ব্যক্তিগত অর্থব্যবস্থার আকর্ষণ ও জটিলতা
অনেকের মতোই, একজন অর্থশাস্ত্র কলামিস্ট মাসে একবার বেতন পাওয়ার পরের শনিবারটির জন্য বিশেষভাবে অপেক্ষা করেন। এটাই পুরো মাসের মধ্যে সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ দিন। বাড়ির হিসাব হালনাগাদ, ব্যাংক হিসাব, পেনশন, বিনিয়োগের বরাদ্দ ও সম্ভাব্য মুনাফা—সবই আলাদা শিটে সাজানো থাকে। সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অংশ হলো বন্ধক বা মর্টগেজ সংক্রান্ত হিসাব, যেখানে অতিরিক্ত কিস্তি দেওয়া বা পুনঃঋণ নেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত সামনে আসে। তবে স্বাভাবিকভাবেই অধিকাংশ মানুষের জন্য এসব কাজ মোটেও আনন্দদায়ক নয়। কারণ ব্যক্তিগত আর্থিক পরিকল্পনা মানেই ঝুঁকি, গণিত ও ভবিষ্যৎ অনুমানের মতো কঠিন ক্ষেত্র, যা অনেকের কাছে সহজ নয়। যাদের আয় কম, ঋণ অসহনীয়, বা আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য টেনে রাখা কঠিন, তাদের কাছে এই বিশ্ব আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এই দুর্বলতার সুযোগ নেয়। হার্ভার্ডের জন ক্যাম্পবেল এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের তরুণ রামাদোরাই তাদের নতুন বই Fixed–এ যুক্তি দিয়েছেন যে বর্তমান ব্যক্তিগত অর্থব্যবস্থার কাঠামো বহু মানুষকে, বিশেষত দরিদ্র মানুষকে, খারাপ ফলাফলের দিকে ঠেলে দেয়। তাদের ভাষ্যে এই ব্যবস্থা সংশোধনের দাবি রাখে।
সম্পদ বৈষম্য: ধনীরা কেন আরও ধনী হয়ে ওঠে
বইয়ের লেখকরা দেখিয়েছেন যে ধনী ও দরিদ্রের সম্পদ বৃদ্ধির হার এক নয়। ধনীরা তাদের সম্পদে বেশি রিটার্ন পান। তাদের ঋণের সুদের হার কম। তারা আয়ের তুলনায় বেশি সঞ্চয় করতে পারেন।
সুইডেনে ২০০০ থেকে ২০০৭ সালে সবচেয়ে দরিদ্র ১০ শতাংশ কেবল ঝুঁকিমুক্ত সুদের হারে আয় করেছে। সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ বছরে অতিরিক্ত ৫ থেকে ৮ শতাংশ পয়েন্ট বেশি আয় করেছে। দরিদ্ররা তাদের ঋণের জন্য ঝুঁকিমুক্ত হারের ওপর অতিরিক্ত ৪ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত বেশি সুদ দিয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই সুদ ও রিটার্নের পার্থক্যই ওই সময়ে বৈষম্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ। আরও একটি ২০১৭ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিন নাগরিকদের অবসরকালীন সম্পদ বৈষম্যের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আসে বিনিয়োগ রিটার্নের পার্থক্য থেকে।

কেন ব্যক্তিগত ফাইন্যান্স বৈষম্যকে আরও গভীর করে
ব্যক্তিগত আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ধনীদের সুবিধা নানা দিক থেকে কাজ করে। তারা ভালো উপদেশ ও জ্ঞান নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারে। ছোট বিনিয়োগে স্থির খরচের বোঝা বেশি পড়ে। জরুরি প্রয়োজনের জন্য দরিদ্রদের বড় অংশ সঞ্চয়ে আটকে যায়। তারা ঝুঁকিপূর্ণ বা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ এড়াতে বাধ্য হয়। নিয়ন্ত্রণ নীতির কারণে তারা অনেক লাভজনক বাজারে ঢুকতেই পারে না। ঋণে ডিফল্টের আশঙ্কা বেশি হওয়ায় তাদের বেশি সুদ দিতে হয়।
যে আর্থিক পণ্যগুলো দরকার কিন্তু জনপ্রিয় নয়
বইটির সবচেয়ে জোরালো যুক্তিগুলোর একটি হলো, অনেক কার্যকর পণ্য থাকা সত্ত্বেও সেগুলোর ব্যবহার অত্যন্ত কম। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হলো অ্যানুইটি, যা আজীবন আয়ের নিশ্চয়তা দেয়। অবসরে কেউ যদি অ্যানুইটি কেনে, তবে সে গড়ে তার সঞ্চয় একা ব্যবহার করার চেয়ে বেশি আয় নিশ্চিত করতে পারে, কারণ অ্যানুইটি ঝুঁকি ভাগাভাগি করে। তবুও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবসরকালের সম্পদের সামান্য অংশই অ্যানুইটিতে বিনিয়োগ করা হয়। এর প্রধান কারণ হলো অ্যানুইটির সুবিধা মানুষের কাছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বোধগম্য নয়। ফলে এর চাহিদা কম থাকে।
শিক্ষা কি সমাধান?—লেখকদের ভিন্নমত
অনেকে ভাবতে পারেন, আর্থিক জ্ঞান বাড়ানোই সমস্যার সমাধান। কিন্তু লেখকরা মনে করেন, আবেগ, প্রলোভন ও জ্ঞানগত দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা অধিকাংশ মানুষের পক্ষে খুব কঠিন। আরও একটি যুক্তি হলো, যারা আর্থিকভাবে চৌকস হয়ে ওঠে, তারা অন্যদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আরও বেশি লাভ করে, যা বৈষম্য বাড়ায়।

বইয়ের প্রস্তাবিত সমাধান ও তার দুর্বলতা
বইটি কিছু নীতিগত সমাধান প্রস্তাব করেছে। যেমন দেরিতে ঋণ শোধের ফি কমাতে মূল্যসীমা নির্ধারণ করা, অতিরিক্ত গেমিফিকেশন নিষিদ্ধ করা, এবং এমন পণ্য সরল করা যেগুলোতে জটিল অনুসরণমূলক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যেমন কখন মর্টগেজ পুনঃঋণ নিতে হবে।
তবে এসব প্রস্তাবেও দুর্বলতা রয়েছে। মূল্যসীমা আরোপ করলে সময়মতো ঋণ শোধের প্রণোদনা কমে যায়। এতে ঋণ নেওয়ার খরচ অন্যদের জন্য বাড়তে পারে। অনেকেই গেমিফাই করা বিনিয়োগ উপভোগ করেন। মানুষকে জটিল সিদ্ধান্ত নেওয়া শিখতে দেওয়ার মধ্যেই আর্থিক অগ্রগতির সুযোগ লুকিয়ে থাকে।
দক্ষতা অর্জনই সঠিক পথ
সমাজের উপকার হয় যখন ব্যক্তিরা জটিল আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে শেখে। দরিদ্ররাও ঠিক এই দক্ষতার মাধ্যমেই উন্নতি করতে পারে। একটি আনন্দদায়ক, সহজ মাসিক স্প্রেডশিট থেকেই শুরু হতে পারে পরিবর্তন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















