কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে এগিয়ে থাকা কর্মীরা কেবল উৎপাদনশীলতাই বাড়াচ্ছেন না, বসদেরও মুগ্ধ করছেন — আর এতে তারা এগিয়ে যাচ্ছেন ক্যারিয়ারের দৌড়ে।
কর্মক্ষেত্রে AI দক্ষতার নতুন প্রতিযোগিতা
আমেরিকার অফিসগুলোতে এখন শুরু হয়েছে নতুন এক প্রতিযোগিতা — কে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) সবচেয়ে দক্ষভাবে ব্যবহার করতে পারে। বসদের বার্তা স্পষ্ট: “যদি রোবট তোমার কাজ না কেড়ে নেয়, তাহলে এমন কেউ কেড়ে নেবে, যে AI-কে ভালোভাবে কাজে লাগাতে জানে।”
এই বাস্তবতাই কর্মীদের মধ্যে এক নতুন দৌড় তৈরি করেছে — নিজেকে “AI পাওয়ার ইউজার” হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ এমন কেউ, যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজের গতি, মান এবং দক্ষতা বহুগুণে বাড়িয়ে ফেলতে পারে।
তরুণ কর্মীদের জন্য আত্মরক্ষার উপায়
সান ডিয়েগোর ২৭ বছর বয়সী জনসংযোগ প্রতিনিধি সারা ক্রিগার জানেন, স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির যুগে তরুণ কর্মীরাই সবচেয়ে ঝুঁকিতে। তাই তিনি নিজের দক্ষতা প্রমাণ করছেন, সহকর্মীদের মধ্যে AI ব্যবহার শেখানোর মাধ্যমে।
তার ভাষায়, “যেভাবে একজন সিইও কোনো বিষয়ে নিজেকে মতামতের নেতা হিসেবে গড়ে তোলে, তেমনি AI-তে পারদর্শিতা গড়ে তুললে আপনি দলের নির্ভরযোগ্য বিশেষজ্ঞে পরিণত হন।”
এই স্বীকৃতি পেতে শুধু প্রচার নয়, বাস্তব দক্ষতাও লাগে।

“সত্যিকারের” পাওয়ার ইউজার কারা
NixSheets নামে একটি অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা সাল আব্দুল্লাহ বলেন, অনেকেই নিজেদের “AI বিশেষজ্ঞ” দাবি করলেও বাস্তবে তাদের দক্ষতা সীমিত।
তিনি যাদের সত্যিকারের দক্ষ মনে করেছেন, তারা জানেন কীভাবে AI টুলগুলোকে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত করে একটি “বুদ্ধিমান মস্তিষ্ক” তৈরি করা যায়।
উদাহরণস্বরূপ, কেউ কেউ ChatGPT ব্যবহার করে গুগল শিটস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আর্থিক তথ্য নিয়ে সেটি QuickBooks সফটওয়্যারে বিশ্লেষণ করেন — অর্থাৎ মানুষ নয়, AI-ই হিসাবনিকাশ করছে।
আব্দুল্লাহ বলেন, “আমি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার না, তবুও অনুশীলনের মাধ্যমে এটি করা সম্ভব। গড়পড়তা হিসাবরক্ষকরা এখনো এই দক্ষতা অর্জন করেননি।”
অনুশীলনের শক্তি
২৯ বছর বয়সী কেভিন ওয়েই একটি সফটওয়্যার কোম্পানির প্রোডাক্ট ম্যানেজার। পাশাপাশি তিনি “LiftoffPM” নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল চালান, যেখানে তিনি চাকরি পাওয়া ও AI ব্যবহারের টিপস শেয়ার করেন।
তিনি বলেন, “AI-কে কাজ করাতে জানতে হলে সঠিকভাবে নির্দেশ দিতে হবে। AI যতটুকু জানে, তা আপনার কথাতেই নির্ভর করে।”
তিনি আরও বলেন, অনেকেই সাধারণভাবে AI-কে কিছু লিখতে বলেন, কিন্তু ভালো ফল পেতে হলে নির্দেশ দিতে হয় স্পষ্টভাবে — যেমন পাঠক কারা, লেখার ভঙ্গি কেমন হবে, ইত্যাদি।
এছাড়াও, প্রতিক্রিয়া দিতে হবে: “এটা ভালো হয়েছে, কিন্তু একটু ছোট করো” বা “তিনটি বিকল্প দাও যাতে আমি বেছে নিতে পারি।”
ফলাফল পেতে সময় লাগে
অনেকে বলেন, AI-কে বিস্তারিত নির্দেশ দিতে ও সংশোধন করতে যতটা সময় লাগে, ততক্ষণে নিজেরাই কাজটা করে ফেলতে পারতেন।
কিন্তু প্রকৃত পাওয়ার ইউজাররা দীর্ঘমেয়াদে ভাবেন।

মারিল্যান্ডের বীমা বিপণন ব্যবস্থাপক অবারি মিলার-শমিড্ট কয়েক বছর ধরে ChatGPT ব্যবহার করছেন। তিনি গাড়ি চালানোর সময়ও, এর সঙ্গে কথা বলেন।
তার লক্ষ্য শুধুই তাত্ক্ষণিক সমাধান নয়; বরং নিজের কাজের ধারা বোঝাতে ChatGPT-কে “প্রশিক্ষণ” দেওয়া।
তিনি বলেন, “আমার AI সহকারী এখন জানে আমি কীভাবে সমস্যা বিশ্লেষণ করি, কোথায় আটকে যাই। এই ইতিহাসটাই এখন আমার বড় সম্পদ।”
একটিমাত্র AI সহকারীকে প্রশিক্ষণ দিন
বিশেষজ্ঞদের মতে, একাধিক AI টুল ব্যবহার করে পরীক্ষানিরীক্ষা করার চেয়ে একটি নির্দিষ্ট সহকারীকে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ দেওয়াই বেশি ফলপ্রসূ।
অর্থাৎ, অনেক বটের সামান্য জ্ঞান থাকার চেয়ে একটির গভীর বোঝাপড়া থাকা ভালো।
রাতজাগা AI সঙ্গী
ইউটার এক স্কি রিসোর্ট ও একটি হোটেল চেইনের বিপণন পরিচালক মাইকেল রুয়েকার্ট প্রতিদিন প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত তার AI সহকারী ‘Claude’-এর সঙ্গে কাজ করেন। পাশাপাশি, তিনি নিজের স্টার্টআপ Centium AI-ও চালাচ্ছেন, যা ব্যবসায়ীদের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক সার্চ অপটিমাইজেশন সেবা দেয়।
তিনি বলেন, “AI-কে যত বেশি কোচিং দিচ্ছি, ততই এটি আমার মতো করে ভাবতে শিখছে। শুরুতে সময় লাগে, কিন্তু পরে এর ফল জাদুর মতো।”

এখনই সময় এগিয়ে যাওয়ার
AI-তে দক্ষরা প্রায়ই বলেন, “যারা আগে শুরু করেছে, তারাই এখন এগিয়ে।” কিন্তু এর মানে এই নয় যে দেরি হয়ে গেছে।
আজ থেকেই শুরু করলে আপনি যে সব মানুষের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকবেন, যারা এখনো অপেক্ষায় আছে আগামীকাল পর্যন্ত।
#AI #কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা #AI_দক্ষতা #কর্মক্ষেত্র #প্রযুক্তি #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















