বাণিজ্য ঘাটতি: “জাতীয় জরুরি অবস্থা”র ব্যাখ্যা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে ধারাবাহিকভাবে বাণিজ্য ঘাটতির মুখে পড়ে। প্রায় পাঁচ দশক পর ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পরিস্থিতিকে ঘোষণা করেন “জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য অস্বাভাবিক ও অসাধারণ হুমকি” হিসেবে। অথচ এই “সংকটের” সময়ে, মার্কিন নাগরিকদের মাথাপিছু বাস্তব জিডিপি দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল।
ট্রাম্পের জরুরি ঘোষণা ও আইনি ভিত্তি
২০২৫ সালের এপ্রিলে ট্রাম্প ‘ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ারস অ্যাক্ট’ (IEEPA) ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী শুল্ক আরোপের আইনি ভিত্তি তৈরি করেন। ১৯৭৭ সালে গৃহীত এই আইনটি এর আগে তিনি চীনের ফেন্টানিল বাণিজ্যের প্রতিক্রিয়া ও ভেনেজুয়েলাকে হুমকি দিতে ব্যবহার করেছিলেন।
তবে নিম্ন আদালতগুলো রায় দেয় যে IEEPA প্রেসিডেন্টকে সীমাহীন ক্ষমতা দেয় না। ৫ নভেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে শুনানি শুরু করেছে। রায়টি বছরের শেষ বা ২০২৬ সালের শুরুতে প্রকাশিত হতে পারে।
যদি সুপ্রিম কোর্ট শুল্ক বাতিল করে?
ট্রাম্পের মতে, এমন রায় এলে “আমেরিকা বহু বছর ধরে আর্থিক সংকটে পড়বে।” ইয়েল বাজেট ল্যাবের হিসাব অনুযায়ী, এই শুল্কগুলো বাতিল হলে কার্যকর গড় শুল্কহার ১৭ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে নেমে আসবে।
তবে প্রশাসনের ভেতরে কিছুটা আশাবাদ রয়েছে—IEEPA ক্ষমতা হারালেও ট্রাম্পের হাতে আরও বিকল্প পথ রয়েছে, যদিও তিনি কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে অনিচ্ছুক।
বিকল্প আইন: সেকশন ১২২, ৩০১, ২৩২, ও ৩৩৮
প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে ‘সেকশন ১২২’, যা প্রেসিডেন্টকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক ১৫০ দিনের জন্য আরোপের অনুমতি দেয়—এটি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা সম্ভব।
এরপর আসবে বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর ও বাণিজ্য বিভাগের তদন্ত।
![]()
- সেকশন ৩০১ প্রেসিডেন্টকে নির্দিষ্ট দেশ বা শিল্পে লক্ষ্যভিত্তিক শুল্ক আরোপের সুযোগ দেয় (যেমন ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চীনের ওপর)।
- সেকশন ২৩২ জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে গাড়ি, ইস্পাত ইত্যাদি খাতে শুল্ক আরোপের সুযোগ দেয়।
আরও একটি পুরনো আইন সেকশন ৩৩৮—যা ১৯৩০-এর দশকের—এখনও কখনও ব্যবহার করা হয়নি। এটি অন্যায্য বাণিজ্যচর্চার প্রতিশোধ হিসেবে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দেয় এবং দীর্ঘ তদন্তের প্রয়োজন হয় না।
সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব ও শুল্ক ফেরত
যদি সুপ্রিম কোর্ট IEEPA শুল্ক বাতিল করে, তবে সরকারকে প্রায় ১৪০ বিলিয়ন ডলার (মার্কিন জিডিপির ০.৫%) ফেরত দিতে হতে পারে, এমনটি ধারণা করছে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান পাইপার স্যান্ডলার।
বিনিয়োগকারীদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো এই ক্ষতি খুব একটা মন্দভাবে নেবে না—কারণ এই ফেরত অর্থ অর্থনীতিতে এক ধরনের “গোপন প্রণোদনা” হিসেবে কাজ করবে, যা মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে অর্থনৈতিক গতি বাড়াতে পারে।
প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতা ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা
তবে IEEPA বাতিল হলে প্রেসিডেন্টের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা অনেক কমে যাবে। বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছেন, “অন্য উপায়গুলো প্রক্রিয়াগতভাবে জটিল এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।”
IEEPA-এর নমনীয়তাই একে এত কার্যকর করে তুলেছে। তবুও, যদি ট্রাম্প এই ক্ষমতা হারান, তবে নীতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরতে পারে—যা তার অস্থির নীতি প্রবণতার বিপরীতে যাবে।
অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও ব্যবসায়িক প্রভাব
কানাডা ও চীনের সঙ্গে সাম্প্রতিক বাণিজ্য বিরোধের পরও গ্রীষ্মে নীতি কিছুটা স্থির হচ্ছিল। কিন্তু যদি আদালত IEEPA ব্যবহারে রায় দেয়, তবে তা আবারও জটিলতা ও অনিশ্চয়তা বাড়াবে।
অনেক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই বিনিয়োগ ও নিয়োগ স্থগিত রেখেছে, ট্রেড নীতির স্পষ্টতার অপেক্ষায়। আদালতের রায় যদি নীতিকে সীমিতও করে, তবুও দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা মার্কিন অর্থনীতির পক্ষে ভালো হবে না।
#ট্রাম্প #মার্কিনঅর্থনীতি #সুপ্রিমকোর্ট #শুল্কনীতি #IEEPA #বাণিজ্যসংকট #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















