মালয়েশিয়ার ফুটবল ঘিরে যে কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে এসেছে, তা শুধু দেশের বড়দের নয়—একজন ভবিষ্যৎ খেলোয়াড়ের স্বপ্নকেও ভেঙে দিয়েছে। এই গল্প সেই এক ছেলের, যে বিশ্বাস করেছিল ফুটবল সবকিছু বদলে দিতে পারে। কিন্তু বড়দের ভুল সিদ্ধান্ত, জাল নথি আর প্রশাসনিক দুর্নীতির ঝড় তার বিশ্বাসকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে।
ছোট্ট বয়সে স্বপ্নের শুরু
একসময় এক ছেলে ছিল, যে মনে করত ফুটবলই তার জীবনের সব সমস্যার সমাধান। ছোটবেলায় বাবা তার হাতে একটু বড় মাপের বুট তুলে দিয়েছিলেন—সেদিনই স্বপ্ন বোনা শুরু।
পাড়ার ফুতসাল কোর্টে খালি পায়ে দৌড়াতে দৌড়াতে সে নিজেকে হারিমাউ মালয়ার ক্ষুদে সংস্করণ মনে করত। রাতে ক্লান্ত শরীর নিয়ে শুয়ে সে একটাই প্রার্থনা করত—
“একদিন যেন মালয়েশিয়ার জার্সি পরতে পারি।”
অন্যরা যখন নোটবুকে কার্টুন আঁকত, সে আঁকত ট্যাকটিক্যাল ফরমেশন। যখন সবাই ইউটিউবার হওয়ার স্বপ্ন দেখত, সে স্বপ্ন দেখত বুকিত জলিল স্টেডিয়ামের।
স্বপ্নের বাইরে আরেক বাস্তবতা
কিন্তু বাস্তবটা ছিল ভিন্ন। মাঠে সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিশ্রম করছিল, আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দপ্তরে চলছিল আরেকটি খেলা—
সই, সিলমোহর, “প্রশাসনিক সমন্বয়” আর নকল নথির বাণিজ্য।

যখন কেলেঙ্কারি ফাঁস হলো, তা বিস্ফোরণের মতো দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল।
“জালিয়াতি”, “নথি বদল”, “তথ্য যাচাই না করা”—এমন সব শব্দ শিরোনাম দখল করল।
জাতীয় দলের প্রতীক, যে প্রতীকের প্রতি সে ছোটবেলা থেকে অনুরাগী, সেটিকেই ঘিরে শুরু হলো লজ্জা ও বিতর্ক।
একটি শিশুর হৃদয়ের ভাঙন
সে বুঝতে পারছিল না—
বড়রা কেন প্রতারণা করবে?
কেন খেলোয়াড়দের পরিচয় নিয়ে মিথ্যে বলা হলো?
কেন সেই জার্সিকে কলঙ্কিত করা হলো, যে জার্সি একদিন সে গর্ব করে পরতে চায়?
উত্তর ছিল না। ফুটবল মূলত তাদের জন্য, যারা হাত-me-down বুট পরে খেলতে শেখে, যারা টিকিট কেনার জন্য সঞ্চয় করে, যারা মাঠে ব্যানার নিয়ে আসে ভালোবাসা থেকে, প্রতিবাদ থেকে।
ফিফার নিষেধাজ্ঞা যেন তার স্বপ্নটাকে মুচড়ে লংকাংয়ের ড্রেনে ছুঁড়ে ফেলার মতোই লাগল।
তবুও হাল না ছাড়া
তবুও সে থামল না। কারণ হৃদয়ভাঙা মানুষই দ্রুত শিখে যায়—যখন বড়রা ব্যর্থ হয়, তখন নিজেকেই দ্রুত বড় হতে হয়।
সে বুঝল—
দপ্তরের সিদ্ধান্ত সে বদলাতে পারবে না।
নকল নথি থামাতে পারবে না।
কেলেঙ্কারির জট ছাড়াতে পারবে না।
কিন্তু সে নির্ধারণ করতে পারবে, সে কেমন মানুষ হতে চায়।
সে হবে সেই ছেলে যে শর্টকাট নেয় না।
যার পরিচয় কাগজে বানানো নয়—মাঠে তৈরি।
যে জার্সিকে সম্মান করবে, যদিও অন্যরা তা নষ্ট করেছে।
মালয়েশিয়ার প্রয়োজন এই ধরনের ছেলেদের—
যারা একদিন বড় হয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বলবে:
“আমার সামনে এসব চলবে না।”
নিজের প্রতি তার অঙ্গীকার
সে প্রতিজ্ঞা করল—
যদি কোনোদিন জাতীয় দলের রং পরতে পারে, সে তা সম্মানের সঙ্গে পরবে।
না থাকবে কেলেঙ্কারি, না গোপন কিছু, না শর্টকাট।
থাকবে শুধু ঘাম, পরিশ্রম, আর দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা।
মালয়েশিয়া তার কাছে কেবল জন্মসনদের একটি লাইন নয়—
এটা তার ঘর, তার পরিচয়।

একটি কবিতায় স্বপ্নের কথা
একদিন সন্ধ্যায় অনুশীলনের পর, সে নিজের খাতায় একটি প্রতিজ্ঞা লিখল—
একটি ছোট কবিতা:
Di padang kecil aku bermula,
Berkejar mimpi tanpa suara.
Tanah tumpah darahku memanggil,
Meski badai datang menghimpit hati kecil.
Biarlah yang palsu gugur sendiri,
Kerana cintaku pada negara ini — tulus, berani dan tidak berselindung lagi.
শেষ কথা: আশা এখনও বেঁচে আছে
শেষ পর্যন্ত ছেলেটি এখনও বিশ্বাস করে।
যুবক বয়সের এটাই সৌন্দর্য—
আশা হতাশার চেয়ে দ্রুত ফিরে আসে।
একদিন, যখন মালয়েশিয়ার ফুটবল আবার সততা, মর্যাদা ও গৌরবে ফিরে আসবে,
হয়তো সে তখন মাঠে দাঁড়িয়ে থাকবে—
সেই জার্সি পরে,
যা সে কখনো জাল করেনি, ধার নেয়নি,
বরং নিজের ঘাম আর পরিশ্রমে অর্জন করেছে।
#ফুটবল #মালয়েশিয়া #কেলেঙ্কারি #স্পোর্টসফিচার
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















