৪৭তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তন ও প্রস্তুতির সময় বাড়ানোর দাবিতে প্রায় এক মাস ধরে আন্দোলনরত পরীক্ষার্থীরা ঘোষণা দিয়েছেন—নতুন সময়সূচি না দিলে তারা ২৭ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া পরীক্ষা বর্জন করবেন। অন্যদিকে পিএসসি জানিয়েছে, পূর্বঘোষিত সময়সূচি অপরিবর্তিত থাকবে।
প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ২৬ অক্টোবর জানিয়েছিল যে ৪৭তম বিসিএস–এর লিখিত পরীক্ষা শুরু হবে ২৭ নভেম্বর ২০২৫ থেকে। প্রার্থীদের অভিযোগ, প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়নি। নতুন ও পুরনো পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রস্তুতির সুযোগে বৈষম্য তৈরি হয়েছে বলেও তারা মনে করেন।
বিক্ষোভ ও দাবিমূলক অবস্থান
প্রিলিমিনারি পাশ করা প্রার্থীদের একটি অংশ প্রায় এক মাস ধরে পিএসসি অফিস ঘিরে অনশন, রেল অবরোধ ও সড়ক অবরোধ পালন করে আসছে। তাদের দাবি—নতুন পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতির জন্য সাধারণত ৬ মাস সময় দেওয়া হলেও এবার মাত্র ২ মাস দেওয়া হয়েছে, যা তাদের কাছে অন্যায্য।
পুরনো পরীক্ষার্থীরা সম্প্রতি আরেকটি লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ায় তাদের প্রস্তুতির সুবিধা ছিল। কিন্তু নতুনদের জন্য এমন কম সময়সীমা ‘অবাস্তব’ এবং ‘বৈষম্যমূলক’ বলেও অভিযোগ উঠে।
পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত
২৬ নভেম্বর বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধু ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত পরীক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন—রুটিন না বদলালে তারা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেবেন না।
সংবাদ সম্মেলনে পরীক্ষার্থী সাইফ মুরাদ বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করলেও আমাদের দাবি উপেক্ষিত হয়েছে। নতুন সময়সূচি না হলে আমরা বাধ্য হয়েই পরীক্ষা বর্জন করব।”
তিনি আরও জানান, গত ৩০ দিন ধরে দাবি জানানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। আন্দোলনরতদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে; প্রায় ৪০–৫০ জন আহত হয়েছেন। কারও মাথায় ১০টির বেশি সেলাই লেগেছে। তবুও পিএসসি বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় তাদের সিদ্ধান্ত আরও দৃঢ় হয়েছে।
তারা স্পষ্টভাবে জানান—এ সিদ্ধান্ত কোনো রাজনৈতিক স্লোগান নয়; বরং ‘ন্যায্য প্রতিযোগিতার সুযোগ নিশ্চিত করা’ই মূল লক্ষ্য।
পিএসসির অবস্থান অপরিবর্তিত
পিএসসি জানায়, ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ২৭ নভেম্বর থেকেই শুরু হবে। তাদের যুক্তি—বিজ্ঞপ্তি, আবেদন, প্রিলিমিনারি ও বাছাই প্রক্রিয়ার সব ধাপ ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তাই নির্ধারিত সময় পরিবর্তনের সুযোগ নেই।
তারা মনে করে, বিসিএসের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু হয় শিক্ষাজীবন থেকেই; শুধু পরীক্ষার আগে নয়। সময়সূচি বদলালে তাদের গৃহীত রোডম্যাপ ভেঙে যাবে, যা বাস্তবিক দিক দিয়ে কঠিন।
সম্ভাব্য উত্তেজনা ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
বর্তমান পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে—পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিলেও পিএসসি এখনো অবস্থান বদলায়নি। সে কারণে সামনে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে।
রুটিন অপরিবর্তিত থাকলে শিক্ষার্থীরা আরও বড় কর্মসূচির পথে যেতে পারেন, যেমন বৃহত্তর অবরোধ বা অনশন।
অন্যদিকে ন্যায্য প্রতিযোগিতার দাবিতে আন্দোলনকারী পরীক্ষার্থীরা মনে করছেন—অপর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া তাদের জন্য মানসিক ও শারীরিকভাবে দুরূহ হবে।
অবশেষে পুরো বিষয়টি শুধু চাকরিপ্রার্থীদের ব্যক্তিগত সমস্যা নয়; বরং ন্যায্য প্রতিযোগিতা ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করার বৃহত্তর প্রশ্নে পরিণত হয়েছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















