০২:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
পিরোজপুরে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে আগুন দিয়ে পুড়িয়েে দিয়েছে ঢাকায় কলেজ শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার বিশ্ব এগোচ্ছে, বাংলাদেশ ফিরছে পেছনে—সঙ্গীত শিক্ষায় এই ইউ-টার্নের কারণ কী? প্রকাশক ব্যারি কানিংহামের নতুন অধ্যায় ওয়ালমার্টের নতুন যুগ: এআই বিস্তারে নেতৃত্ব দেবেন জন ফার্নার যুক্তরাষ্ট্রে মাদকবিক্রেতাদের বিচার বর্হিভূত হত্যা সমর্থন করে মাত্র ২৯% আমেরিকান দুই বিচারকের পদত্যাগে পাকিস্তানে সাংবিধানিক সংকট তীব্রতর গভীর অতলে দেশের অর্থনীতি: ইনক্লুসিভ ইলেকশান ছাড়া বের হবার কোন পথ নেই বিশ্বজুড়ে স‍‍ংকট দেখা দিয়েছে রেয়ার আর্থের মূল ধাতু ইয়ট্রিয়ামের গাজীপুরে গৃহবধূর গলা-কাটা লাশ উদ্ধার; স্বামী আশঙ্কাজনক

জুলাই সনদ ও গণভোট: বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে এখনো বিরোধ যেসব বিষয়ে

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোটের ঘোষণা এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি হওয়ার পর থেকেই ‘মান-অভিমান’ ও নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সামনে আনছে রাজনৈতিক দলগুলো। ফলে জুলাই সনদ ও গণভোট ইস্যুতে দেশের রাজনীতিতে চলমান সংকট কতটা কেটেছে এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও।

জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশে ‘অস্পষ্টতা’ রয়ে গেছে বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি। সনদের বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কি না এ নিয়ে সংশয় রয়েছে দলটির।

এছাড়া গণভোট ইস্যুতে যে প্রশ্নগুলো করা হয়েছে তার মধ্য দিয়ে সংস্কারের সব বিষয়কে সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলেও মনে করে দলটি।

অনেকটা একই অবস্থান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীরও। দলটির সিনিয়র নেতারা অভিযোগ করেছেন, একটি দলের সঙ্গে ‘আপস’ করে সংস্কার কমিশনের সুপারিশে অনেক পরিবর্তন এনে ভাষণ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ এবং জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। জুলাই সনদ ইস্যুতে সমালোচনা করলেও জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোটের ঘোষণা দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে দলটি।

এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে জুলাই সনদ, নির্বাচন ও সংস্কার ঘিরে দেশের রাজনীতিতে যে সংকট তৈরি হয়েছিল সেটি কতটা কাটলো?

তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা ধরনের মতামত থাকলেও জুলাই সনদ ও গণভোট বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটিই ‘বেস্ট সলুশ্যন’ বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, “দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার বিচারে যতটুকু হয়েছে, ভালোই হয়েছে। এটি নিয়ে যদি সবাই বসে থাকেন তাহলে সবচেয়ে বড় বিপদ সামনে আসছে”।

নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে দলগুলো নানা মতামত সামনে আনলেও দিনশেষে সবাই নির্বাচনের দিকেই যাচ্ছে বলেও মনে করেন মি. আহমেদ।

সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চায় এনসিপি

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতীর উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার পর গণভোট এবং জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ইস্যুতে নিজেদের মতামত জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

তবে এ নিয়ে তেমন কোনো মন্তব্য দেওয়া থেকে বিরত ছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি। অবশেষে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান জানালো দলটি।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে উল্লেখ করে সরকারের কাছে এর সঠিক ব্যাখ্যা চেয়েছি এনসিপি। তারা বলছে, আদেশে থাকা অস্পষ্ট বিষয়গুলো পরিষ্কার করা না হলে এর বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় থেকে যাবে।

দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলছেন, গণভোট ইস্যুকে কয়েকটি আলাদা প্রশ্নে ভাগ করা হয়েছে যার মাধ্যমে সংস্কারের সব বিষয়কে এক রকম গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কিছু বিষয়কে কম গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলের বিবেচনাধীন করে ফেলা হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

মি. হোসেন বলছেন, “গণভোটের প্রশ্নে বলা হয়েছে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহ জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গঠিত হবে। কিন্তু এখনে প্রশ্ন থেকে যায়, জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়া শব্দটির মধ্যে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে যে, এটা কি নোট অব ডিসেন্টসহ জুলাই সনদ, নাকি এর বাইরে জুলাই সনদের সরাসরি যে ভাষ্য সেই অংশটুকু?”

মি. আখতার বলছেন, এই সনদে অনেকগুলো বিষয় এমনভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যাতে রাজনৈতিক দলে সিদ্ধান্তের ওপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মতো করে যেকোনো বিষয় বাতিল বা গ্রহণ করার স্বাধীনতা পেয়ে গেছে।

দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলছেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি হয়েছে, কিন্তু এই আদেশে রাষ্ট্রপতির সইয়ের মধ্য দিয়ে নৈতিক ভিত্তির জায়গাটা নিশ্চিত হয়নি।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির আগে সবাইকে দেখানোর কথা থাকলেও সরকার নিজস্ব ক্ষমতাবলে একটা আদেশ জারি করেছে বলেও মন্তব্য করেন মি. পাটওয়ারী।

“এটা আদেশ হয়েছে, কিন্তু জনবিরোধী আদেশ। যিনি এই আদেশটা তৈরি করেছেন তার মাথায় ছিল বিএনপির প্রেসক্রিপশ”।

“উনি গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থানকে কীভাবে মুজিবীয় সংবিধানের ভেতরে ঢুকানো যায় এই প্রচেষ্টায় করে যাচ্ছে, উনি আমাদের আইনমন্ত্রী হিসেবে আছেন,” বলেন মি. পাটওয়ারী।

নাখোশ জামায়াত

জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজনে ঘোষণায় খুশি নয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

জুলাই জাতীয় সনদ এবং গণভোট ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তের ওপর একটি দলের পক্ষ নিয়ে তিনজন উপদেষ্টা প্রভাব বিস্তার করেছে বলেও অভিযোগ করেছে দলটি।

জামায়াতের নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলছেন, একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হলে গণভোটের গুরুত্ব কমবে।

তিনি দাবি করেন, “প্রধান উপদেষ্টাকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করছে তিনজন উপদেষ্টা এবং তারা ভুল তথ্য দিয়ে, নানাভাবে বুঝিয়ে একটি দলের হয়ে কাজ করে সরকারকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে হতে না পারে, সেদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুকৌশলে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে”।

যদিও ওই তিন উপদেষ্টার নাম প্রকাশ করেননি মি. তাহের।

“প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের নাম পাঠানো হবে,” বলেও জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায়ও নিজেদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোটের ঘোষণায় “জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি” বলে মন্তব্য করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

তিনি বলেন, “গণভোট প্রসঙ্গে যে ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টার দিয়েছেন তাতে গণদাবি উপেক্ষা করা হয়েছে।”

এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবিতে জামায়াতসহ আটটি দল যে কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন তা চালিয়ে যাওয়ার কথাই বলছেন দলগুলোর নেতারা।

মি. তাহের বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট অনুষ্ঠিত হতে হবে, এখনো এই সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপি নেতারা

বিএনপির মিশ্র প্রতিক্রিয়া

জুলাই জাতীয় সনদ এবং গণভোট নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি।

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর জুলাই জাতীয় সনদ ইস্যুতে সমালোচনা করলেও রাতে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর, জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোটের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানানো হয়।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ প্রসঙ্গে দলটির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, এর “আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সাধারণ প্রজ্ঞাপন, নোটিফিকেশন হলে এই প্রশ্ন তুলতাম না”।

একইসাথে সংবিধান সংস্কার পরিষদ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দলটি। তাদের দাবি, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের কোনো এজেন্ডা ঐকমত্য কমিশনে ছিল না। ফলে এ নিয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তার ভাষণের মধ্য দিয়ে নিজেই নিজের সই করা জুলাই সনদ লঙ্ঘন করেছেন বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

তবে দুপুরে সমালোচনা করলেও রাতে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটিরি বৈঠকের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা পুনর্ব্যাক্ত করায় এবং সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়ায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় তাকে ধন্যবাদ জানানো হয়”।

তবে একই সঙ্গে গত ১৭ই অক্টোবর ঐকমত্যের ভিত্তিতে স্বাক্ষরিত জুলাই জাতীয় সনদের ওপর গণভোট অনুষ্ঠানের আহ্বান জানায় দলটির।

 BBC News বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

পিরোজপুরে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে আগুন দিয়ে পুড়িয়েে দিয়েছে

জুলাই সনদ ও গণভোট: বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে এখনো বিরোধ যেসব বিষয়ে

১১:০৭:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোটের ঘোষণা এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি হওয়ার পর থেকেই ‘মান-অভিমান’ ও নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সামনে আনছে রাজনৈতিক দলগুলো। ফলে জুলাই সনদ ও গণভোট ইস্যুতে দেশের রাজনীতিতে চলমান সংকট কতটা কেটেছে এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও।

জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশে ‘অস্পষ্টতা’ রয়ে গেছে বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি। সনদের বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কি না এ নিয়ে সংশয় রয়েছে দলটির।

এছাড়া গণভোট ইস্যুতে যে প্রশ্নগুলো করা হয়েছে তার মধ্য দিয়ে সংস্কারের সব বিষয়কে সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলেও মনে করে দলটি।

অনেকটা একই অবস্থান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীরও। দলটির সিনিয়র নেতারা অভিযোগ করেছেন, একটি দলের সঙ্গে ‘আপস’ করে সংস্কার কমিশনের সুপারিশে অনেক পরিবর্তন এনে ভাষণ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ এবং জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। জুলাই সনদ ইস্যুতে সমালোচনা করলেও জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোটের ঘোষণা দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে দলটি।

এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে জুলাই সনদ, নির্বাচন ও সংস্কার ঘিরে দেশের রাজনীতিতে যে সংকট তৈরি হয়েছিল সেটি কতটা কাটলো?

তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা ধরনের মতামত থাকলেও জুলাই সনদ ও গণভোট বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটিই ‘বেস্ট সলুশ্যন’ বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, “দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার বিচারে যতটুকু হয়েছে, ভালোই হয়েছে। এটি নিয়ে যদি সবাই বসে থাকেন তাহলে সবচেয়ে বড় বিপদ সামনে আসছে”।

নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে দলগুলো নানা মতামত সামনে আনলেও দিনশেষে সবাই নির্বাচনের দিকেই যাচ্ছে বলেও মনে করেন মি. আহমেদ।

সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চায় এনসিপি

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতীর উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার পর গণভোট এবং জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ইস্যুতে নিজেদের মতামত জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

তবে এ নিয়ে তেমন কোনো মন্তব্য দেওয়া থেকে বিরত ছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি। অবশেষে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান জানালো দলটি।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে উল্লেখ করে সরকারের কাছে এর সঠিক ব্যাখ্যা চেয়েছি এনসিপি। তারা বলছে, আদেশে থাকা অস্পষ্ট বিষয়গুলো পরিষ্কার করা না হলে এর বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় থেকে যাবে।

দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলছেন, গণভোট ইস্যুকে কয়েকটি আলাদা প্রশ্নে ভাগ করা হয়েছে যার মাধ্যমে সংস্কারের সব বিষয়কে এক রকম গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কিছু বিষয়কে কম গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলের বিবেচনাধীন করে ফেলা হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

মি. হোসেন বলছেন, “গণভোটের প্রশ্নে বলা হয়েছে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহ জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গঠিত হবে। কিন্তু এখনে প্রশ্ন থেকে যায়, জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়া শব্দটির মধ্যে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে যে, এটা কি নোট অব ডিসেন্টসহ জুলাই সনদ, নাকি এর বাইরে জুলাই সনদের সরাসরি যে ভাষ্য সেই অংশটুকু?”

মি. আখতার বলছেন, এই সনদে অনেকগুলো বিষয় এমনভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যাতে রাজনৈতিক দলে সিদ্ধান্তের ওপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মতো করে যেকোনো বিষয় বাতিল বা গ্রহণ করার স্বাধীনতা পেয়ে গেছে।

দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলছেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি হয়েছে, কিন্তু এই আদেশে রাষ্ট্রপতির সইয়ের মধ্য দিয়ে নৈতিক ভিত্তির জায়গাটা নিশ্চিত হয়নি।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির আগে সবাইকে দেখানোর কথা থাকলেও সরকার নিজস্ব ক্ষমতাবলে একটা আদেশ জারি করেছে বলেও মন্তব্য করেন মি. পাটওয়ারী।

“এটা আদেশ হয়েছে, কিন্তু জনবিরোধী আদেশ। যিনি এই আদেশটা তৈরি করেছেন তার মাথায় ছিল বিএনপির প্রেসক্রিপশ”।

“উনি গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থানকে কীভাবে মুজিবীয় সংবিধানের ভেতরে ঢুকানো যায় এই প্রচেষ্টায় করে যাচ্ছে, উনি আমাদের আইনমন্ত্রী হিসেবে আছেন,” বলেন মি. পাটওয়ারী।

নাখোশ জামায়াত

জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজনে ঘোষণায় খুশি নয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

জুলাই জাতীয় সনদ এবং গণভোট ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তের ওপর একটি দলের পক্ষ নিয়ে তিনজন উপদেষ্টা প্রভাব বিস্তার করেছে বলেও অভিযোগ করেছে দলটি।

জামায়াতের নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলছেন, একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হলে গণভোটের গুরুত্ব কমবে।

তিনি দাবি করেন, “প্রধান উপদেষ্টাকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করছে তিনজন উপদেষ্টা এবং তারা ভুল তথ্য দিয়ে, নানাভাবে বুঝিয়ে একটি দলের হয়ে কাজ করে সরকারকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে হতে না পারে, সেদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুকৌশলে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে”।

যদিও ওই তিন উপদেষ্টার নাম প্রকাশ করেননি মি. তাহের।

“প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের নাম পাঠানো হবে,” বলেও জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায়ও নিজেদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোটের ঘোষণায় “জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি” বলে মন্তব্য করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

তিনি বলেন, “গণভোট প্রসঙ্গে যে ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টার দিয়েছেন তাতে গণদাবি উপেক্ষা করা হয়েছে।”

এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবিতে জামায়াতসহ আটটি দল যে কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন তা চালিয়ে যাওয়ার কথাই বলছেন দলগুলোর নেতারা।

মি. তাহের বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট অনুষ্ঠিত হতে হবে, এখনো এই সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপি নেতারা

বিএনপির মিশ্র প্রতিক্রিয়া

জুলাই জাতীয় সনদ এবং গণভোট নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি।

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর জুলাই জাতীয় সনদ ইস্যুতে সমালোচনা করলেও রাতে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর, জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোটের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানানো হয়।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ প্রসঙ্গে দলটির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, এর “আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সাধারণ প্রজ্ঞাপন, নোটিফিকেশন হলে এই প্রশ্ন তুলতাম না”।

একইসাথে সংবিধান সংস্কার পরিষদ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দলটি। তাদের দাবি, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের কোনো এজেন্ডা ঐকমত্য কমিশনে ছিল না। ফলে এ নিয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তার ভাষণের মধ্য দিয়ে নিজেই নিজের সই করা জুলাই সনদ লঙ্ঘন করেছেন বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

তবে দুপুরে সমালোচনা করলেও রাতে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটিরি বৈঠকের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা পুনর্ব্যাক্ত করায় এবং সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়ায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় তাকে ধন্যবাদ জানানো হয়”।

তবে একই সঙ্গে গত ১৭ই অক্টোবর ঐকমত্যের ভিত্তিতে স্বাক্ষরিত জুলাই জাতীয় সনদের ওপর গণভোট অনুষ্ঠানের আহ্বান জানায় দলটির।

 BBC News বাংলা