০৯:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৬) ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘর্ষে আহত ২০ জন, বাড়িঘর ভাঙচুর ৩৫ বলে শতক হাঁকালেন হাবিবুর, বাংলাদেশের দ্রুততম টি–২০ সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ড ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৭৯২ জন চীনের বিজনেস স্কুলে বৈশ্বিক ট্যালেন্ট ধরে রাখার নতুন উদ্যোগ বাগেরহাট কারাগারে ভারতীয় জেলের মৃত্যু ঝিনাইদহ সীমান্তে ভারত যাওয়ার চেষ্টা: সাত বাংলাদেশি আটক , একজন ছাড়া বাকিরা হিন্দু সম্প্রদায়ের ঝিনাইদহে সংঘর্ষে প্রবাসী নিহত; বাড়িতে আগুন সব থেকে বেশি অবহেলিত নারী ও শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ইয়াংজি ডেল্টায় ‘লাভকেন্দ্রিক’ জরিমানা নিয়ন্ত্রণে চীনের নতুন আইন প্রয়োগ ব্যবস্থা

গাজায় প্রবল বৃষ্টিতে শরণার্থী শিবিরে ভয়াবহ বন্যা

গাজায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা শুক্রবার সকালে দেখেন, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে তাদের তাঁবুর ভেতরে পানি জমে গেছে। এতে তাদের আশ্রয় ও সামান্য জিনিসপত্র স্যাঁতসেতে হয়ে পড়ে, শুকানোরও কোনো উপায় ছিল না।

গাজা সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল সাংবাদিকদের বলেন, “গাজায় সাহায্যের জন্য শত শত আবেদন এসেছে, কিন্তু আমাদের কাছে কোনো সম্পদ নেই।”

তিনি আরও জানান, “আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পানির স্তর ১০ সেন্টিমিটার (৩.৯৪ ইঞ্চি) পর্যন্ত উঠেছে। গদি ভিজে গেছে, কম্বল সম্পূর্ণ ভিজে গেছে। এখন আর কিছু করার উপায় নেই, কারণ ইসরায়েল সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে।”

গাজা সিটির বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা সিএনএন-কে জানান, তাঁবুগুলো পুরনো হয়ে গেছে, অনেকগুলো বৃষ্টিতে ধসে পড়েছে।

রায়েদ আল-আলায়ান বলেন, “আমরা বৃষ্টিতে ভিজে গেছি—আমরা আর আমাদের ছোট বাচ্চারাও। আমাদের তাঁবুগুলো ভিজে গেছে। বৃষ্টির থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো কোনো ছাউনি নেই।”

এই সময়ে গাজায় বৃষ্টি স্বাভাবিক হলেও, লাখো মানুষের স্থায়ী আশ্রয় না থাকায় সামান্য বৃষ্টিও পানি জমে যাওয়া ও কাদার কারণে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা তাদের দুরবস্থা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

Heavy rainfall floods the camps of displaced Palestinians in Gaza | CNN

সকালের দিকেও বৃষ্টিপাত চলতে থাকে। এ সময় পুরুষ ও নারী মরিয়া হয়ে তাঁবু থেকে পানি সরানোর চেষ্টা করছিলেন।

আবদুলবাসেত আবুলহাদি বলেন, “আমরা রাত ২:৩০ থেকে বৃষ্টির কারণে জেগে আছি। সবকিছু ভিজে গেছে—গদি ও কম্বলসহ।”

একজন মহিলা সিএনএন-কে তার পরিবারের স্যাঁতসেতে তাঁবু দেখান। সেখানে ২০টি শিশু আশ্রয় নিয়েছে, যার মধ্যে নবজাতকও রয়েছে। অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন—“আমরা কোথায় যাব?”

তিনি আরও বলেন, “আমার ছেলে, যে এই তাঁবু তৈরি করে দিয়েছিল, সে আর নেই। আমি এখন কী করব?”

জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক জানান, শত শত তাঁবু ও অস্থায়ী আশ্রয় বন্যায় তলিয়ে গেছে। আশ্রয় নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের অংশীদারদের মতে, গাজায় বন্যা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও নেই। তাঁবু থেকে পানি সরানোর সরঞ্জাম এবং কঠিন বর্জ্য সরানোর যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে।

ডুজারিক বলেন, “আমরা আশঙ্কা করছি হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত পরিবার কঠোর আবহাওয়ার মধ্যে পুরোপুরি উন্মুক্ত অবস্থায় পড়ে যাবে।”

মেডিকেল এইড ফর প্যালেস্টিনিয়ানস (MAP)-এর যোগাযোগ কর্মকর্তা মাই এলাওয়াদা শুক্রবারকে “সবচেয়ে কঠিন দিনগুলোর একটি” হিসেবে বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, “সকালে ভারী বৃষ্টিতে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর তাঁবুতে পানি ঢুকে গেছে। তাদের সামান্য জিনিসপত্রও ভিজে গেছে। তারা এমন তাঁবুতে থাকছেন, যা দুই বছর ধরে ইসরায়েলি আক্রমণ ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি সহ্য করেছে। সূর্যের তাপে মলিন হয়ে যাওয়া এই তাঁবুগুলো এখন শীতের একটু ইঙ্গিতেই ধসে পড়ছে।”

Heavy rainfall floods the camps of displaced Palestinians in Gaza | RNZ News

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় দপ্তর (OCHA) জানায়, গাজায় ১৪ লাখের বেশি মানুষের জরুরি আশ্রয় সামগ্রী প্রয়োজন। ৩২০,০০০-এর বেশি ঘরবাড়ি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ কেবল অল্প অংশের আশ্রয় সরঞ্জাম গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে। এক বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা বলেন, “পুরো যুদ্ধকালেও আমি একটি তারপ পাইনি।”

আবু মোহাম্মদ আবায়েদ বলেন, “আমাদের অধিকাংশ বিছানা ভিজে গেছে। পাঁচ মিনিটের বৃষ্টিতে আমরা ডুবে গিয়েছিলাম।”

জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র জানান, “লক্ষ-লক্ষ” জরুরি আশ্রয়সামগ্রী জর্ডান, মিশর এবং ইসরায়েলে আটকে আছে—গাজায় প্রবেশের অনুমতির অপেক্ষায়।

সিএনএন ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে মানবিক সহায়তা আটকে রাখার অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য চেয়েছে।


#TAG: #GazaFlood #RefugeeCrisis #RainInGaza #HumanitarianCrisis

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৬)

গাজায় প্রবল বৃষ্টিতে শরণার্থী শিবিরে ভয়াবহ বন্যা

০৭:১৯:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

গাজায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা শুক্রবার সকালে দেখেন, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে তাদের তাঁবুর ভেতরে পানি জমে গেছে। এতে তাদের আশ্রয় ও সামান্য জিনিসপত্র স্যাঁতসেতে হয়ে পড়ে, শুকানোরও কোনো উপায় ছিল না।

গাজা সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল সাংবাদিকদের বলেন, “গাজায় সাহায্যের জন্য শত শত আবেদন এসেছে, কিন্তু আমাদের কাছে কোনো সম্পদ নেই।”

তিনি আরও জানান, “আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পানির স্তর ১০ সেন্টিমিটার (৩.৯৪ ইঞ্চি) পর্যন্ত উঠেছে। গদি ভিজে গেছে, কম্বল সম্পূর্ণ ভিজে গেছে। এখন আর কিছু করার উপায় নেই, কারণ ইসরায়েল সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে।”

গাজা সিটির বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা সিএনএন-কে জানান, তাঁবুগুলো পুরনো হয়ে গেছে, অনেকগুলো বৃষ্টিতে ধসে পড়েছে।

রায়েদ আল-আলায়ান বলেন, “আমরা বৃষ্টিতে ভিজে গেছি—আমরা আর আমাদের ছোট বাচ্চারাও। আমাদের তাঁবুগুলো ভিজে গেছে। বৃষ্টির থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো কোনো ছাউনি নেই।”

এই সময়ে গাজায় বৃষ্টি স্বাভাবিক হলেও, লাখো মানুষের স্থায়ী আশ্রয় না থাকায় সামান্য বৃষ্টিও পানি জমে যাওয়া ও কাদার কারণে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা তাদের দুরবস্থা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

Heavy rainfall floods the camps of displaced Palestinians in Gaza | CNN

সকালের দিকেও বৃষ্টিপাত চলতে থাকে। এ সময় পুরুষ ও নারী মরিয়া হয়ে তাঁবু থেকে পানি সরানোর চেষ্টা করছিলেন।

আবদুলবাসেত আবুলহাদি বলেন, “আমরা রাত ২:৩০ থেকে বৃষ্টির কারণে জেগে আছি। সবকিছু ভিজে গেছে—গদি ও কম্বলসহ।”

একজন মহিলা সিএনএন-কে তার পরিবারের স্যাঁতসেতে তাঁবু দেখান। সেখানে ২০টি শিশু আশ্রয় নিয়েছে, যার মধ্যে নবজাতকও রয়েছে। অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন—“আমরা কোথায় যাব?”

তিনি আরও বলেন, “আমার ছেলে, যে এই তাঁবু তৈরি করে দিয়েছিল, সে আর নেই। আমি এখন কী করব?”

জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক জানান, শত শত তাঁবু ও অস্থায়ী আশ্রয় বন্যায় তলিয়ে গেছে। আশ্রয় নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের অংশীদারদের মতে, গাজায় বন্যা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও নেই। তাঁবু থেকে পানি সরানোর সরঞ্জাম এবং কঠিন বর্জ্য সরানোর যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে।

ডুজারিক বলেন, “আমরা আশঙ্কা করছি হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত পরিবার কঠোর আবহাওয়ার মধ্যে পুরোপুরি উন্মুক্ত অবস্থায় পড়ে যাবে।”

মেডিকেল এইড ফর প্যালেস্টিনিয়ানস (MAP)-এর যোগাযোগ কর্মকর্তা মাই এলাওয়াদা শুক্রবারকে “সবচেয়ে কঠিন দিনগুলোর একটি” হিসেবে বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, “সকালে ভারী বৃষ্টিতে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর তাঁবুতে পানি ঢুকে গেছে। তাদের সামান্য জিনিসপত্রও ভিজে গেছে। তারা এমন তাঁবুতে থাকছেন, যা দুই বছর ধরে ইসরায়েলি আক্রমণ ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি সহ্য করেছে। সূর্যের তাপে মলিন হয়ে যাওয়া এই তাঁবুগুলো এখন শীতের একটু ইঙ্গিতেই ধসে পড়ছে।”

Heavy rainfall floods the camps of displaced Palestinians in Gaza | RNZ News

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় দপ্তর (OCHA) জানায়, গাজায় ১৪ লাখের বেশি মানুষের জরুরি আশ্রয় সামগ্রী প্রয়োজন। ৩২০,০০০-এর বেশি ঘরবাড়ি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ কেবল অল্প অংশের আশ্রয় সরঞ্জাম গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে। এক বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা বলেন, “পুরো যুদ্ধকালেও আমি একটি তারপ পাইনি।”

আবু মোহাম্মদ আবায়েদ বলেন, “আমাদের অধিকাংশ বিছানা ভিজে গেছে। পাঁচ মিনিটের বৃষ্টিতে আমরা ডুবে গিয়েছিলাম।”

জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র জানান, “লক্ষ-লক্ষ” জরুরি আশ্রয়সামগ্রী জর্ডান, মিশর এবং ইসরায়েলে আটকে আছে—গাজায় প্রবেশের অনুমতির অপেক্ষায়।

সিএনএন ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে মানবিক সহায়তা আটকে রাখার অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য চেয়েছে।


#TAG: #GazaFlood #RefugeeCrisis #RainInGaza #HumanitarianCrisis