একসময় পুষ্টিবিদ্যার নির্দেশনা ছিল সতর্কবাণীর মতো। ১৯০২ সালে মার্কিন কৃষি বিভাগের বুলেটিনে উইলবার ও. অ্যাটওয়াটার লিখেছিলেন— ভুলভাবে খাবার বাছলে খাদ্য তালিকা একপেশে হয়ে যেতে পারে। তখনই তিনি সাবধান করেছিলেন, অতিভোজনের ক্ষতি তাৎক্ষণিকভাবে না বোঝা গেলেও পরে তার ফল নিশ্চিত।
এই দীর্ঘ ইতিহাসের পর, ২০২৫ সালের শেষে আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে এক পুরোনো প্রতীক—ফুড পিরামিড।
পুরোনো নির্দেশনার দিকে ফিরছে যুক্তরাষ্ট্র
ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন ডিসেম্বরের নতুন মার্কিন খাদ্য–নির্দেশনা প্রকাশের সময় ফুড পিরামিড পুনর্বহালের কথা ভাবছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাস্থ্য ও মানবসেবা (HHS) সচিব রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র বলেছেন, তারা বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে নতুন নির্দেশনা তৈরি করছেন।
HHS–এর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ২০২৫–২০৩০ সালের ডায়েটারি গাইডলাইনস হবে “আমেরিকা হেলদি এগেইন” প্রতিশ্রুতির কেন্দ্রবিন্দু। USDA জানায়, নতুন নির্দেশনায় দেশের দীর্ঘমেয়াদি অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় জোর দেওয়া হবে— মূলত পূর্ণশস্য, সতেজ খাদ্য ও পুষ্টিকর উপাদানের ওপর।
আমেরিকার খাদ্যচিত্রের বিবর্তন
মার্কিন খাদ্য নির্দেশনার ইতিহাস শুরু ১৯৪৩ সালে USDA–র “বেসিক সেভেন”-এর মাধ্যমে। তিনটি বিভাগ ছিল ফল ও সবজি, বাকিগুলো দুধজাত পণ্য, মাংস–ডিম, শস্য–ময়দা এবং মাখন বা ফোর্টিফায়েড মার্জারিন।
১৯৫৬ সালে তা ছোট করে “বেসিক ফোর” করা হয়— দুধ, মাংস, ফল–সবজি এবং রুটি–শস্য; সঙ্গে দেওয়া হয় দৈনিক পরিবেশনমাত্রার ধারণা।
১৯৮০ সালে অতিরিক্ত চিনি, চর্বি, কোলেস্টেরল ও লবণ নিয়ে সচেতনতা বাড়ায় USDA ও HHS মিলে প্রকাশ করে “ডায়েটারি গাইডলাইনস ফর আমেরিকান্স।”
এর ভিজ্যুয়াল রূপ আসে ১৯৮৪ সালের “ফুড হুইল”-এ। আর ১৯৯২ সালে তা বদলে যায় বিখ্যাত “ফুড পিরামিড”-এ— যার ভিত্তিতে ছিল শস্যজাত খাদ্য, আর শীর্ষে ছিল চর্বি ও মিষ্টি, সীমিত মাত্রায় গ্রহণের নির্দেশনা।
কিন্তু পিরামিডকে তখনই ‘অত্যন্ত বিস্তৃত ও অস্পষ্ট’ বলে সমালোচনা করা হয়। ২০০৫ সালে আসে নতুন সংস্করণ—“মাইপিরামিড।” এর পাশে ছিল সিঁড়ি, ব্যায়ামের বার্তা হিসেবে, আর খাদ্য বিভাগগুলোকে দেখানো হয় রঙিন ব্যান্ডে।
২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র পিরামিডকে পুরোপুরি বাদ দেয় এবং চালু করে “মাইপ্লেট”— যেখানে একটি প্লেটের অর্ধেক জায়গা ফল ও সবজির, বাকি অংশ শস্য ও প্রোটিনের। পাশে ছোট একটি বৃত্ত ছিল দুগ্ধজাত পণ্যের জন্য।
সমকালীন প্রশ্ন ও সংশয়
রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবারের বিরুদ্ধে সরব, এটিকে স্থূলতা ও দীর্ঘমেয়াদি রোগের মূল কারণ বলেন। অনেক পুষ্টিবিদ এতে একমত। তবে তিনি কখনও কখনও বিভ্রান্তিকর তথ্যও ছড়িয়েছেন— যেমন সিড অয়েলকে বিষাক্ত বলা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তিনি যদি কয়েক পাতার সংক্ষিপ্ত নির্দেশনা প্রকাশ করেন, তবে তা “ডায়েটারি গাইডলাইনসের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে ভুল বোঝা” হবে। কারণ এ নির্দেশিকা মূলত নীতিনির্ধারকদের জন্য, সাধারণ ভোক্তার জন্য নয়।
ব্লুমবার্গের সূত্র বলছে, নতুন ভিজ্যুয়াল গাইড সম্ভবত প্রোটিন ও পূর্ণ খাদ্যকে গুরুত্ব দেবে। তবে এর চূড়ান্ত রূপরেখা এখনো নির্ধারণাধীন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















