ভারত ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিনের সামরিক উত্তেজনা কমে আসার পর ধীরে ধীরে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার অংশ হিসেবে ভারত আবারও সারা বিশ্বের ভারতীয় দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোতে চীনা নাগরিকদের জন্য টুরিস্ট ভিসা চালু করেছে।
ভিসা পুনরায় চালুর পটভূমি
২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসে লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) এলাকায় মুখোমুখি অবস্থান শুরু হলে চীনা নাগরিকদের জন্য ভারতের টুরিস্ট ভিসা স্থগিত করা হয়। ওই বছরের জুনে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা এবং অন্তত চার চীনা সেনা নিহত হন। এর পর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছয় দশকের সবচেয়ে নীচু পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে প্রথমবার আংশিকভাবে চীনা পর্যটকদের জন্য ভিসা চালু করে ভারত। আর এবার বিশ্বের সব ভারতীয় দূতাবাস ও কনস্যুলেট থেকে টুরিস্ট ভিসা আবেদন করার সুযোগ উন্মুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না থাকলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে যে, এই প্রক্রিয়া গত সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়েছে।
সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে নেওয়া সাম্প্রতিক পদক্ষেপ
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, দুই দেশ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেশ কিছু ‘মানুষ-কেন্দ্রিক’ উদ্যোগ নিয়েছে। এর লক্ষ্য হলো পারস্পরিক বিশ্বাস ও যোগাযোগ জোরদার করা।
গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো
- ২০২০ সালের শুরুর দিকে বন্ধ হয়ে যাওয়া দুই দেশের সরাসরি ফ্লাইট আবারও ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে চালু হয়েছে।
- তিব্বত অঞ্চলের পবিত্র স্থানগুলোতে যাওয়ার ঐতিহ্যবাহী কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
- বিভিন্ন ধরনের ভ্রমণকারীদের জন্য ভিসা সহজীকরণ প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে।
- ভারত-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে দুই দেশের দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোতে স্মরণীয় নানা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সূত্র জানায়, দুই দেশের নেতাদের নির্দেশনা অনুযায়ী এই পদক্ষেপগুলো মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে সহায়তা করবে।
সীমান্ত ইস্যু সমাধানে অগ্রগতি
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে এলএসি-র সামনে মোতায়েন সৈন্যদের পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে দু’দেশ একমত হয়। এর পর রাশিয়ার কাজান শহরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বৈঠক করেন। সেখানে তারা সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে একাধিক স্থগিত প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করা এবং দীর্ঘদিনের সীমান্ত সমস্যার সমাধানের দিকে অগ্রসর হওয়ার বিষয়ে সম্মত হন।
চীনা নাগরিকদের জন্য টুরিস্ট ভিসা পুনরায় চালু করার এই সিদ্ধান্ত ভারত-চীন সম্পর্ককে পুনরায় স্থিতিশীল করার বৃহত্তর উদ্যোগের একটি অংশ। সামরিক উত্তেজনা কমানো, সীমান্তে অগ্রগতি, সাংস্কৃতিক ও ভ্রমণ-সম্পর্কিত বিনিময় বাড়ানো—সব মিলিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নতুনভাবে পুনর্গঠন করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
#ভারতচীনসম্পর্ক ভিসানীতি গালওয়ানসংঘর্ষ কূটনীতি আন্তর্জাতিকসম্পর্ক
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















