সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের স্বাস্থ্য-প্রবণতার মধ্যে নারীদের টেস্টোস্টেরন ব্যবহার নিয়ে আগ্রহ সবচেয়ে বিস্ময়কর। টেস্টোস্টেরনকে অনেকে “শক্তিশালী হরমোন” হিসেবে তুলে ধরছেন—যা নাকি শক্তি, মেজাজ, পেশীর টোন, যৌনচাহিদা ও সামগ্রিক প্রাণশক্তি বাড়ায়। কিছু নারী এমনকি নিতম্বে ধীরে দ্রবীভূত হওয়া টেস্টোস্টেরন প্যালেটও ব্যবহার করছেন।
টেস্টোস্টেরন: শুধুই পুরুষ হরমোন নয়
যদিও এটি সাধারণত ‘পুরুষ হরমোন’ নামে পরিচিত, নারীদের জন্যও টেস্টোস্টেরন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মস্তিষ্কে ডোপামিন বাড়িয়ে লিবিডো, যৌন উত্তেজনা ও অর্গাজমে ভূমিকা রাখে।
১৯৪০-এর দশক থেকেই চিকিৎসকেরা নারীদের যৌনচাহিদা কমে গেলে টেস্টোস্টেরন দিতেন। তবে সহস্রাব্দের শুরুতে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (HRT) নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিলে এ প্রয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। উদ্বেগ মূলত ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন নিয়ে হলেও টেস্টোস্টেরনও সেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। ফলে প্রমাণ-নির্ভর গবেষণার অভাবে চিকিৎসকেরা সতর্ক হয়ে যান।
আবার জনপ্রিয় হচ্ছে টেস্টোস্টেরন
HRT নিয়ে ভয় কমে যাওয়ায় নারীরা আবার টেস্টোস্টেরনের দিকে ফিরে তাকাচ্ছেন। নিউইয়র্কের ফিফথ অ্যাভিনিউ এন্ডোক্রিনোলজি ক্লিনিকের চিকিৎসক ক্যারোলিন মেসার জানান, ২০১৯ সাল থেকে যৌনচাহিদা কমে যাওয়া বা হাইপোঅ্যাকটিভ সেক্সুয়াল ডিজায়ার ডিসঅর্ডার (HSDD)-এর চিকিৎসায় টেস্টোস্টেরন নতুন করে ব্যবহৃত হচ্ছে।
২০১৩ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত আমেরিকায় এই ওষুধের প্রেসক্রিপশন প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। ব্রিটেনে ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এই সংখ্যা দশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
নারীদের টেস্টোস্টেরন ২০-এর দশকে সর্বোচ্চ থাকে; মেনোপজে তা সেই মাত্রার প্রায় এক-চতুর্থাংশে নেমে আসে। তাই চিকিৎসার লক্ষ্য হলো নারীদের প্রাক-মেনোপজ স্তরের কাছাকাছি হরমোন ফিরিয়ে আনা—সাধারণত ত্বকে প্রয়োগযোগ্য জেল বা ক্রিমের মাধ্যমে।

ইনজেক্টেবল প্যালেট নয়
ড. মেসার ইনজেক্টেবল প্যালেট ব্যবহার করেন না। তাঁর মতে, এতে অতিরিক্ত টেস্টোস্টেরন শরীরে প্রবেশের ঝুঁকি থাকে। অতিরিক্ত টেস্টোস্টেরনের ফলে ব্রণ, অবাঞ্ছিত লোম, মেজাজের ওঠানামা কিংবা স্থায়ীভাবে কণ্ঠস্বর গভীর হয়ে যাওয়ার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
মেনোপজে টেস্টোস্টেরনের সম্ভাব্য আরও ভূমিকা
মেনোপজে থাকা অনেক নারীই “ব্রেন ফগ”—অর্থাৎ ক্লান্তি, মনোযোগে ঘাটতি, স্মৃতি দুর্বলতা, কথা বলায় ধীরগতি ও একাধিক কাজ সামলাতে সমস্যা—এসব নিয়ে অভিযোগ করেন।
লন্ডনের দ্য সোক ক্লিনিকের নারীদের হরমোনজনিত মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অ্যানন ম্যাকেঞ্জি জানান, লিবিডো কমার কারণে টেস্টোস্টেরন পাওয়া পেরিমেনোপজ নারীরা মেজাজে উন্নতি, স্মরণশক্তি বেড়ে যাওয়া ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্লান্তি কমার অভিজ্ঞতার কথা বলেন।
গবেষণার কিছু অংশে দেখা যায়, পোস্ট-মেনোপজ নারীদের মেজাজ ও জ্ঞানগত সক্ষমতা কিছুটা ভালো হতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে টেস্টোস্টেরন ব্যবহার কতটা নিরাপদ ও কার্যকর—তা প্রমাণ করার মতো সুসংগঠিত গবেষণা এখনো নেই। ফলে এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানে একটি ধূসর অঞ্চলে রয়ে গেছে।
ঝুঁকি এবং সীমাবদ্ধতা
যেসব তরুণী নারীর চিকিৎসাগতভাবে টেস্টোস্টেরনের প্রয়োজন নেই, তাদের জন্য মেজাজ বা কর্মক্ষমতা বাড়াতে এই হরমোন ব্যবহার করা একেবারেই অজানা ক্ষেত্র।
পেশি বাড়ানো বা কর্মক্ষমতা বাড়াতে পুরুষ বডিবিল্ডারদের মতো উচ্চমাত্রায় টেস্টোস্টেরন ব্যবহার বিশেষজ্ঞদের মতে নারীদের জন্য অত্যন্ত অনিরাপদ।

সঠিক প্রয়োজনে উপকার, অযথা বিপদ
যেসব নারীর চিকিৎসাগত প্রয়োজন রয়েছে, তাদের জন্য সঠিক মাত্রায় টেস্টোস্টেরন খুবই উপকারী হতে পারে। কিন্তু অন্য সবার জন্য এটি সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েনসারদের ছড়ানো আরেকটি “ট্রেন্ডি হরমোন”—যার প্রয়োজন নেই বলেই মনে করেন ড. মেসার।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















