০৪:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
অ্যামাজন রক্ষায় নতুন পথ দেখাচ্ছে ক্রাফট চকলেট প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩২৯) ব্ল্যাক ফ্রাইডে অফারে দারুণ ছাড় পেল DJI Osmo Pocket 3 ভ্লগিং ক্যামেরা নীরব ঘাতক উচ্চ রক্তচাপ: উৎসবের ভোজ আর অলস জীবনে বাড়ছে ঝুঁকি বাইয়াদা দ্বীপ: জেদ্দা উপকূলের এক নির্মল প্রাকৃতিক স্বর্গ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস টেনে তাইওয়ান ইস্যুতে বেইজিংয়ের নতুন চাপ ক্রক্সের স্যান্ডেলে এবার এক্সবক্স ব্র্যান্ডিং, গেমারদের জন্য নতুন ‘ড্রপ’ আবুধাবিতে রাশিয়ান কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইউক্রেন শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে ড্রিসকলের বৈঠক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৬৩) লটারির মাধ্যমে এসপি বদলি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি নয়: নজরুল ইসলাম খান

নীরব ঘাতক উচ্চ রক্তচাপ: উৎসবের ভোজ আর অলস জীবনে বাড়ছে ঝুঁকি

  • Sarakhon Report
  • ০১:০০:২৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
  • 7

বাড়ছে শিশু–কিশোরদের মধ্যেও হাই ব্লাড প্রেসার
ভক্সের নতুন বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, উচ্চ রক্তচাপ এখন শুধু বয়স্কদের রোগ নয়—বিশ্বজুড়েই এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ল্যানসেটে উদ্ধৃত এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০০০ সালের পর থেকে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে হাইপারটেনশন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্কেরই কোনো না কোনো মাত্রার উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, অথচ অনেকেই জানেন না তাদের সমস্যা আছে। কারণ, রক্তচাপ অনেক সময়ই লক্ষণহীন থাকে; মাথাব্যথা বা ক্লান্তির মতো সাধারণ লক্ষণও যে বিপদের সংকেত হতে পারে, তা অনেকেই গুরুত্ব দেন না। ফলে যখন রোগ ধরা পড়ে, তখন অনেক ক্ষেত্রে হৃদ্‌পিণ্ড, কিডনি বা মস্তিষ্কে ক্ষতি শুরু হয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক খাদ্যাভ্যাস ও বসে থাকার জীবনধারাই মূল দায়ী। রেডিমেড খাবার, প্রসেসড মাংস, নোনতা স্ন্যাকস ও রেস্টুরেন্টের ডিশগুলোতে থাকে অতিরিক্ত সোডিয়াম; আমরা ঠিক কতটা লবণ খাচ্ছি, তার হিসাব রাখতে পারি না। ভক্সের বিশ্লেষণে বলা হয়, থ্যাংকসগিভিং–ধরনের উৎসবের ভোজ—টার্কি, গ্রেভি, স্টাফিং, মাশড পটেটো, পেস্ট্রি ও মিষ্টি পানীয় মিলিয়ে এক বেলার খাবারেই দিনের নির্ধারিত সর্বোচ্চ সোডিয়াম সীমা অতিক্রম করা খুব সহজ। তারপর ঘন্টার পর ঘন্টা সোফায় বসে টিভি দেখা বা ফোন স্ক্রল করা—ব্যায়াম প্রায় নেই বললেই চলে। এই যৌথ প্রভাব বছরের পর বছর ধরে রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত করে, হৃদ্‌পিণ্ডের ওপর চাপ বাড়ায় এবং হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও কিডনি রোগের ঝুঁকি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।

প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, স্মার্ট ওয়াচ বা রিং–এর মতো ওয়্যারেবল ডিভাইস এবং নতুন প্রজন্মের ওষুধ অনেকের নজর কাড়লেও এগুলো সহায়ক ভূমিকা রাখে, মূল সমাধান নয়। পরিধানযোগ্য ডিভাইস হয়তো নড়াচড়া বাড়াতে বা হার্ট–রেট ট্র্যাক করতে সাহায্য করে, কিন্তু খাদ্যাভ্যাস না বদলালে সমস্যা থেকে যায়। একইভাবে কিছু ওষুধ ওজন কমানো বা শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করলেও, অতিরিক্ত লবণ এবং নিষ্ক্রিয় জীবনধারার বিরুদ্ধে নিজে থেকে সুরক্ষা দিতে পারে না। বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, “হাইপারটেনশন এমন এক রোগ, যা জীবনযাত্রা না বদলালে শুধু প্রেসক্রিপশন দিয়ে মোকাবিলা করা কঠিন।”

 

High blood pressure: Christmas dinner could cause your levels to lower in the short term | Express.co.uk

কীভাবে শুরু হতে পারে পরিবর্তন
ভক্সের প্রতিবেদন DASH ডায়েটকে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর পরীক্ষিত পদ্ধতিগুলোর একটি হিসেবে তুলে ধরেছে। এ ডায়েটে মূল জোর ফল, সবজি, ডাল, বাদাম ও পূর্ণ শস্যে—যেখানে থাকে বেশি ফাইবার ও পটাশিয়াম, আর তুলনামূলক কম সোডিয়াম ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট। এর মানে হলো, খুব বেশি নোনতা স্যুপ, প্যাকেটজাত ফ্রোজেন খাবার বা প্রসেসড মিটের বদলে ঘরে রান্না করা তুলনামূলক কম লবণযুক্ত খাবারে ফিরে আসা। বাজারে “নো সল্ট অ্যাডেড” বা “লো সোডিয়াম” লেখা উপাদান বেছে নেওয়া, ক্যানড খাবার ধুয়ে ব্যবহার করা—এসব ছোট পদক্ষেপও দিনে কয়েকশ মিলিগ্রাম সোডিয়াম কমিয়ে দিতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাদগ্রন্থিও বদলে যায়, কম নোনতা খাবারও তখন আর “ব্ল্যান্ড” মনে হয় না।

শারীরিক কার্যকলাপ এ লড়াইয়ের দ্বিতীয় স্তম্ভ। প্রবন্ধে চিকিৎসকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম—যেমন হাঁটা, সাইক্লিং, সাঁতার বা নাচ—রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর সঙ্গে কিছু শক্তি–বর্ধক ব্যায়াম এবং স্ট্রেচিং যোগ করলে হৃদ্‌যন্ত্র ও পেশি উভয়ই লাভবান হয়। সবচেয়ে বড় কথা, একদিন বেশি করে জিমে গিয়ে তারপর সপ্তাহজুড়ে কিছু না করার চেয়ে প্রতিদিন নিয়মিত একটু করে নড়া–চড়া শরীরের জন্য বেশি উপকারী। বড় ভোজের পর পরিবারের সবাই মিলে সামান্য হাঁটতে বের হওয়া কিংবা প্রতি ঘন্টায় কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে হাঁটা—এ ধরনের ছোট অভ্যাসও ধীরে ধীরে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

লেখাটি ব্যক্তিগত ইচ্ছাশক্তির পাশাপাশি কাঠামোগত সমস্যার দিকেও ইঙ্গিত করে। বাজারে অপেক্ষাকৃত সস্তা ও সহজলভ্য খাবারগুলোর বড় অংশই সোডিয়াম–সমৃদ্ধ ও ক্যালরি–ঘন; দ্রুতগতির কাজের চাপ মানুষকে ঘরে রান্নার সময় বা শক্তি থেকে বঞ্চিত করে। তাই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা খাদ্যপণ্যে স্পষ্ট লেবেলিং, প্রক্রিয়াজাত খাবারে লবণের সীমা নির্ধারণ, এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় সহজ–প্রবেশের মতো নীতি–পরিবর্তনের কথা বলছেন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতনতা জরুরি—কিন্তু একা তা যথেষ্ট নয়। পাঠকের জন্য সরাসরি বার্তা হলো, উৎসবের মৌসুম ও পারিবারিক ভোজের সময়টাই হতে পারে শুরু করার সেরা সময়: নিয়মিত রক্তচাপ মাপা, রান্নায় লবণ কমানো, আর খাওয়ার ঠিক পরেই সামান্য হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা।

জনপ্রিয় সংবাদ

অ্যামাজন রক্ষায় নতুন পথ দেখাচ্ছে ক্রাফট চকলেট

নীরব ঘাতক উচ্চ রক্তচাপ: উৎসবের ভোজ আর অলস জীবনে বাড়ছে ঝুঁকি

০১:০০:২৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

বাড়ছে শিশু–কিশোরদের মধ্যেও হাই ব্লাড প্রেসার
ভক্সের নতুন বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, উচ্চ রক্তচাপ এখন শুধু বয়স্কদের রোগ নয়—বিশ্বজুড়েই এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ল্যানসেটে উদ্ধৃত এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০০০ সালের পর থেকে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে হাইপারটেনশন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্কেরই কোনো না কোনো মাত্রার উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, অথচ অনেকেই জানেন না তাদের সমস্যা আছে। কারণ, রক্তচাপ অনেক সময়ই লক্ষণহীন থাকে; মাথাব্যথা বা ক্লান্তির মতো সাধারণ লক্ষণও যে বিপদের সংকেত হতে পারে, তা অনেকেই গুরুত্ব দেন না। ফলে যখন রোগ ধরা পড়ে, তখন অনেক ক্ষেত্রে হৃদ্‌পিণ্ড, কিডনি বা মস্তিষ্কে ক্ষতি শুরু হয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক খাদ্যাভ্যাস ও বসে থাকার জীবনধারাই মূল দায়ী। রেডিমেড খাবার, প্রসেসড মাংস, নোনতা স্ন্যাকস ও রেস্টুরেন্টের ডিশগুলোতে থাকে অতিরিক্ত সোডিয়াম; আমরা ঠিক কতটা লবণ খাচ্ছি, তার হিসাব রাখতে পারি না। ভক্সের বিশ্লেষণে বলা হয়, থ্যাংকসগিভিং–ধরনের উৎসবের ভোজ—টার্কি, গ্রেভি, স্টাফিং, মাশড পটেটো, পেস্ট্রি ও মিষ্টি পানীয় মিলিয়ে এক বেলার খাবারেই দিনের নির্ধারিত সর্বোচ্চ সোডিয়াম সীমা অতিক্রম করা খুব সহজ। তারপর ঘন্টার পর ঘন্টা সোফায় বসে টিভি দেখা বা ফোন স্ক্রল করা—ব্যায়াম প্রায় নেই বললেই চলে। এই যৌথ প্রভাব বছরের পর বছর ধরে রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত করে, হৃদ্‌পিণ্ডের ওপর চাপ বাড়ায় এবং হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও কিডনি রোগের ঝুঁকি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।

প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, স্মার্ট ওয়াচ বা রিং–এর মতো ওয়্যারেবল ডিভাইস এবং নতুন প্রজন্মের ওষুধ অনেকের নজর কাড়লেও এগুলো সহায়ক ভূমিকা রাখে, মূল সমাধান নয়। পরিধানযোগ্য ডিভাইস হয়তো নড়াচড়া বাড়াতে বা হার্ট–রেট ট্র্যাক করতে সাহায্য করে, কিন্তু খাদ্যাভ্যাস না বদলালে সমস্যা থেকে যায়। একইভাবে কিছু ওষুধ ওজন কমানো বা শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করলেও, অতিরিক্ত লবণ এবং নিষ্ক্রিয় জীবনধারার বিরুদ্ধে নিজে থেকে সুরক্ষা দিতে পারে না। বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, “হাইপারটেনশন এমন এক রোগ, যা জীবনযাত্রা না বদলালে শুধু প্রেসক্রিপশন দিয়ে মোকাবিলা করা কঠিন।”

 

High blood pressure: Christmas dinner could cause your levels to lower in the short term | Express.co.uk

কীভাবে শুরু হতে পারে পরিবর্তন
ভক্সের প্রতিবেদন DASH ডায়েটকে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর পরীক্ষিত পদ্ধতিগুলোর একটি হিসেবে তুলে ধরেছে। এ ডায়েটে মূল জোর ফল, সবজি, ডাল, বাদাম ও পূর্ণ শস্যে—যেখানে থাকে বেশি ফাইবার ও পটাশিয়াম, আর তুলনামূলক কম সোডিয়াম ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট। এর মানে হলো, খুব বেশি নোনতা স্যুপ, প্যাকেটজাত ফ্রোজেন খাবার বা প্রসেসড মিটের বদলে ঘরে রান্না করা তুলনামূলক কম লবণযুক্ত খাবারে ফিরে আসা। বাজারে “নো সল্ট অ্যাডেড” বা “লো সোডিয়াম” লেখা উপাদান বেছে নেওয়া, ক্যানড খাবার ধুয়ে ব্যবহার করা—এসব ছোট পদক্ষেপও দিনে কয়েকশ মিলিগ্রাম সোডিয়াম কমিয়ে দিতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাদগ্রন্থিও বদলে যায়, কম নোনতা খাবারও তখন আর “ব্ল্যান্ড” মনে হয় না।

শারীরিক কার্যকলাপ এ লড়াইয়ের দ্বিতীয় স্তম্ভ। প্রবন্ধে চিকিৎসকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম—যেমন হাঁটা, সাইক্লিং, সাঁতার বা নাচ—রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর সঙ্গে কিছু শক্তি–বর্ধক ব্যায়াম এবং স্ট্রেচিং যোগ করলে হৃদ্‌যন্ত্র ও পেশি উভয়ই লাভবান হয়। সবচেয়ে বড় কথা, একদিন বেশি করে জিমে গিয়ে তারপর সপ্তাহজুড়ে কিছু না করার চেয়ে প্রতিদিন নিয়মিত একটু করে নড়া–চড়া শরীরের জন্য বেশি উপকারী। বড় ভোজের পর পরিবারের সবাই মিলে সামান্য হাঁটতে বের হওয়া কিংবা প্রতি ঘন্টায় কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে হাঁটা—এ ধরনের ছোট অভ্যাসও ধীরে ধীরে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

লেখাটি ব্যক্তিগত ইচ্ছাশক্তির পাশাপাশি কাঠামোগত সমস্যার দিকেও ইঙ্গিত করে। বাজারে অপেক্ষাকৃত সস্তা ও সহজলভ্য খাবারগুলোর বড় অংশই সোডিয়াম–সমৃদ্ধ ও ক্যালরি–ঘন; দ্রুতগতির কাজের চাপ মানুষকে ঘরে রান্নার সময় বা শক্তি থেকে বঞ্চিত করে। তাই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা খাদ্যপণ্যে স্পষ্ট লেবেলিং, প্রক্রিয়াজাত খাবারে লবণের সীমা নির্ধারণ, এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় সহজ–প্রবেশের মতো নীতি–পরিবর্তনের কথা বলছেন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতনতা জরুরি—কিন্তু একা তা যথেষ্ট নয়। পাঠকের জন্য সরাসরি বার্তা হলো, উৎসবের মৌসুম ও পারিবারিক ভোজের সময়টাই হতে পারে শুরু করার সেরা সময়: নিয়মিত রক্তচাপ মাপা, রান্নায় লবণ কমানো, আর খাওয়ার ঠিক পরেই সামান্য হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা।