হোক্কাইদোর একটি ছোট্ট শহর শাকোটান। জনসংখ্যা মাত্র ১,৬০০, যার প্রায় অর্ধেকই ৬৫ বছরের বেশি বয়সী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাড়ছে বাদামী ভালুক দেখা যাওয়ার ঘটনা, আর এর মধ্যেই স্থানীয় প্রশাসন ও শিকারি সমিতির মধ্যে তৈরি হওয়া একটি দ্বন্দ্ব পুরো শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে দেয়। এই ঘটনা তুলে ধরে বৃদ্ধ ও ক্রমে জনসংখ্যা-হ্রাসমান শহরগুলো প্রকৃতি-সংক্রান্ত হুমকির মোকাবিলায় কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।
দ্বন্দ্বের শুরু: সেপ্টেম্বরের ঘটনার জেরে উত্তেজনা
২৭ সেপ্টেম্বর, শাকোটানে ২৮৪ কিলোগ্রাম ওজনের একটি বাদামী ভালুককে স্টিলের খাঁচায় আটক করেছিলেন ইয়োইচি শিকারি সমিতির ৯ জন সদস্য এবং শাকোটানের ৩ জন কর্মকর্তা।
ঠিক তখনই ঘটনাস্থলে হাজির হন শাকোটান টাউন অ্যাসেম্বলির উপ-সভাপতি কাজুওশি কাইতা।
শিকারিরা কাইটাকে বিপদের কারণে এলাকা ছাড়তে বলেন, কিন্তু তিনি অস্বীকৃতি জানান। ভালুকটি গুলি করে হত্যার সময়ও তিনি সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।
ঘটনার পর কাইতা অভিযোগ তোলেন—একটি ভালুক মারতে এত মানুষ কেন প্রয়োজন, এবং শিকারিরা নাকি শুধুই পারিশ্রমিক পাওয়ার আগ্রহে কাজ করছেন।
শিকারিরা উত্তরে বলেন, এত বড় একটি ভালুকের মৃতদেহ সরাতে কয়েকজনের বেশি লোক না থাকলে কাজই সম্ভব নয়।
সাক্ষীদের দাবি, কাইতা তখন শিকারিদের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন এবং তাদের জন্য বরাদ্দ শহরের বাজেট কেটে দেওয়ার কথা বলেন।
শিকারি সমিতির প্রতিক্রিয়া
কাইটার মন্তব্যের জবাবে ইয়োইচি শিকারি সমিতি ঘোষণা করে—তারা আর শাকোটানের কোনো ভালুক-সংক্রান্ত জরুরি ডাকে সাড়া দেবে না।
ফলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে।
২৯ ও ৩০ অক্টোবর, একটি প্রাথমিক ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাছে ভালুক দেখা গেলেও শিকারিরা কোনো সাড়া দেয়নি।
পরিস্থিতির ঝুঁকির কারণে ৩১ অক্টোবর দুই স্কুলেই সমস্ত ক্লাস বাতিল করতে হয়।

ব্যবসা-বাণিজ্যে আঘাত
শহরে ভালুক দেখা যাওয়া ও শিকারিদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে স্থানীয় মানুষ বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছিলেন।
রেস্তোরাঁ মালিকরা জানান, ক্রেতা কমে যাওয়ার কারণে আয় কমে গেছে এবং পুরো শহর উদ্বেগে স্থবির হয়ে পড়েছিল।
ভালুক দেখা যাওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি
সেপ্টেম্বর শেষ পর্যন্ত শাকোটানে ৪৬টি ভালুক দেখা যাওয়ার ঘটনা নথিবদ্ধ হয়—গত বছরের মোট ২৬টির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
১ এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত শহরটি মাত্র ৭টি ভালুক আটক করতে পেরেছে।
সমাধান: কাইটার ক্ষমাপ্রার্থনা ও নতুন নিয়ম
৭ নভেম্বর কাইতা টাউন কমিটির বৈঠকে নিজের আচরণের জন্য ক্ষমা চান।
এরপর ১২ নভেম্বর মেয়র হিদেকি মাতসুই জানান—১৩ নভেম্বর থেকে ইয়োইচি শিকারি সমিতি আবার শাকোটানের অনুরোধে কাজ শুরু করবে।
উভয় পক্ষের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্তে সমঝোতা হয়:
ভবিষ্যতে ভালুক নিধন কার্যক্রম চলাকালে কোনো তৃতীয় পক্ষ উপস্থিত থাকতে পারবে না।
ইয়োইচি শিকারি সমিতির প্রধান মাতসুওশি হনমা বলেন—নতুন নির্দেশিকা তাদের নিরাপদ ও সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করতে সহায়তা করবে।
ব্যয় সংকট: ছোট শহরগুলোর বড় সমস্যা
শহরগুলো শুধুমাত্র শিকারি সমিতিকে অনুরোধ করেই তাদের দিয়ে ভালুক খোঁজার কাজ করাতে পারে—আর এ জন্য ব্যয়ও কম নয়।
শাকোটান ইয়োইচি শিকারি সমিতির ১৩ জন সদস্যকে নিয়োগ দিয়েছে—এরা স্থানীয় বন্যপ্রাণী-সংক্রান্ত অভিযোগ সামলান।
শহরটি প্রতিদিন ২০,০০০ ইয়েন দেয়, তবে যদি কাজ দুই ঘণ্টার কম হয়, তাহলে মাত্র ১০,০০০ ইয়েন দেওয়া হয়—এটি ভালুক ধরার সংখ্যার ওপর নয়, কর্মঘণ্টার ওপর নির্ভরশীল।

এদিকে হোক্কাইদোর বিভিন্ন অঞ্চলে শিকারি সমিতির পারিশ্রমিক ভিন্ন। জুলাই মাসে হোক্কাইদো প্রশাসন ঘোষণা করে—১৫টি শহর ও টাউনে প্রতি ভালুক নিধনে ৩০,০০০ থেকে ৮০,০০০ ইয়েন পর্যন্ত দেওয়া হবে। শাকোটান সেই তালিকায় ছিল না।
হোক্কাইদোতে ভালুকের সংখ্যা বৃদ্ধি
২০২৪ সালে ৮২৬টি বাদামী ভালুক নিধন করা হয়েছিল।
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে সংখ্যা দাঁড়ায় ৬১৭-এ।
২০২৩ সালের শেষে হোক্কাইদো জুড়ে বাদামী ভালুকের আনুমানিক সংখ্যা ছিল ১১,৫৫০—গত নয় বছরে যা ৭% বৃদ্ধি।
শিকারি সংকট
২০২৩ সালে হোক্কাইদোতে ১৩,১৬৭ জন লাইসেন্সধারী শিকারি ছিলেন। তবে এর মধ্যে মাত্র ৭,১৭৭ জনের কাছে রাইফেল লাইসেন্স ছিল—যা ভালুক শিকারের জন্য বাধ্যতামূলক।
ফলে শিকারির সংখ্যা বাড়লেও কার্যকর ভালুক-নিয়ন্ত্রণে সক্ষম শিকারির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
#Japan #Hokkaido #BearCulling #Shakotan #WildlifeConflict #HuntingAssociation #LocalGovernment #HumanWildlifeConflict
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















