অক্ষরের রহস্যময় যাত্রা
আমরা প্রতিদিন অক্ষর ব্যবহার করি, কিন্তু খুব কমই ভাবি, এর পেছনের ইতিহাস নিয়ে। শিশুরা স্কুলে অক্ষরমালা মুখস্থ করে, কিন্তু তারা বোঝে না কেন অক্ষরগুলোর এমন বিন্যাস, কিংবা কেন কিছু অক্ষরের উচ্চারণ “নরম” বা “কঠিন”। উদাহরণস্বরূপ, কেন “H” নিজের নামেই তার ধ্বনি বহন করে না?
ড্যানি বেট তার বই “Why Q Needs U”-এ এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন। ২৬টি অধ্যায়ে তিনি প্রতিটি অক্ষরের গল্প বলেছেন, আর তার সঙ্গে তুলে ধরেছেন লেখার ইতিহাস, ইংরেজি ভাষার বিবর্তন, এবং ভাষাতত্ত্বের এক রোমাঞ্চকর পরিচয়।
মিশর থেকে রোম পর্যন্ত অক্ষরের জন্ম
মিশরীয়রা প্রথমে এমন এক লেখনপদ্ধতি তৈরি করেন, যেখানে প্রতিটি প্রতীক একটি পূর্ণ শব্দকে বোঝাত। পরবর্তীতে ফিনিশীয়রা এটি সহজ করে প্রতীককে একেকটি ধ্বনির প্রতিনিধিত্বে রূপ দেন। তারা একটি ষাঁড়ের মাথার ছবি থেকে তৈরি করেন “A”-এর মতো প্রতীক।
গ্রিকরা এতে স্বরবর্ণ যোগ করেন। পরে ইতালির উত্তরে বসবাসকারী ইত্রুস্কানরা এটি নিজেদের ভাষায় ব্যবহার করেন। তাদের দক্ষিণের প্রতিবেশী, অর্থাৎ রোমানরা, অক্ষরমালাটিকে আরো উন্নত করে এমনভাবে গড়ে তোলেন যে আজও সেটিই “রোমান” বা “লাতিন” বর্ণমালা নামে পরিচিত—যা দিয়ে শতাধিক ভাষা লেখা হয়।

ইংরেজি কেন ফিনিশীয় নীতির বাইরে গেল?
ফিনিশীয়রা প্রতিটি ধ্বনির জন্য একটি অক্ষরের নীতি গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ইংরেজি ভাষা পরে তা থেকে বিচ্যুত হয়। বেট ব্যাখ্যা করেছেন, কীভাবে লেখকরা “debt” ও “doubt” শব্দে উচ্চারণহীন “B” যোগ করেন লাতিন উৎসের কারণে।
“Great Vowel Shift” নামে পরিচিত ধ্বনি পরিবর্তনের এক দীর্ঘ যুগে, চসারের থেকে শেক্সপিয়ারের সময় পর্যন্ত, ইংরেজি স্বরধ্বনির উচ্চারণ বদলে যায়। ফলে অক্ষরগুলো মহাদেশীয় ভাষার তুলনায় ভিন্ন ধ্বনি বহন করতে শুরু করে।
“C” ও “G”-এর “নরম” উচ্চারণের কারণও এই প্রক্রিয়াই—যেখানে “eh” ও “ee”-এর মতো ধ্বনি জিহ্বাকে সামনের দিকে ঠেলে দেয়, এবং ধীরে ধীরে ব্যঞ্জনধ্বনি দুর্বল করে palatalisation ঘটায়। এজন্যই “Cicero” শব্দে আজ দুটি “s” শোনা যায়, যদিও লাতিন ভাষাভাষীরা বলতেন “Kickero”।
কেন Q-এর প্রয়োজন U?

রোমানরা “Q” এবং “U” একসঙ্গে ব্যবহারের অভ্যাস পেয়েছিল গ্রিকদের কাছ থেকে। প্রাচীন গ্রিকরা “qoppa” নামক একটি অক্ষর ব্যবহার করত শুধুমাত্র “o” ও “u”-এর আগে, কারণ এর উচ্চারণ ছিল গলার পেছনে—যেমন ফিনিশীয়দের উচ্চারণেও দেখা যায়।
পরবর্তীতে স্যাক্সন, ভাইকিং ও নরম্যানদের দখলে ইংরেজি হয়ে ওঠে নানা ভাষার মিশ্রণ। নরম্যানরা ব্রিটেনে নিয়ে আসে লাতিনের “Q-U” যুগলধ্বনির প্রথা, যার ফলে পুরনো স্যাক্সন শব্দ “cwen” রূপান্তরিত হয়ে হয় “queen”।
অক্ষরের সারি ও সারমর্ম
বইটির প্রতিটি অধ্যায় শুরু হয় একটি রসাত্মক উদ্ধৃতি দিয়ে—যেমন, “Queue” শব্দটি এক অক্ষর ও চারটি নীরব অক্ষর নিয়ে গঠিত; যেন তারা নিজেদের পালার অপেক্ষায় রয়েছে।
ইংরেজি ভাষার অদ্ভুত বানান ও উচ্চারণে যাঁরা কখনও বিভ্রান্ত, কখনও বিরক্ত, আবার কখনও মুগ্ধ হন—ড্যানি বেটের এই বই তাঁদের জন্য এক দারুণ অনুসন্ধানী যাত্রা। এটি শুধু অক্ষরের নয়, বরং ভাষার আত্মার ইতিহাসও বটে।
#অক্ষরমালা #ভাষারইতিহাস #ইংরেজিভাষা #ড্যানিবেট #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















