দক্ষিণ আফ্রিকার ব্রিটস শহরের উপকণ্ঠে কৃষক এবং কৃষি শ্রমিকদের ছোট এক এলাকায় রাতের অন্ধকারে টহল দেয় এক অস্বাভাবিক দল—শ্বেতাঙ্গ কৃষক ও কৃষ্ণাঙ্গ বসতির বাসিন্দা একসাথে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে।
অপরাধ ও অবিশ্বাসের মাঝে ঐক্য গঠনের শুরু
এপ্রিলের মাঝামাঝি এক শীতল সকালে মাইকেল মোগলে ও পিট ভ্যান স্টাডেন একই ঘটনার সামনে পড়েন—এক নিরাপত্তাকর্মীর মৃতদেহ। গমক্ষেতের পাশেই মাটিতে পড়ে থাকা লাশ, মুখে রক্তের দাগ, কাঠের লাঠির আঘাতে ফোলা চোখ-মুখ—সব মিলিয়ে নির্মম হত্যার চিহ্ন।
মোগলে কৃষ্ণাঙ্গ, আর ভ্যান স্টাডেন আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ; পটভূমি আলাদা হলেও তারা দু’জনই দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্রমবর্ধমান সহিংসতা রোধে একমত।
দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় প্রায় ছয় গুণ বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটে। তবুও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আফ্রিকানারদের ওপর ‘গণহত্যা’ চলছে বলে দাবি করেন; যদিও পুলিশের পরিসংখ্যান তা সমর্থন করে না। এই দাবিকে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর কঠোর শুল্ক আরোপ এবং আফ্রিকানারদের সহজে শরণার্থী মর্যাদা প্রদানের নীতির পক্ষে ব্যবহার করেন। এমনকি তিনি জি-২০ সম্মেলন বয়কট করেন।
অপরাধের শিকার সবাই—কৃষ্ণাঙ্গ-শ্বেতাঙ্গ, ধনী-গরিব
নিহত নিরাপত্তাকর্মী মালাউই থেকে আসা এক কৃষ্ণাঙ্গ কর্মী ছিলেন। ভ্যান স্টোডেনের খামারে তার মৃত্যু হয়। মোগলে থাকেন পাশের বসতিতে—টিনের সারির ঘর, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে অপরাধ বেড়েই চলেছে।

ব্রিটসের আশেপাশে শস্যক্ষেত ও গ্রানাইট খনির মাঝখানের স্থানীয়রা বলেন—অপরাধী কখনো কারো প্রতি ভেদাভেদ করে না।
জাতীয় পুলিশ বাহিনী এতটাই সংকটের মুখে যে গ্রামীণ এলাকায় পৌঁছাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাগে। ফলে সম্প্রদায়ভিত্তিক টহল দলই একমাত্র ভরসা।
যৌথ উদ্যোগ: দুই সম্প্রদায়ের টহল পরিকল্পনা
শ্বেতাঙ্গ কৃষকেরা সাধারণত পিকআপে করে মাঠে টহল দেন, আর কৃষ্ণাঙ্গরা হাঁটতে হাঁটতে বস্তিতে পাহারা দেন। কিন্তু মোগলে ও ভ্যান স্টাডেন বুঝলেন—একতা ছাড়া সমাধান নেই।
ভ্যান স্টাডেন বলেন, “অপরাধীদের আটকাতে আমাদের এক হতে হবে।”
মোগালের জবাব—“একসাথে কাজ করলেই ফল আসবে।”
‘ক্রোকোডাইল’ দলের সঙ্গে সহযোগিতা
ভ্যান স্টাডেন পরিচয় করিয়ে দেন জানুস ফোরিয়ের সঙ্গে—২০১৬ সালে গড়ে ওঠা ক্রোকোডাইল কমিউনিটি পুলিশিং গ্রুপের নেতা। তারা ড্রোন, নাইট ভিশন ও রাইফেল ব্যবহার করে টহল চালান।
গ্যাস স্টেশনে দাঁড়িয়েই মোগালে ও ফোরিয়ে সিদ্ধান্ত নেন—মোগালে অপরাধীদের গতিবিধির তথ্য দেবেন, আর ক্রোকোডাইল দল তাদের ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেবে।
ফোরিয়ে বলেন, “মাইকেল শক্ত নেতা। তাকে মানুষ মানে। আমি গেলে মানবে না—কারণ আমি শ্বেতাঙ্গ।”
তথ্য, বিশ্বাস ও অভিযানের সূচনা
বর্ণবাদ আমলের বাধ্যতামূলক কৃষ্ণাঙ্গ বস্তিতে থাকেন মোগালে। সোলার প্যানেলসহ উন্নত বাড়ি গড়ে তোলার ফলে তিনি সবার আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন।
কয়েক দিনের মধ্যেই এক প্রত্যক্ষদর্শী হত্যাকারীদের অবস্থানের খবর দেয়—টিন-ঘরের সারিতেই।
২০ জন বাসিন্দা নিয়ে মোগালে অভিযান চালান। আগুন পোহাতে থাকা কয়েকজন পালাতে গেলে একজনকে ধরে ফেলা হয়। পরে ফোরিয়ের দল ড্রোন ব্যবহার করে আরেকজনকে ধরে। শ্যাকগুলোতে তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া যায় কৃষকদের চুরি হওয়া সামগ্রী।
জিজ্ঞাসাবাদের পর অভিযুক্তরা হত্যার দায় স্বীকার করে এবং আরও সহযোগীর নাম জানায়।

পুলিশের অবহেলা ও জনগণের ক্ষোভ
পুলিশ অনেক দেরিতে এসে কেবল দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। এরপর এক সপ্তাহের মধ্যেই তারা মুক্তি পায়—অপর্যাপ্ত প্রমাণ দেখিয়ে।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বাসিন্দারা অভিযুক্তদের জিনিসপত্র রাস্তায় ফেলে দিয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করে। তাদের শ্যাকও ভেঙে ফেলে।
অপরাধ কমলেও জটিলতা তৈরি
টহল শুরুর পর ভ্যান স্টাডেনের খামারে চুরি বন্ধ হয়েছে। কিন্তু শান্তি স্থায়ী হলো না।
সেপ্টেম্বরে মোগলে জানতে পারেন—তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে সন্দেহভাজনদের শ্যাক ভাঙার জন্য। তিনি তা অস্বীকার করেন।
তার প্রশ্ন—“যে অপরাধ আমরা কমানোর চেষ্টা করছি, সেই আমরা-ই যদি অপরাধী হয়ে যাই, তাহলে পরের ঘটনায় কে তথ্য দেবে?”
বর্তমানে টহল বন্ধ—আর এটিই অপরাধীদের বড় সাফল্য।
#crime #SouthAfrica #community_safety #apartheid_legacy #Brits #violence #security #local_patrol #G20 #immigration_policy
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















