গরু ও খাসির মাংসের দাম লাগামছাড়া হওয়ায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এখন অবৈধভাবে ঘোড়ার মাংস ও পচা মাংস বিক্রি করছে। সম্প্রতি গাজীপুরে অভিযান চালিয়ে ৩৭টি অসুস্থ ঘোড়া উদ্ধার ও প্রায় পাঁচ মণ ঘোড়ার মাংস জব্দ হয়েছে। এই ঘটনা শুধু স্থানীয় নয়—দেশজুড়ে খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে নতুন আতঙ্ক তৈরি করেছে।
দাম বাড়ার সুযোগে অবৈধ মাংস ব্যবসা
গরু ও খাসির মাংসের দাম একের পর এক বাড়তে থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিকল্প হিসেবে ঘোড়ার মাংস বিক্রি শুরু করেছে। অনেকেই রাতে গোপনে এসব পশু জবাই করে বাজারে সরবরাহ করছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি।
গাজীপুরের হায়দরাবাদ এলাকায় জেলা প্রশাসন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, র্যাব-১ এবং পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে ৩৭টি অসুস্থ ঘোড়া জীবিত উদ্ধার ও প্রায় পাঁচ মণ ঘোড়ার মাংস জব্দ করে।
যদিও কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি, প্রশাসন উদ্ধারকৃত পশু ও মাংস জিম্মায় নেয়। কর্মকর্তাদের মতে, এই মাংস খাওয়া মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একই চিত্র
খুলনা
খুলনা ও কয়রা এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বারবার পচা মাংস বিক্রির অভিযোগ ধরা পড়েছে। অসুস্থ বা মৃত গরু জবাই করে স্থানীয় হোটেলে সরবরাহের ঘটনাও ঘটছে।

সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরায় সম্প্রতি পচা খাসির মাংস বিক্রির দায়ে দুই ব্যবসায়ীকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এতে বোঝা যায়, পশ্চিমাঞ্চলজুড়েই অননুমোদিত মাংস বিক্রি বাড়ছে।
রংপুর
রংপুর অঞ্চলে প্রাণিসম্পদ বিভাগ অ্যান্থ্র্যাক্সসহ সংক্রামক রোগের আশঙ্কায় অননুমোদিত কসাই কার্যক্রম বন্ধে নির্দেশনা দিয়েছে।
তবুও রাতের বেলায় গোপনে জবাই ও বিক্রির ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম ও রাজশাহী
চট্টগ্রাম বিভাগে সরাসরি ঘোড়ার মাংস জব্দের ঘটনা না থাকলেও, পচা মাছ ও মৃত প্রাণিজ খাদ্য বিক্রির অভিযোগ নিয়মিতই পাওয়া যাচ্ছে।
রাজশাহীতেও দামের অস্থিরতার সময় অননুমোদিত মাংস বিক্রির আশঙ্কা বেড়ে যায় বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কেন বাড়ছে এই প্রবণতা
১. দামবৃদ্ধি: গরু ও খাসির মাংসের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় কিছু ব্যবসায়ী বিকল্প মাংসের দিকে ঝুঁকছে।
২. সহজ লাভের লোভ: কম দামে সংগ্রহ করে বেশি দামে বিক্রির লোভে ঘোড়ার মাংসও বাজারে আসছে।
৩. রাতের চেইন: রাতভর গোপনে জবাই ও সরবরাহ হওয়ায় প্রশাসনের নজরদারি এড়িয়ে যাচ্ছে।
৪. ভোক্তার অজ্ঞতা: অনেক ক্রেতা মাংসের উৎস যাচাই করেন না, ফলে প্রতারণার সুযোগ তৈরি হয়।

স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সামাজিক প্রভাব
- সংক্রামক রোগের আশঙ্কা: অসুস্থ বা পচা পশুর মাংস খেলে নানা ধরনের সংক্রমণ ও খাদ্যবিষক্রিয়ার ঝুঁকি থাকে।
- সামাজিক প্রভাব: ঘোড়ার মাংস বিক্রি সমাজে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।
- বাজারে বিশৃঙ্খলা: অবৈধ বিক্রেতারা দামের ভারসাম্য নষ্ট করে বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে।
করণীয়: প্রশাসন ও জনগণের দায়িত্ব
প্রশাসনের ভূমিকা
- সন্দেহভাজন এলাকায় নিয়মিত অভিযান চালানো
- বাজারের মাংসের নমুনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা
- পশুর উৎস ও স্বাস্থ্যসনদ যাচাইয়ের ব্যবস্থা চালু করা
জনগণের ভূমিকা
- মাংসে দুর্গন্ধ বা অস্বাভাবিক রঙ দেখলে সন্দেহ করা
- স্বাস্থ্যসনদ যাচাই করা
- সন্দেহজনক লেনদেন বা রাতের বিক্রির তথ্য স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো
গাজীপুরে ৩৭টি অসুস্থ ঘোড়া উদ্ধার ও ঘোড়ার মাংস জব্দের ঘটনা দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে বড় সতর্কবার্তা দিয়েছে।
গরু-খাসির মাংসের দাম যত বাড়ছে, ততই এই অবৈধ প্রবণতা ছড়িয়ে পড়ছে। এখনই প্রশাসন, ব্যবসায়ী ও জনগণের যৌথ পদক্ষেপ না নিলে, এটি জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।
#ট্যাগ: #ঘোড়ারমাংস #পচামাংস #গাজীপুর #খাদ্যনিরাপত্তা #গরুমাংস #খাসিমাংস #দামবৃদ্ধি #বাংলাদেশ #ভোক্তাসচেতনতা #অবৈধবিক্রি
সারাক্ষণ রিপোর্ট 




















