ওয়াশিংটন, ২১ নভেম্বর — কয়েক মাসের কঠোর সমালোচনা ও কটাক্ষের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি হোয়াইট হাউসে অপ্রত্যাশিতভাবে উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন। দু’জনই হাসিমুখে একে অপরকে প্রশংসা করেন এবং নিউইয়র্কে অপরাধ কমানো ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকট মোকাবিলায় যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
ট্রাম্প ও মামদানি: দুই রাজনৈতিক ভিন্নমতের সাক্ষাৎ
৭৯ বছর বয়সী রিপাবলিকান বিলিয়নিয়ার ট্রাম্প এবং ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সমাজতন্ত্রী মামদানি— দুই বিপরীত রাজনৈতিক দর্শনের মানুষ। অভিবাসন নীতি থেকে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা— বেশিরভাগ বিষয়েই তাদের মতবিরোধ রয়েছে।
তবুও প্রথম সাক্ষাতেই দু’জনের মধ্যে আশ্চর্যজনকভাবে একটি সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে উঠতে দেখা যায়।
মামদানি প্রেসিডেন্টের ডেস্কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন, আর ট্রাম্প তার হাত আলতো করে চাপড়ে বলেন— “আমরা অনেক বিষয়ে একমত।”
বৈঠকের মূল বার্তা— সমাধানের পথে একসঙ্গে
ব্যক্তিগত বৈঠক শেষে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন,
“আমরা আমাদের প্রিয় শহরকে এগিয়ে নিতে চাই— এখানেই আমাদের মিল।”

মামদানি বলেন,
“আমাদের অনেক মতবিরোধ আছে, কিন্তু নিউইয়র্কবাসীর সেবা করার যে যৌথ লক্ষ্য, সেটিই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল।”
বৈঠকটি প্রত্যাশার তুলনায় অনেক বেশি সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল, যা ট্রাম্পের অতীত আচরণের তুলনায় বেশ বিস্ময়কর।
নিউইয়র্কের সংকট ও ভোটারদের বার্তা
এক জরিপে দেখা গেছে— মাত্র ২৬% মার্কিন নাগরিক মনে করেন ট্রাম্প জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ন্ত্রণে সফল।
অন্যদিকে, ভাড়া বৃদ্ধি রোধ, বিনামূল্যে বাস সেবা ও শিশুসেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মিলিয়ে মামদানি বড় জয় পান।
মামদানি বলেন,
“ট্রাম্পকে ভোট দেওয়া অনেকেই আমাকে ভোট দিয়েছেন, কারণ তাদের উদ্বেগ ছিল জীবনযাত্রার ব্যয়।”
ট্রাম্প এতে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন,
“তার অনেক ধারণা আমার মতোই। তিনি ভালো করলে আমিও খুশি হব।”
অতীতের কটূক্তি নিয়ে হালকা রসিকতা
কিছুদিন আগেই ট্রাম্প মামদানিকে ‘র্যাডিক্যাল লেফট লুনাটিক’, ‘কমিউনিস্ট’, এমনকি ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলেও সমালোচনা করেছিলেন।
মামদানি বারবার বলেছেন, তিনি নর্ডিক মডেলের গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী— কমিউনিজমে নয়। তিনি ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে নিয়মিত বক্তব্য দিয়েছেন এবং তার প্রশাসনে ইহুদি কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিচ্ছেন।
বৈঠকে দু’জনই অতীতের এসব মন্তব্য হাসিমুখে উড়িয়ে দেন।
এক প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন,
“আমাকে আরও খারাপ নামে ডাকা হয়েছে। কাজ শুরু হলে সে (মামদানি) মত বদলাবে।”
ইসলামবিরোধী মন্তব্যের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের সাফাই
উগান্ডায় জন্ম নেওয়া মামদানি নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র হতে যাচ্ছেন। এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেন— মামদানি কি ‘জিহাদিস্ট’?
ট্রাম্প সঙ্গে সঙ্গে বলেন,
“না, তিনি খুবই যুক্তিসংগত মানুষ।”

রাজনৈতিক মহলে বিস্ময়
অনেক রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষক এই সৌহার্দ্য দেখে বিস্মিত হয়েছেন।
ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি রাশিদা তালিব সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন—
“এটা কী হলো?”
ট্রাম্প অতীতে নিউইয়র্কবাসীকে মামদানিকে ভোট না দিতে বলেছিলেন।
তবে বৈঠকের শেষে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে— মামদানি মেয়র হলে তিনি কি নিউইয়র্কে ফিরবেন?
ট্রাম্প বলেন,
“হ্যাঁ, বিশেষ করে এই বৈঠকের পর।”
#নিউইয়র্ক #ট্রাম্প #মামদানি #রাজনীতি #হোয়াইটহাউস
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















