ব্রিটেনে অভিবাসন নীতি নিয়ে চাপে বাড়ছে। বিশেষ করে বিদেশি অপরাধীদের বহিষ্কারে ইউরোপীয় মানবাধিকার সনদ (ইসিএইচআর) কতটা বাধা তৈরি করছে তা নিয়ে সরকার, রাজনৈতিক দল ও জনমতের মধ্যে তীব্র আলোচনা চলছে। সম্প্রতি একটি আলোচিত আদালতের রায় এবং তার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া এই বিতর্ককে আরও তীব্র করেছে।
বিতর্কের সূচনা: ‘চিকেন নাগেট’ রায়
সম্প্রতি এক ব্রিটিশ আদালত আলবেনিয়ান এক দণ্ডিত ব্যক্তিকে বহিষ্কার না করার নির্দেশ দেয়। যুক্তি ছিল, তার ছোট ছেলের বিদেশি চিকেন নাগেট অপছন্দ—এটি তার ‘খাদ্য সংবেদনশীলতা’। পরিবার বিচ্ছেদ হলে শিশুর অধিকার ক্ষুন্ন হবে, যা সিএইচআর-এর ধারা ৮–এর পরিবার জীবন সুরক্ষার অধীনে পড়ে।
এই রায় ব্রিটিশ গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা কুড়ায়। ‘ডেইলি এক্সপ্রেস’ একে “সম্পূর্ণ পাগলামি” বলে আখ্যা দেয়। পরে উচ্চ আদালত ওই রায়ে হস্তক্ষেপ করে।
ইসিএইচআর নিয়ে রাজনৈতিক চাপ
ইমিগ্রেশন সংকটের মধ্যে রিফর্ম ইউকে এবং কনজারভেটিভ পার্টি দাবি করছে যে ইসিএইচআর ব্রিটেনের বহিষ্কার নীতিকে বাধাগ্রস্ত করছে।
মতামতও দ্রুত বদলাচ্ছে। জুলাইয়ে যেখানে ৫৮ শতাংশ ব্রিটিশ ইসিএইচআর–এ থাকার পক্ষে ছিল, অক্টোবর তা নেমে আসে ৪৬ শতাংশে।
এই প্রেক্ষাপটে সরকার সিএইচআর ত্যাগ না করে বরং সেটির ব্যাখ্যা ও প্রয়োগে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৭ নভেম্বর সরকার আশ্রয় নীতির বিস্তৃত সংস্কার ঘোষণা করে—যার অংশ হিসেবে ইসিএইচআর–এর প্রয়োগ নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার পরিকল্পনা প্রকাশ পায়।
সিএইচআর: ব্রিটেনের অঙ্গীকার
১৯৫১ সালে প্রথম দেশ হিসেবে ব্রিটেনের সিএইচআর অনুমোদন করে। এতে ১৪টি অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি রয়েছে—যার মধ্যে আছে নির্যাতন বা অমানবিক আচরণ থেকে সুরক্ষা (ধারা ৩) এবং ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের সুরক্ষা (ধারা ৮)।
১৯৯৮ সালে মানবাধিকার আইন সিএইচআর যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ আইনে অন্তর্ভুক্ত করে।
বাস্তবে, খুব কম সংখ্যক বহিষ্কার সেখানে আটকে যায়। তবে হোম অফিসের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ইসিএইচআর–এর প্রভাব বড়—কারণ কর্মকর্তারা আগেই আন্দাজ করতে চান কোন মামলা স্ত্রাসবুর্গ গিয়ে জিতে যেতে পারে।

নতুন পরিকল্পনা: কঠোর ব্যাখ্যার পথে
সরকার এখন আইন খসড়া করছে যাতে ব্রিটিশ আদালত গুলো সিএইচআর আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করে।
ধারা ৮–এর ক্ষেত্রে বিদেশিদের বহিষ্কারে ‘জনস্বার্থ’কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
পরিবার–জীবনের দাবি কোন পরিস্থিতিতে করা যাবে—তা আরও সীমিত করা হবে, যাতে ‘চিকেন নাগেট’ ধরনের যুক্তি সহজে গ্রহণযোগ্য না হয়।
সরকার ধারা ৩–এর ব্যাখ্যা বদলাতে লবিং করছে—যাতে আবেদনকারীরা নিজ দেশের বিপদজনক কারাগার বা দুর্বল হাসপাতালকে ‘নির্যাতন’ হিসেবে দাবি করতে না পারে।
আগের অভিজ্ঞতা
২০১৪ সালে কনজারভেটিভ নেতৃত্বাধীন জোট সরকার বিচারকদের জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড ঠিক করে—যেমন, অভিযুক্ত ব্যক্তি ইংরেজি বলতে পারেন কি না, তা বিবেচনার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ফলে আপিলের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে।
বিদেশী অপরাধীদের সফল আপিল ২০১২-১৩ সালের ৩৩৭ থেকে ২০১৫-১৬ সালে নেমে আসে ৯২-এ।
মানবাধিকার রক্ষায় ব্রিটেনের দীর্ঘ রেকর্ড রয়েছে। তাই স্ট্রাসবুর্গ আদালত অনেক ক্ষেত্রে তাদের প্রতি নমনীয় থাকে। ১৯৮০ সাল থেকে বহিষ্কার / প্রত্যার্পণ–সংক্রান্ত মামলায় মাত্র ১৩ বার ব্রিটেনকে ভুল প্রমাণ করেছে আদালত।
সিএইচআর ত্যাগের ঝুঁকি
সিএইচআর ছেড়ে বেরিয়ে গেলে ব্রিটেন ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। সনদ পুনরায় আলোচনার মাধ্যমে বদলাতে গেলে সময় লাগবে বহু বছর।
ফলে আদালতগুলোর ব্যাখ্যাকে কঠোর করা—লেবার পার্টির ভাষায়—এ মুহূর্তে ব্রিটেনের জন্য “সবচেয়ে কম ক্ষতিকর বিকল্প”।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















