০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫
টি–২০ বিশ্বকাপ সামনে, নিউজিল্যান্ড সিরিজেই গড়ে উঠছে ভারতের মূল দল জাপানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বয়সী রক্ষাকবচদের সংকট ভিয়েতনামে ক্রেডিট কোটা সংস্কার: অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে আধুনিকায়নের প্রয়োজন হারিকেন মেলিসার পর জ্যামাইকায় লেপটোস্পাইরোসিসে প্রাণহানি তাজমহলে মিস ইউনিভার্স শুটের সময় অসুস্থ হন সুস্মিতা সেন ছুটির মৌসুমে রাজনীতির নয়, পরিবারের পাশে দাঁড়ান ট্রাম্পের ইউক্রেন শান্তি পরিকল্পনায় রাশিয়ারই বড় লাভ, উদ্বেগে কিয়েভ–ইউরোপ অর্ধেক ঔপন্যাসিকের আশঙ্কা—এআই তাদের কাজ দখল করবে, সবচেয়ে ঝুঁকিতে রোম্যান্স লেখকেরা ইউক্রেন যুদ্ধ: যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া শান্তি প্রস্তাবে মিত্রদের আরও সংশোধনের দাবি নেট্রা মান্তেনার উদয়পুর বিবাহে ‘ডোলা রে ডোলা’-এ মুগ্ধতা ছড়ালেন মাধুরী দীক্ষিত

জাপানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বয়সী রক্ষাকবচদের সংকট

জাপানের ঐতিহ্যবাহী শিল্প—ল্যাকারওয়ার, চা–অনুষ্ঠান থেকে নোহ থিয়েটার—আজ দাঁড়িয়ে আছে একটি বড় সংকটের সামনে। এসব শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন যেসব প্রবীণ গুরু, তাদের সংখ্যা যেমন কমছে, তেমনি যোগ্য উত্তরসূরি খুঁজে পাওয়াও কঠিন হয়ে উঠছে।

জাপানের ঐতিহ্যের রক্ষাকর্তারা

জাপানে বর্তমানে মাত্র ১১৬ জন শিল্পী, কারুশিল্পী এবং অভিনয়শিল্পীকে সরকার “নিঙ্গেন কোকুহো” বা জীবন্ত জাতীয় সম্পদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তারা শুধু দক্ষতার প্রতীক নন, বরং বহু প্রজন্ম ধরে আগত ঐতিহ্যের শেষ রক্ষাকবচ। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই বয়সের ভারে নুয়ে পড়ছেন, ফলে তাদের পরে কে আসবে—এই প্রশ্ন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

আইন ও বাস্তবতার ফারাক

জাপানের ‘Law for the Protection of Cultural Properties’ অনুযায়ী নোহ, চা–অনুষ্ঠান, ল্যাকারওয়ারসহ বিভিন্ন শিল্পকে “গুরুত্বপূর্ণ অদৃশ্য সাংস্কৃতিক সম্পদ” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই মর্যাদা পাওয়া শিল্পীদের দায়িত্ব হলো জ্ঞান শিখিয়ে যাওয়া এবং শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখা। কিন্তু বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ স্পষ্ট। প্রতি বছর খুব সীমিত সংখ্যক শিল্পীকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং যাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয় তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে প্রবীণ। তরুণ প্রজন্ম আজকাল আর দশকের পর দশক ধরে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাস্টার হতে আগ্রহী নয়। বিশেষ করে মৃৎশিল্প, ল্যাকারওয়ার, বাঁশের কারুকাজ ও বস্ত্রশিল্প—যেখানে দক্ষতা অর্জনে লাগে বহু বছরের কঠোর অনুশীলন—সেসব ক্ষেত্রে নতুন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও যথেষ্ট কম। বর্তমানে ১১৬ জন জীবন্ত জাতীয় সম্পদের মধ্যে মাত্র ৫৮ জন কারুশিল্পী, যা ভবিষ্যতে দক্ষতার পুনর্গঠনের জন্য যথেষ্ট নয়।

Celebrating Serenity: Exploring the Timeless Art of Japanese Tea Ceremonies | by HaberDash | Medium

চাহিদা বাড়লেও শিল্পীর সংকট

বিদেশে জাপানি কারুশিল্প এখন বিলাসপণ্যের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বহু শিল্পশিক্ষার্থী জাপানে এসে গুরুদের কাছ থেকে শিক্ষা নিচ্ছে, যা একই সঙ্গে আশা তৈরি করছে এবং চাপ বাড়াচ্ছে। বাজারে চাহিদা যতই বাড়ুক, প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—ভবিষ্যতে কি এত শিল্পী থাকবে যারা এই চাহিদা পূরণ করতে পারবে? দক্ষ শিল্পীর সংকট এ ক্ষেত্রে একটি বড় সতর্কবার্তা হিসেবে সামনে আসছে।

বয়সী সমাজ ও কমে যাওয়া আগ্রহ

জাপান বিশ্বের প্রথম “সুপার–এজিং” সমাজ, যার প্রভাব শিল্প ও অভিনয়জগতেও পড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে—কাবুকি শিল্পীদের আয়ু অনেক সময় অন্যান্য শিল্পীদের তুলনায় কম। তরুণদের কাছে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষানবিশ পদ্ধতি আকর্ষণ হারাচ্ছে, কারণ এতে ভোরবেলার কঠোর অনুশীলন, বহু বছর বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করা এবং ব্যক্তিগত জীবনকে একপ্রকার উৎসর্গ করে দেওয়া লাগে। আজকের তরুণেরা স্থায়ী চাকরি, ব্যক্তিগত সময় এবং আধুনিক ক্যারিয়ারকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, ফলে ঐতিহ্যবাহী শিল্পের প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে।

পরিবর্তনের পথে জাপান

অবশ্য পরিস্থিতি সম্পূর্ণ হতাশাজনক নয়। জাপান বিভিন্নভাবে পরিবর্তন আনছে। সংস্কৃতি সংরক্ষণ সংস্থা বিভিন্ন প্রকল্প, অনুদান এবং প্রশিক্ষণ উন্নয়নে সহায়তা দিচ্ছে। স্থানীয় সরকার পর্যটন–কেন্দ্রিক কারুশিল্প পুনরুজ্জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, বিশেষ করে নোতো অঞ্চল ও কানাজাওয়ায় দুর্যোগ–পরবর্তী পুনর্গঠন প্রকল্পে এটি স্পষ্ট। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলো শিল্পকে আধুনিক রূপে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে। ডিজিটাল আর্কাইভ, আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী এবং তরুণদের জন্য ইন্টারঅ্যাকটিভ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ঐতিহ্যকে আরও সহজবোধ্য ও আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে। Tokyo Heritage প্ল্যাটফর্মে ‘মাস্টারদের সঙ্গে দেখা’ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষকে শিল্পের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ করছে।

How samurai, statesmen, and scholars shaped the Japanese tea ceremony | National Geographic

নতুন প্রজন্মের কাঙ্ক্ষিত রূপ

নতুন শিল্পীরা হয়তো আর ঐতিহ্যবাহী কিমোনো পরে কাজ করবেন না। তারা বিদেশি শিক্ষানবিশ, ডিজিটাল ক্রিয়েটর কিংবা আন্তঃবিভাগীয় ডিজাইনারও হতে পারেন। মাস্টার–শিষ্য সম্পর্ক আরও নমনীয়, বিস্তৃত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হচ্ছে। শিল্পের বিকাশ এখন আর কেবল ঐতিহ্য ধরে রাখার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; বরং এটি পরিবর্তন, সহযোগিতা এবং নতুন ধারার মিশ্রণে গড়ে উঠছে।

টিকে থাকার বাধা

অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এখনও বড় বাধা। “জীবন্ত জাতীয় সম্পদ” মর্যাদা পেলেও এর সঙ্গে কোনো স্থায়ী আয়ের নিশ্চয়তা নেই। অনেক কারুশিল্পী স্থায়ী ব্যবসায়িক ভিত্তি গড়তে পারেন না, ফলে শিক্ষানবিশ নেওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। একই সময়ে বহু গুরু ইতোমধ্যে ৭০ বা ৮০ বছরের বেশি বয়সী, তাই সময়ও সীমিত।

অবশেষে প্রশ্ন: ঐতিহ্য কি বাঁচবে?

উত্তর—সতর্ক আশাবাদ। সংরক্ষণ ব্যবস্থা আছে, শিক্ষানবিশ আছে এবং জনসাধারণের আগ্রহও কম নয়। কিন্তু কাঠামোগত পরিবর্তন—অর্থনৈতিক প্রণোদনা, নমনীয় ক্যারিয়ারধারা, আধুনিক গল্পবলার কৌশল এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা—এগুলো ছাড়া জাপানি শিল্পসম্ভার হারিয়ে যেতে পারে। জাপানের পরিচয়ের বড় অংশ ঐতিহ্য, আর সেই ঐতিহ্যকে নতুন যুগের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়াই এখন সবচেয়ে বড় শিল্পকর্ম। শেষ পর্যন্ত হয়তো জাপান এমন এক ভবিষ্যৎ তৈরি করবে, যেখানে ল্যাকারওয়ার, ক্যালিগ্রাফি এবং নোহের মঞ্চ শুধু অতীত আঁকড়ে ধরে বাঁচবে না, বরং সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিকশিত হবে।

#জাপান_ঐতিহ্য #সংস্কৃতি_সংরক্ষণ #কারুশিল্প_সংকট #বয়সী_শিল্পী #নিঙ্গেন_কোকুহো

 

জনপ্রিয় সংবাদ

টি–২০ বিশ্বকাপ সামনে, নিউজিল্যান্ড সিরিজেই গড়ে উঠছে ভারতের মূল দল

জাপানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বয়সী রক্ষাকবচদের সংকট

০৫:০০:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

জাপানের ঐতিহ্যবাহী শিল্প—ল্যাকারওয়ার, চা–অনুষ্ঠান থেকে নোহ থিয়েটার—আজ দাঁড়িয়ে আছে একটি বড় সংকটের সামনে। এসব শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন যেসব প্রবীণ গুরু, তাদের সংখ্যা যেমন কমছে, তেমনি যোগ্য উত্তরসূরি খুঁজে পাওয়াও কঠিন হয়ে উঠছে।

জাপানের ঐতিহ্যের রক্ষাকর্তারা

জাপানে বর্তমানে মাত্র ১১৬ জন শিল্পী, কারুশিল্পী এবং অভিনয়শিল্পীকে সরকার “নিঙ্গেন কোকুহো” বা জীবন্ত জাতীয় সম্পদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তারা শুধু দক্ষতার প্রতীক নন, বরং বহু প্রজন্ম ধরে আগত ঐতিহ্যের শেষ রক্ষাকবচ। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই বয়সের ভারে নুয়ে পড়ছেন, ফলে তাদের পরে কে আসবে—এই প্রশ্ন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

আইন ও বাস্তবতার ফারাক

জাপানের ‘Law for the Protection of Cultural Properties’ অনুযায়ী নোহ, চা–অনুষ্ঠান, ল্যাকারওয়ারসহ বিভিন্ন শিল্পকে “গুরুত্বপূর্ণ অদৃশ্য সাংস্কৃতিক সম্পদ” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই মর্যাদা পাওয়া শিল্পীদের দায়িত্ব হলো জ্ঞান শিখিয়ে যাওয়া এবং শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখা। কিন্তু বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ স্পষ্ট। প্রতি বছর খুব সীমিত সংখ্যক শিল্পীকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং যাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয় তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে প্রবীণ। তরুণ প্রজন্ম আজকাল আর দশকের পর দশক ধরে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাস্টার হতে আগ্রহী নয়। বিশেষ করে মৃৎশিল্প, ল্যাকারওয়ার, বাঁশের কারুকাজ ও বস্ত্রশিল্প—যেখানে দক্ষতা অর্জনে লাগে বহু বছরের কঠোর অনুশীলন—সেসব ক্ষেত্রে নতুন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও যথেষ্ট কম। বর্তমানে ১১৬ জন জীবন্ত জাতীয় সম্পদের মধ্যে মাত্র ৫৮ জন কারুশিল্পী, যা ভবিষ্যতে দক্ষতার পুনর্গঠনের জন্য যথেষ্ট নয়।

Celebrating Serenity: Exploring the Timeless Art of Japanese Tea Ceremonies | by HaberDash | Medium

চাহিদা বাড়লেও শিল্পীর সংকট

বিদেশে জাপানি কারুশিল্প এখন বিলাসপণ্যের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বহু শিল্পশিক্ষার্থী জাপানে এসে গুরুদের কাছ থেকে শিক্ষা নিচ্ছে, যা একই সঙ্গে আশা তৈরি করছে এবং চাপ বাড়াচ্ছে। বাজারে চাহিদা যতই বাড়ুক, প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—ভবিষ্যতে কি এত শিল্পী থাকবে যারা এই চাহিদা পূরণ করতে পারবে? দক্ষ শিল্পীর সংকট এ ক্ষেত্রে একটি বড় সতর্কবার্তা হিসেবে সামনে আসছে।

বয়সী সমাজ ও কমে যাওয়া আগ্রহ

জাপান বিশ্বের প্রথম “সুপার–এজিং” সমাজ, যার প্রভাব শিল্প ও অভিনয়জগতেও পড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে—কাবুকি শিল্পীদের আয়ু অনেক সময় অন্যান্য শিল্পীদের তুলনায় কম। তরুণদের কাছে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষানবিশ পদ্ধতি আকর্ষণ হারাচ্ছে, কারণ এতে ভোরবেলার কঠোর অনুশীলন, বহু বছর বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করা এবং ব্যক্তিগত জীবনকে একপ্রকার উৎসর্গ করে দেওয়া লাগে। আজকের তরুণেরা স্থায়ী চাকরি, ব্যক্তিগত সময় এবং আধুনিক ক্যারিয়ারকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, ফলে ঐতিহ্যবাহী শিল্পের প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে।

পরিবর্তনের পথে জাপান

অবশ্য পরিস্থিতি সম্পূর্ণ হতাশাজনক নয়। জাপান বিভিন্নভাবে পরিবর্তন আনছে। সংস্কৃতি সংরক্ষণ সংস্থা বিভিন্ন প্রকল্প, অনুদান এবং প্রশিক্ষণ উন্নয়নে সহায়তা দিচ্ছে। স্থানীয় সরকার পর্যটন–কেন্দ্রিক কারুশিল্প পুনরুজ্জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, বিশেষ করে নোতো অঞ্চল ও কানাজাওয়ায় দুর্যোগ–পরবর্তী পুনর্গঠন প্রকল্পে এটি স্পষ্ট। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলো শিল্পকে আধুনিক রূপে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে। ডিজিটাল আর্কাইভ, আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী এবং তরুণদের জন্য ইন্টারঅ্যাকটিভ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ঐতিহ্যকে আরও সহজবোধ্য ও আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে। Tokyo Heritage প্ল্যাটফর্মে ‘মাস্টারদের সঙ্গে দেখা’ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষকে শিল্পের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ করছে।

How samurai, statesmen, and scholars shaped the Japanese tea ceremony | National Geographic

নতুন প্রজন্মের কাঙ্ক্ষিত রূপ

নতুন শিল্পীরা হয়তো আর ঐতিহ্যবাহী কিমোনো পরে কাজ করবেন না। তারা বিদেশি শিক্ষানবিশ, ডিজিটাল ক্রিয়েটর কিংবা আন্তঃবিভাগীয় ডিজাইনারও হতে পারেন। মাস্টার–শিষ্য সম্পর্ক আরও নমনীয়, বিস্তৃত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হচ্ছে। শিল্পের বিকাশ এখন আর কেবল ঐতিহ্য ধরে রাখার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; বরং এটি পরিবর্তন, সহযোগিতা এবং নতুন ধারার মিশ্রণে গড়ে উঠছে।

টিকে থাকার বাধা

অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এখনও বড় বাধা। “জীবন্ত জাতীয় সম্পদ” মর্যাদা পেলেও এর সঙ্গে কোনো স্থায়ী আয়ের নিশ্চয়তা নেই। অনেক কারুশিল্পী স্থায়ী ব্যবসায়িক ভিত্তি গড়তে পারেন না, ফলে শিক্ষানবিশ নেওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। একই সময়ে বহু গুরু ইতোমধ্যে ৭০ বা ৮০ বছরের বেশি বয়সী, তাই সময়ও সীমিত।

অবশেষে প্রশ্ন: ঐতিহ্য কি বাঁচবে?

উত্তর—সতর্ক আশাবাদ। সংরক্ষণ ব্যবস্থা আছে, শিক্ষানবিশ আছে এবং জনসাধারণের আগ্রহও কম নয়। কিন্তু কাঠামোগত পরিবর্তন—অর্থনৈতিক প্রণোদনা, নমনীয় ক্যারিয়ারধারা, আধুনিক গল্পবলার কৌশল এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা—এগুলো ছাড়া জাপানি শিল্পসম্ভার হারিয়ে যেতে পারে। জাপানের পরিচয়ের বড় অংশ ঐতিহ্য, আর সেই ঐতিহ্যকে নতুন যুগের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়াই এখন সবচেয়ে বড় শিল্পকর্ম। শেষ পর্যন্ত হয়তো জাপান এমন এক ভবিষ্যৎ তৈরি করবে, যেখানে ল্যাকারওয়ার, ক্যালিগ্রাফি এবং নোহের মঞ্চ শুধু অতীত আঁকড়ে ধরে বাঁচবে না, বরং সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিকশিত হবে।

#জাপান_ঐতিহ্য #সংস্কৃতি_সংরক্ষণ #কারুশিল্প_সংকট #বয়সী_শিল্পী #নিঙ্গেন_কোকুহো