যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে জানিয়েছে যে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করতে ওয়াশিংটনের প্রস্তাবিত কাঠামো মেনে নিতে হলে কিয়েভের কিছু ভূখণ্ড এবং অস্ত্র ছাড়তে হবে। এই তথ্য দুইজন সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের মূল দিক
সূত্রের মতে, প্রস্তাবে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর আকার কমানোর বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ওয়াশিংটন চায় কিয়েভ যেন এই প্রধান শর্তগুলো মেনে নেয়।
এই পরিকল্পনা ইউক্রেনের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে, বিশেষ করে যখন রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনে নতুন অগ্রগতি করছে এবং জেলেনস্কি দুর্নীতির কেলেঙ্কারি সামলাতে ব্যস্ত — যার পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ জ্বালানি ও ন্যায়বিচার মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া
হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র উভয় পক্ষের মতামত বিবেচনা করে যুদ্ধ শেষ করার জন্য বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে কাজ করছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য উভয় পক্ষকেই কঠিন হলেও প্রয়োজনীয় কিছু ছাড় দিতে হবে।
একজন জ্যেষ্ঠ ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে যে শান্তি প্রস্তাব তৈরি করেছে, তার সংকেত ইউক্রেন পেয়েছে; তবে এই প্রস্তাব তৈরিতে ইউক্রেনের কোনো ভূমিকা ছিল না।
জেলেনস্কির কূটনৈতিক তৎপরতা
বুধবার তুরস্কে প্রেসিডেন্ট রিজেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবার তিনি কিয়েভে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।
টেলিগ্রামে জেলেনস্কি লেখেন, “রক্তপাত বন্ধ করা এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় ও কার্যকর নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি বলেন, যুদ্ধ শেষ করতে সক্ষম শক্তি কেবল যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রয়েছে।
জেলেনস্কি আরও জানান, তুরস্ক বিভিন্ন আলোচনার ফরম্যাট প্রস্তাব করেছে এবং তারা আলোচনার জন্য উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম দিতে প্রস্তুত।
শান্তি প্রচেষ্টায় নতুন গতি
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শান্তি প্রচেষ্টার ইঙ্গিতের পর বুধবার ইউক্রেনের সরকারি বন্ডের দামে মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ উল্লম্ফন দেখা গেছে।
জুলাইয়ে ইস্তাম্বুলের বৈঠকের পর থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মুখোমুখি আলোচনা আর হয়নি। এর মধ্যে রাশিয়ান হামলায় বুধবার রাতে ২৫ জন নিহত হয়েছে।
রাশিয়ার অবস্থান অপরিবর্তিত
মস্কো এখনো যুদ্ধ শেষের শর্ত পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন —
ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে
চারটি দখলকৃত অঞ্চল ইউক্রেনের সেনা পুরোপুরি তুলে নিতে হবে
রাশিয়ান বাহিনী বর্তমানে ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের প্রায় ১৯% নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং অগ্রসর হচ্ছে। পাশাপাশি শীতের আগমনে তারা জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা বাড়াচ্ছে।
২০২২ সালে যুদ্ধের শুরুতে তুরস্ক প্রথম শান্তি আলোচনা আয়োজন করেছিল। এ বছর ট্রাম্প প্রশাসন নতুন উদ্যোগ নেওয়ার পর আবারও কূটনৈতিক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া–তুরস্ক: জটিল সমীকরণ
ক্রেমলিন বলেছে, আঙ্কারার বৈঠকে রাশিয়ার প্রতিনিধি থাকবে না, তবে আলোচনা শেষে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের সঙ্গে ফলাফল নিয়ে কথা বলতে পুতিন রাজি।
নতুন প্রস্তাবে কী থাকতে পারে
একজন মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে অ্যাক্সিওস জানিয়েছে, নতুন মার্কিন পরিকল্পনায় ইউক্রেনকে পূর্বাঞ্চলের এমন কিছু এলাকা রাশিয়াকে দিতে হতে পারে যা কিয়েভ বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করে না। এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন ও ইউরোপকে ভবিষ্যৎ রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে পারে।
ইউরোপের সতর্ক অবস্থান
এক ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেছেন, এটি ট্রাম্প প্রশাসনের ইউক্রেনকে কোনায় ঠেলে দেওয়ার আরেকটি চেষ্টা হতে পারে। তবে তিনি যোগ করেন, ইউক্রেন বা ইউরোপীয় মিত্রদের অবস্থান উপেক্ষা করে কোনো সমাধান সম্ভব নয়।
অন্য এক কূটনীতিক বললেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ছোট করার প্রস্তাবটি রাশিয়ার দাবি বলেই মনে হয়, কোনো বাস্তবসম্মত পশ্চিমা পরিকল্পনা নয়।
মার্কিন সামরিক প্রতিনিধি দল কিয়েভে
মার্কিন সেনাবাহিনীর সচিব ড্যান ড্রিস্কোলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল কিয়েভে অবস্থান করছে। তারা তথ্য সংগ্রহ মিশনে এসেছে বলে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস জানিয়েছে। সেনাবাহিনীর চিফ-অব-স্টাফ জেনারেল রেন্ডি জর্জ দলে রয়েছেন।বৃহস্পতিবার জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করবেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















