০৯:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

যশোরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষে থমথমে পরিস্থিতি

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের সংঘর্ষে পুরো ক্যাম্পাস এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলেও ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ছিল। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় ক্যাম্পাসে লোকজনের উপস্থিতি কম ছিল। বাজারের বেশিরভাগ দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে। অভিযুক্ত দোকানি মুনায়েম হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।


সংঘর্ষের সময়কার পরিস্থিতি
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যশোর-চৌগাছা সড়কের আমবটতলা বাজার এলাকায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। তিন ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের আলোচনায় পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
বুধবার সকালেও বাজারের দোকানপাট বেশিরভাগই বন্ধ ছিল। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোতায়েন দেখা যায়নি, তবুও পুলিশের টহল ছিল অব্যাহত।


ঘটনার সূচনা: কীভাবে শুরু হলো উত্তেজনা
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের বক্তব্য থেকে জানা যায়—
• সোমবার বিকালে এক ছাত্রী মোবাইল মেরামতের জন্য আমবটতলা বাজারের দোকানদার মুনায়েম হোসেনের দোকানে যান।
• মুনায়েম সিমকার্ড খুলতে গেলে তার হাত কেটে যায়। এরপর প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে গিয়ে দোকানি তার হাত ধরে এবং অশালীন কথা বলেন।
• ছাত্রী প্রতিবাদ করলে বাকবিতণ্ডা হয় এবং দোকানি তাকে আরও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন।
• ছাত্রী বিষয়টি বন্ধুদের জানান।
• মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা দোকানিকে প্রশ্ন করতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয় এবং দোকানিকে মারধর করা হয়।
• এরপর স্থানীয় ব্যবসায়ী ও লোকজন একত্র হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়, ফলে সংঘর্ষ শুরু হয়।


সংঘর্ষের বিস্তার
ব্যবসায়ীরা মাইকে ঘোষণা দিয়ে স্থানীয়দের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জন্য ডেকে আনেন।
• দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
• ইটপাটকেল নিক্ষেপ
• অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত
• বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সাংবাদিক আহত
• একজন সাংবাদিকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়

প্রক্টোরিয়াল বডি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আহতদের দেখতে মেডিক্যাল সেন্টারে যান।


শিক্ষার্থীদের বক্তব্য
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ—
• তারা শুধু ব্যাখ্যা চাইতে গিয়েছিলেন, কিন্তু দোকানি ও স্থানীয়রা একত্র হয়ে তাদের ওপর হামলা চালান।
• তারা পালাতে গেলে পেছন থেকে ইট ছোড়া হয়।
• ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা যশোর-চৌগাছা সড়ক অবরোধ করে টায়ার ও বেঞ্চ জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।
• উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে প্রায় চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা।
• দেরিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসায় ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।

রাত দেড়টার দিকে হামলাকারীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে তারা প্রশাসনকে মুক্ত করেন।


পরদিনের ক্যাম্পাস চিত্র
• ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীর চলাচল কম
• ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ
• প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান
• কয়েকজন শিক্ষার্থী মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা নিয়েছেন
• কয়েকজনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে

বাজারের দোকানগুলো বুধবারও বেশিরভাগ বন্ধ ছিল। রাস্তায় পড়ে থাকা ইটপাটকেল উত্তেজনার প্রমাণ দিচ্ছিল।


স্থানীয়দের বক্তব্য
চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন—
• অনেক সময় শিক্ষার্থীরা বাজারে চা খেয়ে টাকা না দিয়ে চলে যান
• দোকানদারকে মারধর করার পর স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হন
• অভিযুক্ত দোকানদারকে গ্রেফতার করায় বাজারে গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে

তিনজন দোকানি জানান—
• ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঝামেলা করতে চান না
• কিন্তু দোকানিকে দুই দফা মারধর করা হয়েছে যার কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হন
• সংঘর্ষে কয়েকজন দোকানিও আহত হয়েছেন


বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল মজিদ বলেন—
• প্রক্টরিয়াল বডি চেষ্টা করলেও পুলিশ দেরিতে আসায় পরিস্থিতি খারাপ হয়
• আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে
• শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত, তাই ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত
• শনিবার থেকে নিয়মিত ক্লাস শুরু হবে
• শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা নিন্দনীয়
• বাজার কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা হবে


পুলিশের অবস্থান
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার জানান—
• পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক
• মামলার অভিযুক্ত দোকানি গ্রেফতার
• নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হবে না
• পুলিশ টহল অব্যাহত থাকবে


#tags: যশোর সংঘর্ষ শিক্ষার্থী উত্ত্যক্ত আমবটতলা বাজার যবিপ্রবি সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

যশোরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষে থমথমে পরিস্থিতি

০৮:৫৮:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের সংঘর্ষে পুরো ক্যাম্পাস এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলেও ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ছিল। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় ক্যাম্পাসে লোকজনের উপস্থিতি কম ছিল। বাজারের বেশিরভাগ দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে। অভিযুক্ত দোকানি মুনায়েম হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।


সংঘর্ষের সময়কার পরিস্থিতি
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যশোর-চৌগাছা সড়কের আমবটতলা বাজার এলাকায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। তিন ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের আলোচনায় পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
বুধবার সকালেও বাজারের দোকানপাট বেশিরভাগই বন্ধ ছিল। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোতায়েন দেখা যায়নি, তবুও পুলিশের টহল ছিল অব্যাহত।


ঘটনার সূচনা: কীভাবে শুরু হলো উত্তেজনা
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের বক্তব্য থেকে জানা যায়—
• সোমবার বিকালে এক ছাত্রী মোবাইল মেরামতের জন্য আমবটতলা বাজারের দোকানদার মুনায়েম হোসেনের দোকানে যান।
• মুনায়েম সিমকার্ড খুলতে গেলে তার হাত কেটে যায়। এরপর প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে গিয়ে দোকানি তার হাত ধরে এবং অশালীন কথা বলেন।
• ছাত্রী প্রতিবাদ করলে বাকবিতণ্ডা হয় এবং দোকানি তাকে আরও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন।
• ছাত্রী বিষয়টি বন্ধুদের জানান।
• মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা দোকানিকে প্রশ্ন করতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয় এবং দোকানিকে মারধর করা হয়।
• এরপর স্থানীয় ব্যবসায়ী ও লোকজন একত্র হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়, ফলে সংঘর্ষ শুরু হয়।


সংঘর্ষের বিস্তার
ব্যবসায়ীরা মাইকে ঘোষণা দিয়ে স্থানীয়দের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জন্য ডেকে আনেন।
• দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
• ইটপাটকেল নিক্ষেপ
• অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত
• বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সাংবাদিক আহত
• একজন সাংবাদিকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়

প্রক্টোরিয়াল বডি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আহতদের দেখতে মেডিক্যাল সেন্টারে যান।


শিক্ষার্থীদের বক্তব্য
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ—
• তারা শুধু ব্যাখ্যা চাইতে গিয়েছিলেন, কিন্তু দোকানি ও স্থানীয়রা একত্র হয়ে তাদের ওপর হামলা চালান।
• তারা পালাতে গেলে পেছন থেকে ইট ছোড়া হয়।
• ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা যশোর-চৌগাছা সড়ক অবরোধ করে টায়ার ও বেঞ্চ জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।
• উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে প্রায় চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা।
• দেরিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসায় ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।

রাত দেড়টার দিকে হামলাকারীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে তারা প্রশাসনকে মুক্ত করেন।


পরদিনের ক্যাম্পাস চিত্র
• ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীর চলাচল কম
• ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ
• প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান
• কয়েকজন শিক্ষার্থী মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা নিয়েছেন
• কয়েকজনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে

বাজারের দোকানগুলো বুধবারও বেশিরভাগ বন্ধ ছিল। রাস্তায় পড়ে থাকা ইটপাটকেল উত্তেজনার প্রমাণ দিচ্ছিল।


স্থানীয়দের বক্তব্য
চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন—
• অনেক সময় শিক্ষার্থীরা বাজারে চা খেয়ে টাকা না দিয়ে চলে যান
• দোকানদারকে মারধর করার পর স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হন
• অভিযুক্ত দোকানদারকে গ্রেফতার করায় বাজারে গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে

তিনজন দোকানি জানান—
• ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঝামেলা করতে চান না
• কিন্তু দোকানিকে দুই দফা মারধর করা হয়েছে যার কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হন
• সংঘর্ষে কয়েকজন দোকানিও আহত হয়েছেন


বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল মজিদ বলেন—
• প্রক্টরিয়াল বডি চেষ্টা করলেও পুলিশ দেরিতে আসায় পরিস্থিতি খারাপ হয়
• আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে
• শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত, তাই ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত
• শনিবার থেকে নিয়মিত ক্লাস শুরু হবে
• শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা নিন্দনীয়
• বাজার কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা হবে


পুলিশের অবস্থান
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার জানান—
• পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক
• মামলার অভিযুক্ত দোকানি গ্রেফতার
• নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হবে না
• পুলিশ টহল অব্যাহত থাকবে


#tags: যশোর সংঘর্ষ শিক্ষার্থী উত্ত্যক্ত আমবটতলা বাজার যবিপ্রবি সংবাদ