যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের জেরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিসপ্যানিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভয়-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে তাদের কেনাকাটার আচরণে—অনেকে দোকানে যাওয়ার বদলে অনলাইনে কেনাকাটায় ঝুঁকছেন। ছোট ব্যবসা, বিশেষ করে যাদের অনলাইন উপস্থিতি নেই, তারা বিক্রিতে বড় ধস দেখছেন।
নিউ জার্সির ইরনবাউন্ডে দোকান শূন্য
নিউ জার্সির নিউয়ার্কের ইরনবাউন্ড এলাকাটি মূলত হিসপ্যানিকদের বসতি। এখানে ফোন কভার থেকে শুরু করে নানা ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকান রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ক্রেতা কমে গেছে। দোকানদার রোজা লুদিনা জানান, চারপাশে অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়ায় অনেকে বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
তার দোকানের কাছাকাছি একটি মাছবাজারে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বড় ধরনের অভিযান চালানো হয়েছিল। এরপর থেকেই অনেকে অনলাইন কেনাকাটায় চলে যাচ্ছেন, ফলে দোকানের বিক্রি দিন দিন কমছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযান ও তার প্রভাব
রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে বিভিন্ন স্থানে উচ্চপ্রোফাইল অভিযান চালানো হয়েছে—হোম ডিপো স্টোর, ওয়ালমার্টের পার্কিং লট, স্ট্রবেরি ও পীচের খামার, এমনকি হুন্দাই ব্যাটারি কারখানাতেও।

এ ধরনের অভিযান শুধু অনিবন্ধিত অভিবাসীদের নয়, বৈধভাবে বসবাসকারী হিসপ্যানিকদের মধ্যেও ভীতি ছড়িয়েছে। ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশনের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক ম্যাথিউস বলেন, ভয়ের কারণে অনলাইন শপিংয়ের দিকে ঝোঁক স্বাভাবিক।
হোয়াইট হাউস অবশ্য বলছে, অভিযানের লক্ষ্য অপরাধ দমন এবং নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা। কিন্তু অনেকের অভিযোগ—অপরাধী নন এমন ব্যক্তিরাও অভিযানে ধরা পড়ছেন।
অনলাইন উপস্থিতি নেই—ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ব্যবসা
দক্ষিণ টেক্সাসের আলামো এলাকার একটি ফ্লি-মার্কেটেও একই প্রবণতা দেখা গেছে। অভিবাসী সহায়তা সংস্থা ‘প্রোয়েক্টো আজটেকা’র ওলিভার দে লা গারজা জানান, জুনের অভিযানের পর থেকে সেখানে বিক্রেতার সংখ্যা অর্ধেকেরও কমে গেছে।
“এসব ছোট ব্যবসার কোনো ওয়েবসাইট নেই,” তিনি জানান।
বড় কোম্পানির বিক্রিতেও ধস
হেইনেকেনের সিইও ডলফ ভ্যান ডেন ব্রিঙ্ক বলেছেন, অভিবাসন অভিযানের কারণে হিসপ্যানিক ভোক্তাদের মধ্যে ‘মারাত্মক বিঘ্ন’ তৈরি হয়েছে, যা তাদের ব্র্যান্ডের বিক্রিতে প্রভাব ফেলেছে।
কান্টারের জরিপ বলছে:
- এপ্রিল–জুন সময়ে হিসপ্যানিক ক্রেতাদের দোকান সফর কমেছে ১৪.৭%
- একই সময়ে অন্যান্য গোষ্ঠীর কমেছে মাত্র ৪.৫%
- ডলার স্টোরে হিসপ্যানিক ক্রেতা কমেছে ৬%
- অন্যদের ক্ষেত্রে বেড়েছে ৩%
ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি
কান্টারের আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, অভিবাসন নীতি বদলের কারণে হিসপ্যানিক পরিবারগুলোর মধ্যে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। আইনগতভাবে বৈধভাবে বসবাসকারীরাও হয়রানির ভয় পাচ্ছেন।

যদিও হিসপ্যানিকরা দেশটির মোট জনসংখ্যার ১৯%, তাদের আচরণ বৈচিত্র্যপূর্ণ—তাই সবার জন্য এক রকম সিদ্ধান্তে পৌঁছানো কঠিন।
শপিং মলে যাতায়াত কমে, অনলাইন বাড়ছে
স্পোর্টসওয়্যার ব্র্যান্ড জেডি স্পোর্টসের সিইও রেজিস শুলৎজ জানান, তাদের সহযোগী ব্র্যান্ড ‘শ্যু প্যালেস’-এ ফেব্রুয়ারি–এপ্রিল সময়ে দোকানভিজিট বড় পতনের মুখে পড়ে। অনলাইন বিক্রি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল ছিল।
হিসপ্যানিক জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতা আগামী বছরে ২.৮ ট্রিলিয়ন ডলার ছুঁতে পারে। জুলাই–সেপ্টেম্বরে অনলাইনে কেনাকাটা করা হিসপ্যানিকদের হার ছুঁয়েছে ৬০%—যা সর্বকালের সর্বোচ্চ।
স্থানীয় দোকানে পায়ে চলা ক্রেতার অভাব
নিউয়ার্কের ‘আরবান আইজ ভিশন সেন্টার’-এর মালিক জানান, জানুয়ারির মাছবাজার অভিযানের পর থেকেই তাদের দোকানে ক্রেতা কমে গেছে।
‘টিয়েন রং গিফট শপ’-এর ব্যবস্থাপক শান বলেন, “আমরা ওয়ালমার্ট বা অনলাইন ব্যবসার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারি না।”
বড় চেইন দোকানেও চাপ
গর্ডন-হাসকেটের গবেষণায় দেখা গেছে, রস স্টোরে হিসপ্যানিক এলাকায় ক্রেতা কমেছে। এসব ক্রেতার বড় অংশ ওয়ালমার্টের ওয়েবসাইটে চলে গেছেন।
#হিসপ্যানিক_কেনাকাটা #অনলাইন_শপিং #অভিবাসন_অভিযান #মার্কিন_অর্থনীতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















