এখন তারা বলছে কিছু বিষয় আলোচনায় আসেনি বা বাদ পড়েছে—এটি নিঃসন্দেহে গুরুতর অভিযোগ।”

সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়াকে ‘সাংঘর্ষিক’ বললেন মালিক
প্রস্তাবিত সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়াকে ‘অবাস্তব ও সাংঘর্ষিক’ আখ্যা দেন ড. শাহদীন মালিক। তিনি বলেন,
“যদি বলা হয় নির্বাচিত সংসদ দুই শত সত্তর দিনের মধ্যে সংবিধান সংশোধন করবে, আর ব্যর্থ হলে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে—তাহলে আলোচনার অর্থ কী?
ফলাফল আগেই নির্ধারণ করা থাকলে সংসদের সার্বভৌমত্ব থাকে না।”
উচ্চকক্ষের প্রস্তাব সংবিধানবিরোধী
তিনি আরও বলেন, “সংসদের উচ্চকক্ষ করার প্রস্তাবও বর্তমান সংবিধানের পরিপন্থী।
কারণ, সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে এক কক্ষবিশিষ্ট সংসদ থাকবে। এটিকে পরিবর্তন করা মানে বিদ্যমান সংবিধানকে বাতিল ঘোষণা করা।”
প্রধান উপদেষ্টার ক্ষমতা সীমিত
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাদেশ জারি করে ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন করতে পারেন কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,
“আইন পাস করার ক্ষমতা সংসদের, আর সংসদ না থাকলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি করার সুযোগ আছে।
কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা বা প্রধানমন্ত্রী আইন পাস করতে পারেন না। এটি নির্বাহী বিভাগের কাজ নয়।”

একসঙ্গে ৪৮ ধারায় গণভোট ‘অবাস্তব’
গণভোটে ৪৮টি সংবিধান-সংক্রান্ত ধারা একসঙ্গে উপস্থাপনের প্রস্তাব প্রসঙ্গে ড. মালিক বলেন,
“এটি সম্পূর্ণ অবাস্তব। জনগণ কীভাবে এত জটিল বিষয়ে একসঙ্গে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলবে?
এটি আইনি কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং ভবিষ্যতে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















