০৩:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
অস্ট্রেলিয়ার ঘোড়দৌড় প্রশিক্ষক অ্যান্ড্রিয়া লিকের লক্ষ্য ‘কিন এনাফ’-এর কাপ জয় ফিলিপাইনে ফাং-ওয়াংয়ের আঘাতে বিপর্যস্ত লুজন দ্বীপ: এখন প্রবল বৃষ্টি ও পানির মধ্যে দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহ কমান্ডার নিহত চীনের নতুন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ: যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোয় ওষুধ তৈরির রাসায়নিক পাঠাতে অনুমতির বাধ্যবাধকতা ময়মনসিংহে ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন, স্থবির রেল চলাচল তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল নিয়ে রায় ২০ নভেম্বর: রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে জুলাই চার্টারের সীমার বাইরে সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য নয়: সরকারকে সতর্ক করল বিএনপি অ্যামাজন বন বিপদে: খরা, বন উজাড় আর মানুষের চাপ মস্তিষ্কের সুরক্ষা: অ্যালকোহল কমিয়ে আনুন, কমান স্ট্রোক ও মস্তিষ্ক ক্ষতির ঝুঁকি বিশ্বের তেল সম্পদের নতুন এলাকা

জাতিসংঘে শেখ হাসিনার বিচার নিয়ে প্রশ্ন

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে লন্ডনের ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের দুই আইনজীবী জাতিসংঘে একটি জরুরি আপিল দাখিল করেছেন। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, অনুপস্থিতিতে পরিচালিত মামলায় শেখ হাসিনার ন্যায্য বিচার ও আইনি অধিকার গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে, যা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিফলন।


জাতিসংঘে দাখিল জরুরি আপিল

লন্ডনের ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের স্টিভেন পাওয়েলস কে.সি. ও তাতিয়ানা ইটওয়েল্ল বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে জাতিসংঘে একটি জরুরি আপিল (Urgent Appeal) দাখিল করেছেন। এই আপিলটি পাঠানো হয়েছে জাতিসংঘের বিচারক ও আইনজীবীদের স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি এবং বিচারবহির্ভূত, ত্বরিত বা স্বেচ্ছাচারী হত্যাকাণ্ড বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধির কাছে।
এতে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে পরিচালিত মামলায় ন্যায্য বিচারের অধিকার ও প্রক্রিয়াগত ন্যায়ের গুরুতর লঙ্ঘনের আশঙ্কা তুলে ধরা হয়েছে।


শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

২০০৯ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন শেখ হাসিনা। জানুয়ারি ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাঁর দল আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠন করে। কিন্তু জুলাই ২০২৪ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারবিরোধী আন্দোলন ক্রমে বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ নেয়, যা শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

৫ আগস্ট ২০২৪ সালে রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। তিন দিন পর, ৮ আগস্টে মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।


মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ

জুলাই ২০২৫ সালে শেখ হাসিনা এবং আরও দুইজন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT)-এ মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হন। অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে আন্দোলন দমনের সময় এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল।
বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন এবং তাঁকে অনুপস্থিত অবস্থায় বিচার করা হচ্ছে। রায় ঘোষণার সময় ঘনিয়ে এসেছে, এবং ধারণা করা হচ্ছে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে।


পক্ষপাতমূলক বিচার প্রক্রিয়ার অভিযোগ

জরুরি আপিলে দাবি করা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা চললেও, তাঁর সমর্থকদের ওপর চালানো প্রতিশোধমূলক সহিংসতার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি
অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা করেছে, যারা “১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত আন্দোলন সফল করতে ভূমিকা রেখেছে, তারা বিচারের মুখোমুখি হবে না।”


ন্যায্যতা ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন

আপিলে বলা হয়েছে, আইসিটির বিচার চলছে একটি অগণতান্ত্রিক অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে, যা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আবহে পরিচালিত হচ্ছে।
শেখ হাসিনার ন্যায্য বিচারের অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে কয়েকভাবে—

১. তাঁকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হয়নি, যা আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত চুক্তির (ICCPR) ১৪(১) অনুচ্ছেদে বাধ্যতামূলক। বিচারকদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বিচারের পক্ষপাতদুষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। প্রধান প্রসিকিউটর নিজেও শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে রাজনৈতিক সমাবেশে অংশ নিয়েছেন।

২. শেখ হাসিনাকে তাঁর অনুপস্থিতিতে বিচার করা হচ্ছে, যদিও ভারত থেকে তাঁর প্রত্যর্পণের অনুরোধ এখনো প্রক্রিয়াধীন। তাঁকে অভিযোগের নোটিশ দেওয়া হয়নি। তাঁর পক্ষে আইনজীবীরা আক্রমণ ও ভয়ভীতির কারণে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। ফলে তাঁকে প্রতিনিধিত্ব করছেন একজন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী, যার সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই।

৩. এই পরিস্থিতিতে যদি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তবে তা কার্যত হবে “বিচারবহির্ভূত হত্যা”, যা আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে জীবন রক্ষার অধিকার (ICCPR-এর ৬নং অনুচ্ছেদ) লঙ্ঘন করবে।


আইনজীবীরা জাতিসংঘের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যে, শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসা দ্বারা প্রভাবিত, এবং এতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মৌলিক নীতিমালা লঙ্ঘিত হচ্ছে।
ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পর বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে।


#SheikhHasina #Bangladesh #HumanRights #UNAppeal #FairTrial #Politics #DoughtyStreetChambers #Justice

জনপ্রিয় সংবাদ

অস্ট্রেলিয়ার ঘোড়দৌড় প্রশিক্ষক অ্যান্ড্রিয়া লিকের লক্ষ্য ‘কিন এনাফ’-এর কাপ জয়

জাতিসংঘে শেখ হাসিনার বিচার নিয়ে প্রশ্ন

১১:৫৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে লন্ডনের ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের দুই আইনজীবী জাতিসংঘে একটি জরুরি আপিল দাখিল করেছেন। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, অনুপস্থিতিতে পরিচালিত মামলায় শেখ হাসিনার ন্যায্য বিচার ও আইনি অধিকার গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে, যা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিফলন।


জাতিসংঘে দাখিল জরুরি আপিল

লন্ডনের ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের স্টিভেন পাওয়েলস কে.সি. ও তাতিয়ানা ইটওয়েল্ল বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে জাতিসংঘে একটি জরুরি আপিল (Urgent Appeal) দাখিল করেছেন। এই আপিলটি পাঠানো হয়েছে জাতিসংঘের বিচারক ও আইনজীবীদের স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি এবং বিচারবহির্ভূত, ত্বরিত বা স্বেচ্ছাচারী হত্যাকাণ্ড বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধির কাছে।
এতে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে পরিচালিত মামলায় ন্যায্য বিচারের অধিকার ও প্রক্রিয়াগত ন্যায়ের গুরুতর লঙ্ঘনের আশঙ্কা তুলে ধরা হয়েছে।


শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

২০০৯ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন শেখ হাসিনা। জানুয়ারি ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাঁর দল আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠন করে। কিন্তু জুলাই ২০২৪ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারবিরোধী আন্দোলন ক্রমে বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ নেয়, যা শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

৫ আগস্ট ২০২৪ সালে রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। তিন দিন পর, ৮ আগস্টে মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।


মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ

জুলাই ২০২৫ সালে শেখ হাসিনা এবং আরও দুইজন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT)-এ মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হন। অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে আন্দোলন দমনের সময় এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল।
বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন এবং তাঁকে অনুপস্থিত অবস্থায় বিচার করা হচ্ছে। রায় ঘোষণার সময় ঘনিয়ে এসেছে, এবং ধারণা করা হচ্ছে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে।


পক্ষপাতমূলক বিচার প্রক্রিয়ার অভিযোগ

জরুরি আপিলে দাবি করা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা চললেও, তাঁর সমর্থকদের ওপর চালানো প্রতিশোধমূলক সহিংসতার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি
অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা করেছে, যারা “১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত আন্দোলন সফল করতে ভূমিকা রেখেছে, তারা বিচারের মুখোমুখি হবে না।”


ন্যায্যতা ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন

আপিলে বলা হয়েছে, আইসিটির বিচার চলছে একটি অগণতান্ত্রিক অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে, যা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আবহে পরিচালিত হচ্ছে।
শেখ হাসিনার ন্যায্য বিচারের অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে কয়েকভাবে—

১. তাঁকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হয়নি, যা আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত চুক্তির (ICCPR) ১৪(১) অনুচ্ছেদে বাধ্যতামূলক। বিচারকদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বিচারের পক্ষপাতদুষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। প্রধান প্রসিকিউটর নিজেও শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে রাজনৈতিক সমাবেশে অংশ নিয়েছেন।

২. শেখ হাসিনাকে তাঁর অনুপস্থিতিতে বিচার করা হচ্ছে, যদিও ভারত থেকে তাঁর প্রত্যর্পণের অনুরোধ এখনো প্রক্রিয়াধীন। তাঁকে অভিযোগের নোটিশ দেওয়া হয়নি। তাঁর পক্ষে আইনজীবীরা আক্রমণ ও ভয়ভীতির কারণে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। ফলে তাঁকে প্রতিনিধিত্ব করছেন একজন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী, যার সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই।

৩. এই পরিস্থিতিতে যদি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তবে তা কার্যত হবে “বিচারবহির্ভূত হত্যা”, যা আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে জীবন রক্ষার অধিকার (ICCPR-এর ৬নং অনুচ্ছেদ) লঙ্ঘন করবে।


আইনজীবীরা জাতিসংঘের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যে, শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসা দ্বারা প্রভাবিত, এবং এতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মৌলিক নীতিমালা লঙ্ঘিত হচ্ছে।
ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পর বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে।


#SheikhHasina #Bangladesh #HumanRights #UNAppeal #FairTrial #Politics #DoughtyStreetChambers #Justice