পাগলার বাবা ছিল ইংরেজ থমসন সাহেবের কুক। ওরা বংশ পরম্পরায় রান্নার কাজ করত।
পাগলার গেলাসি
আমাদের বয়সীদের কাছে পাগলার গেলাসি এখনও বিখ্যাত। বর্তমান প্রজন্ম হয়তো গ্লাসি বা গেলাসি শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়। এটি এক ধরনের খাবার যা উদ্ভুত হয়েছিল মুঘল আমলে। ঘি, মাখন দিয়ে চাক চাক করে মশলার তৈরি মাংসে এক সের খাসি বা ভেড়ার মাংস আট টুকরো করা হতো। সাধারণত তা সিরকায় ভিজিয়ে রাখা হতো। তারপর আস্ত পেঁয়াজ, ঘি, মাখন আর গোলমরিচ ব্যবহার করে তা তৈরি হতো। মুখে দিলেই তা গলে যেত। নান বা পোলাওয়ের সঙ্গে খাওয়া হতো গেলাসি।
লায়ন সিনেমার গলিতে বেড়ার একটি ঘর ছিল পাগলার গেলাসির দোকান। আমার নানাবাড়ি লায়ন সিনেমার পাশের গলি আশেক লেনে। সুতরাং ছেলেবেলায়ও খেয়েছি পাগলার গেলাসি। প্রয়াত নাট্যকার সাঈদ আহমদ থাকতেন নানার বাড়ির পাশের বাড়িতে। তিনি লিখেছেন- “পাগলার বাবা ছিল ইংরেজ থমসন সাহেবের
কুক। ওরা বংশ পরম্পরায় রান্নার কাজ করত। একসময় থমসন সাহেব বিলেত চলে গেলে পাগলার বাবার চাকরি চলে যায়।
ক্ষেতি খোলার কাজ কিছুদিন করা হলেও পাগলার মন সায় দিত না, তাই সবার অনুপ্রেরণায় রান্নায় চলত পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সাথে শিখেন গ্লাসি তৈরি। বাবার মৃত্যুর পর পাগল জীবিকার অন্বেষণে খুপচি ঘরেই খুলে বসল গ্লাসির দোকান। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে দোকানের খাদ্য রসিকদের ভিড় এবং রাত যত গভীর হয় কিছু লোক সোমরসে সিক্ত হয়ে পাগলার গেলাসি খেতে আসত।
চকবাজার থেকে লক্ষ্মীবাজার পাগলার সুখ্যাতি, তার হাতের কারিগরি দেখতে লোক আসতো। মেজাজি হলেও পাগল ছিল না পাগলা। জায়গার মালিক তার গ্যারেজ সম্প্রসারণের জন্য নোটিশ দিলেন সরে যাওয়ার জন্য। পাগলা অন্যত্র দোকান করল কিন্তু সেখানে আর জমল না। লায়ন সিনেমার গলিতে তার আর দেখা মেলেনি। হারিয়ে গেল পাগলার গেলাসি।”
(চলবে)
পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১২৮)
মুনতাসীর মামুন 


















