দেশের পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করে একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থিক অনিয়ম ও দীর্ঘদিনের সংকট থেকে উত্তরণের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে। এটি দেশের ব্যাংকিং খাতে অন্যতম বড় কাঠামোগত পরিবর্তনের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) দেশের পাঁচটি আর্থিক সংকটে থাকা শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে কার্যত “অকার্যকর” ঘোষণা করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো—সবগুলো ব্যাংককে একীভূত করে একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা।
এই সিদ্ধান্তটি এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাব এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) ও এর সুপারিশের পর।
যেসব ব্যাংক একীভূত হচ্ছে
বিলুপ্ত পর্ষদযুক্ত পাঁচটি ব্যাংক হলো—
১. ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি
২. গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি
৩. ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি
৪. এক্সিম ব্যাংক পিএলসি
৫. সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি (এসআইবিএল)
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রতিটি ব্যাংকে পৃথক চিঠি পাঠানো হয়েছে, যেখানে জানানো হয় যে তাদের পরিচালনা পর্ষদের কার্যক্রম তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করা হলো। এখন থেকে এই ব্যাংকগুলো ব্যাংক রেজোলিউশন অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী পরিচালিত হবে।
নতুন ব্যাংকের নাম ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই একীভূত প্রক্রিয়ার ফলে নতুন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকটির নাম হবে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’।
পর্ষদ বিলুপ্তির এই সিদ্ধান্তই হলো জোরপূর্বক একীভূত প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ।
জরুরি বৈঠক ও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বুধবার সংশ্লিষ্ট পাঁচ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের জরুরি বৈঠকে ডেকেছেন। সেখানে তাদের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে অবহিত করা হবে। ইতোমধ্যে প্রতিটি ব্যাংকের কোম্পানি সেক্রেটারিকে আনুষ্ঠানিক চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
সরকার ও পরামর্শক পরিষদের অনুমোদন
গত নয়ই অক্টোবর পরামর্শক পরিষদ (Council of Advisers) এই একীভূত ব্যাংক গঠনের অনুমোদন দেয়। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এফআইডি এ বিষয়ে প্রস্তাব ও সুপারিশ প্রদান করেছিল।
আর্থিক দুরবস্থার চিত্র
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, এই ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে অবনতিশীল।
- তাদের তারল্য সংকট (liquidity crisis) চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
- অশোধিত ঋণের হার বেড়েছে।
- প্রভিশন ঘাটতি ও মূলধন ঘাটতি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক একাধিকবার অর্থসহায়তা দিলেও পরিস্থিতি উন্নতি হয়নি।
ফলে পুঁজিবাজারে এসব ব্যাংকের শেয়ারমূল্য ধসে পড়েছে এবং প্রত্যেকটির নেট অ্যাসেট ভ্যালু (NAV) এখন নেতিবাচক অবস্থায় রয়েছে।
অতিরিক্ত পদক্ষেপ
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক দুই হাজার পাঁচশ’ কোটি টাকার সপ্তম ইনভেস্টমেন্ট সুকুক বন্ড ইস্যু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা ইসলামী ব্যাংকিং খাতের তারল্য সংকট মোকাবিলায় ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর ভবিষ্যৎ কাঠামোয় বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর্থিক অনিয়ম ও দীর্ঘদিনের সংকট কাটিয়ে উঠতে এখন সরকার সরাসরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ইসলামী ব্যাংক খাতকে পুনর্গঠন করতে যাচ্ছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















