০৫:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশে ইস্পোর্টসের উত্থান: গেমার তরুণরা গড়ছে নতুন ক্যারিয়ার প্রবাসীরা প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন যে পদ্ধতিতে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ভারত কেন সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে? স্ট্রেঞ্জার থিংস ৫ ইভেন্টে ফটোগ্রাফারকে ‘ইউ স্মাইল’—মিলি ববি ব্রাউনের এক ঝটকা জবাব ভাইরাল অনলাইন স্ক্যাম এখন ডকুমেন্টারির গল্প নয়—রোলিং স্টোন জানালো ঠকবে কি না, বুঝবেন কীভাবে কানাডা–মার্কিন সীমান্তে আরও তেল নিয়ে যেতে এনারব্রিজের ১.৪ বিলিয়ন ডলারের নতুন পরিকল্পনা মাইক্রোসফটকে বিলিয়ন ডলার দিচ্ছে ওপেনএআই—ফাঁস হওয়া তথ্য জানাল এআই দৌড়ের আসল খরচ অপরাধ আর অভিবাসন ইস্যুতে ডান দিকে সরে যাচ্ছে চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছুটির দিনেও বিষাক্ত বাতাসে ঢাকা, রাজধানীবাসীর ‘স্বাভাবিক’ হয়ে যাওয়া অস্বস্তি এভরিওয়ান’স আ স্টার!’–এ বয়ব্যান্ড তকমা উল্টে দিল ৫ সেকেন্ডস অব সামার

তাইওয়ান ইস্যুতে জাপান হস্তক্ষেপ করলে সামরিক জবাবের হুমকি চীনের

জাপান–চীন উত্তেজনার নতুন ধাপ

জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানা তাকাাইচি সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন, চীন যদি তাইওয়ানে সামরিক অভিযান চালায়, তবে জাপানও সামরিকভাবে সাড়া দিতে পারে। এই বক্তব্যের পরই বেইজিং থেকে এসেছে কড়া সতর্কবার্তা। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাইওয়ান প্রণালীতে কোনো সামরিক হস্তক্ষেপকে তারা আগ্রাসন হিসেবে দেখবে এবং এমন পদক্ষেপের জবাবে কঠোর সামরিক প্রতিক্রিয়া আসবে। টোকিওতে এ ধরনের অবস্থানকে সরকার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও কৌশলগত স্থিতিশীলতা রক্ষার বক্তব্য হিসেবে ব্যাখ্যা করছে।

ঘটনার পর চীনের উপ–পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইদং বেইজিংয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূত কেনজি কানাসুগিকে ডেকে এনে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানান। চীন অভিযোগ করছে, জাপানের নেতৃত্ব “অন্তর্দেশীয় বিষয়ে গুরুতর হস্তক্ষেপ” করছে এবং দুই দেশের সম্পর্কের রাজনৈতিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অন্যদিকে জাপানের কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি বেড়েছে, তাই সম্ভাব্য তাইওয়ান সংকট নিয়ে আগের চেয়ে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলা ছাড়া উপায় নেই।

China warns Japan of huge defeat over Taiwan intervention

দেশের ভেতরেও বিষয়টি রাজনৈতিক বিতর্ক উসকে দিয়েছে। চীনের প্রতি তুলনামূলক কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত তাকাাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রতিরক্ষা ব্যয়ের বড় অংশ তাইওয়ান ও পূর্ব চীন সাগর ঘিরে সম্ভাব্য সংঘাতে প্রস্তুতিতে ব্যয় করছেন। সমর্থকদের ভাষ্যে, আগেভাগে সংকেত না দিলে প্রতিপক্ষ ভুল হিসাব কষতে পারে। সমালোচকদের মতে, অতিরিক্ত উগ্র ভাষা জাপানকেই সরাসরি সংঘাতের কেন্দ্রস্থলে টেনে নিতে পারে।

বেইজিংয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও চাপ বাড়াচ্ছে। শাসক দল বহুদিন ধরে তাইওয়ানকে “অখণ্ড চীনের অংশ” হিসেবে তুলে ধরে আসছে এবং শক্ত ভাষা ব্যবহারকে সেখানে দুর্বলতা নয়, বরং দৃঢ়তার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে, জাপান নাকি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে চীনকে ঘেরাও করার চেষ্টা করছে। বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক হুমকি ভাষ্যটির লক্ষ্য আংশিকভাবে জাপানকে ভয় দেখানো, আবার আংশিকভাবে দেশীয় জনমতকেও সন্তুষ্ট রাখা।

প্রতিবেশী দেশগুলো সতর্ক নজরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। দক্ষিণ কোরিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করলেও বাণিজ্যিকভাবে চীনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। তাই তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে নতুন উত্তেজনা তাদের কাছেও ঝুঁকির। যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে কথা বলছে, কিন্তু সাম্প্রতিক সামরিক মহড়া ও জোট রাজনীতি দেখাচ্ছে, সম্ভাব্য সংঘাতের ক্ষেত্রে একাধিক পক্ষ জড়িয়ে পড়তে পারে।

Allies balancing: A safer strategy for the U.S. in Asia - Defense Priorities

ইন্দো–প্যাসিফিক নিরাপত্তা সমীকরণে প্রভাব

জাপান ইদানীং যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ফিলিপাইনের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করেছে। টোকিও বলছে, “স্বাধীন ও উন্মুক্ত ইন্দো–প্যাসিফিক” নিশ্চিত করতে এই নেটওয়ার্ক দরকার। বেইজিং এটা দেখছে নতুন ঘেরাও নীতির অংশ হিসেবে। তাইওয়ান ইস্যুতে কড়া ভাষা বিনিময় সেই বড় ছবিরই এক অংশ, যেখানে সমুদ্রপথ, জ্বালানি সরবরাহ ও প্রযুক্তি–শিল্প নিরাপত্তা সবই জড়িয়ে আছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অবস্থায় টোকিও ও বেইজিংয়ের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের আরও কার্যকর চ্যানেল প্রয়োজন। সীমিত সামরিক হটলাইন থাকলেও রাজনৈতিক আস্থার ঘাটতি রয়ে গেছে। ইতিহাস, ভূখণ্ড এবং প্রতিরক্ষা ব্যয় নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধও পরিস্থিতিকে জটিল করে রেখেছে। এ অবস্থায় নেতাদের একটি মন্তব্য দ্রুতই উভয় দেশের কট্টরপন্থীদের হাতে অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে এবং সমঝোতার পথ সরু করে দিতে পারে।

শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খোলা রাখতে তাই এখন কূটনৈতিক ভাষা ও সংকেতই হয়ে উঠেছে মূল সূচক। সামান্য নরম ভাষা বা সংযত অবস্থানও উত্তেজনা কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু একই সঙ্গে বাস্তবতা হলো, তাইওয়ানকে ঘিরে সংঘাতের আশঙ্কা এখন আর কেবল তাত্ত্বিক আলোচনার বিষয় নয়, বরং ইন্দো–প্যাসিফিক নিরাপত্তা স্থাপত্যের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা একটি বাস্তব ঝুঁকি।

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশে ইস্পোর্টসের উত্থান: গেমার তরুণরা গড়ছে নতুন ক্যারিয়ার

তাইওয়ান ইস্যুতে জাপান হস্তক্ষেপ করলে সামরিক জবাবের হুমকি চীনের

০২:৫৭:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

জাপান–চীন উত্তেজনার নতুন ধাপ

জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানা তাকাাইচি সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন, চীন যদি তাইওয়ানে সামরিক অভিযান চালায়, তবে জাপানও সামরিকভাবে সাড়া দিতে পারে। এই বক্তব্যের পরই বেইজিং থেকে এসেছে কড়া সতর্কবার্তা। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাইওয়ান প্রণালীতে কোনো সামরিক হস্তক্ষেপকে তারা আগ্রাসন হিসেবে দেখবে এবং এমন পদক্ষেপের জবাবে কঠোর সামরিক প্রতিক্রিয়া আসবে। টোকিওতে এ ধরনের অবস্থানকে সরকার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও কৌশলগত স্থিতিশীলতা রক্ষার বক্তব্য হিসেবে ব্যাখ্যা করছে।

ঘটনার পর চীনের উপ–পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইদং বেইজিংয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূত কেনজি কানাসুগিকে ডেকে এনে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানান। চীন অভিযোগ করছে, জাপানের নেতৃত্ব “অন্তর্দেশীয় বিষয়ে গুরুতর হস্তক্ষেপ” করছে এবং দুই দেশের সম্পর্কের রাজনৈতিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অন্যদিকে জাপানের কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি বেড়েছে, তাই সম্ভাব্য তাইওয়ান সংকট নিয়ে আগের চেয়ে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলা ছাড়া উপায় নেই।

China warns Japan of huge defeat over Taiwan intervention

দেশের ভেতরেও বিষয়টি রাজনৈতিক বিতর্ক উসকে দিয়েছে। চীনের প্রতি তুলনামূলক কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত তাকাাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রতিরক্ষা ব্যয়ের বড় অংশ তাইওয়ান ও পূর্ব চীন সাগর ঘিরে সম্ভাব্য সংঘাতে প্রস্তুতিতে ব্যয় করছেন। সমর্থকদের ভাষ্যে, আগেভাগে সংকেত না দিলে প্রতিপক্ষ ভুল হিসাব কষতে পারে। সমালোচকদের মতে, অতিরিক্ত উগ্র ভাষা জাপানকেই সরাসরি সংঘাতের কেন্দ্রস্থলে টেনে নিতে পারে।

বেইজিংয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও চাপ বাড়াচ্ছে। শাসক দল বহুদিন ধরে তাইওয়ানকে “অখণ্ড চীনের অংশ” হিসেবে তুলে ধরে আসছে এবং শক্ত ভাষা ব্যবহারকে সেখানে দুর্বলতা নয়, বরং দৃঢ়তার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে, জাপান নাকি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে চীনকে ঘেরাও করার চেষ্টা করছে। বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক হুমকি ভাষ্যটির লক্ষ্য আংশিকভাবে জাপানকে ভয় দেখানো, আবার আংশিকভাবে দেশীয় জনমতকেও সন্তুষ্ট রাখা।

প্রতিবেশী দেশগুলো সতর্ক নজরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। দক্ষিণ কোরিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করলেও বাণিজ্যিকভাবে চীনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। তাই তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে নতুন উত্তেজনা তাদের কাছেও ঝুঁকির। যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে কথা বলছে, কিন্তু সাম্প্রতিক সামরিক মহড়া ও জোট রাজনীতি দেখাচ্ছে, সম্ভাব্য সংঘাতের ক্ষেত্রে একাধিক পক্ষ জড়িয়ে পড়তে পারে।

Allies balancing: A safer strategy for the U.S. in Asia - Defense Priorities

ইন্দো–প্যাসিফিক নিরাপত্তা সমীকরণে প্রভাব

জাপান ইদানীং যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ফিলিপাইনের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করেছে। টোকিও বলছে, “স্বাধীন ও উন্মুক্ত ইন্দো–প্যাসিফিক” নিশ্চিত করতে এই নেটওয়ার্ক দরকার। বেইজিং এটা দেখছে নতুন ঘেরাও নীতির অংশ হিসেবে। তাইওয়ান ইস্যুতে কড়া ভাষা বিনিময় সেই বড় ছবিরই এক অংশ, যেখানে সমুদ্রপথ, জ্বালানি সরবরাহ ও প্রযুক্তি–শিল্প নিরাপত্তা সবই জড়িয়ে আছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অবস্থায় টোকিও ও বেইজিংয়ের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের আরও কার্যকর চ্যানেল প্রয়োজন। সীমিত সামরিক হটলাইন থাকলেও রাজনৈতিক আস্থার ঘাটতি রয়ে গেছে। ইতিহাস, ভূখণ্ড এবং প্রতিরক্ষা ব্যয় নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধও পরিস্থিতিকে জটিল করে রেখেছে। এ অবস্থায় নেতাদের একটি মন্তব্য দ্রুতই উভয় দেশের কট্টরপন্থীদের হাতে অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে এবং সমঝোতার পথ সরু করে দিতে পারে।

শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খোলা রাখতে তাই এখন কূটনৈতিক ভাষা ও সংকেতই হয়ে উঠেছে মূল সূচক। সামান্য নরম ভাষা বা সংযত অবস্থানও উত্তেজনা কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু একই সঙ্গে বাস্তবতা হলো, তাইওয়ানকে ঘিরে সংঘাতের আশঙ্কা এখন আর কেবল তাত্ত্বিক আলোচনার বিষয় নয়, বরং ইন্দো–প্যাসিফিক নিরাপত্তা স্থাপত্যের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা একটি বাস্তব ঝুঁকি।