০৩:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

ভারতে ই-কমার্সের উত্থান

ভারতে অনলাইন কেনাকাটার জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে, আর এর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ছে স্থানীয় বাজারের ওপর। মুম্বাইয়ের হিল রোড—যেটি সাধারণত ভিড়ে ঠাসা থাকে—সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছুটা ফাঁকা দেখা যাচ্ছে। শিশু ও নারীদের পোশাক বিক্রি করেন শেখ আজিজ, যিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে দুটি ছোট দোকান চালান। মহামারির পর থেকে ব্যবসায় আগের মতো আর জোয়ার নেই। তার ভাষায়, মানুষ এখন ঘরের সোফায় বসে যা খুশি কিনে ফেলছে, তাই রিকশায় চড়ে বাজারে আসার প্রয়োজন কমে গেছে।

স্থানীয় বাজারের গুরুত্ব
ভারতের প্রতিটি শহরে অন্তত একটি এলাকা রয়েছে, যেখানে সস্তা, ব্র্যান্ডহীন পোশাকের দোকান ভরপুর। ছোট ব্যবসায়ীদের উপর দাঁড়িয়ে আছে দেশের বিশাল খুচরা বাণিজ্য। গত বছর ভারতের এক ট্রিলিয়ন ডলারের খুচরা খরচের চার-পঞ্চমাংশ এবং ফ্যাশন খাতে ১০০ বিলিয়ন ডলারের খরচের তিন-পঞ্চমাংশ হয়েছে এই ধরনের দোকান ও ফুটপাতের বাজারগুলোতে।

মহামারি এবং অনলাইন কেনাকাটার উত্থান
মোবাইল ব্রডব্যান্ডের বিস্তার এবং সস্তা ডেটার কারণে মহামারির সময় মানুষ বাড়িতে বসে অনলাইন কেনাকাটার দিকে আরও ঝুঁকেছে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম গুলো ফ্যাশন বাজারে তাদের অংশীদারি দ্বিগুণ করে প্রায় ১৫ শতাংশে পৌঁছে যায়। যদিও এটি এখনও চীন বা আমেরিকার তুলনায় অনেক কম—সেখানে অনলাইনে ফ্যাশন কেনাকাটা ৪০ শতাংশ—তবে ভারতের এই প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত দ্রুত।

মিশো: পরিবর্তনের মূল চালিকা শক্তি
অনলাইন বাজারে বাড়তি জনপ্রিয়তার পেছনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা রাখছে মিশো। সফটব্যাংক-সমর্থিত এই ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ২০২০ সালে মাত্র ২০ লাখ ক্রেতা ছিল, আর এখন সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৯৯ মিলিয়ন। কোম্পানি সম্প্রতি ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলারের মূল্যায়নে আইপিও জন্য আবেদন করেছে।


মিশোর লক্ষ্যবস্তু সেই ক্রেতারা, যারা সাধারণত আজিজ এর মতো দোকানে কেনাকাটা করতেন। ২৬৬ রুপিতে (ডেলিভারি সহ) শাড়ি বিক্রি করতে পারা তাদের জন্য এক বিশাল প্রতিযোগিতা তৈরি করেছে।

ভারতের বাজারে দুটি বড় পরিবর্তন

কাঠামোগত পরিবর্তন
মিশোর মতো প্ল্যাটফর্ম গুলো ছোট ব্যবসায়ীদের অনিয়মিত, অসংগঠিত বাজার থেকে ধীরে ধীরে আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির দিকে নিয়ে আসছে। পাঁচ বছর আগেও ভারতের ৮৫ শতাংশ খুচরা বাজার ছিল অনানুষ্ঠানিক। মিশোর অনুমান, ২০৩০ সালের মধ্যে এটি কমে দাঁড়াতে পারে ৬৬ থেকে ৬৮ শতাংশে।

বাজারের আকার বিস্তৃতি
ই-কমার্স বিক্রেতাদের স্থানীয় গ্রাহকদের বাইরে দেশজুড়ে বাজারে পৌঁছানোর সুযোগ দিচ্ছে। অ্যামাজন আর মিন্ত্রা বড় শহরগুলোতে বেশি জনপ্রিয়, কিন্তু মিশোর মতো সস্তা পণ্যের কারণে ছোট শহর-গ্রামও এখন বড় বাজারে পরিণত হচ্ছে।
মিশো কমিশন নেয় না; বরং ডেলিভারি ও বিজ্ঞাপনের জন্য ফি নেয়। এতে খরচ কম থাকে, আর ফুটপাত ব্যবসায়ীদের বাজার থেকে অংশ কেড়ে নেওয়া সহজ হয়।

লজিস্টিক এবং ডেলিভারির বিপ্লব
আগে ভারতের ডাক ব্যবস্থা এবং ঠিকানার জটিলতার কারণে দূরবর্তী অঞ্চলে পণ্য পাঠানো কঠিন ছিল। কিন্তু ডেলিভারি, বড় ই-কমার্স কোম্পানির নিজস্ব লজিস্টিকস ইউনিট—এসবের কারণে এখন দেশের সবচেয়ে দুর্গম স্থানে পণ্য পাঠানো সম্ভব।
এখন মিশোর ক্রেতাদের ৯০ শতাংশই দেশের আট প্রধান শহরের বাইরের অঞ্চলের মানুষ।

গ্রাম-শহরের জীবনধারায় পরিবর্তন
এই পরিবর্তন শুধু ব্যবসায়িক নয়; সামাজিক রূপান্তর ঘটাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া ও ই-কমার্স ছোট শহরের মানুষের রুচি, চাহিদা ও জীবনধারাকে আমূল বদলে দিয়েছে।
কেরালার কাট্টাপানার বাসিন্দা জোসেফ সেবাস্টিয়ান বলেন, আগে বড় শহরের ফ্যাশন তার শহরে পৌঁছাতে বছর লেগে যেত। এখন তার শহরের তরুণরা বেঙ্গালুরু আধুনিক পাড়া কোরামাঙ্গালার তরুণদের মতোই দেখতে।

#ভারত_ইকমার্স #অনলাইন_ফ্যাশন #মিশো #ভারতের_বাজার_রূপান্তর

জনপ্রিয় সংবাদ

পুনর্বাসনের রাজা রিচার্ড টেইটের নতুন মিশন

ভারতে ই-কমার্সের উত্থান

০১:৪০:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

ভারতে অনলাইন কেনাকাটার জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে, আর এর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ছে স্থানীয় বাজারের ওপর। মুম্বাইয়ের হিল রোড—যেটি সাধারণত ভিড়ে ঠাসা থাকে—সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছুটা ফাঁকা দেখা যাচ্ছে। শিশু ও নারীদের পোশাক বিক্রি করেন শেখ আজিজ, যিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে দুটি ছোট দোকান চালান। মহামারির পর থেকে ব্যবসায় আগের মতো আর জোয়ার নেই। তার ভাষায়, মানুষ এখন ঘরের সোফায় বসে যা খুশি কিনে ফেলছে, তাই রিকশায় চড়ে বাজারে আসার প্রয়োজন কমে গেছে।

স্থানীয় বাজারের গুরুত্ব
ভারতের প্রতিটি শহরে অন্তত একটি এলাকা রয়েছে, যেখানে সস্তা, ব্র্যান্ডহীন পোশাকের দোকান ভরপুর। ছোট ব্যবসায়ীদের উপর দাঁড়িয়ে আছে দেশের বিশাল খুচরা বাণিজ্য। গত বছর ভারতের এক ট্রিলিয়ন ডলারের খুচরা খরচের চার-পঞ্চমাংশ এবং ফ্যাশন খাতে ১০০ বিলিয়ন ডলারের খরচের তিন-পঞ্চমাংশ হয়েছে এই ধরনের দোকান ও ফুটপাতের বাজারগুলোতে।

মহামারি এবং অনলাইন কেনাকাটার উত্থান
মোবাইল ব্রডব্যান্ডের বিস্তার এবং সস্তা ডেটার কারণে মহামারির সময় মানুষ বাড়িতে বসে অনলাইন কেনাকাটার দিকে আরও ঝুঁকেছে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম গুলো ফ্যাশন বাজারে তাদের অংশীদারি দ্বিগুণ করে প্রায় ১৫ শতাংশে পৌঁছে যায়। যদিও এটি এখনও চীন বা আমেরিকার তুলনায় অনেক কম—সেখানে অনলাইনে ফ্যাশন কেনাকাটা ৪০ শতাংশ—তবে ভারতের এই প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত দ্রুত।

মিশো: পরিবর্তনের মূল চালিকা শক্তি
অনলাইন বাজারে বাড়তি জনপ্রিয়তার পেছনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা রাখছে মিশো। সফটব্যাংক-সমর্থিত এই ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ২০২০ সালে মাত্র ২০ লাখ ক্রেতা ছিল, আর এখন সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৯৯ মিলিয়ন। কোম্পানি সম্প্রতি ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলারের মূল্যায়নে আইপিও জন্য আবেদন করেছে।


মিশোর লক্ষ্যবস্তু সেই ক্রেতারা, যারা সাধারণত আজিজ এর মতো দোকানে কেনাকাটা করতেন। ২৬৬ রুপিতে (ডেলিভারি সহ) শাড়ি বিক্রি করতে পারা তাদের জন্য এক বিশাল প্রতিযোগিতা তৈরি করেছে।

ভারতের বাজারে দুটি বড় পরিবর্তন

কাঠামোগত পরিবর্তন
মিশোর মতো প্ল্যাটফর্ম গুলো ছোট ব্যবসায়ীদের অনিয়মিত, অসংগঠিত বাজার থেকে ধীরে ধীরে আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির দিকে নিয়ে আসছে। পাঁচ বছর আগেও ভারতের ৮৫ শতাংশ খুচরা বাজার ছিল অনানুষ্ঠানিক। মিশোর অনুমান, ২০৩০ সালের মধ্যে এটি কমে দাঁড়াতে পারে ৬৬ থেকে ৬৮ শতাংশে।

বাজারের আকার বিস্তৃতি
ই-কমার্স বিক্রেতাদের স্থানীয় গ্রাহকদের বাইরে দেশজুড়ে বাজারে পৌঁছানোর সুযোগ দিচ্ছে। অ্যামাজন আর মিন্ত্রা বড় শহরগুলোতে বেশি জনপ্রিয়, কিন্তু মিশোর মতো সস্তা পণ্যের কারণে ছোট শহর-গ্রামও এখন বড় বাজারে পরিণত হচ্ছে।
মিশো কমিশন নেয় না; বরং ডেলিভারি ও বিজ্ঞাপনের জন্য ফি নেয়। এতে খরচ কম থাকে, আর ফুটপাত ব্যবসায়ীদের বাজার থেকে অংশ কেড়ে নেওয়া সহজ হয়।

লজিস্টিক এবং ডেলিভারির বিপ্লব
আগে ভারতের ডাক ব্যবস্থা এবং ঠিকানার জটিলতার কারণে দূরবর্তী অঞ্চলে পণ্য পাঠানো কঠিন ছিল। কিন্তু ডেলিভারি, বড় ই-কমার্স কোম্পানির নিজস্ব লজিস্টিকস ইউনিট—এসবের কারণে এখন দেশের সবচেয়ে দুর্গম স্থানে পণ্য পাঠানো সম্ভব।
এখন মিশোর ক্রেতাদের ৯০ শতাংশই দেশের আট প্রধান শহরের বাইরের অঞ্চলের মানুষ।

গ্রাম-শহরের জীবনধারায় পরিবর্তন
এই পরিবর্তন শুধু ব্যবসায়িক নয়; সামাজিক রূপান্তর ঘটাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া ও ই-কমার্স ছোট শহরের মানুষের রুচি, চাহিদা ও জীবনধারাকে আমূল বদলে দিয়েছে।
কেরালার কাট্টাপানার বাসিন্দা জোসেফ সেবাস্টিয়ান বলেন, আগে বড় শহরের ফ্যাশন তার শহরে পৌঁছাতে বছর লেগে যেত। এখন তার শহরের তরুণরা বেঙ্গালুরু আধুনিক পাড়া কোরামাঙ্গালার তরুণদের মতোই দেখতে।

#ভারত_ইকমার্স #অনলাইন_ফ্যাশন #মিশো #ভারতের_বাজার_রূপান্তর