চীনের লক্ষ্য এখন অত্যাধুনিক ও টেকসই শিল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের ক্যান্সার নিরাময় বা বিশ্ব দারিদ্র্য দূর করার মতো উচ্চাভিলাষী স্বপ্নের চেয়ে আরও বাস্তবভিত্তিক। চীনের তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার হলো তার শিল্প উৎপাদন সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করা এবং “বিশ্বের কারখানা” হিসেবে অবস্থান ধরে রাখা। দেশটির রপ্তানি খরচ বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক শুল্ক এবং বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এই অবস্থান আর নিশ্চিত নয়। তাই দেশজুড়ে সরকারি ও বেসরকারি বিপুল বিনিয়োগে শিল্পক্ষেত্রে দ্রুত এআই ও রোবোটিক্স প্রয়োগ বাড়ছে, এবং উৎপাদনের প্রতিটি ধাপ পুনর্গঠিত হচ্ছে।
কারখানা বদলে দিচ্ছে এআই
চীনের পোশাক, ইলেকট্রনিক্স, গৃহস্থালি সরঞ্জাম থেকে শুরু করে বন্দর ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি খাতে এআই এখন কেন্দ্রীয় ভূমিকা নিচ্ছে। একটি পোশাক প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে যে এআই ব্যবহারে তাদের স্যাম্পল তৈরির সময় ৭০ শতাংশ কমে গেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে ওয়াশিং মেশিন তৈরি হচ্ছে এআই-চালিত “ফ্যাক্টরি ব্রেইন” ব্যবস্থার অধীনে। আর প্রধান প্রধান বন্দরে দেখা যাচ্ছে চালকবিহীন কনটেইনার ট্রাক এবং পুরো বন্দরের শিডিউল নিয়ন্ত্রণে থাকা উন্নত এআই সিস্টেম।
চীনা শিল্প ব্যবস্থাপনার ভাষায়, ভবিষ্যতের কারখানা হবে জীবন্ত সত্তার মতো—যেগুলো শুধু নির্দিষ্ট কাজই করবে না, বরং নিজেদের সিদ্ধান্তও নিতে পারবে। এ কারণেই “ডার্ক ফ্যাক্টরি” ধারণা ছড়িয়ে পড়ছে, যেখানে কর্মী উপস্থিত না থাকলেও ২৪ ঘণ্টা উৎপাদন চলবে। জনসংখ্যা হ্রাস, তরুণদের কারখানা-ভীতি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চাপের কারণে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব দ্রুত এই অগ্রগতি ঘটাতে চায়। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র উৎপাদন নিজেদের দেশে ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, যা চীনের জন্য আরও বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। এসব পরিস্থিতিতে এআইকে চীনের টিকে থাকার মূল হাতিয়ার হিসেবে দেখা হচ্ছে—এআই উৎপাদনকে দ্রুত, সস্তা ও কর্মীবিহীন করে তুলছে।

রোবট স্থাপনে বিশ্বে শীর্ষে চীন
আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অব রোবোটিক্সের তথ্য মতে, গত বছর চীন ২৯৫,০০০ শিল্প রোবট স্থাপন করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় প্রায় নয় গুণ বেশি এবং বিশ্বের বাকি অংশের মোট সংখ্যার চেয়েও বড়। ২০২৪ সালে চীনে কার্যকরী রোবটের সংখ্যা দুই মিলিয়ন ছাড়িয়েছে, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম স্বীকৃত ১৩১টি কারখানা ও শিল্পসাইটের মধ্যে ৪৫টি চীনে, আর যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র তিনটি।
শাংহাইয়ের বাওস্টিলের “ডার্ক ফ্যাক্টরি” উদাহরণ হিসেবে দেখা যায় যেখানে অপারেটররা বড়সড় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ডজনখানেক স্ক্রিনে পুরো উৎপাদন পর্যবেক্ষণ করেন। আগে যেখানে প্রতি তিন মিনিটে মানব হস্তক্ষেপ লাগত, এখন লাগে আধা ঘণ্টায় একবার। বাওস্টিল ভবিষ্যতে এক হাজার এআই সমাধান ব্যবহারের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। অন্যদিকে একঝাঁক শ্রমিক হারানোর ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও চীনা নেতারা বিশ্বাস করেন যে জনসংখ্যা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিল্পে প্রয়োজনীয় শ্রমিক সংখ্যাও কমবে, ফলে এআই উৎপাদন বাড়ালেও ব্যাপক বেকারত্ব তৈরি হবে না।
জিংঝৌতে মিডিয়ার ‘ফ্যাক্টরি ব্রেইন’
ইয়াংৎসে নদীর শহর জিংঝৌ—যেখানে গৃহস্থালি সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী জায়ান্ট মিডিয়ার অন্যতম প্রধান কারখানা অবস্থিত—সেখানে জার্মান রোবোটিক্স প্রতিষ্ঠান কুক
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















