ইরাকে সদ্য অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল সুদানি দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পথে বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করেছেন বলে সরকারঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। বুধবার বাগদাদে সুদানির সমর্থকদের মধ্যে বড় ধরনের আশাবাদ দেখা গেছে।
উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, সুদানির নেতৃত্বাধীন ‘পুনর্গঠন ও উন্নয়ন’ তালিকা নির্বাচনে বিপুল বিজয় পেয়েছে। আরও দুটি সূত্র জানায়, তার জোট প্রায় ৫০টির মতো আসন পেয়ে সবচেয়ে বড় ব্লক হিসেবে এগিয়ে আছে।
সুদানি তিন বছর আগে প্রো-ইরান শক্তিশালী শিয়া জোট ‘কো-অর্ডিনেশন ফ্রেমওয়ার্ক’-এর সমর্থনে ক্ষমতায় আসেন। এরপর থেকে ইরাকি রাজনীতিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে উঠে এসেছেন।
উপশিরোনাম: জোট ছাড়া সরকার গঠন অসম্ভব
৩২৯ সদস্যের ইরাকি পার্লামেন্টে একক দল কখনোই সরকার গঠন করতে পারে না। তাই সরকারের নেতৃত্ব নির্ভর করে কোন জোট সবচেয়ে বড় ব্লক গঠন করতে পারে তার ওপর। নির্বাচনে মোট ভোটগ্রহণ হয়েছে ৫৬.১১%।

চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার পর নতুন প্রধানমন্ত্রী মনোনয়নের জন্য বিভিন্ন দল দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা শুরু করবে, যা অনেক সময় মাসজুড়ে চলতে পারে। প্রচলিত নিয়মে, প্রধানমন্ত্রী হন শিয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, স্পিকার হন সুন্নি মুসলিম এবং প্রেসিডেন্ট হন কুর্দি সম্প্রদায়ের কেউ।
উপশিরোনাম: যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, বড় প্রত্যাশা
ইরাক ২০ বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং দুর্বল জনসেবা ব্যবস্থায় ভুগছে। কাজ, উন্নত অবকাঠামো, ভালো শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা—এগুলো এখনো সাধারণ মানুষের প্রধান দাবি। অনেক ভোটার নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বলেছেন, ভোট তাদের জীবনে কোনো বাস্তব পরিবর্তন আনবে না; বরং এটি রাজনৈতিক অভিজাতদেরই সুবিধা দেয়।
তবুও সুদানি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশকে ‘পুনর্গঠন ও উন্নয়ন’-এর পথে এগিয়ে নেওয়ার। গত তিন বছরে বাগদাদে ব্যাপক নির্মাণকাজ—নতুন সেতু, টানেল ও সড়ক—শহরকে নতুন রূপ দিতে শুরু করেছে। তার দাবি, বিগত দুই বছরে আঞ্চলিক অস্থিরতা থেকেও তার সরকার ইরাককে সুরক্ষিত রাখতে পেরেছে।
উপশিরোনাম: ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের ভারসাম্য
মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে বড় পরিবর্তন চলছে। নতুন জোট গড়ে উঠছে, পুরোনো শক্তি দুর্বল হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ইরাককে জটিল দুটি মিত্র—ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র—এর মধ্যে সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়।

২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের পর থেকেই ইরানের প্রভাব ইরাকে শক্তিশালী। তারা রাজনৈতিক দল ছাড়াও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিয়ে এসেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরানের প্রভাব কমাতে এবং ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে নিরস্ত্র করতে।
গত দুই বছরে ইসরায়েলের হামলায় অঞ্চলজুড়ে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। জুন মাসে ইসরায়েলের নজিরবিহীন বিমান হামলায় ১২ দিনের যুদ্ধ বাধে, যা তেহরানের সরাসরি ক্ষতি ডেকে আনে।
ইরান এখন তার দুর্বল অর্থনীতির জন্য ইরাকি বাজার ধরে রাখতে চায়, আর যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরান-সমর্থিত শক্তিকে দুর্বল করতে। ফলে, নতুন প্রধানমন্ত্রীকে আবারও এই দ্বিমুখী চাপ মোকাবিলা করতে হবে।
উপশিরোনাম: ভেতরে ভেতরে বিভাজন
‘কো-অর্ডিনেশন ফ্রেমওয়ার্ক’-এর মধ্যেই সুদানিকে দ্বিতীয়বার সমর্থন দেওয়া নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি তার দ্বিতীয় মেয়াদে আপত্তি জানাতে পারেন বলে রাজনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।
তবুও সুদানির শিবিরে এখন জয়ের আনন্দ ও আশাবাদ। নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল ইতিমধ্যেই তাকে সবচেয়ে এগিয়ে রেখেছে।
# ইরাক_নির্বাচন #ইরাক_#রাজনীতি সুদানি_#বিজয় মধ্যপ্রাচ্য#_বিশ্লেষণ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















