যুক্তরাষ্ট্রে শিশু যত্ন খাতে প্রাইভেট ইক্যুইটির প্রভাব দ্রুত বাড়ছে। কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কায় ছোট ছোট শিশু যত্ন কেন্দ্রগুলো আর্থিক সংকটে পড়লে বড় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলো কম দামে এসব কেন্দ্র অধিগ্রহণের সুযোগ পায়। ফলে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মোট শিশু যত্ন সক্ষমতার ১০–১২ শতাংশই প্রাইভেট ইক্যুইটি পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। ১১টি বৃহত্তম শিশু যত্ন চেইনের মধ্যে ৮টিই এখন প্রাইভেট ইক্যুইটির মালিকানায়। এই প্রবণতা বাজারে প্রতিযোগিতা, সেবার মান এবং খাতের আর্থিক কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আনছে।
স্বাধীন কেন্দ্রগুলোর ওপর বাড়তে থাকা চাপ
গ্রিনউইচ, কানেকটিকাটে অবস্থিত লিটল ফ্রেন্ডস নামের স্বাধীন শিশু যত্ন কেন্দ্রটির চাহিদা অত্যন্ত বেশি। অভিভাবকদের প্রশংসা এবং কয়েক বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার তালিকা এটি কতটা জনপ্রিয় তা দেখায়। কিন্তু অভিভাবকদের চেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা দেখা যায় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে, যারা কেন্দ্রটি কিনতে মরিয়া। প্রতিষ্ঠাতা ভারনা এসপোসিতো জানান, বহু বছর ধরে তিনি দেখছেন প্রাইভেট ইক্যুইটি প্রতিষ্ঠানগুলো আশপাশের সংগ্রামরত কেন্দ্রগুলো দ্রুত কিনে নিচ্ছে এবং তার কেন্দ্রটি কেনার জন্যও তারা নিয়মিত ইমেইল, ফোন এবং এমনকি ক্রিসমাস উপহার পাঠিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। তিনি এই প্রচেষ্টাকে ‘অবিরাম’ বলে বর্ণনা করেন।
প্রাইভেট ইক্যুইটির দুইমুখী ব্যবসায়িক কৌশল
প্রাইভেট ইক্যুইটি শিশু যত্ন খাতে লাভবান হওয়ার জন্য দুটি প্রধান কৌশল অনুসরণ করে। প্রথমত, বড় আকারের চেইন তৈরি করে খরচ কমানো। শিশু যত্ন শিল্পটি অত্যন্ত বিচ্ছিন্ন; অধিকাংশই ছোট স্বাধীন কেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল। বিনিয়োগকারীরা এই ধরনের বিচ্ছিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে একীভূত করে বড় চেইনে পরিণত করে। এতে সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, প্রশাসন, প্রযুক্তি এবং অন্যান্য খরচ কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে বেশি দক্ষতা অর্জন করা যায়। দ্বিতীয়ত, ভর্তি ফি বাড়ানো। প্রাইভেট ইক্যুইটি মালিকানাধীন প্রিমরোজ স্কুলের মতো চেইনগুলোতে ভর্তি ফি আশপাশের স্বাধীন কেন্দ্রগুলোর চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে শিশুর যত্নে ব্যয় সাধারণত মধ্যম আয়ের পরিবারের মোট আয়ের ৯ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত হয়, ফলে অভিভাবকরা বাড়তি ফি বহন করবে কিনা তা নিয়ে নিশ্চয়তা ছিল না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অভিভাবকরা বেশি খরচ হলেও এসব চেইনকেই বেছে নিচ্ছেন এবং চেইনগুলো ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা ধরে রাখতে পারছে।

চেইন কেন্দ্রগুলোর প্রতি অভিভাবকদের আকর্ষণ
স্বাধীন শিশু যত্ন কেন্দ্রগুলোর মান অনেক সময় অভিভাবকদের পক্ষে নির্ণয় করা কঠিন। অন্যদিকে, বড় চেইনগুলো সাধারণত পরিচ্ছন্ন, নতুন অবকাঠামো এবং অভিন্ন নীতিমালা সম্বলিত পরিবেশ তৈরি করে। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সুবিধা—যেমন অ্যাপের মাধ্যমে শিশুর খাওয়া, ঘুম এবং বিভিন্ন কার্যক্রমের আপডেট—অভিভাবকদের কাছে বেশ আশ্বস্তকর মনে হয়। এছাড়া চেইনের কোনো একটি সেন্টারে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিলে পুরো ব্র্যান্ডের সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই তারা মান বজায় রাখায় বেশি সচেতন। এসব কারণে চেইনগুলোকে অনেক অভিভাবক তুলনামূলক নিরাপদ বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করেন।
শিশুর জন্য যত্নশীল পরিবেশের সংকট
তবে শিশু যত্ন কেন্দ্রের প্রকৃত ও প্রধান গ্রাহক হচ্ছে শিশু। অভিভাবকরা বাহ্যিক সুবিধা দেখে সন্তুষ্ট হতে পারেন, কিন্তু শিশুদের প্রয়োজন স্নেহশীল, প্রশিক্ষিত ও মনোযোগী পরিচর্যাকারী। এই জায়গায় প্রাইভেট ইক্যুইটি মালিকানাধীন কেন্দ্রগুলোর সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট। অনেক চেইনে শিক্ষকদের বেতন উল্লেখযোগ্যভাবে কম দেওয়া হয়। কানেকটিকাটে কিন্ডারকেয়ারের শিক্ষকরা ঘণ্টায় ১৬.৪৯ ডলার পান,লিটল ফ্রেন্ডস-এ ঘণ্টায় ২১.৫০ ডলারসহ অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া হয়। কম বেতনের কারণে দক্ষ শিক্ষক পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এক প্রাইভেট ইক্যুইটি মালিকানাধীন চেইনের সাবেক পরিচালক জানান, কম বেতনের কারণে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায় এবং বাধ্য হয়ে অযোগ্য কর্মীদের ধরে রাখতে হয়। অনেক কর্মী অভিযোগ করেন, এসব চেইনে ‘অ্যাট রেশিও’—অর্থাৎ রাজ্য আইনে যতজন শিশুকে দেখাশোনা করার সর্বোচ্চ অনুমতি আছে ঠিক সেই সংখ্যক শিশু তাদের দায়িত্বে দেওয়া হয়। ফলে টয়লেট ব্রেকের মতো সাধারণ বিষয়ও বড় চাপ হয়ে দাঁড়ায় এবং শিশুর প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

আইনপ্রণেতাদের উদ্বেগ এবং নতুন বিধিনিয়ম
এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের সরকার নতুন নীতিমালা প্রয়োগ শুরু করেছে। ২০২৪ সালে ম্যাসাচুসেটস একটি আইন পাস করে, যেখানে বড় লাভজনক চেইনগুলো কতটা সরকারি সহায়তা দাবি করতে পারবে তা সীমিত করা হয়, যা প্রাইভেট ইক্যুইটির জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ভার্মন্টেও সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত শিশু যত্ন কেন্দ্রগুলোর টিউশন ফি বাড়ানোর ওপর সীমা নির্ধারণ করা হয়, বিশেষ করে ফরাসি প্রাইভেট ইক্যুইটি মালিকানাধীন লিটল স্প্রাউটস স্থানীয় কেন্দ্রগুলো অধিগ্রহণ করার পর। তবে সরকারি সংস্থাগুলো সাধারণত দাম বা বেতন নির্ধারণে দক্ষ নয়, ফলে এসব বিধিনিয়ম পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
শিশু যত্ন খাতে প্রাইভেট ইক্যুইটির দ্রুত বিস্তার বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে। বড় চেইনগুলো অভিভাবকদের কাছে আকর্ষণীয় মনে হলেও, কর্মীদের বেতন কাঠামো, সেবার মান এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণের চাপে এই খাত আরও অস্থিরতার মুখে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে শিশু যত্নের ভবিষ্যৎ তাই আরও জটিল, প্রতিযোগিতাপূর্ণ এবং নীতিগত অনিশ্চয়তায় ভরা হয়ে উঠছে।
#শিশু_যত্ন #প্রাইভেট_ইক্যুইটি #যুক্তরাষ্ট্র #শিশু_নীতি #অর্থনীতি #শিক্ষকসংকট #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















